হাভানায় আবার চালু মার্কিন দূতাবাস
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পর কিউবার রাজধানী হাভানায় যুক্তরাষ্ট্র আবার দূতাবাস খুলেছে। গতকাল শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আনুষ্ঠানিকভাবে ওই দূতাবাস চালু করেন। এ সময় তিনি কিউবায় ‘প্রকৃত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। খবর এএফপি ও বিবিসির। জন কেরির উপস্থিতিতে সাবেক তিন মার্কিন মেরিন সেনা, ১৯৬১ সালে যাঁরা এই দূতাবাসে মার্কিন পতাকা নামিয়েছিলেন শেষবার, তাঁরাই গতকাল আবার সেই পতাকা উত্তোলন করেন। জন কেরি গত ৭০ বছরে কমিউনিস্ট কিউবার মাটিতে পা রাখা প্রথম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে ঐতিহাসিক সম্পর্ক উন্নয়ন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে দূতাবাস চালু করে কিউবা। জন কেরি বলেন, কিউবার বিষয়ে মার্কিন নীতি পরিবর্তনের মানে এই নয় যে কমিউনিস্ট এই দ্বীপরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ব্যাপারে ওয়াশিংটন চাপ দেওয়া বন্ধ করে দেবে। তিনি বলেন, ‘হাভানার নেতাদের এবং কিউবার জনগণের আরও জানা উচিত, গণতান্ত্রিক নীতি ও সংস্কারের বিষয় যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই চ্যাম্পিয়ন থাকবে।’ এদিকে কিউবার বিপ্লবী নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো জাতির উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। এতে দীর্ঘদিনের বৈরী প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে তিরস্কার ও সমালোচনা রয়েছে। তবে কৌতূহলের বিষয় হচ্ছে, এতে ঐতিহাসিক সম্পর্ক উন্নয়ন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কিউবায় মার্কিন দূতাবাস আবার চালু করার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য ছিল না।
কাস্ত্রোর ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম গত বৃহস্পতিবার ওই খোলা চিঠি প্রকাশ করে। তবে কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এ নীতির সমালোচনা করে আসছেন ওবামা প্রশাসনের রক্ষণশীল বিরোধীরা। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কো রুবিয়ো ও জেব বুশসহ নেতৃস্থানীয় রিপাবলিকানেরা কেরির এই সফরের বিষয়ে তীর্যক মন্তব্য করেছেন। কিউবার ভিন্নমতাবলম্বীদের অনুপস্থিতিতে দেশটিতে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় তীব্র সমালোচনা করেছেন কিউবান-আমেরিকান সিনেটর রুবিয়ো। তবে কেরি মত প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সম্পর্কচ্ছেদ এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা কিউবাকে সংস্কারের পথে আনতে ব্যর্থ হয়েছে...এবং অবশ্যই নতুন পথ খুঁজতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় অনেক বিপত্তি রয়েছে। তবে এটা শুরু।’ এক দিনের ওই সফরে কেরির সঙ্গে যাওয়া সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন। স্নায়ুযুদ্ধের এক চরম উত্তেজনাকর মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের একেবারে নাকের ডগায় কমিউনিস্টরা যখন কিউবায় ক্ষমতায় এল, তারপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে চরম বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করতে থাকে। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছে দুই দশকেরও বেশি আগে। এরপরও স্বাভাবিক হয়নি দুই দেশের সম্পর্ক। গত ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ওবামা আর কিউবার নেতা রাউল কাস্ত্রো শেষ পর্যন্ত এই ঐতিহাসিক বৈরিতার অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন।
No comments