গাজা পরিস্থিতি ভয়াবহ আতঙ্কিত শিশুরা
গাজা
পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেখানকার অধিবাসীদের খাবার ফুরিয়ে যাচ্ছে। রয়েছে পানির
তীব্র সঙ্কট। শ’ শ’ শিশু আতঙ্কিত। বোমা বিস্ফোরণের শব্দে তাদের ঘুম ভাঙে।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা লাশ হচ্ছে। যারা বেঁচে থাকছে তাদের পরিণতি ভয়াবহ।
চোখের সামনে পিতামাতা, ভাইবোনের লাশ। বিধ্বস্ত লোকালয়। তা দেখে কান্নায়
ভেঙে পড়ছে গাজার শিশু, কিশোররা। তাদের চোখে অনবরত অশ্রু। বিধ্বস্ত গাজা
দেখে তাদের মানসপটে জন্মেছে ভীতি। এ অবস্থায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভ্যালেরি অ্যামোস। তিনি বলেছেন, কমপক্ষে
এক লাখ ১৮ হাজার মানুষ জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে ঠাঁই নিয়েছেন। গতকাল
গাজায় নিহতের সংখ্যা ৭১৮ ছাড়িয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের ভিতর লাশে পচন ধরেছে।
বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ। শিশুদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। ইসরাইলের
হামলায় সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে শিশু। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও তাতে
মোটেও কর্ণপাত করছে না ইসরাইল। হামাসের রকেট হামলার জবাব দিতে তারা হামলা
অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক সমন্বয়কারীর অফিস থেকে বলা হয়েছে
গাজা উপত্যকার ১.৯ মাইল চওড়া উপত্যকাকে নো-গো জোন বা যাতায়াতমুক্ত এলাকা
ঘোষণা করেছে ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল
কর্তৃপক্ষ মার্কিন বিমানের জন্য ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবের আকাশকে
নিষিদ্ধ করেছিল। পরে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এখনও ইউরোপের অনেক বিমান
সংস্থা তেল আবিবে অবতরণ এড়িয়ে চলছে। ওদিকে গাজা-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে
মধ্যস্থতায় মধ্যপ্রাচ্য সফরে রয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন। মুন ও কেরির যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে
গতকালও সহিংস হামলা অব্যাহত রাখে ইসরাইল। ভোরের আগে ইসরাইলি ট্যাঙ্কের
গোলার আঘাতে ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের ৬ সদস্য
রয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ তথ্য দিয়েছেন।
এদিকে গতকাল জন কেরির ইসরাইল থেকে মিশরের রাজধানী কায়রো যাওয়ার কথা। সেখানে
যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে মিশরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা তার।
মিশরের এক কর্মকর্তা বলেন, পবিত্র রমজান মাস শেষে আসন্ন ঈদুল ফিতরের কারণে
সপ্তাহান্তে মানবিক কারণে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। তবে সিনিয়র এক
মার্কিন কর্মকর্তা এটাকে শুধু আশার বাণী বলেই মনে করছেন। কার্যত, তেমন কোন
সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি। এদিকে কাতার থেকে হামাস নেতা খালেদ মেশাল বলেছেন,
ইসরাইলের বিরুদ্ধে তার যোদ্ধারা এগিয়ে আছে। গাজায় বসবাসকারী ১৮ লাখ
ফিলিস্তিনির ওপর থেকে ইসরাইলকে তাদের আরোপিত অবরোধ তুলে নিতে হবে- এমন শর্ত
উল্লেখ করে মেশাল বলেন, তিনি মানবিক কারণে যুদ্ধবিরতিতে সমর্থন জানিয়েছেন।
ওদিকে ইসরাইলও চাপের মুখে রয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দর
কর্তৃপক্ষ ইসরাইলে যাওয়া ফ্লাইটগুলোর যাত্রা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও চাপ আসছে। তবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন
নেতানিয়াহু এসব বাধার তোয়াক্কা করছেন না। ওদিকে, ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন
লঙ্ঘন করছে এবং এটা যুদ্ধাপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার
বিষয়ক হাইকমিশনার নাভি পিল্লাই। ফিলিস্তিনের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ৪৭ সদস্য
রাষ্ট্রবিশিষ্ট জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ইসরাইলে ‘যুদ্ধাপরাধ’
তদন্তবিষয়ক একটি খসড়া প্রস্তাবে ভোট হয়। এতে ২৯টি রাষ্ট্র ইসরাইলে
যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি খতিয়ে দেখার পক্ষে আনীত প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।
একমাত্র দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রই এ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। অন্যদিকে,
১৭টি রাষ্ট্র ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে। এর বেশির ভাগই ইউরোপীয় রাষ্ট্র। এ
খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা। এদিকে ইসরাইলে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে কিনা,
সে ইস্যুতে তদন্ত শুরুর ব্যাপারে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ভোটাভুটির
একদিন পরও ইসরাইলি বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২৫ ফিলিস্তিনি।
No comments