ভিক্ষা করেন সাবিত্রী by মো. আমির হোসেন
চুনারুঘাট
উপজেলার চা-শ্রমিকের মেয়ে সাবিত্রী নায়েক এখন ভিক্ষা করে সংসার চালান।
ভাগ্যে খাবার জুটলে খান, অন্যথায় উপোষ থাকতে হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধে নিজের
সর্বস্ব বিলিয়ে দিলেও পাননি কিছুই। এখন না পাওয়ার বেদনাও ভুলে গেছেন তিনি।
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর চা বাগানের মেয়ে সাবিত্রী নায়েক।
পিতার নাম মধু নায়েক। মা রমণী নায়েক। মধু নায়েকের ২ মেয়ে ও ১ ছেলের মধ্যে
সাবিত্রী সবার ছোট। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর চা বাগানের শ্রমিকরা যখন
কয়েক মাইল দূরত্বের সীমানা পাড়ি দিচ্ছিল, অবলীলায় তখন সাবিত্রীর পরিবারের
সদস্যরাও ভারত যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে
ওপারে যাওয়ার প্রাক্কালে অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবিত্রীর ভাই মঙ্গল নায়েক। এ
কারণে ভারত যাওয়া হয়নি তাদের। বৈশাখ মাসে চান্দপুর চা বাগানে আসে
পাকিস্তানি বাহিনী। চান্দপুর বাগানের ফ্যাক্টরিতে ক্যাম্প স্থাপন করে তারা।
ক্যাম্প স্থাপনের দিন কয়েক পরই সাবিত্রী নায়েকের বাড়িতে হানা দেয়
পাকিস্তানি বাহিনী। মায়ের পাশে ঘুমিয়েছিলেন সাবিত্রী। ৫ জন পাকিস্তানি সেনা
দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। এ সময় রমণী
নায়েক বাধা দিলে বর্বররা তাকে বন্ধুকের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। ’৭১ সালে
১৫ বছরের সাবিত্রী কালো হলেও চা শ্রমিকদের মধ্যে সুন্দরী ছিল বলে জানান
স্থানীয়রা। এরপর পাকিস্তানি বাহিনী সাবিত্রী নায়েককে চা বাগানের ৬নং
বাংলোতে নিয়ে আটকে রাখা হয়। ওই রাতেই তার ওপর নেমে আসে বিভীষিকা। বাগানের
ক্যাম্পে দু’সপ্তাহ ছিলেন তিনি। প্রতিদিনই তার ওপর নির্যাতন করা হতো। পরে
তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের মাধবপুর উপজেলার সুরমা চা বাগানের বাংলোর একটি
কামরায়। ওই খানে তার সঙ্গে আরেকটি মেয়েকে রাখা হয়। চা বাগানের বাংলোতে ওই
এলাকা স্বাধীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার ওপর চলে বর্বরতা। মাধবপুর থানা
শত্রুমুক্ত হলে বাগানের লোকরা তালা ভেঙে সাবিত্রীসহ অন্য মেয়েটিকে উদ্ধার
করে। তারা সাবিত্রীকে বাগানে পৌঁছে দেয়। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় সাবিত্রীর
আদৌ বিয়ে হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়। চান্দপুর বাগানের মুক্তিযোদ্ধা
কেরামত আলী তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের ১৩ বছরের মাথায় কেরামত আলী সাবিত্রীকে ২
পুত্রসন্তানসহ ঘর থেকে বের করে দেন। তবে সঙ্কটের সময়ে কেরামত আলীর
পিতা-মাতা সাবিত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেন। বর্তমানে অভাবের
সংসারে কখনও কাজ করে আবার কখনওবা ভিক্ষের ঝুলি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে
বেড়ান সাবিত্রী। কোন দিন খাবার না পেয়ে উপোষ থাকতে হয়। এ ব্যাপারে সাবিত্রী
জানান, ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাতাম। সরকার ক্ষমতায় আসার পর বীরাঙ্গনা
হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। আগে মানুষ আমাদের ঘৃণা করতো। এ স্মীকৃতি পাওয়ার পর
সবাই স্নেহের চোখে দেখে। তিনি বলেন, এ স্বীকৃতি নিয়ে মরলেও শান্তি পাবো।
No comments