বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ -বিবিসিকে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ৫ই
জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তারা ভুল করেছিল। জামায়াত প্রসঙ্গে এক
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আদালত সিদ্ধান্ত দেয়ার
আগে আমাদের কিছু করার আছে বলে মনে করি না। যুদ্ধাপরাধের বিচার স্থবির হয়ে
পড়েছে বলে যে অভিযোগ অনেকেই করছেন তাও নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, একমাত্র তার সরকারেরই সাহস আছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি
নিশ্চিত করার। প্রধানমন্ত্রীর এ সাক্ষাৎকারটি নেন বিবিসি বাংলার সাংবাদিক
সাবির মুস্তাফা। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারটি প্রশ্ন ও উত্তর আকারে তুলে
ধরা হলো-
বিবিসি: ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর বৃটিশ সরকার, মার্কিন সরকার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তারা এটা নিয়ে আপত্তি করেছে। তারা বলেছে- এটা ভাল ইলেকশন হয় নি। এতে প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ করে নি। ১৫৩টা আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপির সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একটি আলোচনা হওয়া উচিত। আলোচনার মাধ্যমে আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে সেটার একটা রূপরেখা তৈরি করা উচিত, যাতে ভবিষ্যৎ নির্বাচনগুলো অংশগ্রহণমূলক হয়। সেই ইলেকশনের পরে আপনার ৬ মাস পেরিয়ে গেছে। আলোচনার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কেন?
প্রধানমন্ত্রী: আমি একটা জিনিস বুঝি না যে, সবাই আলোচনা আলোচনা নিয়ে এত ব্যস্ত কেন। কারণ আমি বলি- আলোচনার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। নিজে টেলিফোন করেছিলাম এবং সেই টেলিফোন করার পর যেটা হয়েছে সেটা সবাই জানে। এখন কোন একটা দল যদি রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে ভুল করে তার দায়দায়িত্ব কার? ইলেকশন হবে। সংবিধানে সরকারের ৫ বছরের মেয়াদ। মেয়াদ শেষে নির্বাচন হবে সবাই জানে। এখন সেই নির্বাচন ঠেকাবার জন্য আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারা, বাস-ট্রেন, সিএনজি, রিকশা পুড়িয়ে মানুষকে হত্যা করা। প্রায় ৫৮০টার মতো স্কুল পুড়িয়ে দিলো। প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে হত্যা করলো। কেন? নির্বাচনে না এসে অর্থাৎ গণতন্ত্রের পথে না থেকে অগণতান্ত্রিক পথ করে দেয়ার রাস্তা করে দেয়ার রাস্তাটা- এটা কি একটি দেশের জন্য মঙ্গলজনক। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত সেটা করলো। করলো কেন? জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন করতে পারবে না। কারণ নির্বাচন কমিশনের যেসব নিয়মকানুন রয়েছে সেটা তারা পূরণ করতে পারে নি। নিবন্ধিত দল না হলে ইলেকশন করতে পারবে না। যেহেতু জামায়াত ইলেকশন করবে না, সেহেতু বিএনপি ইলেকশন করবে না, করে নি। এখন এই দায়িত্বটা কে নেবে?
বিবিসি: এটা তো ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন। আমরা বলতে চাইছি আগামী নির্বাচনের কথা?
প্রধানমন্ত্রী: আমি আসছি সেখানে। জামায়াত তো এখনও নিবন্ধন পায় নি। তারা নিবন্ধিত হয় নি। যতক্ষণ পর্যন্ত জামায়াত না হবে ততদিন বিএনপি জামায়াত ছাড়া ইলেকশন করবেই না। ইলেকশন হয়ে গেছে তারা পার্লামেন্টেও নেই। কিন্তু একটা কথা তো স্বীকার করতে হবে যে, বহু বছর পরে পার্লামেন্টে এখন যে অপজিশন আছে, অন্ততপক্ষে তারা পার্লামেন্টে থাকে। আর পার্লামেন্টে এখন গালমন্দ, অকথ্য ভাষায় কথা বলা এই সব অসভ্যতা এখন আর পার্লামেন্টে নেই। এ সময় বিবিসি বলে, জাতীয় পার্টি তো আর বিরোধী দল নয়। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই। এ এক্সাম্পল আমরা সৃষ্টি করেছি। পৃথিবীর বহু দেশে আছে। হ্যাঁ আমি চেয়েছি যে, অপজিশন বা অন্য দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠন করেছি। কেন করেছি? আমার একটাই উদ্দেশ্য। দেশে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে। পার্লামেন্টটা ভালভাবে কার্যকর থাকবে। এখন আমরা দেশের অর্থনেতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করতে পারবো সকলের সহযোগিতাটা নিয়ে। বিএনপি পার্লামেন্টে থাক আর না থাক এতে কিছু আসে যায় না। কারণ, তারা তো পার্লামেন্টে থাকেই নাই। লিডার অব দ্য অপজিশন হিসেবে খালেদা জিয়া, উনি যখন বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন, উনি পার্লামেন্টে কতদিন ছিলেন। ৪১৮টা কার্যদিবস ছিল। উনি মাত্র ১০ দিন পার্লামেন্টে ছিলেন। মাত্র ১০ দিন। তো তার জন্য এত আহাজারি কেন? ওরা ইলেকশন করলেতো পার্লামেন্টের সময় পার্লামেন্টই থাকবে না। তো তাদের জন্য এত হাহাকার কেন। আরেকটা প্রশ্ন আমার- বিএনপি সরকারের দুর্নীতি এবং জঙ্গিবাদ প্রীতি, গ্রেনেড মেরে আমাকেও হত্যার চেষ্টা আমাদের সংসদ সদস্য, আমাদের অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেবকে হত্যা, শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা- এই যে ঘটনাগুলি তারা...।
বিবিসি: এসব ঘটনায় আপনার পরিকল্পনা কি?
প্রধানমন্ত্রী: নো নো। আমাকে শেষ করতে দিতে হবে। প্রশ্ন যখন এসেছে আমি উত্তরটা দিতে চাই।
বিবিসি: উত্তর তো আপনি দিচ্ছেন না।
প্রধানমন্ত্রী: নো। উত্তর তো আমি দিচ্ছি।
বিবিসি: আপনি পুরনো ইতিহাস বলছেন।
প্রধানমন্ত্রী: নো। পুরনো ইতিহাস বলছি না।
বিবিসি: প্রশ্ন হচ্ছে ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী: নো। আমি পুরনো ইতিহাস বলছি না। আমি যেটা বলছি প্রাকটিক্যাল বলছি। বাস্তবসম্মত বলছি। এই যে ঘটনাগুলি যারা ঘটিয়েছে তারা ইলেকশনে আসলো না। তার জন্য সকলের এত কান্নাকাটি কেন এটা তো আমার কাছে বোধগম্য নয়। একটা রাজনৈতিক দল যদি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে সেটা তার ভুল। সে ভুলের মাশুল তো তাদেরই দিতে হবে। আমরা ইলেকশন করেছি, সরকার গঠন করেছি, পার্লামেন্ট চলছে, এখনকার পার্লামেন্টে অপজিশন আছে। কথা বলছে। তারা বিরোধী দল হিসেবে যেভাবে কথা বলা উচিত তাও তারা বলছে। সরকারে থাকলেও তারা সেটা পালন করে যাচ্ছে। একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এখন যারা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, যারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত, জামায়াতে ইসলামের অধিকাংশ নেতা যুদ্ধাপরাধী, তাদের বিচার হচ্ছে এখন। সেই জামায়াতের নেতাদের বাঁচাবার জন্য মানুষ হত্যা করছে। এখন তাদের আনার জন্য আমাদেরকে যেয়ে তাদেরকে একেবারে আহ্বান করতে হবে, আমন্ত্রণ জানাতে হবে- কেন এ প্রশ্ন আসে বার বার? কেন? তাহলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার দরকার নেই, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার দরকার নাই। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলার দরকার নাই। যারা এগুলো করবে তারাই ইমপর্টেন্ট পার্টি।
বিবিসি: তাহলে আপনি বলছেন যে, আগামী নির্বাচন, যে পদ্ধতিতে ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে, আগামী নির্বাচন সেই পদ্ধতিতেই হবে? এবং এখানে আপনি কোন আলোচনার দিকে যাবেন না?
প্রধানমন্ত্রী: এখানে পদ্ধতির সমস্যাটা কোথায়! একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইলেকশনটা হচ্ছে। তাহলে কি আবার মিলিটারি ডিকটেটর আসতে হবে? আবার অগণতান্ত্রিক সরকার আসতে হবে? অসাংবিধানিক সরকার আসতে হবে? বাংলাদেশের মানুষ তা চায় না। একটা শ্রেণী ওই মারামারি, কাটাকাটি, ওই জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস, বাংলাভাই- এগুলো যারা করেছে তাদের জন্য কেঁদে মরে যাচ্ছে। কেন?
বিবিসি: বিএনপির অভিযোগ হচ্ছে যে, আপনি বিএনপি দলটাকে কোণঠাসা করে দিয়ে দেশে এক ধরনের একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে চাচ্ছেন, যেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন মতবাদ এক্সিস্ট করবে না। আপনি এ অভিযোগের কি জবাব দেবেন?
প্রধানমন্ত্রী: জবাবে এটাই বলবো এই বিবিসিতে যখন বিএনপির কোন নেতা কথা বলেন আমরা এসে কি তার গলা টিপে ধরি? বা টেলিভিশনে, আমি তো বেসরকারি খাতে টেলিভিশন ছেড়ে দিয়েছি, এখন ২৭টা বেসরকারি টেলিভিশন চলছে। প্রতি রাতে বিএনপির নেতারা সেখানে গিয়ে কথা বলছেন। তাদের কাজই হচ্ছে মাইক একটা লাগিয়ে সারাক্ষণ টেলিভিশনের সামনে বসে থাকে। দৈনিক অন্তত ৫ জন তারা কথা বলে যাচ্ছেন এবং সরকারকেই গালি দিচ্ছেন। আমাকে গালি দিচ্ছেন। দিয়েই যাচ্ছেন। দিয়েই যাচ্ছেন। আমরা কি তাদের মুখটা বন্ধ করে দিয়েছি স্কচ টেপ মেরে। তাতো দিইনি। তারা তো বলেই যাচ্ছেন। তারা কথা বলেই বলবে আমাদেরকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। এটা কোন ধরনের কথা।
বিবিসি: বাক স্বাধীনতা নিয়ে একটা সঙ্কট তৈরি হয়েছে- এটা অস্বীকার করা যায় না। কিছুদিন আগে আমরা দেখলাম খুলনায় একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, তার নামে অভিযোগ করা হলো যে, তিনি আপনার নামে কটূক্তি করেছেন। রাষ্ট্রপতির নামে কটূক্তি করেছেন এবং তাকে ৭ দিন জেলে থাকতে হয়েছে। পরে পুলিশ দেখলো যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু একটা কথা বলার জন্য একজন শিক্ষককে কেন ৭ দিন জেলে থাকতে হবে?
প্রধানমন্ত্রী: কেউ যদি মামলা করে তাহলে আইন তার আপন গতিতে চলতে হয়। তার গতিতে চলবে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে কিনা তারও পরে সেটা দেখা যাবে। কাউকে গালি দেয়াটা কি বাক স্বাধীনতা? খারাপ কথা বললে, নোংরা কথা বললে, ফিলদি কথা বললে- এটা হলো বাক স্বাধীনতা। খুব ভাল!
বিবিসি: সামাজিকভাবে ওইটা নিরুৎসাহিত করা এক জিনিস। আর একজনকে ৭ দিন জেলে ভরা এটা আরেক জিনিস। একজনকে জেলে যেতে হবে কেন?
প্রধানমন্ত্রী: জেলে যেতে হবে যদি সে অন্যায় করে তাহলে তো তাকে জেলে যেতে হবে।
বিবিসি: তার তো বিচারই হয়নি তার আগে তাকে জেলে যেতে হয়েছে। ৭ দিন জেল খেটেছে।
প্রধানমন্ত্রী: কেস হলে সব সময় এরেস্ট হয়। এখানে আমাদের কি করার আছে।
বিবিসি: জামায়াত প্রসঙ্গে আসি। আপনি বলছিলেন, নির্বাচনের পরে আপনি যে প্রেস কনফারেন্স করেছিলেন সেখানে বিএনপিকে আহ্বান জানিয়েছিলেন জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার জন্য। জামায়াতের প্রতি আপনার সরকারের মনোভাব কি? কোন কোন মন্ত্রী বলেন যে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা উচিত। কিন্তু নিষিদ্ধকরণের কোন প্রক্রিয়া নেই। জামায়াতকে নিয়ে আপনি কি করতে চান? এ বিষয়ে আপনার মনোভাবটা কি?
প্রধানমন্ত্রী: আপনি জানেন যে কোর্টে কেস পেন্ডিং আছে। কোর্ট ভারডিক্ট না দেয়া পর্যন্ত এখানে আমাদের কিছু করার আছে বলে আমি মনে করি না। আমি তো আগেই বললাম যে, যুদ্ধাপরধী হিসেবে তাদের বিচার হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে সারা বাংলাদেশীর যে মনোভাব আমারও সেই মনোভাব। যেসব অপকর্ম তারা করে গেছে তার বিচার, এটা তো দেশের জনগণের দাবি। সেই বিচার হচ্ছে। বিচার চলছে বিচার চলবে। বিচারের রায়ও আমরা দিতে শুরু করেছি। এখানে আমার মনোভাব নতুন করে বলার তো কিছু থাকে না।
বিবিসি: জামায়াত নিষিদ্ধকরণের ব্যাপারে আপনার কোন...।
প্রধানমন্ত্রী: হাইকোর্টে কেস আছে। কেসের ভারডিক্ট না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
বিবিসি: যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়েও অনেকের মনে শঙ্কা জেগেছে। কারণ, ২০১৩ সালে আমরা দেখলাম যে, অনেক কেস সম্পন্ন হলো। দোষী সাব্যস্ত হলো। এক জনের ফাঁসিও হলো। কিন্তু গত ৬ মাসে এরকম কোন কিছু হয়নি এবং অন্তত একটি মামলার রায় চার মাস ধরে অপেক্ষমাণ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার রায় বেশ কিছুদিন হলো অপেক্ষমাণ রয়েছে। তো অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের যে আগ্রহ ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩ সালে দেখা গিয়েছিল, সেই আগ্রহে একটা ভাটা পড়েছে। আপনি এ অভিযোগের কি জবাব দেবেন?
প্রধানমন্ত্রী: কেস যখন কোর্টে চলে যায় তখন সরকারের কিছু করার থাকে না। এটা সম্পূর্ণ কোর্টের এক্তিয়ার। আমরা যখন মামলার রায় কার্যকর করতে শুরু করি, মামলার রায় পেলেই কার্যকর করার দায়িত্বটা আসে।
বিবিসি: তাহলে আপনার সরকারের যে কমিটমেন্ট এই বিচার...।
প্রধানমন্ত্রী: আমরা করছি, করবো।
বিবিসি: বিচার প্রক্রিয়াটাকে চালিয়ে যাওয়ার। এরকম কোন কমিটমেন্টের কোন হেরফের হচ্ছে না?
প্রধানমন্ত্রী: প্রশ্নই ওঠে না। আমি যদি আবার ক্ষমতায় ফিরে না আসতাম বা আমি যদি সরকারে না থাকতাম- আমাকে বলেন, বাংলাদেশে কার সাহস ছিল এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে এবং তাদের শাস্তি দেয়। কেউ পারতো? কেউ পারবে? ভবিষ্যতে পারবে? আসেন দেখান! কারও সেই সাহস হয় কিনা। আমি এটা জোর গলায় বলতে পারি। করলে আমিই করবো। আমাদের গভর্নমেন্টই করবে। আর কেউ পারবে না। করে নাই। কে করেছে?
বিবিসি: আরেক পার্টি নিয়ে আলাপ করা দরকার। সেটা হচ্ছে, ঠিক রাজনৈতিক দল নয়, কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে তারা সামহাউ যুক্ত হয়ে গিয়েছিল তারা গত বছর। তারা হলো হেফাজতে ইসলাম। এমনকি তারা সরকার উৎখাতেরও হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু এখন আপনার দল বা আপনার সরকারের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সম্পর্কটা কি রকম?
প্রধানমন্ত্রী: আমাদের সঙ্গে সবার ভাল সম্পর্ক। যদি বিএনপির সঙ্গেই কথা বলতে পারি তাহলে আর কার সঙ্গে খারাপ থাকবে? কারও সঙ্গে খারাপ নেই। হেফাজতে এসেছিল বিএনপির সঙ্গে, বিএনপির মদতে।
বিবিসি: কিন্তু আপনার সরকারের সঙ্গে সম্পর্কটা কি?
প্রধানমন্ত্রী: বিএনপি নেত্রীতো সেই স্টেজে গিয়ে কথা বলে আসলো। তারপর বায়তুল মোকাররমে যে আগুন দিল শিবিরের লোক। তাদের ক্যাডাররা। বিএনপির ক্যাডাররা। তারাই তো এসব করেছে। আমাদের সঙ্গে সবার ভাল সম্পর্ক। কারও সঙ্গে আমাদের খারাপ সম্পর্ক নেই।
বিবিসি: হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক!
প্রধানমন্ত্রী: সবার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক। কারণ আমি সরকারে আছি সবাইকে সমানভাবে দেখতে হয়। দেখছি।
বিবিসি: হেফাজতে ইসলাম যে গত বছর ৫ই মে পুলিশের গুলিতে তাদের অনেক মানুষ নিহত হয়েছিল, কিন্তু সেই ঘটনার কোন সরকারি তদন্ত বা নিরপেক্ষ তদন্ত এখনও তারা পায় নি।
প্রধানমন্ত্রী: আমাদের দেশে যে কিছু কিছু লোক তো আছেই, হিসাব একটা দিয়ে দিল। তারপর গুনে দেখা গেল কি মারা গেল হাজারে হাজার। গুনে পেল কত? ৬০ জন। তার মধ্যেও ওখানে গুলি খেয়ে মরা লোক নেই। কোথায় কোথায়, বাংলাদেশের কোন স্থানে মারা গেছে সেটা, ওখানে মারা গেছে পুলিশ আর ৪-৫ জন।
বিবিসি: শাপলা চত্বরের কথা বলছি না। আমি সারাদিনের ঘটনার কথা বলছি।
প্রধানমন্ত্রী: হ্যাঁ। আমি সারাদিনের ঘটনার কথাই বলছি যে, তাদের হাতে কিছু লোক মারা গেছে। পুলিশ মারা গেছে এবং অন্য লোক। ১৭ জন পুলিশকে এরা হত্যা করেছে। সেদিন পুলিশ ওখানে মারা গিয়েছে। যারা এই হিসাবটা করলো হাজার হাজার। ইন্টারন্যাশনালভাবে হিসাব পাঠায়ে দিল আড়াই হাজার লোক মারা গেছে। আমরা তো তন্ন তন্ন করে নাম চাইলাম। কিন্তু তারা দিতে পারল না। তারা যাদের নাম দিল তাদের অনেকেই বেঁচে আছে অথবা নাম দু’তিনবার লেখা।
No comments