সংসদে এরশাদ ‘মুক্তি চাই, মুক্তি দিন’
সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ বলেছেন, দেশের মানুষ মুক্তি চায়। দুঃশাসন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, গুম, অপহরণের, গডফাদার, মাফিয়া আর সংঘাতের রাজনীতি থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু মুক্তি অবরুদ্ধ। কে এনে দেবে এই মুক্তি। বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের জনসভায় বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। তিনি স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কিন্তু মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। বেঁচে থাকলে হয়তো মুক্তিও দিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি যে সময় পাননি। এই মুক্তি দেয়ার দায়িত্ব এখন তার সন্তান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিতে হবে। কারণ, আমরা এই বাংলাদেশ চাইনি। আমরা শান্তি ও অগ্রগতির বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। গতকাল সংসদে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এরশাদ আরও বলেন, বাংলাদেশ আজ মৃত্যুকূপ। দেশে চলছে মৃত্যুর মিছিল। খুন-গুম-অপহরণ চলছেই। ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। শিল্প-কলকারখানা বন্ধ। ব্যাংক লুট হচ্ছে। লুটেরারা বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শেয়ারবাজার থেকে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তাদের বিচার হলো না। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে চাকরি পায় না। অর্থমন্ত্রীকে বলবো- রাত ১১টায় কমলাপুর যান। মানুষ বসে আছে, কাজ নেই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে কোদাল নিয়ে শ্রমিকরা বসে থাকে, কাজ নেই। পেটে খাবার নেই। তারা রিজার্ভ বোঝে না, প্রবৃদ্ধি বোঝে না। তারা কাজ চায়, বাঁচতে চায়। এরশাদ বলেন, এক দেশে এখন দুই আইন। ধনীর জন্য এক রকম। আর গরিবের জন্য অন্যরকম। সবার জন্য আইন সমান হওয়ার কথা থাকলেও আমাদের দেশে এক রকম নয়। গডফাদার নামে নতুন আলামতের আবির্ভাব ঘটেছে। তাদের অঢেল অর্থ, অস্ত্রের ভা-ার তারা কি আইনের ঊর্ধ্বে? এক মন্ত্রী নাকি ৩০০০ একর জমি কিনেছেন। আমরা এ সব মাফিয়া, গডফাদার চাই না। শান্তি চাই। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারের ঘটনা ঘটলো। মিরপুরের বিহারি পল্লীতে ১০টি মানুষ পুড়ে মারা গেল। বিচার নেই। মানুষ হত্যা হচ্ছে, আমাদের মনে দুঃখ নেই। আমাদের জীবন থেকে প্রেম-ভালবাসা চলে গেছে। আমাদের জীবন যান্ত্রিক হয়ে গেছে। অর্থ ও ক্ষমতার লোভে সবাই পাগল হয়ে গেছি। মানুষ নিখোঁজ হচ্ছে। কবে ফিরে আসবে পরিবারের সদস্যরা কেউ জানে না। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, শেয়ারবাজারে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে তারা সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ব্যাংক লুট করে আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দোষীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। মেয়ার বাজারের কেলেঙ্কারীর রিপোর্ট আলোর মুখ দেখছে না। অর্থমন্ত্রী বলছেন, তাদের হাত অনেক লম্বা। জানতে চাই- কত লম্বা? তাদের হাত কি সরকার, প্রশাসন ও আইনের চেয়েও লম্বা? অনেকে অর্থ পাচার করে আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়ায় বাড়ি করছেন। এরা এত টাকা কোথায় পেলো? কিভাবে টাকা গেল? এদের ধরা কি খুবই কঠিন কাজ। দেশে নিরাপত্তা নেই। আগে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। নিরাপত্তা থাকলে বিদেশে অর্থ পাচার হবে না। এরশাদ বলেন, মানুষ আজ মুক্তি চায়। গডফাদার, দুর্নীতি, দুঃশাসন, সংঘাতের রাজনীতি, টেন্ডারবাজি, শিক্ষাঙ্গনের সন্ত্রাস, অশিক্ষা-কুশিক্ষা থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু মুক্তি অবরুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কিন্তু মুক্তি দিয়ে যাওয়ার সময় পাননি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে তার সন্তান প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি এ জন্য যে পদক্ষেপ নেবেন আমরা সর্বাত্মকভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করবো। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু হৃদয়ে আছেন। থাকবেনও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে হলে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, মাছ ও ফলে ফরমালিন, দুধে পর্যন্ত বিষ। রোজা আসছে, মুড়ি খাবো। সেখানেও ইউরিয়া। সমস্ত দেশ আজ বিষাক্ত হয়ে গেছে। এর হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। উপজেলা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে হবে। প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে।
No comments