অর্থ ছাড়াই এক বছর
আমাদের ভোগবাদী সমাজকে অগ্রাহ্য করে দিব্যি এক বছর কাটিয়ে দিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী জার্মান নারী গ্রেটা টবার্ট৷ খাওয়া-দাওয়া, পান করা ও পোশাক-আশাক সংস্থানের মতো কাজগুলো তিনি করে যাচ্ছেন কোনো অর্থ খরচ না করেই৷ খবর এএফপির৷ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধসে পড়লে আমাদের জীবন কেমন হবে, সেটাই দেখতে চান টবার্ট৷ কেনাকাটা বাদ দিলে কোন কোন জিনিসের প্রয়োজনীয়তা তিনি খুব বেশি অনুভব করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে লিপজিগের বাসিন্দা টবার্ট বলেন, অঁাটসাঁট পোশাক আর প্রসাধনসামগ্রী৷ এখন টবার্ট ঘরে বসে নিজেই তৈরি করেন সুগিন্ধ বা ডিওডোরেন্ট, মুখমণ্ডলে লাগানোর ক্রিম আর টুথপেস্ট৷ এসব শতভাগ জৈব উপাদান (অর্গানিক) দিয়ে তৈরি৷ টবার্ট বলেন, ‘নিজের শ্যাম্পুও আমি তৈরি করতে পারি৷ কিন্তু আমাকে এক সময় নিয়ানডার্থালের (মানুষের আদি বংশধর) মতো দেখাচ্ছিল। বন্ধুরা বলল, আমি নাকি অনেক দূরে চলে যাচ্ছি৷’ ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক টবার্ট পুরো এক বছর ধরে বাগানে গাজর ও আলুর চাষাবাদ করছেন৷ ছুটিতে তিনি দূরপাল্লার ভ্রমণে স্পেনের বার্সেলোনা পর্যন্ত গেছেন। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি অ্যাপোক্যালিপস নাউ নামের একটি বইও লিখেছেন৷এতে তিনি লিখেছেন পোশাকের দোকানের আকর্ষণ, বিপণিবিতানের মূল্যছাড় আর অাধুনিক জীবনযাত্রায় নানা অপচয় এড়িয়ে জীবন কাটানোর কাহিনি৷দাদির বাড়িতে এক রোববার জম্পেশ খাওয়া-দাওয়ার পর টবার্ট আকস্মিক অর্থ ছাড়াই জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন৷ সেই থেকে শুরু৷ তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অসীম প্রবৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে৷ কিন্তু আমাদের বৈশ্বিক পরিবেশের উপাদানগুলো সীমাবদ্ধ৷ কাজেই “আরও চাই, আরও চাই” বলে প্রচলিত মন্ত্র আমাদের বেশি দূর নিয়ে যেতে পারবে না৷’ জার্মানিতে কেবল ২০১২ সালে প্রায় ৭০ লাখ টন খাবার ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে৷ সেই হিসাবে দেশের প্রত্যেক মানুষ গড়ে ৮১ কেজি ৬০ গ্রাম খাবার নষ্ট করেছে৷ টবার্ট বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণেই ইউরোপে মন্দা নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে৷ জনগণ বুঝতে পেরেছে, ঋণসহায়তা ও ইউরোপীয় স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভরশীলতা—কোনো কিছুই স্থায়ী নয়৷ অতীতের মতো দিন কেটে গেলেও গোটা ব্যবস্থাটির মজবুত ভিত্তি নেই৷ টবার্ট বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে অর্জিত শিক্ষা আমি নিজের জীবনে প্রয়োগ করছি৷ অন্যদের মতো জীবন যাপন করছি না৷’
No comments