মহাযুদ্ধের ভুলে যাওয়া নায়কেরা by শশী থারুর
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ১০০ বছর পর দুনিয়াজুড়ে এই মহিরুহ ঘটনার স্মৃতিচারণা হচ্ছে। এটাকে দুনিয়ার শেষ যুদ্ধ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হলেও যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। এ যুদ্ধে যাঁরা লড়েছেন বা জীবন দিয়েছেন, তাঁরা কি কেউ ভেবেছিলেন, মাত্র ২৫ বছর পরই এ যুদ্ধের পরবর্তী সংস্করণ মঞ্চায়িত হবে?
এই যুদ্ধ ইউরোপের তরুণদের জীবন প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই তাঁদের ঠেলে কবরে পাঠিয়ে দিয়েছে। পরিখার মধ্যে এক প্রজন্মের প্রতিভাবান কবি, শিল্পী, খেলোয়াড়দের প্রতিভার রক্তক্ষরণ হয়েছে। যুদ্ধটা মূলত ইউরোপের হলেও অন্যান্য মহাদেশের মানুষও সেখানে জীবন দান করেছেন, যাঁদের সঙ্গে ইউরোপের সেই প্রথাগত ঘৃণার কোনো সম্পর্কই নেই।
ইতিহাস ও উপন্যাসের পাতায় এবং বিখ্যাত চলচ্চিত্রের পর্দায় অস্ট্রেলীয়, কানাডিয়ান, নিউজিল্যান্ডারদের জীবনদানের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু যে ১৩ লাখ ভারতীয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, সে সম্পর্কে দুনিয়া খুব কমই জানে। শুধু তা-ই নয়, এ যুদ্ধে ৭৪ হাজার ১৮৭ জন ভারতীয় সেনা মারা যান এবং ৬৭ হাজার সেনা আহত হন। যুদ্ধের জনপ্রিয় ইতিহাসে তাঁদের স্থান হয়নি, হলেও তাঁদের পাদটীকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
ভারত ইউরোপ, ভূমধ্যসাগর, পশ্চিম এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও পূর্ব আফ্রিকায় ডিভিশন ও ব্রিগেড পাঠিয়েছে। ইউরোপে ভারতীয় সেনারাই পরিখায় প্রথম আক্রান্ত হয়েছেন। যুদ্ধের দ্বিতীয় বছরের আগেই তাঁরা তাড়া খেয়ে মরেছেন, জার্মান বাহিনীর বহু আক্রমণের মুখেও তাঁরা পড়েছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই ১৯১৪ সালের শুরুতে ভারতীয় সেনারা বেলজিয়ামের ওয়াইপ্রেসে জার্মান বাহিনীর আক্রমণ রুখে দিয়েছেন। আর ব্রিটিশরা তখনো সেনা ভর্তি ও তাদের প্রশিক্ষণে ব্যস্ত ছিল। চার্চিলের ভুলের কারণে বহু ভারতীয় সেনা গ্যালিপলিতে মারা পড়েছেন। মেসোপটেমিয়ায় প্রায় সাত লাখ ভারতীয় সেনা জার্মানদের মিত্র অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়েছেন।
ইউরোপ থেকে ভারতীয় সেনারা তাঁদের পরিবার-পরিজনের কাছে যে চিঠি লিখেছেন, সেগুলোয় তাঁদের সাংস্কৃতিক বিচ্যুতি ও ট্র্যাজেডির চিত্র পাওয়া যায়। একজন লিখেছেন, ‘বৃষ্টির মতো গোলা পড়ছে।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘দেশজুড়ে সৈন্যদের মরদেহ এমনভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে যে দেখলে মনে হয়, কাটা ধান মাঠে পড়ে আছে।’ এই সেনারা নিঃসন্দেহে বীরত্ব দেখিয়েছেন। এক অপরিচিত জায়গায় তাঁদের যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানকার জলবায়ু সম্পর্কে তাঁদের কোনো ধারণা ছিল না, এর জন্য তাঁদের কোনো প্রস্তুতিও ছিল না। যে শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁরা লড়ছিলেন, তাঁদের সম্পর্কেও ভারতীয় সেনাদের কোনো ধারণা ছিল না। শুধু মর্যাদা ছাড়া অন্য কোনো কারণে তাঁদের জীবন বাজি রাখেননি। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও তাঁরা অজানাই থেকে যান, যে ব্রিটিশদের হয়ে তাঁরা লড়েছেন, তারাও তাঁদের উপেক্ষা করেছে। ভারতীয়রাও তাঁদের উপেক্ষা করেছে।
একটি কারণ হচ্ছে, তাঁরা ভারতের হয়ে লড়েননি। এই সেনারা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক, তাঁরা পেশায় ছিলেন সেনা। যে ব্রিটিশরাজের সেবা তাঁরা করেছেন, সেই ব্রিটিশরাই ভারতে তাঁদের দেশবাসীকে শোষণ করেছে।
ভারত থেকে সেনা সংগ্রহ ও অর্থ তুলে ব্রিটিশরা ভারতকে স্বশাসনের অধিকার দেবে, এমনই অঙ্গীকার তারা করেছিল। তারা যদি সে কথা রাখত, তাহলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যে ভারতীয় সেনারা মারা পড়েছিলেন, তাঁদের জাতীয় বীর হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু ব্রিটিশরা তাদের কথা রাখেনি, ফলে জাতীয়তাবাদীরাও এই সেনাদের কোনো ধন্যবাদ দেয়নি। তাঁরা বিদেশি প্রভুদের সেবা দিতে বিদেশে গিয়েছিলেন, ব্যাপারটা এমনই দাঁড়িয়ে যায়। ঔপনিবেশিক শাসকদের সেবায় বিদেশে জীবন দান করা পেশাগত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এটাকে প্রশংসনীয় জাতীয় সেবা হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
ভারতীয় জাতীয়তাবাদীরা এভাবেই এ সেনাদের অবদানকে ভুলিয়ে দেন। ১৯৬৪ সালের এই যুদ্ধ শুরুর ৫০ বছর পূর্তিতে দুনিয়া এই যুদ্ধের যে স্মৃতিচারণা করে, তাতে ভারতীয় সেনাদের কথা কেউ বলেনি। এমনকি নিজ দেশেই এই সেনারা সবচেয়ে উপেক্ষিত হয়েছেন। ১৯৩১ সালে নির্মিত নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া গেটে দৈনিক বহু দর্শনার্থীই ভিড় করে, কিন্তু তারা কেউই জানে না যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যে ভারতীয় সেনারা জীবন দান করেছিলেন, তাঁদের স্মরণে এটা নির্মিত হয়েছে।
ভারতে এই মহাযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিভ্রম সর্বভারতীয় রূপ লাভ করেছে। তবে এই যুদ্ধ শুরুর ১০০ বছর পূর্তিতে নতুন চিন্তার অবকাশ সৃষ্টি হচ্ছে। ব্রিটেনে এই যুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের অবদান প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে, ব্রিটিশরা সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ফরাসিরাও এই বাদামি চামড়ার পাগড়িওয়ালা সেনাদের নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে, যাঁরা নিজেদের জীবন দিয়ে তাঁদের মাতৃভূমি রক্ষা করেছেন। আর ভারতীয়রা ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের ক্ষোভ ভুলে এ বিষয়ে কিছুটা হলেও ঔৎসুক্য দেখাতে শুরু করেছেন।
ভারতীয়রা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাদের মানুষ হিসেবে গণ্য করে পরভূমে তাঁদের জীবনদানের ঘটনাকে স্বাদেশিকতার পরাকাষ্ঠা হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন। দিল্লির সেন্টার ফর আর্মড ফোর্সেস হিস্টরিক্যাল রিসার্চ খুব কষ্ট করে সেই সেনাদের স্মৃতিরক্ষার চেষ্টা করছে, ভুলে যাওয়া গল্পের পুনর্গঠন করছে।
কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভ কমিশন ভারতের যুদ্ধ কবরস্থানগুলোর দেখভাল করে। এসব কবরস্থানে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনাদের কবর রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত সমাধিলিপিটি রয়েছে কোহিমা ওয়ার সিমেট্রিতে, ‘বাড়ি গিয়ে সবাইকে বলুন, আপনাদের আগামী দিনের জন্য আমরা আমাদের আজ বিসর্জন দিয়েছি।’
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যে ভারতীয় সেনারা জীবন দিয়েছেন, তাঁরা এমন কোনো দাবি করতে পারেন না। তাঁরা অন্য কারোর ‘গতকালের’ জন্য নিজেদের ‘আজ’ বিসর্জন দিয়েছেন। তাঁদের সন্তানেরা এতিম হয়েছেন, আর ইতিহাস তাঁদের এতিম বানিয়ে ফেলেছে। তবে এই ভেবে সন্তুষ্টি বোধ করছি যে তাঁদের বহুদিনের পাওনা পুনর্বাসন শেষমেশ শুরু হয়েছে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
শশী থারুর: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাংসদ।
এই যুদ্ধ ইউরোপের তরুণদের জীবন প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই তাঁদের ঠেলে কবরে পাঠিয়ে দিয়েছে। পরিখার মধ্যে এক প্রজন্মের প্রতিভাবান কবি, শিল্পী, খেলোয়াড়দের প্রতিভার রক্তক্ষরণ হয়েছে। যুদ্ধটা মূলত ইউরোপের হলেও অন্যান্য মহাদেশের মানুষও সেখানে জীবন দান করেছেন, যাঁদের সঙ্গে ইউরোপের সেই প্রথাগত ঘৃণার কোনো সম্পর্কই নেই।
ইতিহাস ও উপন্যাসের পাতায় এবং বিখ্যাত চলচ্চিত্রের পর্দায় অস্ট্রেলীয়, কানাডিয়ান, নিউজিল্যান্ডারদের জীবনদানের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু যে ১৩ লাখ ভারতীয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, সে সম্পর্কে দুনিয়া খুব কমই জানে। শুধু তা-ই নয়, এ যুদ্ধে ৭৪ হাজার ১৮৭ জন ভারতীয় সেনা মারা যান এবং ৬৭ হাজার সেনা আহত হন। যুদ্ধের জনপ্রিয় ইতিহাসে তাঁদের স্থান হয়নি, হলেও তাঁদের পাদটীকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
ভারত ইউরোপ, ভূমধ্যসাগর, পশ্চিম এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও পূর্ব আফ্রিকায় ডিভিশন ও ব্রিগেড পাঠিয়েছে। ইউরোপে ভারতীয় সেনারাই পরিখায় প্রথম আক্রান্ত হয়েছেন। যুদ্ধের দ্বিতীয় বছরের আগেই তাঁরা তাড়া খেয়ে মরেছেন, জার্মান বাহিনীর বহু আক্রমণের মুখেও তাঁরা পড়েছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই ১৯১৪ সালের শুরুতে ভারতীয় সেনারা বেলজিয়ামের ওয়াইপ্রেসে জার্মান বাহিনীর আক্রমণ রুখে দিয়েছেন। আর ব্রিটিশরা তখনো সেনা ভর্তি ও তাদের প্রশিক্ষণে ব্যস্ত ছিল। চার্চিলের ভুলের কারণে বহু ভারতীয় সেনা গ্যালিপলিতে মারা পড়েছেন। মেসোপটেমিয়ায় প্রায় সাত লাখ ভারতীয় সেনা জার্মানদের মিত্র অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়েছেন।
ইউরোপ থেকে ভারতীয় সেনারা তাঁদের পরিবার-পরিজনের কাছে যে চিঠি লিখেছেন, সেগুলোয় তাঁদের সাংস্কৃতিক বিচ্যুতি ও ট্র্যাজেডির চিত্র পাওয়া যায়। একজন লিখেছেন, ‘বৃষ্টির মতো গোলা পড়ছে।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘দেশজুড়ে সৈন্যদের মরদেহ এমনভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে যে দেখলে মনে হয়, কাটা ধান মাঠে পড়ে আছে।’ এই সেনারা নিঃসন্দেহে বীরত্ব দেখিয়েছেন। এক অপরিচিত জায়গায় তাঁদের যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানকার জলবায়ু সম্পর্কে তাঁদের কোনো ধারণা ছিল না, এর জন্য তাঁদের কোনো প্রস্তুতিও ছিল না। যে শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁরা লড়ছিলেন, তাঁদের সম্পর্কেও ভারতীয় সেনাদের কোনো ধারণা ছিল না। শুধু মর্যাদা ছাড়া অন্য কোনো কারণে তাঁদের জীবন বাজি রাখেননি। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও তাঁরা অজানাই থেকে যান, যে ব্রিটিশদের হয়ে তাঁরা লড়েছেন, তারাও তাঁদের উপেক্ষা করেছে। ভারতীয়রাও তাঁদের উপেক্ষা করেছে।
একটি কারণ হচ্ছে, তাঁরা ভারতের হয়ে লড়েননি। এই সেনারা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক, তাঁরা পেশায় ছিলেন সেনা। যে ব্রিটিশরাজের সেবা তাঁরা করেছেন, সেই ব্রিটিশরাই ভারতে তাঁদের দেশবাসীকে শোষণ করেছে।
ভারত থেকে সেনা সংগ্রহ ও অর্থ তুলে ব্রিটিশরা ভারতকে স্বশাসনের অধিকার দেবে, এমনই অঙ্গীকার তারা করেছিল। তারা যদি সে কথা রাখত, তাহলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যে ভারতীয় সেনারা মারা পড়েছিলেন, তাঁদের জাতীয় বীর হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু ব্রিটিশরা তাদের কথা রাখেনি, ফলে জাতীয়তাবাদীরাও এই সেনাদের কোনো ধন্যবাদ দেয়নি। তাঁরা বিদেশি প্রভুদের সেবা দিতে বিদেশে গিয়েছিলেন, ব্যাপারটা এমনই দাঁড়িয়ে যায়। ঔপনিবেশিক শাসকদের সেবায় বিদেশে জীবন দান করা পেশাগত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এটাকে প্রশংসনীয় জাতীয় সেবা হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
ভারতীয় জাতীয়তাবাদীরা এভাবেই এ সেনাদের অবদানকে ভুলিয়ে দেন। ১৯৬৪ সালের এই যুদ্ধ শুরুর ৫০ বছর পূর্তিতে দুনিয়া এই যুদ্ধের যে স্মৃতিচারণা করে, তাতে ভারতীয় সেনাদের কথা কেউ বলেনি। এমনকি নিজ দেশেই এই সেনারা সবচেয়ে উপেক্ষিত হয়েছেন। ১৯৩১ সালে নির্মিত নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া গেটে দৈনিক বহু দর্শনার্থীই ভিড় করে, কিন্তু তারা কেউই জানে না যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যে ভারতীয় সেনারা জীবন দান করেছিলেন, তাঁদের স্মরণে এটা নির্মিত হয়েছে।
ভারতে এই মহাযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিভ্রম সর্বভারতীয় রূপ লাভ করেছে। তবে এই যুদ্ধ শুরুর ১০০ বছর পূর্তিতে নতুন চিন্তার অবকাশ সৃষ্টি হচ্ছে। ব্রিটেনে এই যুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের অবদান প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে, ব্রিটিশরা সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ফরাসিরাও এই বাদামি চামড়ার পাগড়িওয়ালা সেনাদের নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে, যাঁরা নিজেদের জীবন দিয়ে তাঁদের মাতৃভূমি রক্ষা করেছেন। আর ভারতীয়রা ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের ক্ষোভ ভুলে এ বিষয়ে কিছুটা হলেও ঔৎসুক্য দেখাতে শুরু করেছেন।
ভারতীয়রা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাদের মানুষ হিসেবে গণ্য করে পরভূমে তাঁদের জীবনদানের ঘটনাকে স্বাদেশিকতার পরাকাষ্ঠা হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন। দিল্লির সেন্টার ফর আর্মড ফোর্সেস হিস্টরিক্যাল রিসার্চ খুব কষ্ট করে সেই সেনাদের স্মৃতিরক্ষার চেষ্টা করছে, ভুলে যাওয়া গল্পের পুনর্গঠন করছে।
কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভ কমিশন ভারতের যুদ্ধ কবরস্থানগুলোর দেখভাল করে। এসব কবরস্থানে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনাদের কবর রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত সমাধিলিপিটি রয়েছে কোহিমা ওয়ার সিমেট্রিতে, ‘বাড়ি গিয়ে সবাইকে বলুন, আপনাদের আগামী দিনের জন্য আমরা আমাদের আজ বিসর্জন দিয়েছি।’
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যে ভারতীয় সেনারা জীবন দিয়েছেন, তাঁরা এমন কোনো দাবি করতে পারেন না। তাঁরা অন্য কারোর ‘গতকালের’ জন্য নিজেদের ‘আজ’ বিসর্জন দিয়েছেন। তাঁদের সন্তানেরা এতিম হয়েছেন, আর ইতিহাস তাঁদের এতিম বানিয়ে ফেলেছে। তবে এই ভেবে সন্তুষ্টি বোধ করছি যে তাঁদের বহুদিনের পাওনা পুনর্বাসন শেষমেশ শুরু হয়েছে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
শশী থারুর: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাংসদ।
No comments