সাদা ভাত by আমীরুল ইসলাম
শেখ সাহেব বাজারের মোড়টা যেখানে আজিমপুরের সঙ্গে মিশেছে, সেখানে সিংহ মার্কা একটা বাড়ি আছে।
বিশাল বড় বাড়ি।
সেই বাড়িতে এক বছর ধরে কাজ করে আমিনা নামের একটা মেয়ে। বয়স বারো বছর। কালো চুল মাথাভরা। টানা টানা হরিণের মতো চোখ। ঢলো ঢলো মুখ। আমিনা কাজ করে। বুয়ার কাজ।
বাড়িতে পিংকি আছে। পিংকি ছোট্ট একটা মেয়ে। আমিনা পিংকির দেখাশোনা করে। লালন পালন করে।
পিংকির বাবা মা দুজনেই ব্যাংকে চাকরি করেন। তাঁরা সকালে অফিসে বেরিয়ে যান। তার পর থেকে পিংকির সব দায়িত্ব আমিনার। আমিনা ওকে নাশতা খাওয়ায়। গোসল করায়। ঘুম পাড়ায়। পিংকির সঙ্গে খেলতেও হয়। টেলিভিশন দেখতে হয়।
বিশাল বড় বাড়ি।
সেই বাড়িতে এক বছর ধরে কাজ করে আমিনা নামের একটা মেয়ে। বয়স বারো বছর। কালো চুল মাথাভরা। টানা টানা হরিণের মতো চোখ। ঢলো ঢলো মুখ। আমিনা কাজ করে। বুয়ার কাজ।
বাড়িতে পিংকি আছে। পিংকি ছোট্ট একটা মেয়ে। আমিনা পিংকির দেখাশোনা করে। লালন পালন করে।
পিংকির বাবা মা দুজনেই ব্যাংকে চাকরি করেন। তাঁরা সকালে অফিসে বেরিয়ে যান। তার পর থেকে পিংকির সব দায়িত্ব আমিনার। আমিনা ওকে নাশতা খাওয়ায়। গোসল করায়। ঘুম পাড়ায়। পিংকির সঙ্গে খেলতেও হয়। টেলিভিশন দেখতে হয়।
অনেক কাজ করতে হয় আমিনাকে। যখন খালা খালু অফিস থেকে বাসায় ফেরেন, তখনো কাজের শেষ নেই। তখন কাজ আরও বেড়ে যায়। খালা বলেন, ‘আমার বাজারের ব্যাগ দে। বাজারে যাব।’
পিংকি হয়তো হঠাৎ তখন কান্না জুড়ে দেয়। কিন্তু আমিনা কারও ওপর রাগ করতে পারে না। মুখ বুজে তাকে সব কাজ করতে হয়।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে বেচারি রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। বিছানায় শোবার সঙ্গে সঙ্গে ওর শরীর ভেঙে ঘুম আসে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ও স্বপ্ন দেখে—অদ্ভুত সব স্বপ্ন। ওর গ্রামের কথা মনে পড়ে। ওর প্রায় অন্ধ বাবার কথা মনে পড়ে। ওর মা নেই। ছোট ভাইবোন দুজনের কথা মনে পড়ে। বাবা কি এখন গ্রামের হাটে ভিক্ষা করে? ছোট দুই ভাইবোন কি খাওয়া পায়? মনে পড়ে, আমিনা যখন গ্রামে ছিল তখন পেট ভরে খাবার পেত না। আধা পেটা খেয়ে তাকে দিন কাটাতে হতো। পাড়াপড়শিরা কেউ খবর নিত না। চাচারা অবস্থাপন্ন। তারা ফিরে তাকাল না আমিনার দিকে...
সেই সব দুঃখের দিনের কথা খুব মনে পড়ে। এই বাড়িতে কষ্ট হলেও দুই বেলা ভাত পাওয়া যায়! এর চেয়ে আনন্দ আর কী আছে? সাদা ভাতের চেয়ে প্রয়োজনীয় কিছুই নেই এই জীবনে।
No comments