কবিতা ও ইলিশ গবেষণা by অমিতাভ অপু
কবিতা
ছাড়া পৃথিবীতে আর কিছুই নির্ভরযোগ্য নয়। কবিতাতেই মেলবে সারা বিশ্ব। এ
যুগে এমন বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে চলে গেছেন দু’বাংলার কবিতার স্বপ্নে বিভোর
কবি-গবেষক উত্তম দাশ। এক শতাব্দীর কবিতার গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করে হয়ে
ওঠেন সিদ্ধপুরুষ। গত বছর বিশ্ব বাংলা কবিতার প্রকাশনা ছিল আরও এক অনন্য
সংযোজন। বাংলা কবিতার অন্তঃপ্রকৃতির সঙ্গে আধুনিকতার মিল খুঁজে ফেরা এ কবির
এভাবে সাড়ে চুয়াত্তর বছর বয়সে চলে যাওয়া কাম্য ছিল না। সুস্থ্য জীবনযাপন
করলেও গত ১২ জুন রাতে কয়েক মিনিটের বুক ব্যথা-যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে পশ্চিম
বাংলার পদ্ম-পুকুরে নিজ বাড়িতেই ইহলোক ত্যাগ করেন তিনি। কিশোর বয়স থেকে
আমৃত্যু ভারতের বিভিন্ন রাজ্যসহ বিশ্বের বহু দেশ ঘুরে বেড়ালেও শৈশবের
জন্মভূমি বাংলাদেশের প্রতি তার অন্তর্টান ছিল বরাবর। গত ১০ বছরে একাধিকবার
সস্ত্রীক ছুটে এসেছিলেন এ দেশে। প্রকৃতি আর শৈশবকে খুঁজে ফিরেছেন।
উত্তম দাশ এ দেশে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর-সেন্দর গ্রামে দাদু (নানা) শচিন্দ লাল রায়ের মোক্তার বাড়িতে ১৯৩৯ সালের ১১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। নিজেদের বাড়িও ছিল ওই গ্রামেই। পিতা কুমুদবন্ধু দাশের সরকারি চাকরির সুবাদে যুক্ত ভারতের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। মূলত ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় মাত্র ৮ বছর বয়সে উত্তম দাশ মা ছবি দাশের সঙ্গে এ দেশ ত্যাগ করে বাবার কর্মস্থল ভারতে চলে যান। পশ্চিম বাংলার বারইপুরে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাসাহিত্যে এমএ ও ১৯৭১ সালে বাংলাসাহিত্যে সনেট বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজে অধ্যাপনা করার পাশাপাশি কবিতা লেখা ও সাহিত্য গবেষণা ছিল তার নেশা ও পেশা। তার সম্পাদিত সাহিত্যপত্র মহাদিগন্তে বহু বাঙালি কবির প্রতিভার বিকাশ ঘটে। ১৮টি কবিতার বই’র মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রুনুকে, ভারতবর্ষের একজন, নির্মাণে এসেছে, রাত্রির স্থাপত্য, ভ্রমণের দাগ, কাব্য নাট্য ও কবিতা, ভারতীয় কবির ডাইরী, প্রবন্ধের মধ্যে বাংলাসাহিত্যে সনেট, কবিতার সেতুবন্ধ, হাংরি শ্র“তি, শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন, বাংলা ছন্দের কূটস্থান, বাংলা ছন্দের অন্তঃপ্রকৃতি, ক্ষুধিত প্রজন্ম, শতবর্ষের আলোকে জীবনানন্দ দাশ ২০০০, শতবর্ষের আলোকে বুদ্ধদেব বসু ২০০৮। সম্পাদিত কবিতার বই ‘শতাব্দীর বাংলা কবিতা’, বিশ্ব বাংলা কবিতা এতে ৩শ’ কবির শ্রেষ্ঠ কবিতা ও জীবনবৃত্তান্ত প্রকাশ পায়। বইটি আলোড়িত হয়ে ছিল ব্যাপক। শেষ বয়সে শৈশবের টানে উত্তম দাশ এ দেশে যতবার ছুটে আসেন তাকে সঙ্গ দেন বড় মামা লক্ষ্মীপুর জেলার ক্রীড়া সংগঠক, যোগব্যায়াম গবেষক, প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার আলো বিকাশ রায়। এই বড় মামাই ছিলেন তার ছাত্র জীবনে আদর্শ বন্ধু, আর বহু স্মৃতির নস্টালিজায় আবদ্ধ। তার লেখার বহু স্থানে বিকাশ মামার কথা উল্লেখ রয়েছে। উত্তম দাশের মৃত্যু সংবাদ ওই বড় মামাকে জানান হয় ৮ দিন পর। ৮৩ বছর বয়সী মামা আলো বিকাশ ভাগ্নের মৃত্যু সংবাদে স্বাভাবিক থাকতে পারেননি। লক্ষ্মীপুর অফিসার্স ক্লাবে আড্ডা দেয়ার সময় কলকাতা থেকে ছোট মামা শম্ভু ফোন করে উত্তম দাশের শ্রাদ্ধাদি বিষয় জানান। এতেই ভেঙে পড়েন বিকাশ মামা। লক্ষ্মীপুর জেলার সন্তান হিসেবে উত্তম দাশকে দু’বার সংবর্ধনা জানান স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকরা।
উত্তম দাশের মা ছবি দাশ, ৯৩ বছর বছর বয়সে এখনও জীবিত। বারইপুরের বাড়িতে মেঝ ছেলে তন্ময় ও বাভি দাশের সঙ্গে থাকেন। পুত্রের (উত্তম) মৃত্যু সংবাদ তাকে জানান হয়নি। এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যাবে না। দীর্ঘ জীবনের জন্য উত্তম দাশ নিয়মিত যোগব্যায়াম, করতেন। তার পরও মৃত্যু চিরন্তন। স্ত্রী মালবিকা দাশ, পুত্র কবি ময়ুখ দাশ, কন্যা মালিনী (মৌসুমী) দাশ, ছেলের বউ, নাতি, নাতনিসহ অসংখ্য স্বজন রেখে গেছেন।
উত্তম দাশ শুধু কবিতা বা বাংলাসাহিত্য নিয়েই গবেষণা করেননি। তিনি বাংলাদেশের ইলিশ মাছ নিয়েও গবেষণা করেছেন। ২০০২ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার সদর আলেকজান্ডারের মেঘনা পড়ে গিয়ে নদীর গতিপথ দেখেন। ওই সময় তাকে জেলেদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। ইলিশের প্রজনন, ইলিশের বেড়ে ওঠা, কোন পানিতে ইলিশের স্বাদ কেমন- এ সব বিষয় নিয়ে কথা বলেন। ইলিশের স্বাদের সঙ্গে সাহিত্যের মিল খোঁজেন। সাগরের নোনা পানির ইলিশ, ডিম ছাড়ে মিঠা পানিতে। এ কারণে ইলিশকে মিঠা পানির মাছ বলা হয়। একজন কবি-সাহিত্যিককে কত বিষয় জানতে হয় তারও উদাহরণ উত্তম দাশ ।
উত্তম দাশ এ দেশে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর-সেন্দর গ্রামে দাদু (নানা) শচিন্দ লাল রায়ের মোক্তার বাড়িতে ১৯৩৯ সালের ১১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। নিজেদের বাড়িও ছিল ওই গ্রামেই। পিতা কুমুদবন্ধু দাশের সরকারি চাকরির সুবাদে যুক্ত ভারতের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। মূলত ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় মাত্র ৮ বছর বয়সে উত্তম দাশ মা ছবি দাশের সঙ্গে এ দেশ ত্যাগ করে বাবার কর্মস্থল ভারতে চলে যান। পশ্চিম বাংলার বারইপুরে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাসাহিত্যে এমএ ও ১৯৭১ সালে বাংলাসাহিত্যে সনেট বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজে অধ্যাপনা করার পাশাপাশি কবিতা লেখা ও সাহিত্য গবেষণা ছিল তার নেশা ও পেশা। তার সম্পাদিত সাহিত্যপত্র মহাদিগন্তে বহু বাঙালি কবির প্রতিভার বিকাশ ঘটে। ১৮টি কবিতার বই’র মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রুনুকে, ভারতবর্ষের একজন, নির্মাণে এসেছে, রাত্রির স্থাপত্য, ভ্রমণের দাগ, কাব্য নাট্য ও কবিতা, ভারতীয় কবির ডাইরী, প্রবন্ধের মধ্যে বাংলাসাহিত্যে সনেট, কবিতার সেতুবন্ধ, হাংরি শ্র“তি, শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন, বাংলা ছন্দের কূটস্থান, বাংলা ছন্দের অন্তঃপ্রকৃতি, ক্ষুধিত প্রজন্ম, শতবর্ষের আলোকে জীবনানন্দ দাশ ২০০০, শতবর্ষের আলোকে বুদ্ধদেব বসু ২০০৮। সম্পাদিত কবিতার বই ‘শতাব্দীর বাংলা কবিতা’, বিশ্ব বাংলা কবিতা এতে ৩শ’ কবির শ্রেষ্ঠ কবিতা ও জীবনবৃত্তান্ত প্রকাশ পায়। বইটি আলোড়িত হয়ে ছিল ব্যাপক। শেষ বয়সে শৈশবের টানে উত্তম দাশ এ দেশে যতবার ছুটে আসেন তাকে সঙ্গ দেন বড় মামা লক্ষ্মীপুর জেলার ক্রীড়া সংগঠক, যোগব্যায়াম গবেষক, প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার আলো বিকাশ রায়। এই বড় মামাই ছিলেন তার ছাত্র জীবনে আদর্শ বন্ধু, আর বহু স্মৃতির নস্টালিজায় আবদ্ধ। তার লেখার বহু স্থানে বিকাশ মামার কথা উল্লেখ রয়েছে। উত্তম দাশের মৃত্যু সংবাদ ওই বড় মামাকে জানান হয় ৮ দিন পর। ৮৩ বছর বয়সী মামা আলো বিকাশ ভাগ্নের মৃত্যু সংবাদে স্বাভাবিক থাকতে পারেননি। লক্ষ্মীপুর অফিসার্স ক্লাবে আড্ডা দেয়ার সময় কলকাতা থেকে ছোট মামা শম্ভু ফোন করে উত্তম দাশের শ্রাদ্ধাদি বিষয় জানান। এতেই ভেঙে পড়েন বিকাশ মামা। লক্ষ্মীপুর জেলার সন্তান হিসেবে উত্তম দাশকে দু’বার সংবর্ধনা জানান স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকরা।
উত্তম দাশের মা ছবি দাশ, ৯৩ বছর বছর বয়সে এখনও জীবিত। বারইপুরের বাড়িতে মেঝ ছেলে তন্ময় ও বাভি দাশের সঙ্গে থাকেন। পুত্রের (উত্তম) মৃত্যু সংবাদ তাকে জানান হয়নি। এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যাবে না। দীর্ঘ জীবনের জন্য উত্তম দাশ নিয়মিত যোগব্যায়াম, করতেন। তার পরও মৃত্যু চিরন্তন। স্ত্রী মালবিকা দাশ, পুত্র কবি ময়ুখ দাশ, কন্যা মালিনী (মৌসুমী) দাশ, ছেলের বউ, নাতি, নাতনিসহ অসংখ্য স্বজন রেখে গেছেন।
উত্তম দাশ শুধু কবিতা বা বাংলাসাহিত্য নিয়েই গবেষণা করেননি। তিনি বাংলাদেশের ইলিশ মাছ নিয়েও গবেষণা করেছেন। ২০০২ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার সদর আলেকজান্ডারের মেঘনা পড়ে গিয়ে নদীর গতিপথ দেখেন। ওই সময় তাকে জেলেদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। ইলিশের প্রজনন, ইলিশের বেড়ে ওঠা, কোন পানিতে ইলিশের স্বাদ কেমন- এ সব বিষয় নিয়ে কথা বলেন। ইলিশের স্বাদের সঙ্গে সাহিত্যের মিল খোঁজেন। সাগরের নোনা পানির ইলিশ, ডিম ছাড়ে মিঠা পানিতে। এ কারণে ইলিশকে মিঠা পানির মাছ বলা হয়। একজন কবি-সাহিত্যিককে কত বিষয় জানতে হয় তারও উদাহরণ উত্তম দাশ ।
No comments