এই দিন দিন নয়, আরও দিন আছে...
৫ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন এবং সম্প্রতি কয়েকটি ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু তাতে কী? এসব প্রতিবেদন ও সমালোচনায় আওয়ামী লীগের কী এসে যায়! তারা তো কৌশল ও শক্তি প্রয়োগ করে তাদের লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছে। বাংলাদেশে মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকদের সমালোচনায় রাজনৈতিক দলের বা সরকারের কিছু যায়-আসে না। দল ও সরকার জানে যে এসব সমালোচনা দুই বা তিন মাস থাকবে। তারপর নতুন ইস্যু আসবে। নতুন সমালোচনা শুরু হবে। ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে ‘নির্বাচিত’ এমপি বা মন্ত্রীদের কথা বলতে বা কাজ করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে? ১৫৩ জন সাংসদ যে জনগণের ভোট পেয়ে আসেননি, তাতে জাতীয় সংসদে গলাবাজি করতে সংকোচ হচ্ছে তাঁদের? বর্তমান জাতীয় সংসদের কয়েকজন সাংসদ সংসদকক্ষকে আওয়ামী লীগের ‘সভাকক্ষ’ বানিয়ে ছেড়েছে। জাতীয় সংসদ অধিবেশন তাঁদের কাছে বিরোধী দল ও নেতাদের বিরুদ্ধে খিস্তিখেউড়ের জায়গা। আইন প্রণয়নের জন্য বিতর্ক সভা নয়। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের উদ্দেশে শুধু একটা কথা বলি: প্রয়াত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের সেই কথাটি অফিসের টেবিলে লিখে রাখুন। ‘এই দিন দিন নয়, আরও দিন আছে।’ আমাদের ধারণা, বিএনপির কোনো টিম আওয়ামী লীগের সরকারের সব কাণ্ডকীর্তি লিপিবদ্ধ করছে। বিচারব্যবস্থা থেকে শুরু করে বালুভর্তি দুই ট্রাকের পাহারা, মামলা আর মামলা, পুলিশ দিয়ে অফিস ঘেরাও, জামিন নামঞ্জুর, কারা নির্যাতন, সম্ভব হলে সংবিধান সংশোধন ও আরও বহু কীর্তি। অনুমান করি, আওয়ামী লীগের সরকারের নির্দেশিত দমন-পীড়নের সব রকম পথই বিএনপি অনুসরণ করতে চেষ্টার ত্রুটি করবে না। অবশ্য যদি কোনো দিন বিএনপি নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে, তবে বিএনপির সেই নেতৃত্ব যদি ক্ষমাশীল হয়, তাহলে ভিন্ন কথা। যদি প্রতিশোধপরায়ণ হয়, তাহলে সেই দিনের কথা কল্পনা করলে শিউরে উঠতে হয়।
আমরা প্রার্থনা করব, নির্বাচিত বিএনপির নেতৃত্ব যেন ক্ষমাশীল হয়। আওয়ামী লীগের সরকার যে এত দমন-নিপীড়ন করছে, তার পেছনে তাদের একটা প্রচণ্ড মনোবল রয়েছে। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগকে কেউ আর কোনো দিন নির্বাচনে পরাজিত করতে পারবে না।’ হয়তো নির্বাচনে জেতার সব কৌশল আওয়ামী লীগ রপ্ত করে ফেলেছে। এমনও হতে পারে, সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা দেখা দিলে দেশে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হতে পারে, যাতে বিজয়ী দল ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারবে না। সেই ব্যবস্থাও হয়তো আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব করে রেখেছেন। সে রকম কিছু আলামত মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে পাওয়া যায়। ইতিহাস ইতিহাসের মতোই এগোবে। এ ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করা আমাদের কারও পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু এটুকু আবার বলব: ‘এই দিন দিন নয়, আরও দিন আছে।’ এই কথা যদি বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে, তাহলে তাদের দমন-নিপীড়নের মাত্রা কমে আসতে পারে বলে মনে হয়। আওয়ামী লীগের কিছু নেতা হয়তো বিদেশে চলে যেতে পারবেন। সবাই তো আর পারবেন না। এত হম্বিতম্বি করে কী লাভ? আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব দল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সহিষ্ণুতা ও পরস্পরের প্রতি আস্থার মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনা করলে সারা জীবন সবাই সম্মানের সঙ্গে রাজনীতি করতে পারবেন। সব দলই যেন মনে রাখে, সরকার পরিবর্তনশীল। বিদেশি শক্তির ওপর ভরসা করে টিকে থাকতে চাইলে তা সব সময় সম্ভব হয় না। বিএনপিও একদিন হাওয়া ভবনের দাপটে নিজেদের চিরস্থায়ী ভেবেছিল। বাস্তবে তা ঘটেনি। আজ দুই পুত্রকে নির্বাসিত জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি যে হবে না তা কে বলতে পারে!
দুই বিএনপিসহ সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী অন্যান্য বিরোধী দল এখনো সরকারের কাছে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচনের জন্য আলোচনার আহ্বান জানায়নি। আমার এই কলামে আগেও লিখেছিলাম, বিরোধী দলগুলোকে এ ব্যাপারে আলোচনার প্রস্তাব দিতে হবে। আমাদের ধারণা, সরকার এই আলোচনার প্রস্তাব দেবে না। দেশে একটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক অবস্থা সৃষ্টির জন্য একটি গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই। কাজেই বিরোধী দলগুলোকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। সংবাদপত্র সূত্রে জানতে পেরেছি, ‘রোজার পর বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়।’ বিএনপির উদ্দেশে আমরা আবার বলতে চাই: আপনারা নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিন। আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করুন। আলোচনা ব্যর্থ হলে আন্দোলনের কথা ভাববেন। আগে নয়।
তিন উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, সহিংসতা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ইত্যাদির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে। উপজেলা নির্বাচনের ঘটনাবলি প্রমাণ করেছে, সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে খুব ভুল করেনি। তারা আগেই বুঝতে পেরেছিল আওয়ামী লীগের নীলনকশা। উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একটি আসনও না পেলে সরকার পরিচালনায় কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি হতো না। এ রকম উপজেলা নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ এমন ভোট কারচুপি করতে পারলে, সরকার বদলের জন্য সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের নতজানু প্রশাসন কী কাণ্ড করত, তা এখন কিছুটা কল্পনা করা যায়। মনে হয়, সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে ১০টা আসনেও জিততে দেওয়া হতো না। ৫ জানুয়ারির আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই গর্ব করে বলতেন: ‘তাঁর শাসনামলে পাঁচ হাজার স্থানীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’ কথাটা সত্যি। কিন্তু সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী আর এ কথা বলতে পারবেন? এখন কি বিএনপির আগের অভিযোগটিই ঠিক প্রমাণিত হলো না? দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপির পক্ষে সংসদ নির্বাচনে যাওয়া কি আর সম্ভব? যাওয়া উচিত? আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকার উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি করে নিজেরাই সেই পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে একেবারে প্রায় শূন্যের ঘরে নামিয়ে এনেছে ‘নির্বাচন কমিশনের’ বিশ্বাসযোগ্যতা। আওয়ামী লীগ ও সরকার বেশি চালাকি করতে গিয়ে নির্বাচন ব্যাপারটিই তামাশায় পরিণত করেছে। এর মূল্য নিশ্চয় আওয়ামী লীগকে একদিন দিতে হবে। ‘আজিজ মার্কা নির্বাচন’ করে বিএনপিকেও একদিন মূল্য দিতে হয়েছিল। ‘অতি চালাকের গলায় দড়ি’—কথাটির নিশ্চয় একটা অর্থ আছে।
দুই বিএনপিসহ সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী অন্যান্য বিরোধী দল এখনো সরকারের কাছে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচনের জন্য আলোচনার আহ্বান জানায়নি। আমার এই কলামে আগেও লিখেছিলাম, বিরোধী দলগুলোকে এ ব্যাপারে আলোচনার প্রস্তাব দিতে হবে। আমাদের ধারণা, সরকার এই আলোচনার প্রস্তাব দেবে না। দেশে একটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক অবস্থা সৃষ্টির জন্য একটি গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই। কাজেই বিরোধী দলগুলোকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। সংবাদপত্র সূত্রে জানতে পেরেছি, ‘রোজার পর বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়।’ বিএনপির উদ্দেশে আমরা আবার বলতে চাই: আপনারা নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিন। আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করুন। আলোচনা ব্যর্থ হলে আন্দোলনের কথা ভাববেন। আগে নয়।
তিন উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, সহিংসতা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ইত্যাদির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে। উপজেলা নির্বাচনের ঘটনাবলি প্রমাণ করেছে, সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে খুব ভুল করেনি। তারা আগেই বুঝতে পেরেছিল আওয়ামী লীগের নীলনকশা। উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একটি আসনও না পেলে সরকার পরিচালনায় কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি হতো না। এ রকম উপজেলা নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ এমন ভোট কারচুপি করতে পারলে, সরকার বদলের জন্য সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের নতজানু প্রশাসন কী কাণ্ড করত, তা এখন কিছুটা কল্পনা করা যায়। মনে হয়, সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে ১০টা আসনেও জিততে দেওয়া হতো না। ৫ জানুয়ারির আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই গর্ব করে বলতেন: ‘তাঁর শাসনামলে পাঁচ হাজার স্থানীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’ কথাটা সত্যি। কিন্তু সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী আর এ কথা বলতে পারবেন? এখন কি বিএনপির আগের অভিযোগটিই ঠিক প্রমাণিত হলো না? দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপির পক্ষে সংসদ নির্বাচনে যাওয়া কি আর সম্ভব? যাওয়া উচিত? আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকার উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি করে নিজেরাই সেই পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে একেবারে প্রায় শূন্যের ঘরে নামিয়ে এনেছে ‘নির্বাচন কমিশনের’ বিশ্বাসযোগ্যতা। আওয়ামী লীগ ও সরকার বেশি চালাকি করতে গিয়ে নির্বাচন ব্যাপারটিই তামাশায় পরিণত করেছে। এর মূল্য নিশ্চয় আওয়ামী লীগকে একদিন দিতে হবে। ‘আজিজ মার্কা নির্বাচন’ করে বিএনপিকেও একদিন মূল্য দিতে হয়েছিল। ‘অতি চালাকের গলায় দড়ি’—কথাটির নিশ্চয় একটা অর্থ আছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ বা প্রশাসন উপজেলায় ভোট ডাকাতি করেনি। যা হয়েছে তা করেছে বিএনপি ও জামায়াত।’ অনুমান করি, প্রধানমন্ত্রী তাঁর কোনো বিশ্বস্ত এজেন্সি থেকে ‘সঠিক খবর’ পেয়ে এমন মন্তব্য করেছেন। এই উক্তির মধ্য দিয়ে তিনি পরোক্ষভাবে ‘একাত্তর টিভি’, ‘এটিএন নিউজ’, ‘সময় টিভি’, ‘ইনডিপেনডেন্ট টিভি, ‘এটিএন বাংলা’সহ প্রায় সব টিভি চ্যানেল এবং প্রায় সব সংবাদপত্রকে ভুল ও বিকৃত রিপোর্ট প্রচারের জন্য দায়ী করেছেন। ‘বিএনপি ও জামায়াত’ উপজেলায় ভোট ডাকাতি করেছে, গণমাধ্যমে কিন্তু এমন খবর প্রচারিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সব গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষ কি তাদের ‘ভুল স্বীকার’ করতে প্রস্তুত রয়েছে? কোনটা ঠিক? গণমাধ্যমের রিপোর্ট ও ছবি? নাকি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য? এ ব্যাপারে আরও একটি কথা বলা যায়। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত যদি সন্ত্রাস ও ভোট ডাকাতি করেই থাকে, তাহলে তাদের গ্রেপ্তার করা হলো না কেন? সেই সব ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়নি কেন? নির্বাচন কমিশন বা স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল না কেন? বিএনপি ও জামায়াতের যেসব নেতা ভোট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সেই সব কেন্দ্রে আবার ভোট হোক। আশা করি প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন।
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর: উন্নয়ন ও মিডিয়াকর্মী।
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর: উন্নয়ন ও মিডিয়াকর্মী।
No comments