মরছে কাঁকড়া, দেখা নেই কুমিরের by ইফতেখার মাহমুদ ও মামুনুর রশীদ
সুন্দরবনে
ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কার থেকে নিঃসৃত তেলে জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়ার
আশঙ্কা সত্যি হতে চলেছে। আজ শুক্রবার কাঁকড়াগুলো কালো কালো তেলে মরে যেতে
দেখা গেছে। নদীতে দেখা মিলছে না কুমিরের। আজ প্রথম আলোর এই দুই প্রতিবেদক
সুন্দরবনের তেল ছড়িয়ে পড়া এলাকা সরেজমিনে দেখেছেন। সুন্দরবনের চাঁদপাই
বনফাঁড়ি থেকে পশুর নদী দিয়ে ট্রলারে আধঘণ্টা যেতেই মৃগমারী খাল। খালের
মাথায় টানানো জাল। বনের মধ্যে তেল যেন ঢুকতে না পারে, সে জন্যই জেলেরা
জালগুলো টানিয়েছেন। কিন্তু দুবারের জোয়ার–ভাটার সঙ্গে ভেসে আসা তেলের
আস্তরণ লেগে সেই জাল ছিঁড়ে গেছে। খালের মাথায় নৌকা নিয়ে জাল দিয়ে
কাঁকড়া ধরতে দেখা গেল ফারুক খান নামের একজন বনজীবীকে। কাঁকড়া তুলে বনের
মধ্যে রেখে তা পানি দিয়ে ধুচ্ছিলেন তিনি। কী করছেন? জানতে চাইলে একপলক
তাকিয়ে আবারও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে তিনি বললেন, ‘তেল দিয়ে বন ভাসায়ে
দেছে। এখন কাঁকড়াগুলোও মরতি বসিছে। সব কাঁকড়ার গায়েই তেল লেগি আছে। এরাম
আর কয়দিন চললি বনের সব কাঁকড়া মইরে যাবেনে। কাঁকড়া মরলি অমরা ধরব কী,
বেচপো কী আর খাব কী?’
ফারুক খানের সঙ্গে কথা শেষ করে ট্রলার এগুলো কুমিরের চরের দিকে। ভাটার সময় পানি নেমে গেলে চরের মধ্যে ছয় থেকে সাতটি কুমির এমনিতেই শুয়ে থাকতে দেখা যেত, জানিয়ে ট্রলারের চালক আলম শেখ বললেন, ‘গেল তিন দিন এই চরে কোনো কুমির দেখিনি। সব পলায়ছে।’
বনের মৃগমারীর সীমানা পেরিয়ে তাম্বুলবুনিয়া, আন্ধারমানিক হয়ে আবারও জয়মনির ঘোল গ্রামে ফেরার দুই পথেই দুটি বক ছাড়া কোনো প্রাণীর দেখা মেলেনি। অথচ সুন্দরবনে এই সময় এ এলাকাজুড়ে নানা রঙের পাখি, ডলফিন আর হরিণের দেখা মিলত। জয়মনির ঘোল গ্রামে ঢোকার পথেই পশুর নদীর পাশে থকথকে আলকাতরার মতো ফার্নেস তেল ভাসতে দেখা গেল। ওই তেলের মধ্যেই জীবন্ত কী যেন নড়ছে। সামনে এগুতেই চোখে পড়ল তেলের আস্তরণের ভেতর থেকে উদ্ধার পেতে দুটি কাঁকড়ার প্রাণপণ চেষ্টা। তেলগুলো আঠার মতো লেপ্টে প্রাণী দুটির প্রাণ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাই যেন করছে। জয়মনির ঘাটে নেমে দেখা মিলল জীবন বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যর্থ কয়েকটি মৃত কাঁকড়া। ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা সুনীল জানালেন, ভোর থেকে গ্রামের আশপাশে নদীর পাশ দিয়ে মৃত কাঁকড়া ভেসে যেতে দেখা যাচ্ছে। সুন্দরবনে কাঁকড়ার এমন মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সুন্দরবন–গবেষক ও বিশ্বব্যাংকের পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা ইশতিয়াক সোবহান প্রথম আলোকে বলেন, কাঁকড়ার পুরো শরীরে অসংখ্য ছিদ্র থাকায় দ্রুত তেল শরীরে প্রবেশ করে এবং তা এর অক্সিজেন গ্রহণ ও শারীরিক ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি করে। এর ফলে এই তেল নিঃস্বরণের ঘটনায় প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাঁকড়া ও চিংড়ি জাতীয় প্রাণীরা মারা পড়বে। তেল যদি দ্রুত অপসারণ না হয়, সপ্তাহ দুয়েক পর মাছ, সাপ ও অন্য জলজ প্রাণী এবং তীরবর্তী লতাগুল্মগুলো মরতে শুরু করবে। ইশতিয়াক আরও বলেন, কাঁকড়া শ্বাসমূলীয় বনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। সুন্দরবনের গাছপালা থেকে যে পাতা ও লতা ঝরে পড়ে, তা কেটে টুকরো টুকরো করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে কাঁকড়া সহায়তা করে, যা নদীর মাছসহ অন্য প্রাণীদের খাবারের জোগান দেয়। তাই কাঁকড়ার মৃত্যু সুন্দরবনের অন্যান্য ক্ষুদ্র জলজ প্রাণীকে খাবারের সংকটে ফেলতে পারে এবং এতে বনটির বাস্তুসংস্থান ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
৩০ টাকা লিটারে তেল কিনছে পদ্মা
ঘাট থেকে নেমে জয়মনি বাজারের দিকে যেতেই দেখা গেল এক দোকানের সামনে বিশাল ব্যানার টানানো। লেখা—ডুবন্ত জাহাজের তেল ক্রয়কেন্দ্র। সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম দাঁড়িয়ে। গ্রামের কিশোর–তরুণরা মাঝে মাঝে বালতিতে করে তেল নিয়ে তাঁর কাছে আসছে। প্রতি লিটার ৩০ টাকা করে সেই তেল তিনি কিনছেন। বিকেলে বাবুলের কাছে জানতে চাই, কত লিটার তেল কিনলেন সারা দিনে? তিনি বললেন, ‘আজ পাঁচ হাজার লিটারের মতো তেল কিনেছি।’
জয়মনি গ্রামের পথ ধরে এগুতে থাকলে বিভিন্ন রাস্তার মোড় ও বাড়ির কাছ থেকে তেলভার্তি বালতি নিয়ে ক্রয়কেন্দ্রে যেতে দেখা গেল অনেককে। কারও শরীরের অর্ধেক, কারও বা মুখটা ছাড়া শরীরের সবটাই কালো তেলে মাখামাখি। এভাবে তেল উত্তোলন এবং সংগ্রহ কতটা সঠিক, জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজের পরিচালক শাহাদাত হোসেন মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এই ফার্নেস তেলে কী ধরনের রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, তা না জেনে এভাবে তেল উত্তোলন করতে দেওয়া ঠিক না। এই তেল গায়ে লেগে গ্রামবাসীর চর্মসহ অন্যান্য রোগ হতে পারে, এ আশঙ্কা করে তিনি বলেন, যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তেল উত্তোলন করা উচিত। পরিবেশগত ঝুঁকি কমাতে গিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ানো ঠিক হবে না।
তেল অপসারণে রাসায়নিক ছিটানো স্থগিত
এদিকে দুদিন ধরে নিঃসৃত তেল অপসারণে নিয়ে আসা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কান্ডারি-১০ নামের টাগবোটটি শ্যালা নদীতে চাঁদপাই রেঞ্জের কাছে নোঙর করে আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিকেল থেকে একদফা ওই টাগবোটটি থেকে রাসায়নিক ছিটানো শুরু হলেও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় বন বিভাগের আপত্তিতে তা স্থগিত করা হয়।
বোটের মাস্টার আবু বকর সিদ্দিকী জানালেন, ১০ হাজার লিটার ‘অয়েল স্পিল ডিসপারসেন্ট’ নামের রাসায়নিক বোটটিতে মজুদ আছে। বোটে বসেই পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বললেন, এই ‘অয়েল স্পিল ডিসপারসেন্ট’ কোন দেশ থেকে আমদানি করা, এটি তৈরির ও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ, এর আমদানি কোড এবং রাসায়নিক নাম (কেমিক্যাল নেম) পরিবেশ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলেই এটা ছিটানো শুরু হবে। বোটের ভেতর খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আসা একজন কেমিস্টও রাসায়নিকটি পরীক্ষা করছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এসব পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক হলে এক দিনেই কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। কোন কোন রুটে এটি ছিটানো হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রধানত এ চ্যানেলটিতেই।’
বন বিভাগ, স্থানীয় জেলে ও নৌযানের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া তেল তাম্বুলবুনিয়া পেরিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অভয়ারণ্য কটকা ও কচিখালী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এতে তেলের বিস্তৃতির পরিমাণ ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি ছড়িয়েছে।
এদিকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল কাদেরের নেতৃত্বে সাত সদস্যের দলটি আজ দুপুরের পর মংলা ও চাঁদপাই এলাকা পরিদর্শন করে। তারা বিআইডব্লিউটিএ, বন বিভাগ ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেন।
ফারুক খানের সঙ্গে কথা শেষ করে ট্রলার এগুলো কুমিরের চরের দিকে। ভাটার সময় পানি নেমে গেলে চরের মধ্যে ছয় থেকে সাতটি কুমির এমনিতেই শুয়ে থাকতে দেখা যেত, জানিয়ে ট্রলারের চালক আলম শেখ বললেন, ‘গেল তিন দিন এই চরে কোনো কুমির দেখিনি। সব পলায়ছে।’
বনের মৃগমারীর সীমানা পেরিয়ে তাম্বুলবুনিয়া, আন্ধারমানিক হয়ে আবারও জয়মনির ঘোল গ্রামে ফেরার দুই পথেই দুটি বক ছাড়া কোনো প্রাণীর দেখা মেলেনি। অথচ সুন্দরবনে এই সময় এ এলাকাজুড়ে নানা রঙের পাখি, ডলফিন আর হরিণের দেখা মিলত। জয়মনির ঘোল গ্রামে ঢোকার পথেই পশুর নদীর পাশে থকথকে আলকাতরার মতো ফার্নেস তেল ভাসতে দেখা গেল। ওই তেলের মধ্যেই জীবন্ত কী যেন নড়ছে। সামনে এগুতেই চোখে পড়ল তেলের আস্তরণের ভেতর থেকে উদ্ধার পেতে দুটি কাঁকড়ার প্রাণপণ চেষ্টা। তেলগুলো আঠার মতো লেপ্টে প্রাণী দুটির প্রাণ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাই যেন করছে। জয়মনির ঘাটে নেমে দেখা মিলল জীবন বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যর্থ কয়েকটি মৃত কাঁকড়া। ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা সুনীল জানালেন, ভোর থেকে গ্রামের আশপাশে নদীর পাশ দিয়ে মৃত কাঁকড়া ভেসে যেতে দেখা যাচ্ছে। সুন্দরবনে কাঁকড়ার এমন মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সুন্দরবন–গবেষক ও বিশ্বব্যাংকের পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা ইশতিয়াক সোবহান প্রথম আলোকে বলেন, কাঁকড়ার পুরো শরীরে অসংখ্য ছিদ্র থাকায় দ্রুত তেল শরীরে প্রবেশ করে এবং তা এর অক্সিজেন গ্রহণ ও শারীরিক ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি করে। এর ফলে এই তেল নিঃস্বরণের ঘটনায় প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাঁকড়া ও চিংড়ি জাতীয় প্রাণীরা মারা পড়বে। তেল যদি দ্রুত অপসারণ না হয়, সপ্তাহ দুয়েক পর মাছ, সাপ ও অন্য জলজ প্রাণী এবং তীরবর্তী লতাগুল্মগুলো মরতে শুরু করবে। ইশতিয়াক আরও বলেন, কাঁকড়া শ্বাসমূলীয় বনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। সুন্দরবনের গাছপালা থেকে যে পাতা ও লতা ঝরে পড়ে, তা কেটে টুকরো টুকরো করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে কাঁকড়া সহায়তা করে, যা নদীর মাছসহ অন্য প্রাণীদের খাবারের জোগান দেয়। তাই কাঁকড়ার মৃত্যু সুন্দরবনের অন্যান্য ক্ষুদ্র জলজ প্রাণীকে খাবারের সংকটে ফেলতে পারে এবং এতে বনটির বাস্তুসংস্থান ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
৩০ টাকা লিটারে তেল কিনছে পদ্মা
ঘাট থেকে নেমে জয়মনি বাজারের দিকে যেতেই দেখা গেল এক দোকানের সামনে বিশাল ব্যানার টানানো। লেখা—ডুবন্ত জাহাজের তেল ক্রয়কেন্দ্র। সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম দাঁড়িয়ে। গ্রামের কিশোর–তরুণরা মাঝে মাঝে বালতিতে করে তেল নিয়ে তাঁর কাছে আসছে। প্রতি লিটার ৩০ টাকা করে সেই তেল তিনি কিনছেন। বিকেলে বাবুলের কাছে জানতে চাই, কত লিটার তেল কিনলেন সারা দিনে? তিনি বললেন, ‘আজ পাঁচ হাজার লিটারের মতো তেল কিনেছি।’
জয়মনি গ্রামের পথ ধরে এগুতে থাকলে বিভিন্ন রাস্তার মোড় ও বাড়ির কাছ থেকে তেলভার্তি বালতি নিয়ে ক্রয়কেন্দ্রে যেতে দেখা গেল অনেককে। কারও শরীরের অর্ধেক, কারও বা মুখটা ছাড়া শরীরের সবটাই কালো তেলে মাখামাখি। এভাবে তেল উত্তোলন এবং সংগ্রহ কতটা সঠিক, জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজের পরিচালক শাহাদাত হোসেন মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এই ফার্নেস তেলে কী ধরনের রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, তা না জেনে এভাবে তেল উত্তোলন করতে দেওয়া ঠিক না। এই তেল গায়ে লেগে গ্রামবাসীর চর্মসহ অন্যান্য রোগ হতে পারে, এ আশঙ্কা করে তিনি বলেন, যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তেল উত্তোলন করা উচিত। পরিবেশগত ঝুঁকি কমাতে গিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ানো ঠিক হবে না।
তেল অপসারণে রাসায়নিক ছিটানো স্থগিত
এদিকে দুদিন ধরে নিঃসৃত তেল অপসারণে নিয়ে আসা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কান্ডারি-১০ নামের টাগবোটটি শ্যালা নদীতে চাঁদপাই রেঞ্জের কাছে নোঙর করে আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিকেল থেকে একদফা ওই টাগবোটটি থেকে রাসায়নিক ছিটানো শুরু হলেও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় বন বিভাগের আপত্তিতে তা স্থগিত করা হয়।
বোটের মাস্টার আবু বকর সিদ্দিকী জানালেন, ১০ হাজার লিটার ‘অয়েল স্পিল ডিসপারসেন্ট’ নামের রাসায়নিক বোটটিতে মজুদ আছে। বোটে বসেই পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বললেন, এই ‘অয়েল স্পিল ডিসপারসেন্ট’ কোন দেশ থেকে আমদানি করা, এটি তৈরির ও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ, এর আমদানি কোড এবং রাসায়নিক নাম (কেমিক্যাল নেম) পরিবেশ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলেই এটা ছিটানো শুরু হবে। বোটের ভেতর খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আসা একজন কেমিস্টও রাসায়নিকটি পরীক্ষা করছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এসব পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক হলে এক দিনেই কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। কোন কোন রুটে এটি ছিটানো হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রধানত এ চ্যানেলটিতেই।’
বন বিভাগ, স্থানীয় জেলে ও নৌযানের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া তেল তাম্বুলবুনিয়া পেরিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অভয়ারণ্য কটকা ও কচিখালী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এতে তেলের বিস্তৃতির পরিমাণ ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি ছড়িয়েছে।
এদিকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল কাদেরের নেতৃত্বে সাত সদস্যের দলটি আজ দুপুরের পর মংলা ও চাঁদপাই এলাকা পরিদর্শন করে। তারা বিআইডব্লিউটিএ, বন বিভাগ ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেন।
No comments