ভীষণ পাজি পিঁপড়া-ছেলে by আনিসুল হক
টিপরা খুব মুশকিলে পড়েছে।
সে একটা বয়ামে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু আর বেরোতে পারছে না। কাচটা ভীষণ পিচ্ছিল। আর টিপরা পড়ে আছে একদম বয়ামটার তলায়। ছয় পা দিয়ে সে যে পিলপিল করে উঠে পড়বে, তা সম্ভব হচ্ছে না। পা পিছলে যাচ্ছে।
তার ভীষণ কান্না পেল। সে পিঁপিঁ করে কাঁদতে লাগল। কিন্তু বয়ামের মুখ বন্ধ। তার কান্না শুনবেই বা কে?
সে একটা বয়ামে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু আর বেরোতে পারছে না। কাচটা ভীষণ পিচ্ছিল। আর টিপরা পড়ে আছে একদম বয়ামটার তলায়। ছয় পা দিয়ে সে যে পিলপিল করে উঠে পড়বে, তা সম্ভব হচ্ছে না। পা পিছলে যাচ্ছে।
তার ভীষণ কান্না পেল। সে পিঁপিঁ করে কাঁদতে লাগল। কিন্তু বয়ামের মুখ বন্ধ। তার কান্না শুনবেই বা কে?
এখন সে আফসোস করে মরছে। তার উচিত হয়নি পিঁপড়ার দলের সারি ছেড়ে এই বয়ামের দিকে আসা। চিনির বয়াম। চিনির গন্ধ পেয়ে সে চলে এল। সে যখন তাদের সারিটা ছেড়ে এদিকে পা বাড়ায়, তখন বন্ধুরা তাকে নিষেধ করেছিল। বলল, ‘যাস না, একা একা গেলে পথ হারিয়ে ফেলবি।’ সে বলল, ‘বেশি দূর যাব না। এই একটুখানি যাই, আবার দৌড়ে এসে লাইনে ঢুকে পড়ব।’
লাইন ছেড়ে বেলাইনে গিয়ে সে প্রথমে পেল একটা কৌটার মুখ। সে তাতে চড়ে বসল, তার গায়ে তিনটা চিনির দানা লেগে আছে। মনের সুখে চিনি তিনটা গপাস করে খেয়ে নিল টিপরা। তারপর কে যেন কৌটার মুখটা তুলে কৌটায় লাগিয়ে ফেলল। বেরোনোর পথ খুঁজতে সে কৌটার টিনের ঢাকনাটা ছেড়ে কাচের গায়ে পা দিল। অমনি পিছলে পড়ে গেল একেবারে তলায়। খালি কৌটা। সে কাচের দেয়াল বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু কিছুতেই সে ওপরে উঠতে পারছে না।
সে কাঁদছে। এখন কী হবে তার?
তার মনে পড়ে গেল ভাইবোনদের কথা। তার বন্ধুদের কথা। কী সুখেই না সে ছিল এত দিন। আর সে কী ভুলটাই না করল। এখানে এই বয়ামে বন্দী থাকতে থাকতে সে না মরেই যায়।
বয়ামের মালিক বয়ামটা ধোয়ার জন্য হাতে নিলেন। বয়ামের মধ্যে পানি ভরা হচ্ছে। পানির তোড়ে টিপরার একটা পা ভেঙেই গেল প্রায়। সে পানিতে ভাসতে লাগল। তারপর ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে সিংকের মধ্যে চলে গেল। সেখানে সে ভাসছে। ভাসতে ভাসতে চলে গেল সিংকের কোণে। কোনো রকমে পা টানতে টানতে উঠে পড়ল সিংকের গায়ে। সেখান থেকে এখন সে কোথায় যাবে? তার দলের অন্য সবাই কোথায় সে জানে না। সে কাঁদছে। সে হাউমাউ করে কাঁদছে।
সিংকের গা থেকে সে উঠে পড়ল মানুষটার জামায়।
জামার মধ্যে কতক্ষণ থাকা যায়। সে কুটুস করে কামড় দিয়েই বসল।
উফ্ বলে একটা আওয়াজ পাওয়া গেল মানুষের গলায়। জামা ঝাড়ল মানুষটা।
অমনি সে ছিটকে পড়ল মেঝেয়। আর সেখানেই সে পেয়ে গেল পিঁপড়ার কাফেলাটাকে।
খোঁড়া পা’টা নিয়ে সে ভিড়ে গেল তাদের পিঁপড়ার দলের মিছিলে।
No comments