একবিংশ শতকে গণতন্ত্র by জোসেফ ই. স্টিগলিৎজ
টমাস পিকেটির সাম্প্রতিক গ্রন্থ ক্যাপিটাল
ইন দ্য টোয়েন্টি ফাস্ট সেঞ্চুরি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্য উন্নত
দেশগুলোয় বেশ সাড়া ফেলেছে। এতে বোঝা যায়, দুনিয়ায় বৈষম্য ক্রমাগত
বাড়ছে। দুনিয়ার শীর্ষ ধনীদের হাতে সম্পদ ও অর্থ জমা হচ্ছে। ব্যাপারটা
একরকম প্রতিষ্ঠিত হলেও পিকেটির এই গ্রন্থ আবারও চোখে আঙুল দিয়ে এ সত্য
আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে।
এই গ্রন্থে মহামন্দা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী ৩০ বছর সম্পর্কে নতুন ভাবনার খোরাক রয়েছে। এই পর্যায়কে ইতিহাসের এক অস্বাভাবিক সময় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন পিকেটি। এ সময় সামাজিক একতা ছিল অস্বাভাবিক রকম, কালের আকস্মিক ঘটনাপ্রবাহের ফলে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময় অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ছিল অত্যন্ত দ্রুত। সমাজে যে সমৃদ্ধি এসেছিল, সবাই কমবেশি তা ভোগ করেছে, সব শ্রেণির মানুষেরই জীবনমান উন্নত হয়েছে। তবে সমাজের সবচেয়ে নিম্নকোটির মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে তুলনামূলকভাবে বেশি।
পিকেটি ১৯৮০-এর দশকে রোনাল্ড রিগ্যান ও মার্গারেট থ্যাচারের ‘সংস্কার’ কর্মসূচিতে আলোকপাত করেছেন, যে কর্মসূচি থেকে সৃষ্ট প্রবৃদ্ধির ফল কমবেশি সবারই ভোগ করার কথা। কিন্তু এই সংস্কারের ফলে দেখা গেল, প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে গেছে। আর যতটুকু প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, তার ফল ভোগ করেছে উচ্চকোটির কিছু মানুষ।
কিন্তু পিকেটি তাঁর এই গ্রন্থে অর্থনৈতিক তত্ত্ব ও পুঁজিবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু মৌলিক প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, সম্পদ/উৎপাদনের অনুপাতে ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে। অর্থনীতির সাধারণ সূত্রে এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকের মজুরি বাড়ার কথা, ফলে মুনাফার পরিমাণ কমে আসার কথা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, পুঁজি বিনিয়োগ থেকে সৃষ্ট মুনাফার পরিমাণ না কমে
উল্টো মজুরির পরিমাণ কমে এসেছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে চার দশক আগের তুলনায় বর্তমানে গড় মজুরির পরিমাণ ৭ শতাংশ কম।
এর সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য ব্যাখ্যা হচ্ছে, সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ উৎপাদনশীল পুঁজির বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমাদের হাতে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে, সেটাও এই ব্যাখ্যার সঙ্গে মিলে যায়। সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হচ্ছে ভূমি ও বাড়ির মূল্যবৃদ্ধি। ২০০৮ সালের আর্থিক খাতের মন্দার আগে দুনিয়ার অনেক দেশেই স্থাবর সম্পত্তির বুদ্বুদ সৃষ্টি হয়েছিল। অর্থনীতির সেই ত্রুটির এখনো পূর্ণাঙ্গ সমাধান হয়নি। এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটার কারণ হচ্ছে বড়লোকদের মধ্যে ‘অবস্থানগত’ পণ্য ক্রয়ের প্রতিযোগিতা—সমুদ্রসৈকতে একটি বাড়ি বা নিউইয়র্ক সিটির পঞ্চম অ্যাভিনিউতে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা প্রভৃতি।
কখনো কখনো নগদ অর্থ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সঙ্গে ‘অপরিমেয়’ সম্পদ থেকে পরিমেয় সম্পদে বিনিয়োগ সরিয়ে নেওয়ার খুব সামান্যই সম্পর্ক রয়েছে। এই পরিবর্তনকে অর্থনীতির সামগ্রিক অবনতি হিসেবেই চিহ্নিত করা যায়। একচেটিয়া ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে বা ব্যাংক ও অন্যান্য ফার্ম যদি ক্রেতাদের আরও শোষণ শুরু করে, তাহলে দেখা যাবে, তারা বলছে অমুক ব্যাংক বা ফার্মের মুনাফা বেড়েছে। আর সেটা পুঁজিতে পরিণত হলে বলবে আর্থিক সম্পদ বেড়েছে। কিন্তু সেটা হলে নিশ্চিতভাবেই সামাজিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়, অর্থনৈতিক দক্ষতা হ্রাস পায়; যদিও দাপ্তরিকভাবে সম্পদের পরিমাণ বাড়ে। আমরা তখন এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে যে মানবীয় পুঁজির অবমূল্যায়ন হয়, সেটা চোখে দেখি না—শ্রমিকদের সম্পদ।
তার পরও ব্যাংকগুলো যদি তাদের রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ক্ষতির সামাজিকীকরণ ঘটায় বা অসদুপায়ে অর্জিত অর্থ ধরে রাখতে পারে, তাহলে দেখা যাবে, আর্থিক খাতে পরিমাপযোগ্য সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। করদাতাদের সম্পদের পরিমাণ যে সংগতিপূর্ণভাবে কমছে, সেটা আমরা পরিমাপ করি না। একইভাবে, করপোরেশনগুলো সরকারকে অধিক মূল্যে তাদের পণ্য কিনতে বাধ্য করলে (বড় বড় ওষুধ কোম্পানি যেটা সফলতার সঙ্গে করেছে) বা কম মূল্যে সরকারি সম্পদ লাভ করলে (খনি কোম্পানিগুলো যেটা করেছে) দেখা যায়, তাদের পরিসম্পদ বেড়েছে; যদিও সাধারণ নাগরিকদের সম্পদের পরিমাণ বাড়ে না।
ফলে, এদের সম্পদ বাড়লেও আমরা দেখছি শ্রমিকের মজুরি বাড়ছে না বা বৈষম্য বাড়ছে। এটা বাজার অর্থনীতির সাধারণ সূত্রও নয়। এটাকে আমি ‘নকল পুঁজিবাদ বলি’। বাজার কীভাবে কাজ করে বা কীভাবে কাজ করা উচিত, সেটা কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার; এই ব্যবস্থা প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিশ্চিত করতে পারেনি। উল্টো এমন নিয়ম করে রাখা হয়েছে যে এই বিকৃত বাজারব্যবস্থা টিকে থাকছে, যে বাজারে করপোরেশন ও ধনী ব্যক্তিরা সবাইকে শোষণ করছে।
হ্যাঁ, বাজার শূন্যের মধ্যে থাকে না। খেলার কিছু নিয়ম থাকতে হবে, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সেটা নির্ধারণ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মতো অন্য দেশগুলোয় উচ্চমাত্রার অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলে তা ক্রমেই রাজনৈতিক বৈষম্যের দিকে ধাবিত হয় এবং হচ্ছেও তা-ই। এরূপ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক বিকাশের সুযোগও অসম হয়ে যায়। সমাজের গতিও থমকে যায়।
ফলে, পিকেটি যে আরও তীব্র বৈষম্যের কথা বলছেন, সেটা অর্থনীতির কোনো অপরিবর্তনীয় নিয়ম নয়। কিছু পরিবর্তন আনা গেলে এই বৈষম্য কমানো সম্ভব, সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা যাবে: স্থাবর সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি ও উত্তরাধিকারী কর, শিক্ষার আওতায় বাড়াতে ব্যয় বৃদ্ধি, ট্রাস্টবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগ, করপোরেট পরিচালনা-পদ্ধতি সংস্কার করে কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, ব্যাংকের শোষণ বন্ধ করতে আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ প্রভৃতি।
খেলার নিয়মকানুন ঠিকভাবে প্রবর্তন করতে পারলে ১৯২০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে যে দ্রুত ও সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, সেটা আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব, যে ব্যবস্থায় মধ্যবিত্তরাই সবচেয়ে লাভবান হয়েছিল। আজ এই একবিংশ শতকে আমরা পুঁজি নিয়ে চিন্তিত নই, আমাদের মাথাব্যথার বিষয় হচ্ছে গণতন্ত্র।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
জোসেফ ই. স্টিগলিৎজ: নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ।
এই গ্রন্থে মহামন্দা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী ৩০ বছর সম্পর্কে নতুন ভাবনার খোরাক রয়েছে। এই পর্যায়কে ইতিহাসের এক অস্বাভাবিক সময় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন পিকেটি। এ সময় সামাজিক একতা ছিল অস্বাভাবিক রকম, কালের আকস্মিক ঘটনাপ্রবাহের ফলে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময় অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ছিল অত্যন্ত দ্রুত। সমাজে যে সমৃদ্ধি এসেছিল, সবাই কমবেশি তা ভোগ করেছে, সব শ্রেণির মানুষেরই জীবনমান উন্নত হয়েছে। তবে সমাজের সবচেয়ে নিম্নকোটির মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে তুলনামূলকভাবে বেশি।
পিকেটি ১৯৮০-এর দশকে রোনাল্ড রিগ্যান ও মার্গারেট থ্যাচারের ‘সংস্কার’ কর্মসূচিতে আলোকপাত করেছেন, যে কর্মসূচি থেকে সৃষ্ট প্রবৃদ্ধির ফল কমবেশি সবারই ভোগ করার কথা। কিন্তু এই সংস্কারের ফলে দেখা গেল, প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে গেছে। আর যতটুকু প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, তার ফল ভোগ করেছে উচ্চকোটির কিছু মানুষ।
কিন্তু পিকেটি তাঁর এই গ্রন্থে অর্থনৈতিক তত্ত্ব ও পুঁজিবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু মৌলিক প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, সম্পদ/উৎপাদনের অনুপাতে ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে। অর্থনীতির সাধারণ সূত্রে এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকের মজুরি বাড়ার কথা, ফলে মুনাফার পরিমাণ কমে আসার কথা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, পুঁজি বিনিয়োগ থেকে সৃষ্ট মুনাফার পরিমাণ না কমে
উল্টো মজুরির পরিমাণ কমে এসেছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে চার দশক আগের তুলনায় বর্তমানে গড় মজুরির পরিমাণ ৭ শতাংশ কম।
এর সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য ব্যাখ্যা হচ্ছে, সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ উৎপাদনশীল পুঁজির বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমাদের হাতে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে, সেটাও এই ব্যাখ্যার সঙ্গে মিলে যায়। সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হচ্ছে ভূমি ও বাড়ির মূল্যবৃদ্ধি। ২০০৮ সালের আর্থিক খাতের মন্দার আগে দুনিয়ার অনেক দেশেই স্থাবর সম্পত্তির বুদ্বুদ সৃষ্টি হয়েছিল। অর্থনীতির সেই ত্রুটির এখনো পূর্ণাঙ্গ সমাধান হয়নি। এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটার কারণ হচ্ছে বড়লোকদের মধ্যে ‘অবস্থানগত’ পণ্য ক্রয়ের প্রতিযোগিতা—সমুদ্রসৈকতে একটি বাড়ি বা নিউইয়র্ক সিটির পঞ্চম অ্যাভিনিউতে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা প্রভৃতি।
কখনো কখনো নগদ অর্থ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সঙ্গে ‘অপরিমেয়’ সম্পদ থেকে পরিমেয় সম্পদে বিনিয়োগ সরিয়ে নেওয়ার খুব সামান্যই সম্পর্ক রয়েছে। এই পরিবর্তনকে অর্থনীতির সামগ্রিক অবনতি হিসেবেই চিহ্নিত করা যায়। একচেটিয়া ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে বা ব্যাংক ও অন্যান্য ফার্ম যদি ক্রেতাদের আরও শোষণ শুরু করে, তাহলে দেখা যাবে, তারা বলছে অমুক ব্যাংক বা ফার্মের মুনাফা বেড়েছে। আর সেটা পুঁজিতে পরিণত হলে বলবে আর্থিক সম্পদ বেড়েছে। কিন্তু সেটা হলে নিশ্চিতভাবেই সামাজিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়, অর্থনৈতিক দক্ষতা হ্রাস পায়; যদিও দাপ্তরিকভাবে সম্পদের পরিমাণ বাড়ে। আমরা তখন এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে যে মানবীয় পুঁজির অবমূল্যায়ন হয়, সেটা চোখে দেখি না—শ্রমিকদের সম্পদ।
তার পরও ব্যাংকগুলো যদি তাদের রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ক্ষতির সামাজিকীকরণ ঘটায় বা অসদুপায়ে অর্জিত অর্থ ধরে রাখতে পারে, তাহলে দেখা যাবে, আর্থিক খাতে পরিমাপযোগ্য সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। করদাতাদের সম্পদের পরিমাণ যে সংগতিপূর্ণভাবে কমছে, সেটা আমরা পরিমাপ করি না। একইভাবে, করপোরেশনগুলো সরকারকে অধিক মূল্যে তাদের পণ্য কিনতে বাধ্য করলে (বড় বড় ওষুধ কোম্পানি যেটা সফলতার সঙ্গে করেছে) বা কম মূল্যে সরকারি সম্পদ লাভ করলে (খনি কোম্পানিগুলো যেটা করেছে) দেখা যায়, তাদের পরিসম্পদ বেড়েছে; যদিও সাধারণ নাগরিকদের সম্পদের পরিমাণ বাড়ে না।
ফলে, এদের সম্পদ বাড়লেও আমরা দেখছি শ্রমিকের মজুরি বাড়ছে না বা বৈষম্য বাড়ছে। এটা বাজার অর্থনীতির সাধারণ সূত্রও নয়। এটাকে আমি ‘নকল পুঁজিবাদ বলি’। বাজার কীভাবে কাজ করে বা কীভাবে কাজ করা উচিত, সেটা কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার; এই ব্যবস্থা প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিশ্চিত করতে পারেনি। উল্টো এমন নিয়ম করে রাখা হয়েছে যে এই বিকৃত বাজারব্যবস্থা টিকে থাকছে, যে বাজারে করপোরেশন ও ধনী ব্যক্তিরা সবাইকে শোষণ করছে।
হ্যাঁ, বাজার শূন্যের মধ্যে থাকে না। খেলার কিছু নিয়ম থাকতে হবে, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সেটা নির্ধারণ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মতো অন্য দেশগুলোয় উচ্চমাত্রার অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলে তা ক্রমেই রাজনৈতিক বৈষম্যের দিকে ধাবিত হয় এবং হচ্ছেও তা-ই। এরূপ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক বিকাশের সুযোগও অসম হয়ে যায়। সমাজের গতিও থমকে যায়।
ফলে, পিকেটি যে আরও তীব্র বৈষম্যের কথা বলছেন, সেটা অর্থনীতির কোনো অপরিবর্তনীয় নিয়ম নয়। কিছু পরিবর্তন আনা গেলে এই বৈষম্য কমানো সম্ভব, সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা যাবে: স্থাবর সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি ও উত্তরাধিকারী কর, শিক্ষার আওতায় বাড়াতে ব্যয় বৃদ্ধি, ট্রাস্টবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগ, করপোরেট পরিচালনা-পদ্ধতি সংস্কার করে কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, ব্যাংকের শোষণ বন্ধ করতে আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ প্রভৃতি।
খেলার নিয়মকানুন ঠিকভাবে প্রবর্তন করতে পারলে ১৯২০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে যে দ্রুত ও সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, সেটা আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব, যে ব্যবস্থায় মধ্যবিত্তরাই সবচেয়ে লাভবান হয়েছিল। আজ এই একবিংশ শতকে আমরা পুঁজি নিয়ে চিন্তিত নই, আমাদের মাথাব্যথার বিষয় হচ্ছে গণতন্ত্র।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
জোসেফ ই. স্টিগলিৎজ: নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ।
No comments