প্যারিস ভুলে যাচ্ছে হেমিংওয়েকে!
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল খ্যাতিমান মার্কিন লেখক ও সাংবাদিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের। তিনি ১৯২০ সালে প্রথমবার সেখানে থাকা শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শহরটিকে দখলদার জার্মান বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার নেপথ্যে তিনিও ভূমিকা রাখেন। কিন্তু সেই ঘটনার ৭০ বছর পর ফ্রান্স থেকে লেখকের স্মৃতি একরকম হারিয়ে যেতে বসেছে। খবর বিবিসির। ২০ বছর আগেও চিত্রটা ছিল অন্য রকম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য-পাস তরুণেরা প্যারিসের বিভিন্ন ক্যাফেতে বসে হেমিংয়ের মতো লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। এখন সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর সেই নবীন লেখকদের সংখ্যা কমে গেছে। হেমিংওয়ে প্যারিসের যে এলাকায় থাকতেন, সেই লেফট ব্যাংক ও বইয়ের দোকান শেক্সপিয়ার অ্যান্ড কোম্পানি একসময় ছিল পর্যটকদের জনপ্রিয় গন্তব্য।
মুভেবল ফিস্ট নামের স্মৃতিকথায় প্যারিসের অনেক রাস্তাঘাটের উল্লেখ করেছিলেন হেমিংওয়ে। লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জনের পরও মার্কিন সেনাবাহিনীর পঞ্চম পদাতিক ডিভিশনের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন হেমিংওয়ে। সাংবাদিকতা করলেও নিজের চারপাশে যুদ্ধের আবহ তৈরি করে নিয়েছিলেন। তাঁর হোটেলকক্ষে থাকত গ্রেনেড ও সামরিক পোশাক-পরিচ্ছদ! ফ্রান্সের মুক্তিকামী যোদ্ধাদের একটি অংশের ওপর হেমিংওয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল। ১৯৪৪ সালের ২৫ আগস্ট জার্মান বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিনে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে হেমিংওয়েও প্যারিসে ঢুকেছিলেন। তাঁর নানা গল্পে রিট্জ হোটেলের বিবরণ আছে। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সেখানে দীর্ঘদিন অবস্থান করেন হেমিংওয়ে। ১৯২৮ সালে হোটেলটির ভূগর্ভস্থ কক্ষে সংরক্ষণের জন্য হেমিংওয়ে দুটি ট্রাংকে বেশ কিছু পাণ্ডুলিপি রেখে গিয়েছিলেন। সময় বদলেছে। প্যারিসের তরুণ-তরুণীদের কাছে এখন কদর পাওয়া মুখগুলো বদলে গেছে। তবু সেই ১৯২০-এর দশকের প্যারিসের কিছু স্মৃতি কখনোই হারিয়ে যাবে না। আজও যখন কোনো তরুণকে বৃষ্টিভেজা প্যারিসের কোনো ক্যাফের জানালার পাশে বসে স্বপ্নাবিষ্ট অবস্থায় পেনসিল কামড়াতে দেখা যায়, তখন এ শহরের বহু বছর আগের কোনো দৃশ্যই যেন মনের গভীরে উঁকি দিয়ে যায়।
No comments