সুশীল, সোনিয়া ও আমাদের মন্ত্রীরা by কাজল ঘোষ
গত ক’দিন ধরেই টেবিলে টেবিলে একটি বিষয়
নিয়ে আলোচনা করছিলাম আমাদের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সম্পদ নিয়ে। এই আলোচনা
রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষ কতটা নিঃস্ব হতে পারে এমন একটি খবর
পত্রিকায় প্রকাশের পর থেকেই।
মার্চের
মাঝামাঝি নিঃস্ব এক প্রধানমন্ত্রীর বৃত্তান্ত জানলাম। তিনি নেপালের
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা। সরকারি কর্মকর্তারা যখন তার সম্পদ
বিবরণী চাইলেন বিস্ময় প্রকাশ ছাড়া তাদের কিছুই করার ছিল না। কারণ তিনি
দেশের প্রধানমন্ত্রী। অথচ তার বাড়ি-গাড়ি কিছুই নেই। বেতন নেবেন সেই ব্যাংক
একাউন্ট পর্যন্ত নেই। সম্বল মাত্র দু’টি সেলফোন- যা কোন সম্পদ হিসেবে গণ্য
নয়। থাকেন কাঠমাণ্ডুতেই, পার্টি কর্তৃক ভাড়া বাসায়। সরল জীবনযাপনের প্রচলিত
যে গল্প আমরা দেখি তা সেই ধরনের গল্পকেও হার মানায়। নেপালের রাজনীতিতে
তিনি সন্ন্যাসী বলেই পরিচিত। চিরকুমার সুশীল কৈরালা যখন পৈতৃক সম্পত্তি
ভাগাভাগি হয় তখন তা-ও ভাইদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছেন। ফিরি আরও কাছের দেশে।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে হলফনামা জমা দিচ্ছেন সে দেশের রাজনীতিবিদরা।
পরাক্রমশালী এই দেশটির সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সোনিয়া গান্ধীর ব্যক্তিগত সম্পদ
রয়েছে মাত্র ১০ কোটি রুপির। ভারতে তার কোন গাড়ি-বাড়ি নেই। পত্রিকায়
প্রকাশিত এ রিপোর্ট দেখেই এক সাংবাদিক বন্ধু খুনসুটি করে জানতে চাইলেন,
আমাদের দেশে যে কোন সাধারণ মাপের নেতাদের সম্পর্কে আমার ধারণা কি? বললাম,
হয়তো দুই-তিন কোটি টাকা। তুড়িতে উড়িয়ে বললেন, যে কোন থানা বা ওয়ার্ড কমিটির
সাংগঠনিক সম্পাদকও ১০-১২ কোটি টাকার মালিক। খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে এর কম বৈ
বেশি নয়। তর্কে জুড়ে দিলাম, আমাদের এখানেও আছে। সংখ্যায় হয়তো অল্প। তাদের
একজনের কথা তো বলাই যায়। তিনি মতিয়া চৌধুরী। যিনি এখনও বাজারে যান। নিজেই
কেনাকাটা করেন। থাকেন সাধারণ মাপের সেই বেইলি রোডের ফ্ল্যাটে। রাজনীতির
মাঠে কখনও পিছপা হননি। সুবিধাভোগী রাজনীতিকদের মতো পালিয়ে যাননি। যখন
বিরোধী দলে ছিলেন তখন খোলাবাজারে চাল কেনার লাইনে দাঁড়িয়ে গেছেন। গত টার্মে
দু’জন মন্ত্রী সরকার নির্ধারিত সিডান গাড়ির বাইরে যাননি। তাদের একজন মতিয়া
চৌধুরী, অন্যজন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। বাকিরা সকলেই
হাঁকিয়েছেন প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার, পাজেরো। আর আমাদের চোখ ঠাউরেছে ৫ই
জানুয়ারির নির্বাচনের জমা দেয়া হলফনামা দেখে। সুশাসনের জন্য নাগরিক এক
গবেষণায় দেখিয়েছে, সংসদ নির্বাচনে ৪৮ প্রার্থীর ৫ বছরে আয় বেড়েছে ৫৮২ ভাগ।
গড়ে সম্পদ বেড়েছে ৩৬৩ ভাগ। আর মন্ত্রীদের ২৪৩ ভাগ, প্রতিমন্ত্রীদের ৪৬৪
ভাগ, সংসদের উপনেতা, চিফ হুইপদের ৩০৭১ ভাগ। আয়ের হিসেবে শতকরা বেড়েছে
আওয়ামী লীগ নেতা নূর-ই-আলম চৌধুরীর ৩২,৯৮৫ ভাগ, আব্দুল মান্নান খানের ৮,৪২২
ভাগ, মো. মাহবুবুর রহমানের ৮.০৭৭ ভাগ, ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর ৪৪৩৬ ভাগ,
ড. হাছান মাহমুদের ২০৩৬ ভাগ এবং মো. আফছারুল আমীনের ২,৪৮০ ভাগ।
এক-দু’জনের বিস্তারিত বর্ণনায় এটি আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে। সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের ৫ বছর আগে সম্পদ ছিল সাকুল্যে ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ৫ বছরে তা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৩ লাখ টাকায়। আগে বার্ষিক আয় ছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সেটা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এই ৫ বছরে মন্ত্রিত্বকালে সম্পদ বেড়েছে ১০৭ গুণ। আরও বিস্ময়কর সম্পদ বিবরণী দেখা গেছে সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমানের হলফনামায়। ৫ বছরে তার ব্যাংকে টাকা বেড়েছে ৫৮৫ গুণ, জমি বেড়েছে ২৪৩ গুণ, বার্ষিক আয় বেড়েছে ৭৯ গুণ। ৫ বছর আগে যেখানে কৃষিজমি ছিল ২০ একর সেখানে ৫ বছর পর তা বেড়ে হয়েছে ২৮৬৫ একর অর্থাৎ ৫ বছরে বেড়েছে ২৮৪৫ একর। সম্পদ বিবরণীর অস্বাভাবিকতা যৌক্তিক করতে অনেকেই বেছে নিয়েছেন মৎস্যখাতকে। অথচ আমাদের দাপুটে এই রাজনীতিকরা ৫ বছর আগে কোনভাবেই মৎস্য ব্যবসায়ে যুক্ত না থাকলেও কাগজে কলমে মাছ ব্যবসায়ের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় দেখিয়েছেন। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বিপুল পরিমাণ সম্পদ বিবরণী প্রকাশের পরপরই তা কিভাবে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেয়া যায় তার চেষ্টা হয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা রাজনীতিকদের চরিত্র হননের জন্যই পত্র-পত্রিকা প্রকাশ করছে বলে উল্টো মিডিয়াকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। সরকারি দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পদ বিবরণী অল্পই উল্লেখ করে বলেছেন,
৬ কোটি নয় চাইলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৬০০ কোটি টাকার মালিক হতে পারতাম।
যে দলই ক্ষমতায় থাকুক আমাদের এখানে সম্পদ বাড়াই স্বাভাবিকতার পরিচয়। এটাই যেন এখানের নিয়ম। অন্তত সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক তো তা-ই বলেছেন। সরকারে থাকলে সম্পদ বাড়বেই। কিন্তু সংবিধান তো বলে ভিন্ন কথা। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আটটি সাংবিধানিক পদধারী ব্যক্তিরা বেতন-ভাতার বাইরে অন্য সব আয়ের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। তাদের বেতন-ভাতা সংসদের আইন দ্বারা নির্ধারিত। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার পরও আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের এত আয় বৃদ্ধি কোন আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বা কোন কৌশলে তা বোধগম্য নয়।
এক-দু’জনের বিস্তারিত বর্ণনায় এটি আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে। সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের ৫ বছর আগে সম্পদ ছিল সাকুল্যে ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ৫ বছরে তা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৩ লাখ টাকায়। আগে বার্ষিক আয় ছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সেটা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এই ৫ বছরে মন্ত্রিত্বকালে সম্পদ বেড়েছে ১০৭ গুণ। আরও বিস্ময়কর সম্পদ বিবরণী দেখা গেছে সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমানের হলফনামায়। ৫ বছরে তার ব্যাংকে টাকা বেড়েছে ৫৮৫ গুণ, জমি বেড়েছে ২৪৩ গুণ, বার্ষিক আয় বেড়েছে ৭৯ গুণ। ৫ বছর আগে যেখানে কৃষিজমি ছিল ২০ একর সেখানে ৫ বছর পর তা বেড়ে হয়েছে ২৮৬৫ একর অর্থাৎ ৫ বছরে বেড়েছে ২৮৪৫ একর। সম্পদ বিবরণীর অস্বাভাবিকতা যৌক্তিক করতে অনেকেই বেছে নিয়েছেন মৎস্যখাতকে। অথচ আমাদের দাপুটে এই রাজনীতিকরা ৫ বছর আগে কোনভাবেই মৎস্য ব্যবসায়ে যুক্ত না থাকলেও কাগজে কলমে মাছ ব্যবসায়ের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় দেখিয়েছেন। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বিপুল পরিমাণ সম্পদ বিবরণী প্রকাশের পরপরই তা কিভাবে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেয়া যায় তার চেষ্টা হয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা রাজনীতিকদের চরিত্র হননের জন্যই পত্র-পত্রিকা প্রকাশ করছে বলে উল্টো মিডিয়াকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। সরকারি দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পদ বিবরণী অল্পই উল্লেখ করে বলেছেন,
৬ কোটি নয় চাইলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৬০০ কোটি টাকার মালিক হতে পারতাম।
যে দলই ক্ষমতায় থাকুক আমাদের এখানে সম্পদ বাড়াই স্বাভাবিকতার পরিচয়। এটাই যেন এখানের নিয়ম। অন্তত সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক তো তা-ই বলেছেন। সরকারে থাকলে সম্পদ বাড়বেই। কিন্তু সংবিধান তো বলে ভিন্ন কথা। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আটটি সাংবিধানিক পদধারী ব্যক্তিরা বেতন-ভাতার বাইরে অন্য সব আয়ের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। তাদের বেতন-ভাতা সংসদের আইন দ্বারা নির্ধারিত। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার পরও আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের এত আয় বৃদ্ধি কোন আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বা কোন কৌশলে তা বোধগম্য নয়।
No comments