গাজায় শিশুদের প্রথম পাঠ মৃত্যু
গাজার শিশুদের প্রথম পাঠ মৃত্যু। আগুন তাদের প্রথম অভিজ্ঞতা। পৃথিবীর কোনো কিছু শেখার আগেই দেখে গোলাবারুদের বিস্ফোরণ। নৃশংস মৃত্যু দেখতে দেখতে বেড়ে ওঠে কেউ। আবার এই মৃত্যুই ছিনিয়ে নেয় কারও জীবন। দু’বছরের নেমার কথায় ধরা যাক, দুপুরবেলা বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল মেয়েটা। অবাক বিস্ময়ে দেখছিল ইসরাইলি সেনার মার্চ। ওরা সবাই এক রকম জামা পরেছে কেন?
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিল নেমা। জবাব দেয়ার সুযোগ পাননি বাবা। গাজার ত্রাণশিবিরে বসে সেদিনের কথা বলছিলেন ফাদি আবু আল ফউল। পলক ফেলার আগেই একটা আগুনের গোলা উধাও করে দিল নেমাকে। সারাদিন সারারাত খুঁজে একটা পাথরের তলা থেকে ক্ষতবিক্ষত নেমাকে বার করেন তিনি। নেমা এখন চিকিৎসাধীন। ফাদি বলেন, ‘আমার নেমা ভাগ্যবান। ও এখনও বেঁচে আছে সেটাই অনেক। আমাদের শহরের প্রায় সব বাচ্চাই মারা গেছে। আমার মেয়েটা অন্তত বেঁচে তো আছে! রাস্তাঘাটে এখনও ছড়িয়ে আছে শিশুদের ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ।’ ১৭ দিনের এই সংঘর্ষে অন্তত ১৫৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্যালেস্টাইনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কেদরা। একই তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘও। ২০১২ সালে ইসরাইল-প্যালেস্টাইনের আটদিনের সংঘর্ষে ৩৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়। এ ১২-১৫ দিনের যুদ্ধে সেই সংখ্যা চারগুণ ছাড়িয়ে গেছে। এত শিশুমৃত্যুর জন্য ইসরাইলের অস্ত্রকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে জাতিসংঘের নতুন রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গাজায় প্রতি ঘণ্টায় এক ফিলিস্তিনি শিশু ইসরাইলি আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। বুধবার (২৩ জুলাই ২০১৪) প্রকাশিত জাতিসংঘের এই রিপোর্টে বলা হয় গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে গত দু’দিনের হিসেবে দেখা গেছে গড়ে প্রতি ঘণ্টায় এক ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরাইলি আগ্রাসনের শিকার ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭৪ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক। হত্যাকাণ্ডের শিকার এই সাধারণ নাগরিকদের তিন ভাগের এক ভাগই শিশু।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মানবাধিকার সংগঠনও দাবি করছে ইসরাইলের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে গাজায় নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। আর এদের সিংহভাগই আবার নারী ও শিশু। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কাউন্সিলের প্রধান নাভি পিল্লাই বলেছেন, গাজার প্রত্যন্ত সব অঞ্চলে ইসরাইলি সেনাবাহিনী যে কর্মকাণ্ড করেছে তা সুস্পষ্ট যুদ্ধাপরাধের শামিল। নাভি পিল্লাই জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের এক জরুরি অধিবেশনে বক্তৃতাকালে এমন মন্তব্য করেন। যুদ্ধবিরতি মানবে না হামাস : গাজায় দীর্ঘদিন ধরে চলা ইসরাইলের অর্থনৈতিক অবরোধ সম্পূর্ণভাবে তুলে নেয়ার আগ পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে না ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। বুধবার সংগঠনের শীর্ষ নেতা খালেদ মেসহাল এ কথা বলেছেন। তবে তিনি মানবিক যুদ্ধবিরতি মানতে রাজি আছেন। এদিকে গাজায় ইসরাইলিদের সহিংসতা চালানোর যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত শুরু করার ব্যাপারে ভোটের মাধ্যমে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন একমত হয়েছে। এর আগে জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন মানবাধিকার কর্মকর্তা নাভি পিল্লাই গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানের নিন্দা করেন। পাশাপাশি হামাসের রকেট হামলারও নিন্দা করেছেন তিনি। গত ১৭ দিনের সহিংসতায় কমপক্ষে ৭৪০ জন ফিলিস্তিনি এবং ৩২ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে। বুধবার কাতারে এক সংবাদ সম্মেলনে হামাস নেতা খালেদ মেশাল বলেছেন, তাদের দেয়া শর্তগুলো যতক্ষণ বাস্তবায়ন করা হবে না ততক্ষণ হামাস দীর্ঘস্থায়ী অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব নাকচ করবে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- গাজার ওপর থেকে আট বছরের অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয়া, মিসরের সঙ্গে রাফা সীমান্ত খুলে দেয়া এবং ইসরাইলি কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্ত করে দেয়া। তবে তিনি বলেছেন, হামাস মানবিক অস্ত্রবিরতির পথ বন্ধ করবে না। তিনি বলেন, আমাদের কয়েক ঘণ্টা শান্ত থাকা উচিত। এর মধ্যে যারা আহত হয়েছে তাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানোর জন্য কাজ করা উচিত। এ সময় তিনি গাজায় ওষুধ, জ্বালানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান ।
ইউরোপে ইহুদিবিরোধী বিক্ষোভ : টানা তিন সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলাকে কেন্দ্র করে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে ইহুদিবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও নেদারল্যান্ডসে তা সহিংস আকার ধারণ করেছে। খবর ডেইলি মেইলের।
ইউরোপে ইহুদিবিরোধী বিক্ষোভ : টানা তিন সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলাকে কেন্দ্র করে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে ইহুদিবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও নেদারল্যান্ডসে তা সহিংস আকার ধারণ করেছে। খবর ডেইলি মেইলের।
No comments