প্রশাসনে ‘গণবদলি’ শুরু হতে যাচ্ছে- তালিকা প্রস্তুত by দীন ইসলাম
অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপ-সচিব পদে দেশের সিভিল প্রশাসনে ‘গণবদলি’ শুরু হতে যাচ্ছে। বিএনপিসহ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপ-মন্ত্রীদের পিএস ও এপিএস, জেলা প্রশাসক (ডিসি) বা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কর্মকর্তাদের টার্গেট করেই এমনটা করা হচ্ছে। এর পরের ধাপে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে বিএনপি-জামায়াতের কর্মকর্তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৈঠকের পরই এ তালিকা তৈরির কাজে হাত দেয়া হয়। গত তিন দিনে সম্ভাব্য বদলিকৃত কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ তালিকা তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি উইং। এ উইং-এর যুগ্ম সচিব মহিবুল হকের কম্পিউটারে তৈরি করা হয়েছে এ তালিকা। এরই মধ্যে তালিকা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মুখ্য সচিব আবদুস সোবাহান সিকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। সম্ভাব্য বদলিকৃত কর্মকর্তাদের নিয়ে আলাপ আলোচনা করেছেন। নামগুলো কাটছাঁট করেছেন। ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এ সম্পর্কে বলেন, বদলি একটি রুটিন কাজ। এ জন্য সব সময়ই তালিকা তৈরি করা হয়ে থাকে। নতুন করে কোন তালিকা তৈরি করা হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিনে প্রায় চার শতাধিক কর্মকর্তার তালিকা তৈরি হয়েছে যুগ্ম সচিব (এপিডি) মহিবুল হকের কম্পিউটারে। ওই তালিকায় অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে কর্মরত কর্মকর্তাদের বর্তমান কর্মস্থল ও সম্ভাব্য কর্মস্থল তালিকা আকারে তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকা গত সোমবার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। এরপর ওই তালিকায় থাকা কর্মকর্তাদের নাম ধরে ধরে আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এক সঙ্গে সবাইকে বদলি করা হবে না। ধাপে ধাপে এ সব বদলি আদেশ জারি করা হবে- যাতে কর্মকর্তারা বোঝেন নিয়মিত বদলির অংশ হিসেবে এটা করা হচ্ছে। এপিডি উইং সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রশাসনে ২৬৭ জন অতিরিক্ত সচিব, ৮৯৫ জন যুগ্ম সচিব ও ১২৮৭ জন উপ-সচিব পদে কর্মরত আছেন। উপ-সচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে দায়িত্ব পালনকারী অনেক কর্মকর্তা বছরের পর বছর ধরে একই পদে কর্মরত আছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তিন বছরের বেশি সময় ধরে একই পদে দায়িত্ব পালন করছেন এমন কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করেছে। এদের বদলে অন্য কোন কর্মকর্তাকে পদায়ন বা নিয়োগ করা যায় ওই সম্ভাব্য কর্মকর্তাদের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। উপ-সচিব পদে বদলি’র বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে নিষ্পত্তি হয়ে যায়। কিন্তু যুগ্ম সচিব বা ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ বা বদলির ক্ষেত্রে সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এ কারণে সরকারের ঊর্ধ্বতন আমলারা এসব তালিকা বেশ ভালভাবে পরখ করে দেখছেন। সম্ভাব্য পদায়নকৃত কর্মকর্তা সম্পর্কে মতামত দিচ্ছেন। এরপর বিষয়টি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়কে মাথায় রেখেই প্রথম পর্যায়ে বদলি’র তালিকা করা হয়েছে। স্পর্শকাতর স্থানে খুব বেশি দলবাজ না হলে কারও নিয়োগের সুপারিশ করা হচ্ছে না। এদিকে সচিবালয় ও বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তরে পদায়ন কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর মাঠ প্রশাসনের দিকে নজর দেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যদিও এরই মধ্যে মাঠ প্রশাসনের স্পর্শকাতর পদ বলে পরিচিত পাঁচ জেলার ডিসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত ৭ই ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশে বান্দরবানের ডিসি কেএম তরিকুল ইসলামকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, খাগড়াছড়ির ডিসি মো. মাসুদ করিমকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব, বাগেরহাটের ডিসি মো. শুকুর আলীকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব, জয়পুরহাটের ডিসি মোহাম্মদ ইয়াসীনকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব এবং খুলনার ডিসি আনিস মাহমুদকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব নিয়োগ করা হয়েছে। সহসাই আরও কয়েকটি জেলার ডিসি পদে পরিবর্তন আসছে। মাঠ প্রশাসন ছাড়াও প্রশাসনের সর্বোচ্চ সচিব পদে পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ৭ই ডিসেম্বর বিপিএটিসি’র রেক্টর খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দারকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেনকে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদারকে বিপিএটিসি’র রেক্টর করা হয়েছে। শিগগিরই এনবিআরের চেয়ারম্যান এবং কৃষি সচিবের চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। তাই নতুন করে এসব পদে সচিব নিয়োগ করা হবে। তাই সচিব পদেও বদলি’র আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
No comments