এখানেও জঙ্গি দেখছে না পুলিশ! by সোহরাব হাসান
পড়ে আছে পানির বোতল, চপ্পল। ছবি: সাজিদ হোসেন |
প্রথমে
পাকিস্তান। তারপর বাংলাদেশ। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই দেশে শিয়া
সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাসী ও নৃশংস বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে একটি শিয়া মসজিদে বোমা হামলা চালিয়ে ২২ জনকে হত্যা করা হয়। এর আগে বেলুচিস্তানে দুই দফা বোমা হামলায় ২১ জন মারা গেছেন। আর শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটায় ঢাকার হোসনি দালানে শিয়া ধর্মাবলম্বীদের ওপর ছোড়া বোমায় একজন নিহত ও অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন। শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা সেখানে পবিত্র আশুরার মিছিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
পাকিস্তানে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা কঠিন নয়। সেখানে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব বহু পুরোনো। এর পেছনে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যেমন আছে, তেমনি আছে আঞ্চলিক রাজনীতিও। পাকিস্তানের প্রতিবেশী ইরান শিয়াপন্থী হিসেবে পরিচিত। পাকিস্তানের বেলুচিস্তানেও শিয়া সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ আছেন, যাদের সুনজরে দেখেন না কট্টরপন্থী সুন্নিরা। আবার পাকিস্তানের এই কট্টরপন্থী সুন্নিদের মদদ দিয়ে থাকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ। সেখানে প্রতি বছরই মহররম উপলক্ষে শিয়াদের মিছিল ও সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটে থাকে। এ ছাড়া শিয়া মসজিদে বোমা হামলা চালিয়ে কিংবা গুলি করে মানুষ হত্যার ঘটনাও ঘটে থাকে। পাকিস্তানে আহমদিয়াদের সাংবিধানিকভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে। শিয়াদের মুসলিম হিসেবে স্বীকার করলেও তাঁদের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব দেশটির কট্টরপন্থীরা মানতে পারছে না।
কিন্তু বাংলাদেশে হঠাৎ এই নিরীহ এবং সংখ্যায় খুবই কম শিয়াদের সমাবেশে কারা হামলা চালাল? পাকিস্তানে জঙ্গিগোষ্ঠী ও কট্টরপন্থীরা এ ধরনের হামলা চালিয়ে থাকে। এর সঙ্গে রাজনীতির চেয়েও ধর্মীয় উগ্রপন্থার নিবিড় সম্পর্ক আছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। সেখানে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের দৌরাত্ম্য চলে আসছে গেল শতকের পঞ্চাশের দশক থেকে। সে সময়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে কাদিয়ানি বিরোধী দাঙ্গায় বহু নিরীহ মানুষ নিহত হন। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে পড়ে যে পাকিস্তান সরকার লাহোরে সামরিক শাসন জারি করতে বাধ্য হয়।
কিন্তু বাংলাদেশে সেরকম ধর্মীয় সংঘাতের উদাহরণ নেই।
তাহলে কারা ঘটাল হোসনি দালানে সন্ত্রাসী হামলা?
সাড়ে তিন শ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এতিহ্যবাহী ইমামবাড়ায় শিয়া সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণভাবে আশুরা পালন করে। আশুরা উপলক্ষে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া আশুরা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকায় জমজমাট মেলা বসে, যাতে শিয়া সম্প্রদায় ছাড়াও সব মতের ও ধর্মের মানুষ যোগ দেয়। কিন্তু এবারই সেই সমাবেশে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটল। একজন নিরীহ মানুষ জীবন দিল। আহত হয়ে অনেকে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। পুলিশের আইজি বলেছেন, জঙ্গি গোষ্ঠী নয়, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তদন্তের আগেই তিনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন এটি জঙ্গি গোষ্ঠীর কাজ নয়?
এত দিন সরকারের মন্ত্রী-নেতারা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা বলে আসছেন, স্বাধীনতা বিরোধী ও জঙ্গি গোষ্ঠীর মধ্যে কোনো ফারাক নেই। এখন তাঁরা ফারাক করছেন কীভাবে? ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি দেশে জঙ্গি নেই বলে খাল কেটে কুমির এনেছিল। এখন পুলিশ কর্মকর্তারাও দেখছি সেই ভাষায় কথা বলছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হোসনি দালানের ঘটনায় গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু অতীতে কারা গ্রেনেড ব্যবহার করেছিল, সেটিও নিশ্চয়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অজানা নয়। এত তাড়াতাড়ি তো ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা ভুলে যাওয়ার কথা নয়।
আসলে জঙ্গি ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ আছে কি? এটি কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ ছিল না। ছিল শিয়া সম্প্রদায়ের সমাবেশ। যারা এ ধরনের ধর্মীয় সমাবেশ ও রীতিতে বেদাত কাজ মনে করে, তাদের দ্বারা হামলার আশঙ্কা কি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায়। ধর্মীয় উগ্রবাদই জঙ্গি তৈরি করে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার বলেছেন, এটি পরিকল্পিত ঘটনা। এএসআই ইব্রাহিম মোল্লার হত্যাকারীদের কাছে যে বোমা পাওয়া গেছে, হোসনি দালানেও সেই বোমা ব্যবহার করা হয়েছে।
তাহলে তারা জঙ্গি সম্পৃক্ততা কীভাবে বাতিল করে দিল? জঙ্গি সম্পৃক্ততা বাতিল করলে আরও অনেক কিছু বাতিল হয়ে যায়। সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু নাশকতার ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনোটারই সুরাহা করতে পারেনি। এ ধরনের অঘটন রোধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে তারা, তাও জানা যায় না। অপরাধীদের শক্তি ও কৌশল সম্পর্কেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামগ্রিক ধারণা আছে বলে মনে হয় না। থাকলে এএসআইকে এভাবে জীবন দিতে হতো না। দুই বিদেশি হত্যার পর রাজনৈতিক বাহাস যত বেশি হয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে কিংবা অপরাধীদের ধরতে ততটা সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়নি। এই সুযোগে একের পর এক হামলা ও নাশকতার ঘটনা ঘটছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, হোসনি দালানে হামলার ঘটনাটি নাশকতামূলক। এখন প্রশ্ন হলো, সেই নাশকতা ঠেকাতে তারা কি আগাম ব্যবস্থা নিয়েছিল? তারা ঘটনার পেছনেও ছুটতে পারছে না। ঘটনাই তাদের তাড়িয়ে ফিরছে। এখন পর্যন্ত দুই বিদেশি হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। এসব কী তাদের ব্যর্থতা নয়?
শুক্রবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে একটি শিয়া মসজিদে বোমা হামলা চালিয়ে ২২ জনকে হত্যা করা হয়। এর আগে বেলুচিস্তানে দুই দফা বোমা হামলায় ২১ জন মারা গেছেন। আর শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটায় ঢাকার হোসনি দালানে শিয়া ধর্মাবলম্বীদের ওপর ছোড়া বোমায় একজন নিহত ও অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন। শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা সেখানে পবিত্র আশুরার মিছিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
পাকিস্তানে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা কঠিন নয়। সেখানে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব বহু পুরোনো। এর পেছনে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যেমন আছে, তেমনি আছে আঞ্চলিক রাজনীতিও। পাকিস্তানের প্রতিবেশী ইরান শিয়াপন্থী হিসেবে পরিচিত। পাকিস্তানের বেলুচিস্তানেও শিয়া সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ আছেন, যাদের সুনজরে দেখেন না কট্টরপন্থী সুন্নিরা। আবার পাকিস্তানের এই কট্টরপন্থী সুন্নিদের মদদ দিয়ে থাকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ। সেখানে প্রতি বছরই মহররম উপলক্ষে শিয়াদের মিছিল ও সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটে থাকে। এ ছাড়া শিয়া মসজিদে বোমা হামলা চালিয়ে কিংবা গুলি করে মানুষ হত্যার ঘটনাও ঘটে থাকে। পাকিস্তানে আহমদিয়াদের সাংবিধানিকভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে। শিয়াদের মুসলিম হিসেবে স্বীকার করলেও তাঁদের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব দেশটির কট্টরপন্থীরা মানতে পারছে না।
কিন্তু বাংলাদেশে হঠাৎ এই নিরীহ এবং সংখ্যায় খুবই কম শিয়াদের সমাবেশে কারা হামলা চালাল? পাকিস্তানে জঙ্গিগোষ্ঠী ও কট্টরপন্থীরা এ ধরনের হামলা চালিয়ে থাকে। এর সঙ্গে রাজনীতির চেয়েও ধর্মীয় উগ্রপন্থার নিবিড় সম্পর্ক আছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। সেখানে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের দৌরাত্ম্য চলে আসছে গেল শতকের পঞ্চাশের দশক থেকে। সে সময়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে কাদিয়ানি বিরোধী দাঙ্গায় বহু নিরীহ মানুষ নিহত হন। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে পড়ে যে পাকিস্তান সরকার লাহোরে সামরিক শাসন জারি করতে বাধ্য হয়।
কিন্তু বাংলাদেশে সেরকম ধর্মীয় সংঘাতের উদাহরণ নেই।
তাহলে কারা ঘটাল হোসনি দালানে সন্ত্রাসী হামলা?
সাড়ে তিন শ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এতিহ্যবাহী ইমামবাড়ায় শিয়া সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণভাবে আশুরা পালন করে। আশুরা উপলক্ষে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া আশুরা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকায় জমজমাট মেলা বসে, যাতে শিয়া সম্প্রদায় ছাড়াও সব মতের ও ধর্মের মানুষ যোগ দেয়। কিন্তু এবারই সেই সমাবেশে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটল। একজন নিরীহ মানুষ জীবন দিল। আহত হয়ে অনেকে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। পুলিশের আইজি বলেছেন, জঙ্গি গোষ্ঠী নয়, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তদন্তের আগেই তিনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন এটি জঙ্গি গোষ্ঠীর কাজ নয়?
এত দিন সরকারের মন্ত্রী-নেতারা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা বলে আসছেন, স্বাধীনতা বিরোধী ও জঙ্গি গোষ্ঠীর মধ্যে কোনো ফারাক নেই। এখন তাঁরা ফারাক করছেন কীভাবে? ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি দেশে জঙ্গি নেই বলে খাল কেটে কুমির এনেছিল। এখন পুলিশ কর্মকর্তারাও দেখছি সেই ভাষায় কথা বলছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হোসনি দালানের ঘটনায় গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু অতীতে কারা গ্রেনেড ব্যবহার করেছিল, সেটিও নিশ্চয়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অজানা নয়। এত তাড়াতাড়ি তো ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা ভুলে যাওয়ার কথা নয়।
আসলে জঙ্গি ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ আছে কি? এটি কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ ছিল না। ছিল শিয়া সম্প্রদায়ের সমাবেশ। যারা এ ধরনের ধর্মীয় সমাবেশ ও রীতিতে বেদাত কাজ মনে করে, তাদের দ্বারা হামলার আশঙ্কা কি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায়। ধর্মীয় উগ্রবাদই জঙ্গি তৈরি করে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার বলেছেন, এটি পরিকল্পিত ঘটনা। এএসআই ইব্রাহিম মোল্লার হত্যাকারীদের কাছে যে বোমা পাওয়া গেছে, হোসনি দালানেও সেই বোমা ব্যবহার করা হয়েছে।
তাহলে তারা জঙ্গি সম্পৃক্ততা কীভাবে বাতিল করে দিল? জঙ্গি সম্পৃক্ততা বাতিল করলে আরও অনেক কিছু বাতিল হয়ে যায়। সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু নাশকতার ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনোটারই সুরাহা করতে পারেনি। এ ধরনের অঘটন রোধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে তারা, তাও জানা যায় না। অপরাধীদের শক্তি ও কৌশল সম্পর্কেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামগ্রিক ধারণা আছে বলে মনে হয় না। থাকলে এএসআইকে এভাবে জীবন দিতে হতো না। দুই বিদেশি হত্যার পর রাজনৈতিক বাহাস যত বেশি হয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে কিংবা অপরাধীদের ধরতে ততটা সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়নি। এই সুযোগে একের পর এক হামলা ও নাশকতার ঘটনা ঘটছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, হোসনি দালানে হামলার ঘটনাটি নাশকতামূলক। এখন প্রশ্ন হলো, সেই নাশকতা ঠেকাতে তারা কি আগাম ব্যবস্থা নিয়েছিল? তারা ঘটনার পেছনেও ছুটতে পারছে না। ঘটনাই তাদের তাড়িয়ে ফিরছে। এখন পর্যন্ত দুই বিদেশি হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। এসব কী তাদের ব্যর্থতা নয়?
No comments