রাজনীতির বাইরে গিয়ে এগিয়ে নিতে হবে -সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় কাঠুরিয়া
সঞ্জয় কাঠুরিয়া |
সম্প্রতি
বাংলাদেশ সফরে এসেছেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বাণিজ্য ও
বিশ্ব প্রতিযোগিতা অনুশীলন (ট্রেড অ্যান্ড কম্পিটিটিভনেস গ্লোবাল
প্র্যাকটিস) বিভাগের প্রধান অর্থনীতিবিদ সঞ্জয় কাঠুরিয়া। তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রবৃদ্ধি, যোগাযোগ, রপ্তানি, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন...
প্রথম আলো: বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা বেকারত্ব। দেশে কীভাবে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে?
সঞ্জয় কাঠুরিয়া: এটি বাংলাদেশের জন্য একটি মৌলিক প্রশ্ন। একে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ এখন আর একা নয়। প্রতিবছর গড়ে ২০ লাখ তরুণ-তরুণী শ্রমবাজারে প্রবেশ করেন। তাই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার এখন ভীষণভাবে পারস্পরিকভাবে নির্ভরশীল। বাংলাদেশ কীভাবে এতে অংশগ্রহণ বাড়াতে পারে? উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক কারখানায় এখন প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ লোক কাজ করেন। পরোক্ষভাবে আরও প্রায় এক কোটি লোকের সংস্থান হয়েছে। রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে পারলে এই কর্মসংস্থান আরও বাড়বে।
চীন এখন উচ্চপ্রযুক্তির পোশাক তৈরির দিকে ঝুঁকছে। তাই চীনের তৈরি পোশাকের ২০ শতাংশ বাজার যদি বাংলাদেশ দখল করতে পারে, তবে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্বিগুণ হয়ে ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার হবে। প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৫৪ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। আর পরোক্ষভাবে আরও ১ কোটি ৩৫ লোক কাজ পাবেন।
প্রথম আলো: বর্তমান বিশ্বে আঞ্চলিক যোগাযোগ বা কানেক্টিভিটি বাণিজ্য সম্প্রসারণের বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশ কীভাবে এই কানেক্টিভিটি থেকে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ থেকে সুফল পেতে পারে?
সঞ্জয় কাঠুরিয়া: দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে এমন একটি উদ্যোগ রয়েছে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই চার দেশের মধ্যে যান চলাচল চুক্তি হয়েছে। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। এই সফরে বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি, জ্বালানি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের সুযোগ সব সময় আসে না। বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এ ধরনের কানেক্টিভিটি বাংলাদেশের সামনে বড় সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারতের নীতির মধ্যেও ‘লুক ইস্ট’ রয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
প্রথম আলো: আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে প্রধান বাধা কী?
সঞ্জয় কাঠুরিয়া: আমার অবস্থান থেকে এটা বলা খুব মুশকিল। তবে রাজনীতির বাইরে গিয়ে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগটি এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এখন বিষয় হলো, কীভাবে কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি করব। অবশ্যই অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, এর সঙ্গে সহায়ক নীতিও দরকার হবে। আমি মনে করি, শুধু সড়কব্যবস্থার উন্নয়ন করে পূর্ণাঙ্গ কানেক্টিভিটি সম্ভব নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই নদীভিত্তিক যোগাযোগও তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া নদীভিত্তিক যোগাযোগ অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী। মোটাদাগে, কানেক্টিভিটি হতে হবে বহুমাত্রিক। এ ছাড়া সীমান্তে পণ্য ও যাত্রী চলাচলব্যবস্থা সহজ ও মসৃণ করতে হবে। ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সহজেই নেপাল ও ভুটানে যেতে পারবে বাংলাদেশের পণ্য।
আশা করি, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সড়ক, নৌ, রেলসহ একটি বহুমাত্রিক কানেক্টিভিটি গড়ে উঠবে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ ঘোষণায় এ কথা উল্লেখ রয়েছে। সব মিলিয়ে কানেক্টিভিটির সঙ্গে নীতি ইস্যু, শুল্কায়ন প্রক্রিয়া ও বিনিয়োগ—এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। আশার কথা, এ অঞ্চলে এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে।
প্রথম আলো: আন্তদেশীয় যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য বড় বড় অবকাঠামো তৈরি প্রয়োজন। এর বিনিয়োগ আসবে কীভাবে?
সঞ্জয় কাঠুরিয়া: হয় সরকারি; না হয় বেসরকারি উৎস থেকেই বিনিয়োগ আসতে হবে। তবে বেসরকারি বিনিয়োগ এত সহজ নয়। কেননা, এতে কত সময়ে বিনিয়োগ উঠে আসবে, সেই বিষয়টি বিবেচনায় থাকে। তাই স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বিনিয়োগের বিশাল অংশ সরকারি খাত থেকেই আসতে হবে। এর অতিরিক্ত বিনিয়োগ আসতে পারে বেসরকারি খাত থেকে। আমরা জানি, ভারত এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। ভারতের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে অনেক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আর ভালো ও সম্ভাবনাময় প্রকল্প হলে অর্থ আসবেই। শেষ পর্যন্ত এমন প্রকল্পে অর্থায়ন বাধা হবে না। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।
প্রথম আলো: বহুলভাবে বলা হয়, আন্তদেশীয় যোগাযোগে বড় অর্থনীতির দেশগুলো বেশি লাভবান হয়। ভারতের মতো বড় দেশকে নিয়ে এ ধরনের যোগাযোগব্যবস্থায় বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে?
সঞ্জয় কাঠুরিয়া: দক্ষিণ এশিয়ার আন্তদেশীয় যোগাযোগ নিয়ে আমরা ‘সার্ক নোট’ নামে প্রথম পলিসি নোট প্রকাশ করেছি। ধারাবাহিকভাবে আরও প্রকাশ করব। প্রথম সার্ক নোটে আঞ্চলিক যোগাযোগে ছোট দেশগুলো কীভাবে বেশি লাভবান হতে পারে, সে বিষয়ে নোট দিয়েছি। বড় বিষয় হলো, আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়লে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর বড় বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ পায় ছোট অর্থনীতির দেশ। উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, ভারত প্রতিবছর ৪৫ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। বাংলাদেশ যদি এর ৫ শতাংশ নিতে পারে, তবে এ দেশের রপ্তানির পরিমাণ বিপুলভাবে বেড়ে যাবে। তবে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে তা অর্জন করা যাবে না। কেননা, ভারতও তৈরি পোশাক বানায়। তাই বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনা, নতুন নতুন পণ্য রপ্তানি করার উদ্যোগ নিতে হবে। রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু এ খাতে বিনিয়োগ আনতে বাংলাদেশ এখনো সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছে না।
প্রথম আলো: বিদেশি বিনিয়োগ আনতে কী করা উচিত?
সঞ্জয় কাঠুরিয়া: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথমত, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে। বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে তারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ফ্যাসিলিটেড করতে পারে। দ্বিতীয়ত, জমির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, জ্বালানির নিশ্চয়তা থাকতে হবে। বিশেষ করে দেশের সমস্যা হোক না কেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কারখানার অঞ্চলে জ্বালানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকতে হবে।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাহাঙ্গীর শাহ
প্রথম আলো: বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা বেকারত্ব। দেশে কীভাবে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে?
সঞ্জয় কাঠুরিয়া: এটি বাংলাদেশের জন্য একটি মৌলিক প্রশ্ন। একে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ এখন আর একা নয়। প্রতিবছর গড়ে ২০ লাখ তরুণ-তরুণী শ্রমবাজারে প্রবেশ করেন। তাই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার এখন ভীষণভাবে পারস্পরিকভাবে নির্ভরশীল। বাংলাদেশ কীভাবে এতে অংশগ্রহণ বাড়াতে পারে? উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক কারখানায় এখন প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ লোক কাজ করেন। পরোক্ষভাবে আরও প্রায় এক কোটি লোকের সংস্থান হয়েছে। রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে পারলে এই কর্মসংস্থান আরও বাড়বে।
চীন এখন উচ্চপ্রযুক্তির পোশাক তৈরির দিকে ঝুঁকছে। তাই চীনের তৈরি পোশাকের ২০ শতাংশ বাজার যদি বাংলাদেশ দখল করতে পারে, তবে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্বিগুণ হয়ে ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার হবে। প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৫৪ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। আর পরোক্ষভাবে আরও ১ কোটি ৩৫ লোক কাজ পাবেন।
প্রথম আলো: বর্তমান বিশ্বে আঞ্চলিক যোগাযোগ বা কানেক্টিভিটি বাণিজ্য সম্প্রসারণের বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশ কীভাবে এই কানেক্টিভিটি থেকে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ থেকে সুফল পেতে পারে?
সঞ্জয় কাঠুরিয়া: দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে এমন একটি উদ্যোগ রয়েছে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই চার দেশের মধ্যে যান চলাচল চুক্তি হয়েছে। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। এই সফরে বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি, জ্বালানি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের সুযোগ সব সময় আসে না। বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এ ধরনের কানেক্টিভিটি বাংলাদেশের সামনে বড় সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারতের নীতির মধ্যেও ‘লুক ইস্ট’ রয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
প্রথম আলো: আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে প্রধান বাধা কী?
সঞ্জয় কাঠুরিয়া: আমার অবস্থান থেকে এটা বলা খুব মুশকিল। তবে রাজনীতির বাইরে গিয়ে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগটি এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এখন বিষয় হলো, কীভাবে কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি করব। অবশ্যই অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, এর সঙ্গে সহায়ক নীতিও দরকার হবে। আমি মনে করি, শুধু সড়কব্যবস্থার উন্নয়ন করে পূর্ণাঙ্গ কানেক্টিভিটি সম্ভব নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই নদীভিত্তিক যোগাযোগও তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া নদীভিত্তিক যোগাযোগ অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী। মোটাদাগে, কানেক্টিভিটি হতে হবে বহুমাত্রিক। এ ছাড়া সীমান্তে পণ্য ও যাত্রী চলাচলব্যবস্থা সহজ ও মসৃণ করতে হবে। ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সহজেই নেপাল ও ভুটানে যেতে পারবে বাংলাদেশের পণ্য।
আশা করি, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সড়ক, নৌ, রেলসহ একটি বহুমাত্রিক কানেক্টিভিটি গড়ে উঠবে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ ঘোষণায় এ কথা উল্লেখ রয়েছে। সব মিলিয়ে কানেক্টিভিটির সঙ্গে নীতি ইস্যু, শুল্কায়ন প্রক্রিয়া ও বিনিয়োগ—এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। আশার কথা, এ অঞ্চলে এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে।
প্রথম আলো: আন্তদেশীয় যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য বড় বড় অবকাঠামো তৈরি প্রয়োজন। এর বিনিয়োগ আসবে কীভাবে?
সঞ্জয় কাঠুরিয়া: হয় সরকারি; না হয় বেসরকারি উৎস থেকেই বিনিয়োগ আসতে হবে। তবে বেসরকারি বিনিয়োগ এত সহজ নয়। কেননা, এতে কত সময়ে বিনিয়োগ উঠে আসবে, সেই বিষয়টি বিবেচনায় থাকে। তাই স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বিনিয়োগের বিশাল অংশ সরকারি খাত থেকেই আসতে হবে। এর অতিরিক্ত বিনিয়োগ আসতে পারে বেসরকারি খাত থেকে। আমরা জানি, ভারত এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। ভারতের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে অনেক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আর ভালো ও সম্ভাবনাময় প্রকল্প হলে অর্থ আসবেই। শেষ পর্যন্ত এমন প্রকল্পে অর্থায়ন বাধা হবে না। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।
প্রথম আলো: বহুলভাবে বলা হয়, আন্তদেশীয় যোগাযোগে বড় অর্থনীতির দেশগুলো বেশি লাভবান হয়। ভারতের মতো বড় দেশকে নিয়ে এ ধরনের যোগাযোগব্যবস্থায় বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে?
সঞ্জয় কাঠুরিয়া: দক্ষিণ এশিয়ার আন্তদেশীয় যোগাযোগ নিয়ে আমরা ‘সার্ক নোট’ নামে প্রথম পলিসি নোট প্রকাশ করেছি। ধারাবাহিকভাবে আরও প্রকাশ করব। প্রথম সার্ক নোটে আঞ্চলিক যোগাযোগে ছোট দেশগুলো কীভাবে বেশি লাভবান হতে পারে, সে বিষয়ে নোট দিয়েছি। বড় বিষয় হলো, আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়লে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর বড় বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ পায় ছোট অর্থনীতির দেশ। উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, ভারত প্রতিবছর ৪৫ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। বাংলাদেশ যদি এর ৫ শতাংশ নিতে পারে, তবে এ দেশের রপ্তানির পরিমাণ বিপুলভাবে বেড়ে যাবে। তবে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে তা অর্জন করা যাবে না। কেননা, ভারতও তৈরি পোশাক বানায়। তাই বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনা, নতুন নতুন পণ্য রপ্তানি করার উদ্যোগ নিতে হবে। রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু এ খাতে বিনিয়োগ আনতে বাংলাদেশ এখনো সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছে না।
প্রথম আলো: বিদেশি বিনিয়োগ আনতে কী করা উচিত?
সঞ্জয় কাঠুরিয়া: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথমত, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে। বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে তারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ফ্যাসিলিটেড করতে পারে। দ্বিতীয়ত, জমির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, জ্বালানির নিশ্চয়তা থাকতে হবে। বিশেষ করে দেশের সমস্যা হোক না কেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কারখানার অঞ্চলে জ্বালানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকতে হবে।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাহাঙ্গীর শাহ
No comments