দুদক আইনে গতি, প্রচলিত আইনে দুর্গতি by শহীদুজ্জামান চৌধুরী
নতুন আইন প্রণয়নকালে কিংবা কোনো আইনের সংশোধনী প্রণয়নকালে অন্য কোনো প্রচলিত আইনের সঙ্গে সংঘর্ষ দেখা দেয় কিনা, প্রণীত আইনের কারণে কোথাও কোনো বিপত্তি বা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় কিনা, এসব দেখার যেন কেউ নেই। পার্লামেন্টে আইন আদালত বিষয়ে বিজ্ঞজনের সংখ্যা কমে যেতে থাকায় আইন প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্ট আইনের সুবিধা-অসুবিধা, ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক তলিয়ে দেখার উপযোগী লোকের সংকটে পড়েছে দেশ। অনুপযুক্ত আইন প্রণয়নের ব্যাপারে বিজ্ঞজনরা মুখ খুলেছেন আগেই। এক বিচারপতি একটি সেমিনারে বলেছিলেন, দেশে এখন আইন তৈরি করে কেরানিরা। বিল তৈরি হয়ে পার্লামেন্টে গেলেই হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে, হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে, হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে বলে আইন পাস হয়ে যায়। ভালো-মন্দ খতিয়ে দেখার অবকাশ নেই। এ অকাট্য সত্য বলার কারণে বিজ্ঞ সেই বিচারপতি আজও আপিল বিভাগের বিচারপতি হতে পারেননি। তার পেছনের অনেকেই আপিল বিভাগের বিচারপতি হয়ে গেছেন।
নবম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার কথা বলেছিল। কিন্তু পুরো ৫ বছর নানা ছুতানাতায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে সংশোধনী প্রস্তাব। শুরুতেই ১/১১-এর সরকার প্রবর্তিত ২০০৭ সালের ৭নং ও ৩৪নং অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত না করে দুদককে নখদন্তহীন ব্যাঘ্রে পরিণত করে রাখা হয়।
দুদককে শক্তিশালী করার জনমতকে কাজে লাগিয়ে দুদক আইনের সংস্কার করার জন্য দুদক নিজেরা কিছু প্রস্তাব তৈরি করে। আইন মন্ত্রণালয় তৈরি করে সংশোধনের খসড়া। নবম পার্লামেন্টের বেলা শেষ হয়ে এলে নভেম্বর ২০১৩ সালে সর্বশেষ অধিবেশনে তড়িঘড়ি করে দুদককে স্বাধীনভাবে বিকশিত হওয়ার অনুকূল কিছু সংশোধনী আনা হয়, সেই সঙ্গে সবকিছুকেই তালাবদ্ধ করে চাবি সরকারের হাতে রেখে দেয়ার অতিবিলাসী একটি সংশোধনী বিদ্যুৎ গতিতে পাস করা হয়। সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের আগে ফৌঃ কাঃ বিধির ১৯৭ ধারার পূর্ব মঞ্জুরির বিধান সংবলিত স্ব-বিরোধী ৩২ক ধারার জন্ম দিয়ে ২০১৩ সালের নভেম্বরে ৬০ নং আইন পাস করা হয়। অথচ গেল শতাব্দীর শেষ দশক ও চলমান শতাব্দীর শুরুতে ক্রিমিনাল ল’ এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৫৮ (৪০ নং আইন)-এর ৬(৫) ধারার মঞ্জুরি নামক দুর্নীতির লাইসেন্স প্রথা বিলুপ্ত করে দুর্নীতি দমন ব্যুরোকে ঢেলে সাজানোর শক্তিশালী জনমতের পথ ধরে প্রবর্তন হয় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন (৫ নং) ২০০৪। উদয় হয় দুর্নীতি দমন কমিশন। অতঃপর থমকে গিয়ে তিন বছর পর তৈরি হয় দুর্নীতি দমন বিধিমালা ২০০৭। ২০১৩ সালের দুদক আইনের সংশোধনীতে গণবিরোধী ও সংবিধানবিরোধী ৩২ক প্রবর্তনের এক সপ্তাহের মধ্যে মহামান্য হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করা হলে ৩০.০১.২০১৪ তারিখে বাতিল হয়ে যায় ৩২ক ধারা। কিন্তু ২০১৩ সালের ৬০নং আইনের আরও বিপত্তি রয়ে যায়। এ আইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় নানা দিক থেকে।
দুদককে শক্তিশালী করার অনিবার্য কারণে দুদকের ‘তফসিল’ভুক্ত অপরাধের তালিকায় দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬২এ, ৪৬২বি, ৪৬৬, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৬৯, ৪৭১ ধারা সংযোজন করে পূর্ববর্তী (গ)কে সমন্বিত করে নবরূপে তফসিলের (খ) ক্রমিক সৃজন করা হয়। ৬০নং আইনে ‘২ক’ ধারা সৃষ্টি করে বলা হয় ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এ আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে।’ ২ক ধারার ফলে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির নিত্যপ্রয়োজনীয় ৪২০, ৪৬৬, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৬৯, ৪৭১ ধারা দুদকের গণ্ডিতে বন্দি হয়ে যায়। সঙ্গত কারণেই এসব ধারার মামলা এখন থানা বা কোর্ট গ্রহণ করেন না। কারণ দুদক আইনের ২০(১) ধারায় বলা আছে ‘ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন ও উহার তফসিলে বর্ণিত অপরাধসমূহ কেবলমাত্র কমিশন কর্তৃক তদন্তযোগ্য হইবে।’ বিধিমালার ১৩(৩) বিধিতে বলা আছে ‘আইনের তফসিলভুক্ত কোনো অপরাধ সংগঠনের বিষয়ে কোনো অভিযোগ কোনো ব্যক্তি কর্তৃক সরাসরি কোনো আদালতে দায়ের করা যাইবে না।’ তাই সারা দেশের আইন-আদালতে এখন চলছে অচলাবস্থা। এ অচলাবস্থা গ্রাম আদালত পর্যন্ত পৌঁছাবে, কেননা ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ৪২০ ধারার অপরাধ গ্রাম আদালতের তফসিলভুক্ত হলেও ২০১৩ সালের ৬০ নং আইনে দুদক আইনের প্রাধান্যের কথা উল্লেখ থাকায় আটকে যাবে গ্রাম আদালতে এই ধারার চর্চা। বর্তমান আইনমন্ত্রীর বক্তব্য হল ‘এ বিষয়ে আমি অবগত। এ ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে’।
দণ্ডবিধির বর্ণিত ধারাসমূহ দুদকের তফসিলে নেয়া প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন শুধু পাবলিক সার্ভেন্টদের বেলায়। ঢালাওভাবে সবার বা স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের জন্য নয়। আইন প্রণয়নকালে আইনসভার সদস্যরা সতর্ক না হওয়ার কারণে এমনতর সংকট দেখা দিয়েছে।
একদা পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ প্রণয়নকালে এমন সংকট দেখা দিয়েছিল। অধ্যাদেশের প্রাধান্য বহাল রাখলে অর্থাৎ ৩নং ধারা বহাল রাখলে বন্ধ্যত্ব দেখা দেবে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে। এ কারণে অর্ডিনেন্স প্রণয়নকারীরা সুন্দরভাবে পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশে ২৩নং ধারা সৃষ্টি করেন। ২৩নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘১৯৬১ সালের ৮নং অধ্যাদেশ অপ্রভাবিত। (১) এই অধ্যাদেশের কোনো কিছুই ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের (১৯৬১ সালের ৮নং অধ্যাদেশ) অথবা উহার অধীনে প্রণীত বিধিমালার কোনো বিধানকে প্রভাবিত করিবে না বলিয়া গণ্য হইবে।’ ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ও পারিবারিক আদালত আইনের সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য, পারিবারিক আদালতের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদের রায় কার্যকর করার জন্য রায়ের অনুলিপি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়। ফলে উভয়কূল রক্ষিত হয়।
২০১৩ সালের ৬০নং আইনে সৃষ্ট সংকট উত্তরণের পথ হল দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এ সংশোধনী আনয়ন করে ‘২কক’ সৃষ্টি করা। ২কক সৃষ্টি করে বলা যায় ‘১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির যেসব ধারা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের তফসিলে প্রবেশ করেছে, পাবলিক সার্ভেন্ট ব্যতীত স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির এসব ধারা অপ্রভাবিত থাকবে। একইভাবে অপ্রভাবিত থাকবে গ্রাম আদালতের এখতিয়ার।’ পার্লামেন্টের বাজেট অধিবেশন চলাবস্থাতেই আইনাঙ্গনের এ অচলাবস্থা দূরীকরণের সংশোধনী আনয়ন করা আবশ্যক। কারণ থানা ও কোর্টে এখন দণ্ডবিধির ৪২০সহ প্রয়োজনীয় অনেক ধারায় মামলা না নেয়ায় স্বাভাবিক কারণে আইনাঙ্গনে প্রচণ্ড উত্তাপ দেখা দিয়েছে।
দুদকের তফসিল থেকে দণ্ডবিধির ৪০৮ ধারা সরাসরি বাতিল করা উচিত। এ ধারাটি দুদকের জন্য একটি অমূলক ভারবোঝা। এ ধারায় কর্মচারী কর্তৃক আত্মসাতের অপরাধ বোঝায়। একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তির নিয়োগকৃত কার ড্রাইভার বা দোকান কর্মচারী যদি মালিকের টাকা ও মূল্যবান দ্রব্য আত্মসাৎ করে, তার মামলা তদন্ত করতে হবে দুদককে, আর বিচার হবে বিভাগীয় স্পেশাল জজ কর্তৃক! দুদক তফসিলে এ ধারার অন্তর্ভুক্তি সঠিক হয়নি। এ ধারার কারণে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক আর এনজিওগুলোর মামলাতেই দুদককে সময় দিতে হচ্ছে বেশি। স্বল্প জনবলসম্পন্ন দুদককে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশি ব্যস্ত রাখা হলে এবং সর্বোচ্চ সাত বছরের সাজার মামলার জন্য মৃত্যুদণ্ডের ক্ষমতাসম্পন্ন আদালতকে ব্যবহার করা হলে অব্যবস্থাপনার ঘূর্ণিচক্র থেকে বেরোবার আর পথ থাকবে না।
শহীদুজ্জামান চৌধুরী : আইনজীবী
নবম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার কথা বলেছিল। কিন্তু পুরো ৫ বছর নানা ছুতানাতায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে সংশোধনী প্রস্তাব। শুরুতেই ১/১১-এর সরকার প্রবর্তিত ২০০৭ সালের ৭নং ও ৩৪নং অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত না করে দুদককে নখদন্তহীন ব্যাঘ্রে পরিণত করে রাখা হয়।
দুদককে শক্তিশালী করার জনমতকে কাজে লাগিয়ে দুদক আইনের সংস্কার করার জন্য দুদক নিজেরা কিছু প্রস্তাব তৈরি করে। আইন মন্ত্রণালয় তৈরি করে সংশোধনের খসড়া। নবম পার্লামেন্টের বেলা শেষ হয়ে এলে নভেম্বর ২০১৩ সালে সর্বশেষ অধিবেশনে তড়িঘড়ি করে দুদককে স্বাধীনভাবে বিকশিত হওয়ার অনুকূল কিছু সংশোধনী আনা হয়, সেই সঙ্গে সবকিছুকেই তালাবদ্ধ করে চাবি সরকারের হাতে রেখে দেয়ার অতিবিলাসী একটি সংশোধনী বিদ্যুৎ গতিতে পাস করা হয়। সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের আগে ফৌঃ কাঃ বিধির ১৯৭ ধারার পূর্ব মঞ্জুরির বিধান সংবলিত স্ব-বিরোধী ৩২ক ধারার জন্ম দিয়ে ২০১৩ সালের নভেম্বরে ৬০ নং আইন পাস করা হয়। অথচ গেল শতাব্দীর শেষ দশক ও চলমান শতাব্দীর শুরুতে ক্রিমিনাল ল’ এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৫৮ (৪০ নং আইন)-এর ৬(৫) ধারার মঞ্জুরি নামক দুর্নীতির লাইসেন্স প্রথা বিলুপ্ত করে দুর্নীতি দমন ব্যুরোকে ঢেলে সাজানোর শক্তিশালী জনমতের পথ ধরে প্রবর্তন হয় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন (৫ নং) ২০০৪। উদয় হয় দুর্নীতি দমন কমিশন। অতঃপর থমকে গিয়ে তিন বছর পর তৈরি হয় দুর্নীতি দমন বিধিমালা ২০০৭। ২০১৩ সালের দুদক আইনের সংশোধনীতে গণবিরোধী ও সংবিধানবিরোধী ৩২ক প্রবর্তনের এক সপ্তাহের মধ্যে মহামান্য হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করা হলে ৩০.০১.২০১৪ তারিখে বাতিল হয়ে যায় ৩২ক ধারা। কিন্তু ২০১৩ সালের ৬০নং আইনের আরও বিপত্তি রয়ে যায়। এ আইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় নানা দিক থেকে।
দুদককে শক্তিশালী করার অনিবার্য কারণে দুদকের ‘তফসিল’ভুক্ত অপরাধের তালিকায় দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬২এ, ৪৬২বি, ৪৬৬, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৬৯, ৪৭১ ধারা সংযোজন করে পূর্ববর্তী (গ)কে সমন্বিত করে নবরূপে তফসিলের (খ) ক্রমিক সৃজন করা হয়। ৬০নং আইনে ‘২ক’ ধারা সৃষ্টি করে বলা হয় ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এ আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে।’ ২ক ধারার ফলে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির নিত্যপ্রয়োজনীয় ৪২০, ৪৬৬, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৬৯, ৪৭১ ধারা দুদকের গণ্ডিতে বন্দি হয়ে যায়। সঙ্গত কারণেই এসব ধারার মামলা এখন থানা বা কোর্ট গ্রহণ করেন না। কারণ দুদক আইনের ২০(১) ধারায় বলা আছে ‘ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন ও উহার তফসিলে বর্ণিত অপরাধসমূহ কেবলমাত্র কমিশন কর্তৃক তদন্তযোগ্য হইবে।’ বিধিমালার ১৩(৩) বিধিতে বলা আছে ‘আইনের তফসিলভুক্ত কোনো অপরাধ সংগঠনের বিষয়ে কোনো অভিযোগ কোনো ব্যক্তি কর্তৃক সরাসরি কোনো আদালতে দায়ের করা যাইবে না।’ তাই সারা দেশের আইন-আদালতে এখন চলছে অচলাবস্থা। এ অচলাবস্থা গ্রাম আদালত পর্যন্ত পৌঁছাবে, কেননা ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ৪২০ ধারার অপরাধ গ্রাম আদালতের তফসিলভুক্ত হলেও ২০১৩ সালের ৬০ নং আইনে দুদক আইনের প্রাধান্যের কথা উল্লেখ থাকায় আটকে যাবে গ্রাম আদালতে এই ধারার চর্চা। বর্তমান আইনমন্ত্রীর বক্তব্য হল ‘এ বিষয়ে আমি অবগত। এ ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে’।
দণ্ডবিধির বর্ণিত ধারাসমূহ দুদকের তফসিলে নেয়া প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন শুধু পাবলিক সার্ভেন্টদের বেলায়। ঢালাওভাবে সবার বা স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের জন্য নয়। আইন প্রণয়নকালে আইনসভার সদস্যরা সতর্ক না হওয়ার কারণে এমনতর সংকট দেখা দিয়েছে।
একদা পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ প্রণয়নকালে এমন সংকট দেখা দিয়েছিল। অধ্যাদেশের প্রাধান্য বহাল রাখলে অর্থাৎ ৩নং ধারা বহাল রাখলে বন্ধ্যত্ব দেখা দেবে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে। এ কারণে অর্ডিনেন্স প্রণয়নকারীরা সুন্দরভাবে পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশে ২৩নং ধারা সৃষ্টি করেন। ২৩নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘১৯৬১ সালের ৮নং অধ্যাদেশ অপ্রভাবিত। (১) এই অধ্যাদেশের কোনো কিছুই ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের (১৯৬১ সালের ৮নং অধ্যাদেশ) অথবা উহার অধীনে প্রণীত বিধিমালার কোনো বিধানকে প্রভাবিত করিবে না বলিয়া গণ্য হইবে।’ ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ও পারিবারিক আদালত আইনের সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য, পারিবারিক আদালতের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদের রায় কার্যকর করার জন্য রায়ের অনুলিপি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়। ফলে উভয়কূল রক্ষিত হয়।
২০১৩ সালের ৬০নং আইনে সৃষ্ট সংকট উত্তরণের পথ হল দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এ সংশোধনী আনয়ন করে ‘২কক’ সৃষ্টি করা। ২কক সৃষ্টি করে বলা যায় ‘১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির যেসব ধারা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের তফসিলে প্রবেশ করেছে, পাবলিক সার্ভেন্ট ব্যতীত স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির এসব ধারা অপ্রভাবিত থাকবে। একইভাবে অপ্রভাবিত থাকবে গ্রাম আদালতের এখতিয়ার।’ পার্লামেন্টের বাজেট অধিবেশন চলাবস্থাতেই আইনাঙ্গনের এ অচলাবস্থা দূরীকরণের সংশোধনী আনয়ন করা আবশ্যক। কারণ থানা ও কোর্টে এখন দণ্ডবিধির ৪২০সহ প্রয়োজনীয় অনেক ধারায় মামলা না নেয়ায় স্বাভাবিক কারণে আইনাঙ্গনে প্রচণ্ড উত্তাপ দেখা দিয়েছে।
দুদকের তফসিল থেকে দণ্ডবিধির ৪০৮ ধারা সরাসরি বাতিল করা উচিত। এ ধারাটি দুদকের জন্য একটি অমূলক ভারবোঝা। এ ধারায় কর্মচারী কর্তৃক আত্মসাতের অপরাধ বোঝায়। একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তির নিয়োগকৃত কার ড্রাইভার বা দোকান কর্মচারী যদি মালিকের টাকা ও মূল্যবান দ্রব্য আত্মসাৎ করে, তার মামলা তদন্ত করতে হবে দুদককে, আর বিচার হবে বিভাগীয় স্পেশাল জজ কর্তৃক! দুদক তফসিলে এ ধারার অন্তর্ভুক্তি সঠিক হয়নি। এ ধারার কারণে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক আর এনজিওগুলোর মামলাতেই দুদককে সময় দিতে হচ্ছে বেশি। স্বল্প জনবলসম্পন্ন দুদককে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশি ব্যস্ত রাখা হলে এবং সর্বোচ্চ সাত বছরের সাজার মামলার জন্য মৃত্যুদণ্ডের ক্ষমতাসম্পন্ন আদালতকে ব্যবহার করা হলে অব্যবস্থাপনার ঘূর্ণিচক্র থেকে বেরোবার আর পথ থাকবে না।
শহীদুজ্জামান চৌধুরী : আইনজীবী
No comments