সাইকেলে ফরাজীর হজে যাত্রা by মাসুদ আহমেদ
মুক্তিযোদ্ধা জাফর ফরাজী। বয়স ৬৩ চলছে।
কিন্তু বাইসাইকেল চালিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরছেন। তার
অভিযোগ তিনি মুক্তিযোদ্ধা বলে পাকিস্তান তাকে ভিসা দেয়নি। এখন জেলায় জেলায়
মানববন্ধন করছেন তিনি। ইচ্ছা সাইকেল চালিয়ে ভারত-চীন-আফগানিস্তান-ইরান-ইরাক
হয়ে সৌদি আরব পৌঁছে হজ পালন করবেন। দেশে সাইকেল চালিয়ে ওয়ার্মআপ করছেন।
ইতিমধ্যে ইরান ও ভারতের ভিসা সংগ্রহ করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা জাফর ফরাজির প্রাথমিক ইচ্ছা ছিল বাইসাইকেল চড়ে পাকিস্তান হয়ে সৌদি আরব পৌঁছা। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে দু’বার ডিও লেটার নিয়ে পাকিস্তান দূতাবাসে জমা দিলেও ভিসা হয়নি তার। তার অভিযোগ, ডিও লেটারে লেখা ছিল ফ্রিডম ফাইটার। এখন প্রতিবাদ হিসেবে বাইসাইকেল চালিয়ে বাংলাদেশের সব জেলা ঘুরছেন আর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রেস ক্লাবের সামনে একা দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেছেন।
মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার পূর্ব কমলাপুর গ্রামে জাফর ফরাজীর মূল বাড়ি। সাইকেলে চড়ে সিলেট হয়ে মৌলভীবাজারে আসেন গত রোববার ৩১শে আগস্ট রাতে। তিনি জানান, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীনের পর নিজে দর্জি পেশায় আবার নিয়োজিত হন। ছেলেমেয়ে সংসার নিয়ে ভালই ছিলেন। ২০০৮ সালে তার মধ্যে সমাজ সেবার ইচ্ছা জাগে। এরপর থেকে এলাকায় সেবামূলক নানা কাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে নিজের জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে সমাজ সেবায় ব্যয় করেন। জাফর ফরাজীর ৫ সন্তান। ২ কন্যা ৩ পুত্র। কন্যাদের বিয়ে দিয়েছেন। এখন ২ ছেলে গার্মেন্ট শ্রমিক। থাকেন নারায়ণগঞ্জে। এই প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, সমাজসেবা করে নিঃস্ব হলে পরিবারের সদস্যরা প্রথমে ভাল চোখে দেখেনি তার কর্মকাণ্ড। তারপরও এই পথ ছাড়তে পারেননি। তাই রানা প্লাজা ধসের সংবাদ পেয়ে ছুটে যান সেখানে। অংশগ্রহণ করেন উদ্ধার কাজে। ওই সময় বিভিন্ন পত্রিকার শিরোনামও হন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা জাফর ফরাজী জানালেন, ইতিমধ্যে তিনি ৪২টি জেলা সাইকেলে চড়ে ভ্রমণ করেছেন। জেলার প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছেন। মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবের সামনে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করেছেন। কথা বলা সময় ফরাজী আরও জানান, ’৭১ সালে তিনি ছিলেন একজন রিকশচালক। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার মোহাম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে ৪নং সেক্টরে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে নিজের এলাকায় দর্জির দোকান করেন। কিন্তু সমাজসেবার ভূত মাথায় চাপায় সব বিক্রি করে হন নিঃস্ব। গতকাল এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে দুঃখ করে বলেন, দোকান বিক্রি করে বোকামি হয়েছে। তারপর ছেলেমেয়েরা এখন নিজেদের মতো দাঁড়িয়েছে। পেছনে তাকাতে চান না। জানালেন ২০১৩ সালে সিদ্ধান্ত নেন সাইকেলে ভ্রমণ করে পাকিস্তান হয়ে ইরাকে যাবেন বড় পীর আবদুল কাদির জিলানীর (রহ:) মাজার জেয়ারত করতে। এরপর সৌদি আরব যাবেন হজ পালন করতে। এর আগে তিনি একবার ভারতে আজমির শরিফ খাজা মঈন উদ্দিন চিশতির (রহ:) মাজারে যান। বর্তমানে পাকিস্তান দূতাবাস তাকে ভিসা না দেয়ায় নিজ দেশে ভ্রমণ
শুরু করেছেন। দেশ ভ্রমণ শেষ করে ভারত-চীন-আফগানিস্তান-ইরান-ইরাক হয়ে সৌদি আরব পৌঁছে হজ পালন করারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জানান, পাকিস্তান হয়ে যেতে পারলে সহজ
হতো। এখন কষ্ট বেশি হবে। ইতিমধ্যে ভারত ও ইরানের ভিসা মিলেছে। বাকি ভিসা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। নিজের সঙ্গে সব সময় কাপনের কাপড় রাখেন পথে মৃত্যু হলে যেন সেই কাপনে মুড়িয়ে দাফন করা যায় তাকে। তিনি জানালেন, প্রথমে তার এই কাজে পরিবারের সাড়া না থাকলেও এখন ছেলেরা টাকা পাঠায়, সাইকেল কিনে দেয়। বাকি জীবন এই বাইসাইকেলে চড়েই পার করে দিতে চান তিনি।
No comments