দুর্নীতি ও জালিয়াতি গিলে খাচ্ছে মূলধন
এ মুহূর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর
প্রধান সমস্যা- খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির
কারণে ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ। সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ
মূলধন ঘাটতি। আর এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সোনালী ও
বেসিক ব্যাংক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক
প্রতিবেদন এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকের
কার্যবিবরণীতে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি উত্থাপন করা হয়। ওই বৈঠকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম বলেছেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ থাকায় প্রচুর মূলধন ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে হলমার্ক কেলেংকারি এবং অন্যান্য অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির কারণে সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ সমস্যা প্রকোট হয়ে দেখা দিয়েছে।’ আর কমিটির সভাপতি ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপি, ক্লাসিফাইড লোন, কু-ঋণসহ বিভিন্ন সমস্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা গোপন করার প্রবণতা আগের মতোই অব্যাহত রেখেছেন সংশ্লিষ্টরা। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের নানা অনিয়মের ওপর বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে। এসব ব্যাংকে বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে ঋণসংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে উচ্চ আদালতে পৃথক বেঞ্চ গঠন এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১০ শতাংশের নিচে আনাসহ সাত দফা সুপারিশ করে স্থায়ী কমিটি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন ও স্থায়ী কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতির নেপথ্যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা। পাশাপাশি বেসিক ব্যাংক থেকে রাতের আঁধারে বস্তা ভরে টাকা পাচারের ঘটনাকেও দায়ী করা হয়। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা ও অর্থ লুটে নেয়ায় খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে। গত ৩০ জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২৪ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৪৮ শতাংশ হচ্ছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএলের। মোট খেলাপি ঋণের ৮০ শতাংশই মন্দ হয়ে পড়ায় প্রভিশনের পরিমাণ বাড়ছে। যে কারণে ব্যাংকগুলোতে মূলধনের ওপর পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।
সোনালী ব্যাংকের দেড় হাজার কোটি টাকার ঘাটতি : এ মুহূর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত শীর্ষ এ ব্যাংকের ঘাটতি মূলধনের পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ ও প্রভিশনের কারণে বড় ধরনের মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সোনালী ব্যাংকে নতুন নতুন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হয়েছে। যে কারণে শ্রেণীকৃত বা খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। এ ব্যাংকে হলমার্কসহ পাঁচটি বড় ধরনের আর্থিক কেলেংকারির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে হলমার্কের অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ হচ্ছে ২ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দেখা দিলে সরকার গত বছর ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা দেয়। ব্যাংকটিতে বর্তমান ৫২টি অলাভজনক শাখা রয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের ১২০ কোটি টাকা লাপাত্তা : অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে গত বছর ১ হাজার ৮১ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। এরপর শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে মূলধন ঘাটতি আরও বেড়েছে। সর্বশেষ ব্যাংক থেকে আলু প্রসেসিং শিল্পে তিনজন উদ্যোক্তাকে ১২০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। কিন্তু পুরো অর্থই এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ঋণ গ্রহণকারী উদ্যোক্তা নির্বাচনে ভুলের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ঋণখেলাপির একজন হচ্ছেন প্রাইভেট ব্যাংকের একজন পরিচালক। এ ব্যাংকের ৮৮৯টি শাখার মধ্যে ৫৮ শাখা হচ্ছে অলাভজনক।
জনতা ব্যাংকের ঋণের ৯ হাজার কোটি টাকা ৪০ কোম্পানির হাতে : শ্রেণীকৃত ঋণই হচ্ছে জনতা ব্যাংকের বড় সমস্যা। ব্যাংকটিতে গত বছরের তুলনায় এ বছর শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ বেড়েছে বলে কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাংকে ২৯ হাজার কোটি টাকার ঋণের মধ্যে বেক্সিমকো এবং পারটেক্স গ্রুপের মতো ৪০টি বড় কোম্পানির কাছে ৯ হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে। জানা গেছে, বর্তমান ব্যাংকটিতে লোকসান কমাতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। মূলধন ঘাটতি মেটাতে ২০১৩ সালে এ ব্যাংককে ৮১৪ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।
বেসিক ব্যাংকের ১৩৩ ঋণগ্রহীতার কাগজ ঠিক নেই : ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০-১৩ সাল পর্যন্ত ঋণ বিতরণে চরম অনিয়মের কারণে বেসিক ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে। এ ব্যাংক থেকে ৮ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে ৩৩৫ জন গ্রাহককে। যার মধ্যে ১৪ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। লাপাত্তা ঋণগ্রহীতাদের কাছে পাওনা অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ৫৩৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১৩৩ জন গ্রাহককে ঋণ দেয়া হয়েছে কিন্তু যথাযথভাবে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র (ডকুমেন্ট) তৈরি করা হয়নি। বর্তমানে ব্যাংকটিতে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। দুর্নীতি ও জালিয়াতির কারণে এ ব্যাংকের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
সংসদীয় কমিটির সাত সুপারিশ : ব্যাংকগুলোর সার্বিক সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সাত দফা সুপারিশ করা হয়। এগুলো হল : ১. ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১০ শতাংশের নিচে নির্ধারণ। ২. উচ্চ আদালতে পৃথক বেঞ্চ গঠন। এতে সোনালী ও বেসিক ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত মামলার দীর্ঘসূত্রতা নিরসন হবে। ৩. হলমার্ক গ্রুপের লোপাটকৃত অর্থ আদায়, মামলা-মোকাদ্দমা নিষ্পত্তি এবং তাদের শিল্পকারখানাগুলো চালু রাখতে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহলের সিদ্ধান্ত নেয়া। এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি গাইডলাইন প্রদানের ব্যবস্থা করা।
৪. বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া। ৫. প্রকৃত শিল্পোদ্যাক্তাদের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদকে নিশ্চিত করা ও ব্যাংকগুলোর ওপর অপেশাধারী হস্তক্ষেপ কমান। ৬. পোলট্রি ও ডেইরিসহ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের জন্য স্বল্পসুদে ঋণ বা ভর্তুকি প্রদান এবং ৭. ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমানো, জনবলের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানো ও পরিচালনা পর্ষদে অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের মনোনয়ন দিয়ে ব্যাংকগুলো লাভজনক করা।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি উত্থাপন করা হয়। ওই বৈঠকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম বলেছেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ থাকায় প্রচুর মূলধন ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে হলমার্ক কেলেংকারি এবং অন্যান্য অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির কারণে সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ সমস্যা প্রকোট হয়ে দেখা দিয়েছে।’ আর কমিটির সভাপতি ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপি, ক্লাসিফাইড লোন, কু-ঋণসহ বিভিন্ন সমস্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা গোপন করার প্রবণতা আগের মতোই অব্যাহত রেখেছেন সংশ্লিষ্টরা। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের নানা অনিয়মের ওপর বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে। এসব ব্যাংকে বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে ঋণসংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে উচ্চ আদালতে পৃথক বেঞ্চ গঠন এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১০ শতাংশের নিচে আনাসহ সাত দফা সুপারিশ করে স্থায়ী কমিটি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন ও স্থায়ী কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতির নেপথ্যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা। পাশাপাশি বেসিক ব্যাংক থেকে রাতের আঁধারে বস্তা ভরে টাকা পাচারের ঘটনাকেও দায়ী করা হয়। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা ও অর্থ লুটে নেয়ায় খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে। গত ৩০ জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২৪ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৪৮ শতাংশ হচ্ছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএলের। মোট খেলাপি ঋণের ৮০ শতাংশই মন্দ হয়ে পড়ায় প্রভিশনের পরিমাণ বাড়ছে। যে কারণে ব্যাংকগুলোতে মূলধনের ওপর পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।
সোনালী ব্যাংকের দেড় হাজার কোটি টাকার ঘাটতি : এ মুহূর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত শীর্ষ এ ব্যাংকের ঘাটতি মূলধনের পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ ও প্রভিশনের কারণে বড় ধরনের মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সোনালী ব্যাংকে নতুন নতুন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হয়েছে। যে কারণে শ্রেণীকৃত বা খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। এ ব্যাংকে হলমার্কসহ পাঁচটি বড় ধরনের আর্থিক কেলেংকারির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে হলমার্কের অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ হচ্ছে ২ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দেখা দিলে সরকার গত বছর ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা দেয়। ব্যাংকটিতে বর্তমান ৫২টি অলাভজনক শাখা রয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের ১২০ কোটি টাকা লাপাত্তা : অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে গত বছর ১ হাজার ৮১ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। এরপর শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে মূলধন ঘাটতি আরও বেড়েছে। সর্বশেষ ব্যাংক থেকে আলু প্রসেসিং শিল্পে তিনজন উদ্যোক্তাকে ১২০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। কিন্তু পুরো অর্থই এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ঋণ গ্রহণকারী উদ্যোক্তা নির্বাচনে ভুলের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ঋণখেলাপির একজন হচ্ছেন প্রাইভেট ব্যাংকের একজন পরিচালক। এ ব্যাংকের ৮৮৯টি শাখার মধ্যে ৫৮ শাখা হচ্ছে অলাভজনক।
জনতা ব্যাংকের ঋণের ৯ হাজার কোটি টাকা ৪০ কোম্পানির হাতে : শ্রেণীকৃত ঋণই হচ্ছে জনতা ব্যাংকের বড় সমস্যা। ব্যাংকটিতে গত বছরের তুলনায় এ বছর শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ বেড়েছে বলে কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাংকে ২৯ হাজার কোটি টাকার ঋণের মধ্যে বেক্সিমকো এবং পারটেক্স গ্রুপের মতো ৪০টি বড় কোম্পানির কাছে ৯ হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে। জানা গেছে, বর্তমান ব্যাংকটিতে লোকসান কমাতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। মূলধন ঘাটতি মেটাতে ২০১৩ সালে এ ব্যাংককে ৮১৪ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।
বেসিক ব্যাংকের ১৩৩ ঋণগ্রহীতার কাগজ ঠিক নেই : ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০-১৩ সাল পর্যন্ত ঋণ বিতরণে চরম অনিয়মের কারণে বেসিক ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে। এ ব্যাংক থেকে ৮ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে ৩৩৫ জন গ্রাহককে। যার মধ্যে ১৪ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। লাপাত্তা ঋণগ্রহীতাদের কাছে পাওনা অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ৫৩৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১৩৩ জন গ্রাহককে ঋণ দেয়া হয়েছে কিন্তু যথাযথভাবে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র (ডকুমেন্ট) তৈরি করা হয়নি। বর্তমানে ব্যাংকটিতে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। দুর্নীতি ও জালিয়াতির কারণে এ ব্যাংকের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
সংসদীয় কমিটির সাত সুপারিশ : ব্যাংকগুলোর সার্বিক সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সাত দফা সুপারিশ করা হয়। এগুলো হল : ১. ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১০ শতাংশের নিচে নির্ধারণ। ২. উচ্চ আদালতে পৃথক বেঞ্চ গঠন। এতে সোনালী ও বেসিক ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত মামলার দীর্ঘসূত্রতা নিরসন হবে। ৩. হলমার্ক গ্রুপের লোপাটকৃত অর্থ আদায়, মামলা-মোকাদ্দমা নিষ্পত্তি এবং তাদের শিল্পকারখানাগুলো চালু রাখতে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহলের সিদ্ধান্ত নেয়া। এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি গাইডলাইন প্রদানের ব্যবস্থা করা।
৪. বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া। ৫. প্রকৃত শিল্পোদ্যাক্তাদের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদকে নিশ্চিত করা ও ব্যাংকগুলোর ওপর অপেশাধারী হস্তক্ষেপ কমান। ৬. পোলট্রি ও ডেইরিসহ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের জন্য স্বল্পসুদে ঋণ বা ভর্তুকি প্রদান এবং ৭. ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমানো, জনবলের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানো ও পরিচালনা পর্ষদে অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের মনোনয়ন দিয়ে ব্যাংকগুলো লাভজনক করা।
No comments