নানা চাপে পদত্যাগ শমসের মবিনের by হাবিবুর রহমান খান ও নজরুল ইসলাম
হঠাৎ
করেই আলোচনায় শমসের মবিন চৌধুরী। বিএনপির এ ভাইস চেয়ারম্যান দলের সব পদ
থেকে সরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি রাজনীতি থেকেই অবসরের ঘোষণা দেয়ার পর রাজনৈতিক
অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। দলের ভেতরে এ নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।
তার অবসরের নেপথ্য কারণ খোঁজার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দলের একটি অংশ
বিষয়টিকে সরকারের ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছে। এই সিদ্ধান্ত নিতে সরকার তাকে
বাধ্য করেছে বলে মনে করেন ওই অংশটি। তবে দলের কেউ কেউ মনে করছেন, এ নিয়ে
হইচই করার কিছু নেই। তিনি দলে না থাকলে মাঠ পর্যায়ে এর কোনো প্রভাব পড়বে
না। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হতাশা এবং নানামুখী চাপ সামলাতে না পেরেই
রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন শমসের মবিন।
অবসর ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার শমসের মবিন চৌধুরীর বনানী ডিওএইচএসের বাসায় সারা দিন বিএনপির কোনো নেতাকে যেতে দেখা যায়নি। সকালে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বললেও দুপুরের পর থেকে তিনি আর কারও সঙ্গে দেখা করেননি। শমসের মবিনের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান যুগান্তরকে বলেন, ‘উনি তো আমাদের মতো তৃণমূল থেকে রাজনীতি করেননি। সারা জীবন সরকারি চাকরি করেছেন। অসুস্থ হলেও আমাদের মতো তো পারবেন না। জেল-মিথ্যা মামলায় মানসিক চাপের মধ্যে আছেন। চাপ ও অসুস্থতার জন্য হয় তো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার (শমসের মবিন) যোগাযোগও ছিল না। তার এ ঘোষণা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল না। আমাদের নেতাকর্মীরাও এজন্য প্রস্তুত ছিলেন। এটা শকড না, বিস্ময়কর কিছুও না।’
তবে অবসরের কারণ সম্পর্কে শমসের মবিন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, কারও চাপে নয়, একান্ত স্বাস্থ্যগত কারণে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। দুপুরে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে চিন্তাধারা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটা গঠনমূলক রাজনীতির কথা ভেবেছিলেন, অনেকের মতো আমার মনেও প্রশ্ন বিএনপি সেখানে কতটুকু রয়েছে। তবে যেটা বড় দাগের কথা, রাজনীতির অবক্ষয় অবশ্যই বাংলাদেশে ঘটেছে। এটা আমাদের কারও জন্য কাম্য নয়। দল থেকে পদত্যাগ ও রাজনীতি ছাড়ার কারণ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়েও যান।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, যারা দলের কূটনৈতিক দিকগুলো দেখভাল করতেন, তাদের অন্যতম ছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। তারা বিভিন্ন সময়ে দলের হাইকমান্ডকে নানা আশা দেখিয়েছেন। নানা স্বপ্ন দেখিয়ে বিএনপিকে বিদেশনির্ভর দলে পরিণত করেন। আন্দোলন থেকে শুরু করে সবকিছুই চলে বিদেশী প্রেসক্রিপশনে। কিন্তু বাস্তবে সেই স্বপ্ন বা প্রত্যাশা সফল না হওয়ায় দলের হাইকমান্ডসহ তৃণমূলও চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়। চলতি বছরে সর্বশেষ বিএনপি জোটের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর কূটনৈতিক বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব নেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নতুনদের দায়িত্ব দেন। এতে করে যারা কূটনৈতিক বিষয়গুলো দেখাভাল করতেন দলে তাদের গুরুত্ব কমে যায়। শুধু রুটিন কাজগুলো করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। এছাড়াও বিএনপির হয়ে যারা কূটনৈতিক বিষয়গুলো দেখভাল করতেন তাদের কারও কারও বিষয়ে চীন ও ভারতের আপত্তিও রয়েছে। যার কারণে গত বছর এক বিএনপি নেতার বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে শমসের মবিনকে ডাকা হয়নি। ওই বৈঠকে ভারতের বিজেপি সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যে প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করেন তাতেও ছিলেন না শমসের মবিন।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আন্দোলন স্থগিত করার পেছনেও শমসের মবিনের ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে খালেদা জিয়া স্বীকার করেন, ওই সময় আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। এ নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানও ফোনে শমসের মবিনকে ভর্ৎসনা করেন বলে জানা যায়।
বিএনপি সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি খালেদা জিয়া। এ নিয়ে দলের একটি অংশ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়। অভিযোগ ওঠে শমসেরের পরামর্শেই ওই সাক্ষাৎ হয়নি। প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ না করার ঘটনায় ভারত বিএনপির ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়। মনে করা হয়, এ কারণেই রাজনৈতিক সমঝোতার ব্যাপারে প্রভাবশালী দেশগুলো সরকারকে চাপ দিলেও এখনও ভারত নীরব রয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালে খালেদা জিয়ার যুক্তরাষ্ট্র সফরেও শমসের মবিন ব্যর্থতার পরিচয় দেন। ওই সফরে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। কিন্তু নানাভাবে চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত হিলারির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হন তিনি। এ অবস্থায় দলে তার গুরুত্ব অনেকটাই কমে যায়। এ ছাড়া আগামী দিনে দল ঢেলে সাজানোর ঘোষণায় দল থেকে তার বাদ পড়ার আশংকাও ছিল। এসব কারণে আগেই তিনি দল ও রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বলে দলের এক নীতিনির্ধারক জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ২২ মে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে নীরবে বাসায় সময় কাটাচ্ছেন তিনি। দলের নেতারা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার রেওয়াজ থাকলেও শমসের তা করেননি। দলের চেয়ারপারসনও তাকে দেখা করতে কোনো বার্তা পাঠাননি। এ নিয়ে আরও হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। দলে তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাচ্ছে- এমনটাই প্রতীয়মান হয়ে ওঠে। অন্যদিকে কারগার থেকে বের হওয়ার পর সরকারের সঙ্গে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করেন বলেও খালেদা জিয়ার কাছে অভিযোগ আসে।
সূত্র জানায়, নানা ব্যর্থতার কারণে তার প্রতি দলীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভের পাশাপাশি ছিল সরকারের নানামুখী চাপ। মামলার জালে বন্দি করা হয় তাকে। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে তিনি জামিন লাভ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ থাকলেও চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারেননি। এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) করতে দিলেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তা দিচ্ছে না বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিএনপির ওই সূত্রের মতে, সরকারের চাপের মুখে দলের আরও কয়েকজন নেতাও যে কোনো সময় শমসের মবিনের পথে হাঁটতে পারেন।
এদিকে শমসের মবিন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি প্রোস্টেট ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া জরুরি। এমআরপি করার জন্য জুলাইয়ে আবেদন জমা দিয়েছি। কিন্তু এখনও আমাকে তা দেয়া হয়নি। কেন দিচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারকে জিজ্ঞাসা করুন। তারা (সরকার) বড় ভাই খুঁজবে, না আমার পাসপোর্ট দেবে- কে জানে।’
সূত্র জানায়, সরকারের নানা চাপের কারণে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ করেন শমসের মবিন। তারা তাকে আপাতত রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশ গিয়ে নিরিবিলি অবস্থান করতে বলেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তারাও একই কথা বলেন। সবকিছু বিবেচনা করে শেষপর্যন্ত রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ারই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে এ সিদ্ধান্তের কথা দলের চেয়ারপারসন দেশে ফেরার পর জানাতে কয়েকজন অনুরোধ করলেও তিনি তা রাখেননি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, তার অবসর নিয়ে হইচই করার কিছু দেখছি না। এটা স্বাভাবিক। তার বয়স হয়েছে। স্বাস্থ্যগত কারণে হয় তো রাজনীতি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটাকে আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর পেছনে সরকারের কোনো চাপ আছে বলে মনে করি না। তবে সরকার তার এ অবসরের ঘোষণা নিয়ে রাজনীতি করতে পারে।
এদিকে দুপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শমসের মবিন বলেন, কেউ পদত্যাগ করবে বা অবসর নেবে কি নেবে না এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার এ পদত্যাগ বিএনপিতে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি একটা বড় দল। আমার চলে যাওয়াতে ক্ষতি হবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি তেমন কোনো ব্যক্তি না যে, আমার সিদ্ধান্তে এতবড় একটা দলের বিরাট ক্ষতি হবে। সুস্থ হলে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কিনা জানতে চাইলে শমসের মবিন বলেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার প্রয়াস আমার থাকবে।
অবসর ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার শমসের মবিন চৌধুরীর বনানী ডিওএইচএসের বাসায় সারা দিন বিএনপির কোনো নেতাকে যেতে দেখা যায়নি। সকালে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বললেও দুপুরের পর থেকে তিনি আর কারও সঙ্গে দেখা করেননি। শমসের মবিনের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান যুগান্তরকে বলেন, ‘উনি তো আমাদের মতো তৃণমূল থেকে রাজনীতি করেননি। সারা জীবন সরকারি চাকরি করেছেন। অসুস্থ হলেও আমাদের মতো তো পারবেন না। জেল-মিথ্যা মামলায় মানসিক চাপের মধ্যে আছেন। চাপ ও অসুস্থতার জন্য হয় তো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার (শমসের মবিন) যোগাযোগও ছিল না। তার এ ঘোষণা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল না। আমাদের নেতাকর্মীরাও এজন্য প্রস্তুত ছিলেন। এটা শকড না, বিস্ময়কর কিছুও না।’
তবে অবসরের কারণ সম্পর্কে শমসের মবিন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, কারও চাপে নয়, একান্ত স্বাস্থ্যগত কারণে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। দুপুরে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে চিন্তাধারা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটা গঠনমূলক রাজনীতির কথা ভেবেছিলেন, অনেকের মতো আমার মনেও প্রশ্ন বিএনপি সেখানে কতটুকু রয়েছে। তবে যেটা বড় দাগের কথা, রাজনীতির অবক্ষয় অবশ্যই বাংলাদেশে ঘটেছে। এটা আমাদের কারও জন্য কাম্য নয়। দল থেকে পদত্যাগ ও রাজনীতি ছাড়ার কারণ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়েও যান।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, যারা দলের কূটনৈতিক দিকগুলো দেখভাল করতেন, তাদের অন্যতম ছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। তারা বিভিন্ন সময়ে দলের হাইকমান্ডকে নানা আশা দেখিয়েছেন। নানা স্বপ্ন দেখিয়ে বিএনপিকে বিদেশনির্ভর দলে পরিণত করেন। আন্দোলন থেকে শুরু করে সবকিছুই চলে বিদেশী প্রেসক্রিপশনে। কিন্তু বাস্তবে সেই স্বপ্ন বা প্রত্যাশা সফল না হওয়ায় দলের হাইকমান্ডসহ তৃণমূলও চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়। চলতি বছরে সর্বশেষ বিএনপি জোটের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর কূটনৈতিক বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব নেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নতুনদের দায়িত্ব দেন। এতে করে যারা কূটনৈতিক বিষয়গুলো দেখাভাল করতেন দলে তাদের গুরুত্ব কমে যায়। শুধু রুটিন কাজগুলো করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। এছাড়াও বিএনপির হয়ে যারা কূটনৈতিক বিষয়গুলো দেখভাল করতেন তাদের কারও কারও বিষয়ে চীন ও ভারতের আপত্তিও রয়েছে। যার কারণে গত বছর এক বিএনপি নেতার বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে শমসের মবিনকে ডাকা হয়নি। ওই বৈঠকে ভারতের বিজেপি সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যে প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করেন তাতেও ছিলেন না শমসের মবিন।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আন্দোলন স্থগিত করার পেছনেও শমসের মবিনের ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে খালেদা জিয়া স্বীকার করেন, ওই সময় আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। এ নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানও ফোনে শমসের মবিনকে ভর্ৎসনা করেন বলে জানা যায়।
বিএনপি সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি খালেদা জিয়া। এ নিয়ে দলের একটি অংশ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়। অভিযোগ ওঠে শমসেরের পরামর্শেই ওই সাক্ষাৎ হয়নি। প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ না করার ঘটনায় ভারত বিএনপির ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়। মনে করা হয়, এ কারণেই রাজনৈতিক সমঝোতার ব্যাপারে প্রভাবশালী দেশগুলো সরকারকে চাপ দিলেও এখনও ভারত নীরব রয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালে খালেদা জিয়ার যুক্তরাষ্ট্র সফরেও শমসের মবিন ব্যর্থতার পরিচয় দেন। ওই সফরে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। কিন্তু নানাভাবে চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত হিলারির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হন তিনি। এ অবস্থায় দলে তার গুরুত্ব অনেকটাই কমে যায়। এ ছাড়া আগামী দিনে দল ঢেলে সাজানোর ঘোষণায় দল থেকে তার বাদ পড়ার আশংকাও ছিল। এসব কারণে আগেই তিনি দল ও রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বলে দলের এক নীতিনির্ধারক জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ২২ মে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে নীরবে বাসায় সময় কাটাচ্ছেন তিনি। দলের নেতারা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার রেওয়াজ থাকলেও শমসের তা করেননি। দলের চেয়ারপারসনও তাকে দেখা করতে কোনো বার্তা পাঠাননি। এ নিয়ে আরও হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। দলে তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাচ্ছে- এমনটাই প্রতীয়মান হয়ে ওঠে। অন্যদিকে কারগার থেকে বের হওয়ার পর সরকারের সঙ্গে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করেন বলেও খালেদা জিয়ার কাছে অভিযোগ আসে।
সূত্র জানায়, নানা ব্যর্থতার কারণে তার প্রতি দলীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভের পাশাপাশি ছিল সরকারের নানামুখী চাপ। মামলার জালে বন্দি করা হয় তাকে। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে তিনি জামিন লাভ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ থাকলেও চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারেননি। এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) করতে দিলেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তা দিচ্ছে না বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিএনপির ওই সূত্রের মতে, সরকারের চাপের মুখে দলের আরও কয়েকজন নেতাও যে কোনো সময় শমসের মবিনের পথে হাঁটতে পারেন।
এদিকে শমসের মবিন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি প্রোস্টেট ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া জরুরি। এমআরপি করার জন্য জুলাইয়ে আবেদন জমা দিয়েছি। কিন্তু এখনও আমাকে তা দেয়া হয়নি। কেন দিচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারকে জিজ্ঞাসা করুন। তারা (সরকার) বড় ভাই খুঁজবে, না আমার পাসপোর্ট দেবে- কে জানে।’
সূত্র জানায়, সরকারের নানা চাপের কারণে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ করেন শমসের মবিন। তারা তাকে আপাতত রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশ গিয়ে নিরিবিলি অবস্থান করতে বলেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তারাও একই কথা বলেন। সবকিছু বিবেচনা করে শেষপর্যন্ত রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ারই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে এ সিদ্ধান্তের কথা দলের চেয়ারপারসন দেশে ফেরার পর জানাতে কয়েকজন অনুরোধ করলেও তিনি তা রাখেননি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, তার অবসর নিয়ে হইচই করার কিছু দেখছি না। এটা স্বাভাবিক। তার বয়স হয়েছে। স্বাস্থ্যগত কারণে হয় তো রাজনীতি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটাকে আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর পেছনে সরকারের কোনো চাপ আছে বলে মনে করি না। তবে সরকার তার এ অবসরের ঘোষণা নিয়ে রাজনীতি করতে পারে।
এদিকে দুপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শমসের মবিন বলেন, কেউ পদত্যাগ করবে বা অবসর নেবে কি নেবে না এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার এ পদত্যাগ বিএনপিতে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি একটা বড় দল। আমার চলে যাওয়াতে ক্ষতি হবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি তেমন কোনো ব্যক্তি না যে, আমার সিদ্ধান্তে এতবড় একটা দলের বিরাট ক্ষতি হবে। সুস্থ হলে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কিনা জানতে চাইলে শমসের মবিন বলেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার প্রয়াস আমার থাকবে।
No comments