প্রতিবন্ধী ক্লদিও এখন প্রেরণার উৎস
জন্মের সময় ডাক্তাররা তার মা’কে বলেছিলেন,
তাকে যেন মরে যেতে দেয়া হয়। কেন না তিনি খুব বিরল একটি শারীরিক ব্যতিক্রম
নিয়ে জন্মেছিলেন। এর ফলে তার মাথা পেছন দিকে উল্টো হয়ে ফিরে থাকে। কিন্তু
এত বড় একটি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ব্রাজিলের মন্তে সান্তো এলাকার
ক্লদিও অলিভেইরা ডাক্তারদের সন্দেহকে উড়িয়ে দিয়ে আজ হিসাবরক্ষক হয়েছেন। একই
সঙ্গে তিনি বনে গেছেন সাধারণ মানুষের জন্য এক অনুপ্রেরণার নাম। তিনি বলেন,
আমার শিশুকাল থেকেই আমি নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতাম। অন্যের ওপর
নির্ভর করাটা মোটেই পছন্দ করতাম না। এখন হিসাবরক্ষণ, ক্লায়েন্টদের জন্য
গবেষণা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমি টিভি চালু করা, নিজের মুঠোফোন হাতে তুলে
নেয়া, রেডিও চালু করা, কমিপউটার ও ইন্টারনেট চালানো শিখেছি। এ সব কিছুই
নিজে নিজে শিখেছি। ক্লদিও নিজের মুখের ভেতর পুরে রাখা একটি কলম দিয়ে টাইপ
করেন, ফোন ও কমিপউটার চালান। তার নিজের ওপর বিশ্বাস তাকে আজ শিক্ষাক্ষেত্রে
সফল করেছে। বর্তমানে তিনি ফেইরা ডি সান্তানার স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে
অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। যখন তিনি জন্ম নিয়েছিলেন, তখন
ডাক্তাররা তার মাকে বলেছিল, এই শিশু বেশিদিন বাঁচবে না।
তার মা মারিয়া হোসে বলেন, মানুষ বলাবলি শুরু করলো, এই শিশু মারা যাবে। কারণ সে জন্ম নেয়ার সময় খুব কষ্টে নিঃশ্বাস নিতো। অনেকে বলতো, তাকে খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই, সে ইতিমধ্যেই মারা যাচ্ছে। কিন্তু আজ কেবল সুখ। কেননা, ক্লদিও আজ অন্য একজন মানুষের মতোই। সে এভাবেই গড়ে উঠেছে বাড়িতে। আমরা কখনওই তাকে ঠিক করার চেষ্টা করিনি। সবসময় চাইতাম অন্যরা যেভাবে করে, সেও যাতে সাধারণ কাজগুলো সেভাবে করতে পারে। তাই সে আজ আত্মবিশ্বাসী। সে রাস্তায় হাঁটার সময় লজ্জা পায় না। সে তখন গান গায়, কিংবা নাচে। আট বছর বয়সে ক্লদিও হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁটা শুরু করে। এর আগে তাকে অন্যদের বহন করে নিয়ে যেতে হতো সবখানে। তার পরিবার বাড়ির মেঝে পরিবর্তন করেছিল, যাতে তিনি ভাল করে হাঁটতে পারেন। ক্লদিওর খাট, বাতি বা অন্যান্য সুইচ একটু নিচু জায়গায় রাখা বা বানানো হয়েছিল, যাতে তিনি নিজেই সে সব ব্যবহার করতে পারেন। নিজের অস্বাভাবিক গড়নের কারণে হুইল চেয়ার ব্যবহার করতে পারেন না ক্লদিও। তাই তার জন্য স্বাধীনভাবে থাকাটা ছিল খুব কষ্টের। কিন্তু তবুও তিনি নিজের মায়ের কাছে স্কুলে যাওয়ার জন্য আবদার শুরু করে। একসময় তিনি অন্যদের মতোই স্কুলে যেতে শুরু করেন। ডাক্তাররা সমপ্রতি তাকে পরীক্ষা করেছেন। এরপর তার সমস্যাকে বলছেন, আর্থ্রোগ্রিপোসিস নামের খুব বিরল একটি ব্যাধি। তারা মনে করেন, তার পায়ে ও বাহুতে সমস্যার কারণে সে সব ঠিকমতো প্রসারিত হতে পারে না।
ক্লদিও বলেন, আজ আমার নিজেকে ভিন্ন কিছু মনে হয় না। আমি স্বাভাবিক একজন মানুষ। আমি আমার নিচু হয়ে যাওয়া মাথা দেখি না। আমি এই কথাটাই আমার অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যে বলে থাকি। এখন মানুষের সঙ্গে কথা বলাটা আরও সহজ হয়ে গেছে। আমি এটি নিয়ে আর ভয় পাই না। আমি বলতে পারি যে, আমি পেশাদার, আন্তর্জাতিক বক্তা এবং আমি সারা বিশ্ব থেকে বক্তৃতার জন্য আমন্ত্রণ পাই।
No comments