রাশিয়াকে ক্রিমিয়া ছাড়তে বলল ন্যাটো
ক্রিমিয়া অঞ্চল ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ন্যাটো। ক্রিমিয়া মস্কোর নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার ছয় মাস পর এই আহ্বান জানানো হলো। যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর দুই দিনের সম্মেলন। সম্মেলন শুরুর পর ন্যাটোর মহাসচিব অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউক্রেন থেকে সেনা ফিরিয়ে নিতে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা না করার জন্য আমরা রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। তাদের বলেছি ক্রিমিয়ায় অবৈধ ও স্বঘোষিত সম্প্রসারণ থেকে সরে আসতে।’
খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সের। রাসমুসেন জানান, সংঘাত ছেড়ে শান্তির পথে আসার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ন্যাটো মহাসচিবের ওই মন্তব্যের আগে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাশিয়ার ওপর আরও অবরোধ আরোপের বিষয়ে একমত হয়েছেন ন্যাটোর নেতারা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, নতুন অবরোধ আরোপের ব্যপারে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জোর সম্মতি আছে। ন্যাটোর সম্মেলনে ইউক্রেন ও ইরাক পরিস্থিতিই সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনসহ ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রের নেতারা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। গতকাল সম্মেলন শুরুর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি তুলে ধরেন। সম্মেলনের শুরুতে পশ্চিমা নেতারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ‘অস্থিতিশীলতা’ সৃষ্টির জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অস্ত্র সরবরাহ করছে রাশিয়া। এই দাবির পক্ষে পশ্চিমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণও আছে। সম্মেলন শুরুর কিছুক্ষণ আগে ন্যাটোর মহাসচিব রাসমুসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তনের’ মধ্যে ন্যাটোর বর্তমান সম্মেলন হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘রাশিয়া যে অগ্রহণযোগ্য কাজ করছে, রুশ জনগণকে তা জানিয়ে দেওয়ার সবেচেয়ে ভালো উপায় হলো মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জোরদার করা।’ গত ফেব্রুয়ারিতে ক্রিমিয়াকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা দেয় রাশিয়া। এর পর থেকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর লড়াইয়ে এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ৬০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এদিকে ইরাকের কট্টরপন্থী সুন্নি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াইয়ের ব্যাপারে একমত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন। আইএসের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে এ দুই নেতা বলেন, বর্বর হত্যাকারীদের ভয়ে তাঁদের দেশ ভীত নয়। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ গতকাল বলেন, ইউক্রেনে অস্থিতিশীলতা কমিয়ে আনতে ‘বাস্তব পদক্ষেপ’ নিতে প্রস্তুত রাশিয়া। তবে তা হবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রস্তাব অনুযায়ীই। অস্থিতিশীলতা কমিয়ে আনতে ইউরোপের দেশগুলোর নিরাপত্তা ও সহযোগিতাবিষয়ক জোট অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপের সঙ্গে সহযোগিতা প্রস্তাবও দেন লাভরভ।
No comments