সাজ্জাদের বাড়িতে কারবালার মাতম ‘কর্তৃপক্ষ হয়রানি করছে’
কারবালার
মাতম সাজ্জাদের বাড়িতে। কারবালাকে স্মরণ করে তাজিয়া মিছিল বের হবে সকালে।
রাতে চলছে প্রস্তুতি। কে জানতো এখানে ঘটে যাবে আরেক কারবালা। সপ্তম
শ্রেণীতে পড়তো সাজ্জাদ। অন্য সবার মতো সেও ঘর থেকে বেরিয়ে তাজিয়া মিছিলের
প্রস্তুতি দেখতে যায় হোসনি দালানে। হঠাৎ বিকট শব্দ। কেঁপে ওঠে আশপাশ।
সাজ্জাদ লাশ হয়ে ফিরলো ঘরে। তরতাজা ছেলে ঘর থেকে বেরিয়ে লাশ হয়ে ফিরলো দেখে
সাজ্জাদের মা’র কান্নার শক্তিও হারিয়ে গেছে। শোকে পাথর হয়ে গেছেন তিনি।
শুক্রবার গভীর রাতে বোমা হামলায় নিহত সাজ্জাদের বাড়িতে এখন এমন পরিবেশ।
পাঁচ ভাই আর দুই বোনের মধ্যে সাজ্জাদ সবার ছোট। সাজ্জাদের বাবা নাসের পেশায়
চাকরিজীবী। অন্য সন্তানরা তেমন লেখাপড়া না করায় ছোট ছেলেকে নিয়ে তার
স্বপ্নের কমতি ছিলো না। কেরানীগঞ্জের চরাইলের নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে
সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলো সাজ্জাদ। পড়াশোনার বাইরে ক্রিকেট খেলা ছিলো তার
সবচেয়ে শখের কাজ। তাই তো প্রায়ই বাবার কাছে আবদার করতো ভালো কোথাও ক্রিকেট
প্র্যাকটিস করার ব্যবস্থা করে দিতে। ‘তুমি আগে এসএসসি পরীক্ষা দাও। ভালো
রেজাল্ট করো। তারপর তোমাকে ক্লাবে ভর্তি করে দেবো।’ এই ছিলো বাবার উত্তর।
কথাগুলো বলতেই কান্নায় বুক ভারি হয়ে যায় নাসির আহমেদের। কিছুক্ষণ চুপ থেকে
আবার বলে উঠেন, সাজ্জাদ ছিলো আমার হাতের লাঠি। রোজকার বাজারে আমার সঙ্গে
যেতো। এটা-ওটা কিনে দিতে আবদার করতো। কখনও ওর আবদার ফেলে দিতাম না।
সাজ্জাদের মা বলেন, তাজিয়া মিছিলে যাওয়ার দিন আমাকে বললো- মা আমাকে টাকা
দাও, পিঠা আনবো। পিঠা আনলো সবার জন্য। সবাইকে খেতে দিলো। এটাই ছিলো আমার
সঙ্গে আমার কলিজার টুকরার শেষ কথা। গত ২০শে অক্টোবর ছিলো সাজ্জাদের ১৪তম
জন্মদিন। প্রতিবার ঘরোয়া আয়োজনে ধুমধাম করে পালন করা হয়। পরিবারের ছোট
সন্তান বলে কথা। কিন্তু এবছর আশুরার ব্যস্ততায় নিঃশব্দে কেটে গেছে দিনটি।
এনিয়ে অভিমানেরও কমতি ছিলো না সাজ্জাদের। কখনও ভাবিকে, কখনও মাকে গিয়ে
বলতো- তোমরা এবার আমার জন্মদিন পালন করোনি। বোমা হামলায় সাজ্জাদের সঙ্গে
আহত হয়েছেন তার ভাবি, ভাগ্নি ও খালা। পায়ের জখম নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে
বাসায় ফিরেছেন ভাবি। তবে সাজ্জাদের খালা ও ভাগ্নির অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।
সাজ্জাদের ভাবি সুমি জানান, হঠাৎ বিকট শব্দ। চারদিকে অন্ধকার দেখছিলাম।
সবাই যার যার মতো দৌড়াচ্ছে। বোমাটি এসে পড়ে আমাদের খুব কাছে। বোমার
স্প্লিন্টারে কিছু বলতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ পর দেখি আমরা আহতাবস্থায়
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছি। পাশেই ছিলো পুলিশের গাড়ি। অনেক অনুরোধ করার পরও তারা
গাড়িতে তোলেনি। কিছুক্ষণ পরে এম্বুলেন্স এসে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যায়।
সাজ্জাদের বোন বলেন, ডাক্তার-নার্সদের কাছে ধরনা দিতে দিতে আমরা অস্থির হয়ে
গেছি। কিন্তু তারা আমার ভাইকে একবারের জন্য চেয়েও দেখেনি। ডাক্তারদের
আন্তরিকতা থাকলে হয়তো আমার ভাইকে বাঁচানো যেত। সাজ্জাদের পুরো নাম- সাজ্জাদ
হোসেন সাঞ্জু। সাঞ্জু নামেই তাকে ডাকতো সবাই। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা
বলে বের হতেই চোখে পড়লো- কাঠের দরজায় সাজ্জাদের নিজ হাতের লেখা ‘সাঞ্জু’
নামটি। এসব দেখে সবাই মাতম করছে। কারবালার মাতম।
কর্তৃপক্ষ হয়রানি করছে, অভিযোগ পরিবারের
এদিকে, বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় শিয়া সমপ্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসেনি দালানে হামলায় নিহত কিশোর সাজ্জাদ হোসেন সানজুর বাড়িতে এখনও স্তব্ধ তার পরিবার। শিয়াদের মিছিলে হামলা হলেও নিহত সাজ্জাদের পরিবার কিন্তু সুন্নি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়তো ১৫ বছর বয়সী সানজু। তার সহপাঠী, শিক্ষক ও পাড়া প্রতিবেশীরা রোববারও সমবেদনা জানাতে বাড়িতে এসে ভিড় করেছেন। তার পরিবার বলছে, হোসেনি দালানের ভেতরে এমন ঘটনা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এর পেছনে জড়িতদের বিচার না হলে তা হবে সরকারের ব্যর্থতা। কর্তৃপক্ষ তাদের হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ করছে নিহত সাজ্জাদ হোসেন সানজুর পরিবার, যারা বসবাস করেন ঢাকার কাছেই কেরানীগঞ্জে। কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা এলাকায় যে বাড়িতে সানজুর পরিবারের বাস সেখানে গিয়ে দেখা গেলো মেঝের উপর গোল হয়ে বসে আছেন সবাই। কোন কথা নেই কারো মুখে। মা রাশেদা বলছিলেন পাঁচ ভাই ও দু’বোনের মধ্যে সব চাইতে ছোট সানজু ক্রিকেট খেলা নিয়ে খুব আগ্রহী ছিল। স্থানীয় চরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র ছিল সানজু। ক’দিন ধরে স্কুলের ছুটি চলছিল। মা রাশেদা জানালেন কয়েকদিন ধরেই তাই সে তাজিয়ার মিছিলে যাবার ব্যাপারে খুব ইচ্ছা প্রকাশ করছিল। বোমা হামলার ঘটনায় এই পরিবারের আরও তিনজন আহত হয়েছেন। সানজুর ভাবি সুমি বেগম তাদের একজন। তিনি বলছিলেন, ঘটনার পর সানজুকে নিয়ে যখন হাসপাতালে ছুটছিলেন, তখন কারো সহযোগিতা পাননি। মাত্র ক’দিন আগেই তোলা সানজুর একটি ফটোগ্রাফ হাতে নিয়ে ঘরের এক কোনায় বসে ছিলেন বাবা মোহাম্মদ নাসির। সেটি সবাইকে দেখাচ্ছিলেন তিনি। মি. নাসের বলছিলেন, তারা সুন্নি মুসলিম হলেও শিয়া সমপ্রদায়ের এই আয়োজনে নিয়মিত অংশ নিতেন। হোসেনি দালানের ভেতরে ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজনে এমন ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য এক দুর্ভাগ্য বলে অভিহিত করলেন মোহাম্মদ নাসির।
তিনি আরও বলছেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরে বিচারের আওতায় না আনা গেলে তা হবে সরকারের ব্যর্থতা। ঘটনার পর থেকেই বারবার পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডাক পড়ছে এই পরিবারের সদস্যদের। মি. নাসির বলছেন, কর্তৃপক্ষের কেউ এখনও আসেননি তার বাড়িতে, বরং তাদেরকেই বারবার ডাকা হচ্ছে। অনেক রাত অবধি থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। এই প্রতিবেদকের সামনেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ফোন পান মি. নাসির। তিনি বলছিলেন, ফোনে তাকে বলা হলো জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের অফিসে যেতে। “আমারে বলতেছে তাড়াতাড়ি আসেন নাইলে কিন্তু পাইবেন না। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী পামু না। তখন ওরা বললো মুরব্বি একটু আসেন তারপর কথা বলি। দ্যাখেন যার ছেলে হারায় তার তো এমনিতেই অবস্থা অন্য রকম থাকে। মনে করেন পুলিশ বা অন্যরা তারে নিয়া যদি টানাহেঁচড়া করেন, বারবার ডাকেন, পেরেশানি করেন, তাইলে তো ঐ মানুষটারে মাইরা ফালানের অবস্থা!” এই বিষয়টিকে শোকসন্তপ্ত একটি পরিবারের জন্য চরম এক হয়রানি বলেও মনে করছেন তিনি। তবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখন কিছুই চান না সাজ্জাদ হোসেন সানজুর পরিবার। শুধু ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের দাবি করছেন তারা।
কর্তৃপক্ষ হয়রানি করছে, অভিযোগ পরিবারের
এদিকে, বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় শিয়া সমপ্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসেনি দালানে হামলায় নিহত কিশোর সাজ্জাদ হোসেন সানজুর বাড়িতে এখনও স্তব্ধ তার পরিবার। শিয়াদের মিছিলে হামলা হলেও নিহত সাজ্জাদের পরিবার কিন্তু সুন্নি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়তো ১৫ বছর বয়সী সানজু। তার সহপাঠী, শিক্ষক ও পাড়া প্রতিবেশীরা রোববারও সমবেদনা জানাতে বাড়িতে এসে ভিড় করেছেন। তার পরিবার বলছে, হোসেনি দালানের ভেতরে এমন ঘটনা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এর পেছনে জড়িতদের বিচার না হলে তা হবে সরকারের ব্যর্থতা। কর্তৃপক্ষ তাদের হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ করছে নিহত সাজ্জাদ হোসেন সানজুর পরিবার, যারা বসবাস করেন ঢাকার কাছেই কেরানীগঞ্জে। কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা এলাকায় যে বাড়িতে সানজুর পরিবারের বাস সেখানে গিয়ে দেখা গেলো মেঝের উপর গোল হয়ে বসে আছেন সবাই। কোন কথা নেই কারো মুখে। মা রাশেদা বলছিলেন পাঁচ ভাই ও দু’বোনের মধ্যে সব চাইতে ছোট সানজু ক্রিকেট খেলা নিয়ে খুব আগ্রহী ছিল। স্থানীয় চরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র ছিল সানজু। ক’দিন ধরে স্কুলের ছুটি চলছিল। মা রাশেদা জানালেন কয়েকদিন ধরেই তাই সে তাজিয়ার মিছিলে যাবার ব্যাপারে খুব ইচ্ছা প্রকাশ করছিল। বোমা হামলার ঘটনায় এই পরিবারের আরও তিনজন আহত হয়েছেন। সানজুর ভাবি সুমি বেগম তাদের একজন। তিনি বলছিলেন, ঘটনার পর সানজুকে নিয়ে যখন হাসপাতালে ছুটছিলেন, তখন কারো সহযোগিতা পাননি। মাত্র ক’দিন আগেই তোলা সানজুর একটি ফটোগ্রাফ হাতে নিয়ে ঘরের এক কোনায় বসে ছিলেন বাবা মোহাম্মদ নাসির। সেটি সবাইকে দেখাচ্ছিলেন তিনি। মি. নাসের বলছিলেন, তারা সুন্নি মুসলিম হলেও শিয়া সমপ্রদায়ের এই আয়োজনে নিয়মিত অংশ নিতেন। হোসেনি দালানের ভেতরে ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজনে এমন ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য এক দুর্ভাগ্য বলে অভিহিত করলেন মোহাম্মদ নাসির।
তিনি আরও বলছেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরে বিচারের আওতায় না আনা গেলে তা হবে সরকারের ব্যর্থতা। ঘটনার পর থেকেই বারবার পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডাক পড়ছে এই পরিবারের সদস্যদের। মি. নাসির বলছেন, কর্তৃপক্ষের কেউ এখনও আসেননি তার বাড়িতে, বরং তাদেরকেই বারবার ডাকা হচ্ছে। অনেক রাত অবধি থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। এই প্রতিবেদকের সামনেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ফোন পান মি. নাসির। তিনি বলছিলেন, ফোনে তাকে বলা হলো জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের অফিসে যেতে। “আমারে বলতেছে তাড়াতাড়ি আসেন নাইলে কিন্তু পাইবেন না। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী পামু না। তখন ওরা বললো মুরব্বি একটু আসেন তারপর কথা বলি। দ্যাখেন যার ছেলে হারায় তার তো এমনিতেই অবস্থা অন্য রকম থাকে। মনে করেন পুলিশ বা অন্যরা তারে নিয়া যদি টানাহেঁচড়া করেন, বারবার ডাকেন, পেরেশানি করেন, তাইলে তো ঐ মানুষটারে মাইরা ফালানের অবস্থা!” এই বিষয়টিকে শোকসন্তপ্ত একটি পরিবারের জন্য চরম এক হয়রানি বলেও মনে করছেন তিনি। তবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখন কিছুই চান না সাজ্জাদ হোসেন সানজুর পরিবার। শুধু ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের দাবি করছেন তারা।
No comments