আদালতে যেতে পারে কংগ্রেস
বাজেট অধিবেশন শুরুর এক দিন আগেও ভারতের লোকসভায় বিরোধী নেতার পদ কংগ্রেস পাবে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। গতকাল শনিবার লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন সর্বদলীয় বৈঠক ডাকলেও কংগ্রেসকে ওই মর্যাদা দেওয়া হবে কি না, সেই বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে যায়। বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সরকারের সংসদীয় মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু গতকালও বলেন, ‘কংগ্রেসের দাবি মেটানোর মালিক আমি নই। বিষয়টি নিয়ে স্পিকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি যা উচিত মনে করবেন, তা-ই হবে।’ সুমিত্রা কী করবেন, সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেননি। তবে বিজেপির সম্পাদক মুরলীধর রাও কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বলেছেন, কংগ্রেস কেন বিরোধী নেতার পদ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তা বোঝা যাচ্ছে না। দেশের মানুষই তো তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। রীতি অনুযায়ী লোকসভার বিরোধী নেতার পদ পেতে হলে মোট আসনের ১০ শতাংশ পাওয়া জরুরি। এত বছর ধরে এটাই হয়ে এসেছে। তবে এ নিয়েও ভিন্ন মত রয়েছে। যেমন কংগ্রেস মনে করে, তারা দলগতভাবে এক-দশমাংশের কম আসন পেলেও জোটবদ্ধভাবে বেশি পেয়েছে। অতএব তাদের বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। তা ছাড়া গণতন্ত্রের রীতিই বলে, সংসদে বিরোধী নেতা থাকা প্রয়োজন। লোকসভার কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খারগে বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন, ঠিক আছে। কিন্তু তাঁর দেখা উচিত, গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডল যেন ঠিক থাকে। কাল সোমবার থেকে লোকসভায় বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তার আগে যে দুটি বিষয় নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সরকারপক্ষের টানাপোড়েন চলছে, সে দুটির একটি যদি হয় বিরোধী নেতার মর্যাদা দেওয়া, অন্যটি হলো লোকসভায় প্রথম সারিতে বসার অধিকার দেওয়া। কংগ্রেসের জন্য স্পিকার লোকসভার প্রথম সারির মাত্র দুটি আসন বরাদ্দ করেছেন।
সোনিয়া গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খারগে। অথচ কংগ্রেস আরও দুটি আসন দাবি করছে। বিজেপি তা দিতে নারাজ। তৃণমূল কংগ্রেসকে একটি, এআইএডিএমকে ও বিজু জনতা দলও একটি করে আসন পাবে। এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়াকে বিজেপি প্রথম সারির আসন দিতে চায়। আবার মুলায়ম সিং যাদব ও লালু প্রসাদও প্রথম সারিতে বসতে আগ্রহী। এর ফলে স্পিকারের হয়েছে বড় মুশকিল। কালনেমির লঙ্কা ভাগ করতে তাঁর হিমশিম হাল। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই একটা বৈঠক হয়েছে। সুরাহা হয়নি। বিরোধী নেতার মর্যাদা দেওয়া না হলে কংগ্রেস আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে। দলের শীর্ষ নেতা দিগ্বীজয় সিং এ রকম একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি এ কথাও বলেছেন, তেমন কোনো আইন থাকলে গণতন্ত্রের স্বার্থে তা বদলানো দরকার। এর জবাব দিয়েছেন বিজেপির জে্যষ্ঠ নেতা সুব্রহ্মণম স্বামী। তিনি শনিবার বলেন, চাইলে কংগ্রেস আদালতে যাক। কেউ বাধা দেবে না। কিন্তু আদালতে গেলেও কল্কে পাবে না; বরং বিড়ম্বনা বাড়বে। বিজেপির আর এক নেতা মুখতার আব্বাস নাকভি বলেন, বিরোধী নেতার দাবি ছেড়ে কংগ্রেসের বরং আত্মানুসন্ধান করা দরকার, কেন তাদের এই হাল হলো। কংগ্রেসকে বিরোধী নেতার মর্যাদা দেওয়া না হলে সরকারের পক্ষে লোকপাল নিয়োগের পাশাপাশি সিবিআই ডিরেক্টর ও সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনার নিয়োগ করা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ, আইন অনুযায়ী ওই নিযুক্তির কমিটিতে লোকসভার বিরোধী নেতাকে রাখা বাধ্যতামূলক। যে আইনে এটা করা হয়েছিল, বিজেপি ছিল তার শরিক। কংগ্রেস থেকে এই যে আদালতে যাওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, তা এ কারণেই। বিজেপিও যে তা জানে না, তা নয়। তবু বাজেট অধিবেশন বসার আগ পর্যন্ত এ নিয়ে উৎকণ্ঠা থাকছে।
No comments