ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
সংখ্যাটা চমকে ওঠার মতো। ১৪ কোটি লোকের এই
দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ! অর্থাৎ প্রতি ১৭৫ জনে একজন ভিক্ষুক।
রাজধানীতে ভিক্ষাবৃত্তির চিত্রটিও অবাক হওয়ার মতো। সমাজকল্যাণ অধিদফতরের
হিসাব অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীতে স্থায়ী ভিক্ষুকের সংখ্যা ৫৫ হাজার। ঈদ সামনে
রেখে রমজান মাসে সারা দেশ থেকে আরও ৭০ হাজার মৌসুমি ভিক্ষুক ভিড় করেছে
এখানে। অর্থাৎ রমজান মাসে রাজধানীতে সোয়া লাখ ভিক্ষুক ভিক্ষাবৃত্তি করে
থাকে। এদের গড় আয় দৈনিক ২৪০০ টাকা, অর্থাৎ পুরো রমজানে এরা
ভিক্ষা-বাণিজ্যের মাধ্যমে আয় করবে ৯০০ কোটি টাকা!
ভিক্ষুকের কেন এই সংখ্যাধিক্য? কতদিনই বা চলবে অনুৎপাদনশীল এই পেশা? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে সমাজবিজ্ঞানীর গবেষণার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আপাতত আমরা এটুকু বলতে পারি, ভিক্ষাবৃত্তির এই বিশাল ক্যানভাসটির পেছনের কারণ শুধুই দারিদ্র্য নয়। নদীভাঙনসহ বিভিন্ন কারণে সৃষ্ট সমাজের ছিন্নমূল শ্রেণী অথবা শারীরিক প্রতিবন্ধীরা বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়লে সেটা তেমন দোষের কিছু নয়। কিন্তু পরিকল্পিত ভিক্ষাবৃত্তি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এই পরিকল্পিত ভিক্ষাবৃত্তিতে সুস্থ মানুষকে পঙ্গু বানিয়ে ভিক্ষুকে পরিণত করা হচ্ছে, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভিক্ষার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের। এসব ক্ষেত্রে ভিক্ষুকদের নিয়ন্ত্রণ করছে ভিক্ষুক সর্দাররা। ভিক্ষালব্ধ আয়ের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে তাদের পকেটে। সর্দাররা আবার অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে চলেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, পেশায় ভিক্ষুক হলে কী হবে, রাস্তাঘাটে তাদের দাপট লক্ষ্য করা যায় প্রায়ই। পথচারীদের বিশেষত বিদেশীদের কাছ থেকে জবরদস্তিমূলকভাবে ভিক্ষা আদায় করে থাকে তারা। কোনো কোনো ভিক্ষুক ভাংতি পয়সা ভিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করতে চায় না। তাদের ভাব দেখে মনে হয়, ভিক্ষা দয়া নয়, এটা তাদের অধিকার!
ভিক্ষাবৃত্তি নিঃসন্দেহে এক বড় সামাজিক ব্যাধি। ভিক্ষুকরা অনুৎপাদনশীল এমন এক পরজীবী শ্রেণী, যার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উন্নয়নের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং তারা সমাজের ঘাড়ে বোঝা হয়েই চেপে আছে। এই বোঝা অপসারিত হতে পারে কেবল তাদের পুনর্বাসনের মধ্য দিয়েই। ফলে এই দেশ কবে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে, সে অপেক্ষায় না থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণ করবে- এটাই কাম্য। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, পরিকল্পিত ভিক্ষাবৃত্তি রোধে সরকারকে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা।
No comments