দায় সরকারকেই নিতে হবে -অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ by সিরাজুস সালেকিন
সুন্দরবনের
শেলা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ ও
উদ্যোগহীনতার কারণে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন
তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, গত মঙ্গলবারের ওই দুর্ঘটনা প্রমাণ
করেছে সুন্দরবন কতটা অরক্ষিত। এতে যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনভাবেই পূরণ করা
সম্ভব নয়। উন্নয়নের নামে সরকার সুন্দরবনে দীর্ঘদিন থেকে ধ্বংসযজ্ঞ
চালাচ্ছে। গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক আনু
মুহাম্মদ বলেন, প্রায় ২০-৪০ লাখ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের
ওপর নির্ভরশীল। এখানে মৎস্যজীবী আছে। বনসম্পদজীবী আছে। সুতরাং সুন্দরবন
একটা বড় ধরনের সম্পদ যোগান দিচ্ছে এবং অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
দুর্ঘটনার কারণে বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবিকার ওপর প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া সুন্দরবন
প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ রক্ষা করছে। এটা হাজার
কোটি টাকা দিয়ে বাঁধ তৈরি করে এই সুফল পাওয়া যাবে না। সুন্দরবনের যে ক্ষতি
হয়েছে তা কোনভাবেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয় দাবি করে আনু মুহাম্মদ বলেন, যে
ক্ষতিটা হয়েছে এটা কোনভাবেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আমরা বহু বছর ধরে দেখবো
প্রত্যক্ষভাবে, পরোক্ষভাবে চেইন এফেক্টে। একটার সঙ্গে আরেকটা সম্পর্কিত।
একটা অপূরণীয় ক্ষতি হতে যাচ্ছে। সরকার যদি সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোগ নিত এই
ক্ষতিটা আরও কমানো সম্ভব হতো। উদ্যোগহীনতার কারণে এবং ব্যবস্থা গ্রহণের
বিলম্বের কারণে এই ক্ষতিটা আরও বেশি হবে।
সুন্দরবন নিয়ে দেশ-বিদেশে উদ্বেগ থাকার পরেও সরকার কোন ভ্রূক্ষেপ করেনি দাবি করে তিনি বলেন, এ দুর্ঘটনার প্রথম দায় সরকারকেই নিতে হবে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ও রামসার সাইট হওয়ার কারণে এই বন সরকারের বিশেষ মনোযোগ, বিশেষ গুরুত্ব ও বিশেষ সতর্কতার দাবি রাখে। পৃথিবীর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিস্মিত কি করে এমন একটা জায়গা দিয়ে তেলের জাহাজ চলে। আগে এটা অবৈধভাবে চলত। ২০১১ সালে এই রুটের বৈধতা দেয়া হয়েছে। এর কারণ হিসেবে নদী সংরক্ষণে সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করে আনু মুহাম্মদ বলেন, শ্যালা নদীর বিকল্প পথ মংলা-ঘাসিয়াখালী রুট অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের কারণে বন্ধ হয়েছে। এটা সংস্কারের কোন চেষ্টা না করে সরকার বসেছিল। আগের সরকারও এটা উদ্যোগ নেয়নি। অনুমতি দেয়ার পর প্রথম এ রুটে ২০-২৫টি নৌযান চলতো। সর্বশেষ ১২০-১৪০টি নৌযান প্রতিদিন চলাফেরা করতো আর তেল নিঃসরণ করতো। নৌযানের সৃষ্ট শব্দ বনের বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। এই দুর্ঘটনার আগেই সুন্দরবনের ক্ষতি হয়ে গেছে।
সুন্দরবন ধ্বংসে সরকার পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকারের নির্লিপ্ততা ও দায়িত্বহীনতা দেখে বোঝা যায় সুন্দরবনের গুরুত্ব উপেক্ষা করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ করেই যাচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষমতাবান গোষ্ঠীকে ওই অঞ্চলের জমি দখলের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। সুন্দরবন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার মধ্যদিয়েই বিভিন্ন দেশী-বিদেশী দখলদারদের আক্রমণের মুখে এবং এই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়া মানেই প্রতিদিন হাজার হাজার বা লাখ টনের কয়লার জাহাজ পরিবহন চলবে। দুর্ঘটনা না হলেও যে ক্ষতি হবে তাতে সুন্দরবনের পক্ষে টিকে থাকা মুশকিল হবে।
এ দুর্ঘটনায় আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো সরকারের কাছে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে একের পর এক। সরকার কোন প্রত্যুত্তর দিচ্ছে না। তার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের একটা বিশাল পরিবেশগত সম্পদ সেটা বাংলাদেশ নষ্ট করছে সেরকম একটা ভাবমূর্তি তৈরি করছে। এ ব্যাপারে তাদের কোন মনোযোগ নেই গুরুত্ব নেই- এটা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে সরকার আন্তরিক নয় দাবি করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এটা খুব পরিহাসের বিষয় যে নির্মমতার বিষয় যখন জলবায়ু সম্মেলন হচ্ছে পরিবেশ ও যে সম্মেলনে সারা বিশ্বের জলবায়ুর ভারসাম্যের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ দুর্ঘটনার মাধ্যমে দেখা গেল বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে কত অমনোযোগী। জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে যে ক্ষতি হচ্ছে তার চেয়ে বাংলাদেশের ভেতরেই তো ক্ষতি হচ্ছে উন্নয়নের নামে এই ধ্বংসযজ্ঞ করার মতো প্রকল্প নিয়ে। অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে। কোন বিচার-বিবেচনা ছাড়াই সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ সেই সম্পদ ধ্বংস করে বিদ্যুৎকেন্দ্র করে। সরকার নিজেরাই করছে সেটা। এখানে সম্পূর্ণ স্ববিরোধিতা দেখছি।
দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতির অভাব ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরেকটা নির্মমতা সুন্দরবন না হয়ে যেকোন নদীতেই এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তার প্রস্তুতি, সক্ষমতা, মোকাবিলা কিভাবে হবে, যে উদ্যোগ সেটারই প্রকট অভাব দেখা গেল এই দুর্ঘটনা থেকে। উদ্ধারকারী জাহাজ ৪৮ ঘণ্টা পার করে সেখানে পৌঁছল। প্রথম দিকে সরকার কোন গুরুত্বই দেয় নাই। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের ডেকে বৈঠক করা উচিত ছিল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। স্টেপ নেয়া উচিত ছিল। জনগণের উদ্যোগের কারণে বিপদ থেকে কিছুটা কমবে। কিন্তু সরকারের দিক থেকে উদ্যোগটা প্রকট আকারে দেখালো সুন্দরবন কিভাবে অরক্ষিত, বাংলাদেশ কি রকম অরক্ষিত।
বন বিভাগের মামলার প্রসঙ্গে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ কে পাবে। শ্বাসমূলের ক্ষতি হলো। প্রাণবৈচিত্র্যের ক্ষতি হলো এই ক্ষতিপূরণ কিভাবে হবে আমি জানি না এবং মামলা আদৌ টিকবে কি না সরকার আদৌ চালাবে কি না সেটাও আমার সন্দেহ আছে। ক্ষতিপূরণটা একটা হচ্ছে ক্ষতি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জামের চাইতে উদ্যোগটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণবৈচিত্র্যের ক্ষতি নিরসনের জন্য কিছু কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। ওই অঞ্চলের যে জনগোষ্ঠী, মৎসজীবী, বনজীবী, কৃষক এদেরও তো ক্ষতি হলো। তারাও ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। এটা সরকারকে দিতে হবে। এই দুটো জাহাজের মালিক যারা এবং যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যাচ্ছিল তাদের এই ক্ষতিপূরণের ভার নিতে হবে। সেটা ১০০ কোটি টাকায় হবে কি না সন্দেহ আছে। পরিমাণটাও যথেষ্ট না।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তিনটি সুপারিশ করেন আনু মুহাম্মদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমত, ক্ষতি কমানোর জন্য সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হবে। ওই অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকেও ক্ষতি পূরণ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, সুন্দরবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এরকম সকল বিদ্যুৎকেন্দ্র বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রকল্প বন্ধ করতে হবে এবং সুন্দরবনের জন্য হুমকিস্বরূপ কোন পরিবহন চালানো যাবে না। স্থায়ীভাবে এটা বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, সুন্দরবন নীতিমালা তৈরি করতে হবে। শুধু সুন্দরবনকে রক্ষা করার জন্য নয়, সুন্দরবন যেন বিকশিত হয় এবং তার সক্ষমতা বাড়ে এবং আরও বিস্তৃত হয় সেটার জন্য উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুন্দরবন নীতিমালা করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, কারা এই নৌপথের অনুমোদন দিল তারাও তো এটার জন্য সমান দায়ী। সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ অনেকেই এই দায় এড়াতে পারবে না। সুতরাং দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে।
সুন্দরবন নিয়ে দেশ-বিদেশে উদ্বেগ থাকার পরেও সরকার কোন ভ্রূক্ষেপ করেনি দাবি করে তিনি বলেন, এ দুর্ঘটনার প্রথম দায় সরকারকেই নিতে হবে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ও রামসার সাইট হওয়ার কারণে এই বন সরকারের বিশেষ মনোযোগ, বিশেষ গুরুত্ব ও বিশেষ সতর্কতার দাবি রাখে। পৃথিবীর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিস্মিত কি করে এমন একটা জায়গা দিয়ে তেলের জাহাজ চলে। আগে এটা অবৈধভাবে চলত। ২০১১ সালে এই রুটের বৈধতা দেয়া হয়েছে। এর কারণ হিসেবে নদী সংরক্ষণে সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করে আনু মুহাম্মদ বলেন, শ্যালা নদীর বিকল্প পথ মংলা-ঘাসিয়াখালী রুট অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের কারণে বন্ধ হয়েছে। এটা সংস্কারের কোন চেষ্টা না করে সরকার বসেছিল। আগের সরকারও এটা উদ্যোগ নেয়নি। অনুমতি দেয়ার পর প্রথম এ রুটে ২০-২৫টি নৌযান চলতো। সর্বশেষ ১২০-১৪০টি নৌযান প্রতিদিন চলাফেরা করতো আর তেল নিঃসরণ করতো। নৌযানের সৃষ্ট শব্দ বনের বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। এই দুর্ঘটনার আগেই সুন্দরবনের ক্ষতি হয়ে গেছে।
সুন্দরবন ধ্বংসে সরকার পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকারের নির্লিপ্ততা ও দায়িত্বহীনতা দেখে বোঝা যায় সুন্দরবনের গুরুত্ব উপেক্ষা করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ করেই যাচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষমতাবান গোষ্ঠীকে ওই অঞ্চলের জমি দখলের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। সুন্দরবন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার মধ্যদিয়েই বিভিন্ন দেশী-বিদেশী দখলদারদের আক্রমণের মুখে এবং এই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়া মানেই প্রতিদিন হাজার হাজার বা লাখ টনের কয়লার জাহাজ পরিবহন চলবে। দুর্ঘটনা না হলেও যে ক্ষতি হবে তাতে সুন্দরবনের পক্ষে টিকে থাকা মুশকিল হবে।
এ দুর্ঘটনায় আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো সরকারের কাছে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে একের পর এক। সরকার কোন প্রত্যুত্তর দিচ্ছে না। তার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের একটা বিশাল পরিবেশগত সম্পদ সেটা বাংলাদেশ নষ্ট করছে সেরকম একটা ভাবমূর্তি তৈরি করছে। এ ব্যাপারে তাদের কোন মনোযোগ নেই গুরুত্ব নেই- এটা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে সরকার আন্তরিক নয় দাবি করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এটা খুব পরিহাসের বিষয় যে নির্মমতার বিষয় যখন জলবায়ু সম্মেলন হচ্ছে পরিবেশ ও যে সম্মেলনে সারা বিশ্বের জলবায়ুর ভারসাম্যের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ দুর্ঘটনার মাধ্যমে দেখা গেল বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে কত অমনোযোগী। জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে যে ক্ষতি হচ্ছে তার চেয়ে বাংলাদেশের ভেতরেই তো ক্ষতি হচ্ছে উন্নয়নের নামে এই ধ্বংসযজ্ঞ করার মতো প্রকল্প নিয়ে। অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে। কোন বিচার-বিবেচনা ছাড়াই সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ সেই সম্পদ ধ্বংস করে বিদ্যুৎকেন্দ্র করে। সরকার নিজেরাই করছে সেটা। এখানে সম্পূর্ণ স্ববিরোধিতা দেখছি।
দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতির অভাব ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরেকটা নির্মমতা সুন্দরবন না হয়ে যেকোন নদীতেই এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তার প্রস্তুতি, সক্ষমতা, মোকাবিলা কিভাবে হবে, যে উদ্যোগ সেটারই প্রকট অভাব দেখা গেল এই দুর্ঘটনা থেকে। উদ্ধারকারী জাহাজ ৪৮ ঘণ্টা পার করে সেখানে পৌঁছল। প্রথম দিকে সরকার কোন গুরুত্বই দেয় নাই। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের ডেকে বৈঠক করা উচিত ছিল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। স্টেপ নেয়া উচিত ছিল। জনগণের উদ্যোগের কারণে বিপদ থেকে কিছুটা কমবে। কিন্তু সরকারের দিক থেকে উদ্যোগটা প্রকট আকারে দেখালো সুন্দরবন কিভাবে অরক্ষিত, বাংলাদেশ কি রকম অরক্ষিত।
বন বিভাগের মামলার প্রসঙ্গে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ কে পাবে। শ্বাসমূলের ক্ষতি হলো। প্রাণবৈচিত্র্যের ক্ষতি হলো এই ক্ষতিপূরণ কিভাবে হবে আমি জানি না এবং মামলা আদৌ টিকবে কি না সরকার আদৌ চালাবে কি না সেটাও আমার সন্দেহ আছে। ক্ষতিপূরণটা একটা হচ্ছে ক্ষতি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জামের চাইতে উদ্যোগটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণবৈচিত্র্যের ক্ষতি নিরসনের জন্য কিছু কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। ওই অঞ্চলের যে জনগোষ্ঠী, মৎসজীবী, বনজীবী, কৃষক এদেরও তো ক্ষতি হলো। তারাও ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। এটা সরকারকে দিতে হবে। এই দুটো জাহাজের মালিক যারা এবং যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যাচ্ছিল তাদের এই ক্ষতিপূরণের ভার নিতে হবে। সেটা ১০০ কোটি টাকায় হবে কি না সন্দেহ আছে। পরিমাণটাও যথেষ্ট না।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তিনটি সুপারিশ করেন আনু মুহাম্মদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমত, ক্ষতি কমানোর জন্য সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হবে। ওই অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকেও ক্ষতি পূরণ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, সুন্দরবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এরকম সকল বিদ্যুৎকেন্দ্র বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রকল্প বন্ধ করতে হবে এবং সুন্দরবনের জন্য হুমকিস্বরূপ কোন পরিবহন চালানো যাবে না। স্থায়ীভাবে এটা বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, সুন্দরবন নীতিমালা তৈরি করতে হবে। শুধু সুন্দরবনকে রক্ষা করার জন্য নয়, সুন্দরবন যেন বিকশিত হয় এবং তার সক্ষমতা বাড়ে এবং আরও বিস্তৃত হয় সেটার জন্য উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুন্দরবন নীতিমালা করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, কারা এই নৌপথের অনুমোদন দিল তারাও তো এটার জন্য সমান দায়ী। সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ অনেকেই এই দায় এড়াতে পারবে না। সুতরাং দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে।
No comments