কোরাম সংকটে অপচয় ৩২ কোটি টাকা
দশম
জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশনে প্রতিদিনই গড়ে ২৬ মিনিট কোরাম
সংকট হয়েছে। এ ৫টি অধিবেশনের ১১২ কার্যদিবসে কোরাম সংকট ছিল ৪৮ ঘণ্টা ৪১
মিনিট। সংসদ অধিবেশন পরিচালনা করতে প্রতি মিনিটে গড় ব্যয় প্রায় ১ লাখ ১১
হাজার টাকা। অর্থাৎ কোরাম সংকটে ৩২ কোটি ৪২ লাখ ৩১ হাজার টাকা অপচয় হয়েছে। এ
সময়ে সরকার ও বিরোধী দল তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি স্পিকারও
শক্তিশালী ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড.
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সবকিছু দেখে মনে হয়, বর্তমান সংসদ যেন পুতুলনাচের
একটি নাট্যশালা। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে সংসদের কার্যক্রমে আমরা হতাশ।
সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়। সংসদীয় আচরণ থেকে
ব্যাপক বিচ্যুতি ঘটছে। তিনি আরও বলেন, বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত
তথাকথিত বিরোধী দলের কার্যকর কোন ভূমিকা নেই। মূলত ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র
ভুবন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সংসদ। নিয়ম রক্ষার্থে এ সংসদ চলছে। তাই
বিতর্ক এড়াতে নতুন নির্বাচন প্রয়োজন।
গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘পার্লামেন্টওয়াচ’বিষয়ক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনটিতে জুন ২০১৪ ও আগস্ট ২০১৫ পর্যন্ত (দশম সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশন) পরিমাণবাচক এবং গুণবাচক তথ্য সংগৃহীত হয়। প্রত্যক্ষ তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সংসদ টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত সংসদ কার্যক্রম এবং টিআইবির গবেষণা দলের সদস্য কর্তৃক অধিবেশন সরাসরি পর্যবেক্ষণ। এ ছাড়া পরোক্ষ তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয় সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত বুলেটিন ও কমিটি প্রতিবেদন, সরকারি গেজেট, প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন, বই ও প্রবন্ধ ও সংবাদপত্রের তথ্য ইত্যাদি। প্রতিবেদন উত্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফাতেমা আফরোজ ও মোরশেদা আক্তার। এ সময় টিআইবির নির্বাহী উপনির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়েট রোজেটি উপস্থিত ছিলেন।
টিআইবির ১২ দফা: সংসদীয় গণতন্ত্র সুদৃঢ় এবং সংসদকে কার্যকর ও জবাবদিহিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে ১২ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, অসংসদীয় আচরণ এবং ভাষার ব্যবহার বন্ধে স্পিকারকে অধিকতর শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিরোধী দলকে বিতর্কিত অবস্থান পরিহার করে প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনার জন্য বেশি সময় বরাদ্দ করতে হবে। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় এমপিদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। সংসদীয় কমিটির সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টি পুরোপুরিভাবে বিবেচনায় নিতে হবে।
প্রত্যাশিতপর্যায়ে কার্যকর হয়নি সংসদ: গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দশম সংসদের ৫টি অধিবেশনে আইন পাসের জন্য কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ প্রধান বিরোধী দলের প্রত্যাশিত জোরালো ভূমিকার ঘাটতি; সংসদের বাইরের রাজনৈতিক জোট নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক সমালোচনা ও অশালীন ভাষার প্রাধান্য; অসংসদীয় আচরণ ও ভাষার ব্যবহার বন্ধে স্পিকারের শক্তিশালী ভূমিকার অনুপস্থিতি, বিধান থাকলেও আন্তর্জাতিক চুক্তিবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত না হওয়া, আইন প্রণয়ন, প্রশ্নোত্তর ও জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশের আলোচনায় সদস্যদের কম অংশগ্রহণ, কমিটির সদস্যদের ব্যবসায়িক সংশ্লিষ্টতাসহ স্বার্থের দ্বন্দ্ব, সংসদীয় কার্যক্রমে তথ্যের উন্মুক্ততা ও অভিগম্যতার ঘাটতি ইত্যাদি কারণে সংসদ প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর হয়নি। এ ছাড়া স্বতন্ত্র সদস্যদের মধ্যে ৬৩ ভাগ সরকারি জোটের প্রধান দলের সাংগঠনিক পদে বহাল রয়েছে। এতে আরও বলা হয়, পর্যবেক্ষণাধীন অধিবেশনগুলোতে সংসদীয় আলোচনার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো সরকারি দল ও ‘প্রধান বিরোধী দল’ সম্মিলিতভাবে একই সুরে সংসদের বাইরে রাজনৈতিক দলের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। সরকারের মন্ত্রিসভার অংশবিশেষ এই কথিত ‘প্রধান বিরোধী দলের’ সরকারের লেজুড়বৃত্তি ছিল পরিষ্কার। তদুপরি সরকার দলের পক্ষ থেকেও এই লেজুড়বৃত্তিকে বিভিন্নভাবে দশম সংসদের ইতিবাচক অর্জন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা অব্যাহত ছিল। তবে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন ইস্যুতে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিপক্ষের সমালোচনা বেড়েছে ১২ গুণ: ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একটি দল বা জোট যাদের সংসদে উপস্থিত নেই, তাদের নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। প্রতিপক্ষের সমালোচনা আগের সংসদের চেয়ে ১২ গুণ বেড়েছে। এটা কারও কাম্য নয়। তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটির মূল দায়িত্ব পালনের প্রতি অনীহা ও সংসদ সদস্যদের অবহেলা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। অষ্টম, নবম ও দশম সংসদের দ্বিতীয়-ষষ্ঠ অধিবেশনের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিজ দল ও সরকার দলের প্রশংসা হয়েছে ৭৫০০ বার, সংসদের বাইরের রাজনৈতিক জোটের সমালোচনা হয়েছে ৭২৬৮ বার। নবম সংসদে বিরোধী দলের উপস্থিতির হার চার শতাংশ। এবার বিরোধী দলের উপস্থিতি ৫৩ শতাংশ। সেদিক থেকে সংসদে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে বিরোধী দল কতটুকু বিরোধী তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। কমিটিতে অনেক সদস্যের কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা ও সিদ্ধান্ত প্রহণে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদাধিকার বলে সদস্য হওয়ার কারণে এবং কোনো কোনো কমিটিতে আগের মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির সভাপতি হওয়ায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশনের কার্যদিবসগুলোর মধ্যে প্রধান বিরোধী দল এবং অন্যান্য বিরোধী সদস্য ছয়বার ওয়াকআউট করে। পাঁচটি অধিবেশনে ৩০টি বিল পাস হয়। এ ক্ষেত্রে প্রায় ২১ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট সময় ব্যয় করা হয়, যা অধিবেশনগুলোর ব্যয়িত মোট সময়ের ৬ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব মোট ১৫টি কার্যদিবসে অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বে ৫৬ জন সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করেন যাদের মধ্যে ৪১ জন সরকারি দলের, ১১ জন প্রধান বিরোধী দলের এবং ৪ জন অন্যান্য বিরোধী সদস্য। মন্ত্রীদের প্রশ্নোত্তর পর্বে ৪৯টি কার্যদিবসে মোট ২০৫ জন সদস্য অধিবেশনের মোট সময়ের প্রায় ১৪ শতাংশ সময় অংশগ্রহণ করেন। মোট ২৯২টি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক (৩৪টি) ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট।
দায় এড়াতে নতুন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন: টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, সংসদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন কার্যবলিতে এমপিদের অংশগ্রহণ হতাশাজনক। ৩৫০ এমপির মধ্যে মাত্র ২৯ জন সদস্য আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার মনে হয় এমপিদের আইন প্রণয়ন কার্যবলি সম্পর্কিত আলোচনায় অংশ নেয়ার যোগ্যতা বা দক্ষতা নেই। একই সঙ্গে এটিও হতে পারে, এমপিদের আইন সম্পর্কিত কার্যবলিতে আলোচনায় অংশ নেয়ার মানসিকতা নেই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিতর্কিত নির্বাচনের দায় এড়াতে গেলে নতুন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন। তবে সেটা কখন, কীভাবে হবে, সেটা রাজনীতির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে দ্রুতই সংসদকে সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘পার্লামেন্টওয়াচ’বিষয়ক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনটিতে জুন ২০১৪ ও আগস্ট ২০১৫ পর্যন্ত (দশম সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশন) পরিমাণবাচক এবং গুণবাচক তথ্য সংগৃহীত হয়। প্রত্যক্ষ তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সংসদ টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত সংসদ কার্যক্রম এবং টিআইবির গবেষণা দলের সদস্য কর্তৃক অধিবেশন সরাসরি পর্যবেক্ষণ। এ ছাড়া পরোক্ষ তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয় সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত বুলেটিন ও কমিটি প্রতিবেদন, সরকারি গেজেট, প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন, বই ও প্রবন্ধ ও সংবাদপত্রের তথ্য ইত্যাদি। প্রতিবেদন উত্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফাতেমা আফরোজ ও মোরশেদা আক্তার। এ সময় টিআইবির নির্বাহী উপনির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়েট রোজেটি উপস্থিত ছিলেন।
টিআইবির ১২ দফা: সংসদীয় গণতন্ত্র সুদৃঢ় এবং সংসদকে কার্যকর ও জবাবদিহিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে ১২ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, অসংসদীয় আচরণ এবং ভাষার ব্যবহার বন্ধে স্পিকারকে অধিকতর শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিরোধী দলকে বিতর্কিত অবস্থান পরিহার করে প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনার জন্য বেশি সময় বরাদ্দ করতে হবে। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় এমপিদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। সংসদীয় কমিটির সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টি পুরোপুরিভাবে বিবেচনায় নিতে হবে।
প্রত্যাশিতপর্যায়ে কার্যকর হয়নি সংসদ: গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দশম সংসদের ৫টি অধিবেশনে আইন পাসের জন্য কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ প্রধান বিরোধী দলের প্রত্যাশিত জোরালো ভূমিকার ঘাটতি; সংসদের বাইরের রাজনৈতিক জোট নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক সমালোচনা ও অশালীন ভাষার প্রাধান্য; অসংসদীয় আচরণ ও ভাষার ব্যবহার বন্ধে স্পিকারের শক্তিশালী ভূমিকার অনুপস্থিতি, বিধান থাকলেও আন্তর্জাতিক চুক্তিবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত না হওয়া, আইন প্রণয়ন, প্রশ্নোত্তর ও জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশের আলোচনায় সদস্যদের কম অংশগ্রহণ, কমিটির সদস্যদের ব্যবসায়িক সংশ্লিষ্টতাসহ স্বার্থের দ্বন্দ্ব, সংসদীয় কার্যক্রমে তথ্যের উন্মুক্ততা ও অভিগম্যতার ঘাটতি ইত্যাদি কারণে সংসদ প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর হয়নি। এ ছাড়া স্বতন্ত্র সদস্যদের মধ্যে ৬৩ ভাগ সরকারি জোটের প্রধান দলের সাংগঠনিক পদে বহাল রয়েছে। এতে আরও বলা হয়, পর্যবেক্ষণাধীন অধিবেশনগুলোতে সংসদীয় আলোচনার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো সরকারি দল ও ‘প্রধান বিরোধী দল’ সম্মিলিতভাবে একই সুরে সংসদের বাইরে রাজনৈতিক দলের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। সরকারের মন্ত্রিসভার অংশবিশেষ এই কথিত ‘প্রধান বিরোধী দলের’ সরকারের লেজুড়বৃত্তি ছিল পরিষ্কার। তদুপরি সরকার দলের পক্ষ থেকেও এই লেজুড়বৃত্তিকে বিভিন্নভাবে দশম সংসদের ইতিবাচক অর্জন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা অব্যাহত ছিল। তবে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন ইস্যুতে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিপক্ষের সমালোচনা বেড়েছে ১২ গুণ: ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একটি দল বা জোট যাদের সংসদে উপস্থিত নেই, তাদের নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। প্রতিপক্ষের সমালোচনা আগের সংসদের চেয়ে ১২ গুণ বেড়েছে। এটা কারও কাম্য নয়। তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটির মূল দায়িত্ব পালনের প্রতি অনীহা ও সংসদ সদস্যদের অবহেলা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। অষ্টম, নবম ও দশম সংসদের দ্বিতীয়-ষষ্ঠ অধিবেশনের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিজ দল ও সরকার দলের প্রশংসা হয়েছে ৭৫০০ বার, সংসদের বাইরের রাজনৈতিক জোটের সমালোচনা হয়েছে ৭২৬৮ বার। নবম সংসদে বিরোধী দলের উপস্থিতির হার চার শতাংশ। এবার বিরোধী দলের উপস্থিতি ৫৩ শতাংশ। সেদিক থেকে সংসদে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে বিরোধী দল কতটুকু বিরোধী তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। কমিটিতে অনেক সদস্যের কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা ও সিদ্ধান্ত প্রহণে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদাধিকার বলে সদস্য হওয়ার কারণে এবং কোনো কোনো কমিটিতে আগের মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির সভাপতি হওয়ায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশনের কার্যদিবসগুলোর মধ্যে প্রধান বিরোধী দল এবং অন্যান্য বিরোধী সদস্য ছয়বার ওয়াকআউট করে। পাঁচটি অধিবেশনে ৩০টি বিল পাস হয়। এ ক্ষেত্রে প্রায় ২১ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট সময় ব্যয় করা হয়, যা অধিবেশনগুলোর ব্যয়িত মোট সময়ের ৬ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব মোট ১৫টি কার্যদিবসে অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বে ৫৬ জন সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করেন যাদের মধ্যে ৪১ জন সরকারি দলের, ১১ জন প্রধান বিরোধী দলের এবং ৪ জন অন্যান্য বিরোধী সদস্য। মন্ত্রীদের প্রশ্নোত্তর পর্বে ৪৯টি কার্যদিবসে মোট ২০৫ জন সদস্য অধিবেশনের মোট সময়ের প্রায় ১৪ শতাংশ সময় অংশগ্রহণ করেন। মোট ২৯২টি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক (৩৪টি) ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট।
দায় এড়াতে নতুন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন: টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, সংসদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন কার্যবলিতে এমপিদের অংশগ্রহণ হতাশাজনক। ৩৫০ এমপির মধ্যে মাত্র ২৯ জন সদস্য আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার মনে হয় এমপিদের আইন প্রণয়ন কার্যবলি সম্পর্কিত আলোচনায় অংশ নেয়ার যোগ্যতা বা দক্ষতা নেই। একই সঙ্গে এটিও হতে পারে, এমপিদের আইন সম্পর্কিত কার্যবলিতে আলোচনায় অংশ নেয়ার মানসিকতা নেই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিতর্কিত নির্বাচনের দায় এড়াতে গেলে নতুন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন। তবে সেটা কখন, কীভাবে হবে, সেটা রাজনীতির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে দ্রুতই সংসদকে সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
No comments