সুইস ব্যাংকে ক্ষুদ্র অংশ, বাকিটা কোথায়? by মইনুল ইসলাম
সম্প্রতি সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি বেশ কিছু
নাগরিকের গোপন অ্যাকাউন্টে এক বছরে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা
হয়েছে মর্মে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তা নিয়ে দেশের পত্রপত্রিকা ও টিভি
চ্যানেলগুলোতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত, জমা হওয়া ওই অর্থপ্রবাহ এক
বছরে ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারটাকেই মিডিয়ায় ফলাও প্রচার করা হচ্ছে।
বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, দুর্নীতিবাজ আমলা ও রাজনীতিবিদদের এ ধরনের গোপন অ্যাকাউন্ট থাকে বলে জনমনে সাধারণ ধারণা থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী–নেতা এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজনের কারও কারও এই পুঁজি পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া সুইস ব্যাংকে কারা এসব অ্যাকাউন্টের মালিক তার তালিকা প্রকাশের দাবি তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ঘোষণা দিয়েছেন যে তাঁর সরকার আমানতকারীদের তালিকা চেয়ে সুইজারল্যান্ড সরকারকে অনুরোধপত্র পাঠাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। সে জন্য প্রথমেই বলে নেওয়া প্রয়োজন, পলাতক পুঁজি নিয়ে এসব হইচই নেহাত বেফজুল রাজনৈতিক বিতর্ক এবং মিডিয়ায় ক্ষণস্থায়ী ঝড়ের আরেকটা সংক্ষিপ্ত অধ্যায় মাত্র, যা অল্প দিনের মধ্যেই ঝিমিয়ে পড়বে। সুইস ব্যাংকের নিয়মকানুন সম্পর্কে যতটুকু ধারণা আছে তাতে আগেভাগেই বলে দেওয়া যায়, গোপন অ্যাকাউন্টের মালিকের তালিকাও মিলবে না এবং অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া অর্থও ফেরত পাওয়া যাবে না।
১৯৯০-৯১ সালে বাংলাদেশের খ্যাতনামা গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে ‘বাংলাদেশে চোরাচালান’ (ইললিগ্যাল ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন বাংলাদেশ) শীর্ষক একটি গবেষণা প্রকল্প সম্পন্ন করার সময় ক্যাপিটাল ফ্লাইট বা পুঁজির পলায়ন বিষয়ে তাত্ত্বিক প্রকাশনা এবং বিশ্বের নানা দেশে প্রকাশিত গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলো সম্পর্কে ব্যাপক পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাত্ত্বিকভাবে অর্থনীতিবিদ জগদীশ ভগবতী ক্যাপিটাল ফ্লাইটকেও অবৈধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সংজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ১৯৮২ সালে প্রকাশিত ক্যাপিটাল ফ্লাইট–সম্পর্কিত উইলিয়ামসনের বিশ্বখ্যাত বইয়ে পলাতক পুঁজির উদ্ভব ও গতি-প্রকৃতি নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ পাওয়া যায়।
আমাদের দুই কিস্তির ৫৪৭ পৃষ্ঠার গবেষণা প্রতিবেদনেও বাংলাদেশ থেকে ‘পুঁজির পলায়ন’ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এরপর ২৩ বছর ধরে এই বিষয়ে যেখানে যা পেয়েছি, পড়াশোনা করেছি এবং সে জন্য আমার দুটো বইয়ে এবং বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত কলামে বেশ কয়েকবার এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই প্রথম আলোতে প্রকাশিত কলামে টরন্টোর বেগমপাড়া এবং মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম বিষয়টি আমার আলোচনায় উঠে এসেছে। কারণ, সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ থেকে পুঁজি পাচার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বেশ কয়েক বছর ধরে আর তেমন বাড়ানো যাচ্ছে না। (এটা অবশ্য বিনিয়োগ স্থবিরতার অন্যতম কারণ। এর পেছনে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে, যা আজকের কলামের বিষয়বস্তু নয়।)
২০১০ সালে ব্যাংকের খেলাপি ঋণসম্পর্কিত আমার বইয়েও সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করেছি যে দেশের ‘স্টার ঋণখেলাপিদের’ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই তাদের ঋণের সিংহভাগ বিদেশে পাচার করে দিয়েছে।
এই দীর্ঘ ২৪ বছরে পুঁজির পলায়ন সম্পর্কে আমার যেটুকু জানার সুযোগ হয়েছে, তার ভিত্তিতে পাঠকদের জানাতে চাই, যে পরিমাণ পলাতক পুঁজির কথা সাম্প্রতিক প্রকাশিত সংবাদে উল্লিখিত হয়েছে, তা আমার বিবেচনায় ‘হিমবাহের শৈলচূড়া’ (টিপ অব দি আইসবার্গ) ছাড়া কিছু নয়। হিমবাহের নয়-দশমাংশ পানির নিচে অদৃশ্য থাকে, আর এক-দশমাংশ পানির ওপরে ভাসমান থাকে বিধায় ওই ক্ষুদ্র অংশটাই শুধু দৃশ্যমান হয়।
এর মানে, আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ পুঁজি বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে তার অতি ক্ষুদ্র অংশই সুইস ব্যাংকে জমা রাখার প্রয়োজন পড়ে। এ ধরনের গোপন অ্যাকাউন্ট রাখার প্রয়োজনীয়তা এখন তেমন জোরালো নেই। কারণ, অনেক সহজ বিকল্প পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়ে গেছে বিশ্বায়নের এ যুগে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পুঁজি পাচার এত সহজসাধ্য হয়ে গেছে যে সুইস ব্যাংকের সহায়তা এখন আর তেমন আকর্ষণীয় বিকল্প বিবেচিত হয় না।
এটাও বলা প্রয়োজন, ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, দুর্নীতিবাজ আমলা এবং পুঁজি-লুটেরা রাজনীতিবিদদের কালোটাকার বড় অংশই বিদেশে পাচার করার ‘কালচার’ যে আগের চেয়েও অনেক বেশি দৃঢ়মূল হয়েছে, সে ব্যাপারে কারও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। যা বলার চেষ্টা করছি তা হলো, পুঁজি পাচারের বিকল্প পদ্ধতিগুলো এত বেশিসংখ্যক ও এত সহজ হয়ে গেছে যে পলাতক পুঁজির ৯০-৯৫ শতাংশই এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশে এবং অন্যান্য ধরনের বিনিয়োগে বিনিয়োজিত রয়েছে।
উপরন্তু, বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি অভিবাসী শ্রমিক, পেশাজীবী ও অনিবাসী বাংলাদেশি (নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি, সংক্ষেপে এনআরবি) যেসব পদ্ধতিতে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন, সেগুলোই পুঁজি পাচার এবং মানি লন্ডারিংকে (বা কালোটাকা ধৌতকরণকে) দিন দিন সহজ করে দিচ্ছে। এ জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের কিংবা অন্য কোনো গোষ্ঠীকে শুধু গালমন্দ করে সমস্যার সমাধান মিলবে না। সোজাসাপ্টা বলে ফেলা ভালো, দেশের সরকার যত দিন দুর্নীতি এবং পুঁজি লুণ্ঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের নীতি থেকে সরে আসবে না, তত দিন পুঁজি পাচারকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যাবে না, এ ব্যাপারে যতই গলাবাজি করা হোক না কেন। দেশের অভ্যন্তরের দুর্নীতি দমনে দুর্নীতি দমন কমিশনকে অকার্যকর করে ফেলে পুঁজি পাচার রোধে সাফল্যের আশা করা বাতুলতা।
দুঃখজনক হলেও সত্য, গত ৪৩ বছরে এ দেশে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে প্রতিটি সরকারই কমবেশি অবদান রেখে চলেছে। অবশ্য বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে দুর্নীতি শুরু হলেও তা ‘সিস্টেমে’ পরিণত হতে পারেনি। রিলিফের মালামাল চুরি, রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানায় দুর্নীতি ও লুটপাট, শ্রমিকনেতাদের একাংশের চাঁদাবাজি, সরকারের কিছু দৃশ্যমান স্বজনপ্রীতি—এগুলোর জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকারকে প্রচুর বদনাম সইতে হলেও তাঁর পরবর্তী শাসনামলের তুলনায় রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি উভয়ই তাঁর শাসনামলে অনেক কম ছিল। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে ক্ষমতা গ্রহণের পর জিয়াউর রহমানও তাঁর ব্যক্তিগত সততার একটা ‘মিথ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে নানা ধরনের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাঁর কেনাবেচার রাজনৈতিক দুর্নীতিকে অনেকটা আড়াল করে দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণের যথেচ্ছ বাঁটোয়ারা, ব্যক্তি খাতের শিল্পকারখানার লাইসেন্স-পারমিট বিতরণ, পরিত্যক্ত ও রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বিতরণ, দেদার আমদানি পারমিট বিতরণ, দুর্লভ বৈদেশিক মুদ্রার বণ্টনে অগ্রাধিকার প্রদান, বৈদেশিক ঋণ-অনুদানে অর্থায়িত প্রকল্পের ঠিকাদারি বিতরণ—এ ধরনের সব মহাজনি পন্থাই রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, সিভিল আমলা ও ব্যবসায়ীদের বিএনপির পূর্বসূরি জাগদলে ভেড়াতে জিয়াউর রহমান যথেচ্ছ ব্যবহার করেছেন।
ব্যক্তিগতভাবে আমি বাংলাদেশ থেকে পুঁজি পাচারের প্রত্যক্ষ প্রমাণ প্রথম পেয়েছিলাম ওই সময়েই। তখন আমি পিএইচডি করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলাম। ১৯৭৮-৮০ এই তিন বছরে পাঁচ লাখ জনসংখ্যার শহর ন্যাশভিলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫টি পরিবার গিয়ে বসতি স্থাপন এবং ব্যবসাপাতি গড়ে তুলতে দেখেছিলাম তদানীন্তন মার্কিন সরকারের একটা নীতির সুবিধা গ্রহণ করে—ন্যূনপক্ষে ৪০ হাজার ডলার পুঁজি নিয়ে গিয়ে ওই দেশে বিনিয়োগ করলে পুরো পরিবারকে গ্রিন কার্ড দেওয়া হতো ওই সময়।
সারা বিশ্ব থেকে বৈদেশিক পুঁজি আকর্ষণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরূপ নীতিমালা অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশেরও ছিল, বলাই বাহুল্য। কিন্তু বাংলাদেশের মতো তদানীন্তন একটা হতদরিদ্র দেশ থেকেও যে দেদার পুঁজি পাচার হতে পারে তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাটুকু মনে বড় দাগ কেটেছিল। পুঁজি আকর্ষণের জন্য বিশ্বের সব দেশ এখন আরও অনেক বেশি মরিয়া। তাই বৈদেশিক বিনিয়োগ হিসেবে দেশে আসা পুঁজি সাদা না কালো, সে বাছবিচার তেমন একটা করছে না কোনো দেশই।
আমরা কেন ভুলে যাচ্ছি যে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এখনো সারা বিশ্ব থেকে পাচারকৃত পুঁজির সবচেয়ে বড় ‘নিরাপদ গন্তব্য ও আশ্রয়স্থল’ বা ‘সেফ হ্যাভেন’ এবং তৃতীয় বিশ্ব থেকে পলাতক পুঁজি আকর্ষণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রতিটি উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ নিরন্তর নানা ধরনের নীতিমালা গ্রহণ করে চলেছে। বিশ্বের সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি পলাতক পুঁজি আকর্ষণে ব্যর্থ হয় তাহলে সে দেশের অর্থনীতি বিপদে পড়বে, এটা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নয়।
কিন্তু ২০০১ সালের নাইন-ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের ব্যাপারে এখন অনেক বেশি কড়াকড়ি আরোপ করায় বাংলাদেশের পলাতক পুঁজির গন্তব্য হিসেবে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, মালয়েশিয়া, দুবাই, দক্ষিণ আফ্রিকা, হংকং, সিঙ্গাপুর, কেনিয়া, উগান্ডা, ভারত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। মনে রাখতে হবে, দেশের সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের প্রবাহ সাম্প্রতিক কালে মোটেও মন্থর হয়নি এবং এই প্রবাহের সঙ্গে প্রচুর পুঁজিও দেশ থেকে বিদেশে, বিশেষত ভারতে চলে যাচ্ছে।
ইদানীং ভারতের পাশাপাশি কানাডার টরন্টো নগরের বেগমপাড়া, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনি পলাতক পুঁজির দিক পরিবর্তনের প্রধান সুবিধাভোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলতে চাই, বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান ও কোকোর বিদেশে পাচার করা সম্পদ, ২০০৬ সালে শতাধিক স্যুটকেস নিয়ে বেগম জিয়ার সৌদি আরব গমনের কেচ্ছা, ‘থিফ অব বাগদাদ’ এরশাদের গোপন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সুলুকসন্ধান, বিএনপির নেতা খোন্দকার মোশাররফের ব্রিটেনে লুকায়িত ধনভান্ডার—এগুলো নিয়ে বর্তমান সরকারের আমলে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরও টানাহেঁচড়া সামলানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কিন্তু মাঝখান থেকে পার পেয়ে যাবে পুঁজি-লুটেরা ব্যবসায়ীরা, সামরিক-সিভিল আমলারা এবং রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিরা, যারা চার দশক ধরে পুঁজি পাচারের আসল ফায়দাভোগী।
মইনুল ইসলাম: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
No comments