জনগণই সব দুরভিসন্ধি ব্যর্থ করে দেয় by মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন
গণতান্ত্রিক পরিবেশে ও সাংবিধানিক নিয়মে
জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। পাঁচ বছর পার হলে এ
সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার থাকবে না। এ নিয়মের ব্যত্যয় হলে মনে
হবে, নির্বাচন ও জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা চলছে।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যেও এর আভাস পাওয়া গেছে। তিনি
বলেছেন, আমার কাছে খবর আছে আগামীতে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় যাবে। এটা
অনভিজ্ঞ, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত একটি মন্তব্য। আগামীতে কে বা কোন দল
ক্ষমতায় যাবে, এটি নির্ধারণ করবে জনগণ ভোটের মাধ্যমে। এ খবর আগেই কোনো
ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে থাকার কথা নয় এবং থাকার প্রশ্নই আসে না। এ খবর জয়
আগেই কিভাবে পেলেন তা নিয়ে জনগণ, রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বত্রই তোলপাড় চলছে।
এটি কোনো গণতন্ত্রের ভাষা নয় বলে মানুষ বলাবলি করছে। তার এ কথায় জনগণ কষ্ট
পেয়েছে; ক্ষুব্ধ হয়েছে। ক্ষুব্ধ জনগণ রাজপথে নেমে এলে গণবিস্ফোরণের
সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কাজেই নির্বাচন ও জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে কোনো
টালবাহানা না করে সরকার যথাসময়ে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের
ব্যবস্থা করবে। এটিই সবার প্রত্যাশা। তা না করে সরকার যদি একতরফা কোনো
নির্বাচনের পথে হাঁটে অথবা পঞ্চদশ সংশোধনীর সুযোগ নিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের
প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে, তাহলে তা ক্ষমতাসীনদের জন্য বুমেরাং হতে বাধ্য।
এ ধরনের কোনো দুরভিসন্ধি ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য জনগণ প্রস্তুত। এর জন্য
কোনো রাজনৈতিক শক্তি বা আন্দোলনের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কারণ
বর্তমানে গণমাধ্যম ও জনগণের সম্মিলিত শক্তি যে কোনো রাজনৈতিক শক্তির চেয়ে
বেশি শক্তিশালী। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তার উদাহরণ। সেখানে জনগণ ও
গণমাধ্যমের শক্তিই পালন করেছে নিয়ামকের ভূমিকা। এই দুই শক্তি ব্যর্থ করে
দিয়েছে নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর সব মেশিনারি। সুতরাং ভোটারবিহীন একতরফা
কোনো নির্বাচন বা সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার দিন শেষÑ
এই বাস্তবতা ক্ষমতাসীন দল যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবে, তত তাদের সর্বনাশের
সম্ভাবনা কমে আসবে।
কিছুদিন আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করে সরকার দেশ-বিদেশে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। ওই নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণ যাকে ভোট দিয়েছেন, তিনিই নির্বাচিত হয়েছেন। এটিই গণতান্ত্রিক নিয়ম। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে এ নিয়মের ধারাবাহিতা বজায় রাখা অপরিহার্য। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, রাষ্ট্রের ভিত্তিও জনগণ। জনগণ যাকে খুশি ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। তাদের রায় নিয়ে আগেভাগেই মন্তব্য করা সমীচীন নয়। যারা রাজনীতি করেন বা করার ইচ্ছা রাখেনÑ এ সত্যটি তাদের স্মরণে থাকা অনস্বীকার্য। সরকারদলীয় নেতারা কথায় কথায় যে অসাংবিধানিক সরকারের হুমকি দেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতায় তার সম্ভাবনা কতটুকু? এক-এগারোর নায়কদের বর্তমান অবস্থা সবার জানা। তাদের দুরবস্থা দেখে মনে তো হয় না কোনো অসাংবিধানিক শক্তি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে।
তবে দেশ বর্তমানে ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় সময় অতিত্র“ম করছে। শুধু ক্ষমতার লড়াই নয়, এই সংকটের তাৎপর্য আরও গভীরে প্রথিত। বাংলাদেশ একটি উদার গণতান্ত্রিক মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিকÑ এটি যারা চায় না, তারা বাংলাদেশকে নিয়ে বিপজ্জনক খেলা খেলছে। এ খেলার শেষ কোথায়, তা কেউ জানে না। বাংলাদেশকে কুক্ষিগত করা এবং বিদেশী শক্তির কর্তৃত্ব কায়েম করাই এ খেলার উদ্দেশ্য হতে পারে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন।
বর্তমানে দেশে যে সংকট চলছে, তা গত তিন বছর আগেও ছিল না। সমস্যাগুলো সুকৌশলে সৃষ্টি করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের মধ্য দিয়ে মূলত সংকটের আবির্ভাব। সরকার একতরফা আদালতের ওপর দায় চাপিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে। দেশে বর্তমানে যে অবস্থা তাতে আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মত দিয়েছেন উচ্চ আদালত। কিন্তু সরকার আদালতের এ মতকে কোনো গুরুত্ব দেয়নি; আর তাতেই সংকটের সূত্রপাত। এ সংকট এখন প্রান্তসীমায় এসে পৌঁছেছে। ফলে দেশ এক অস্থির-অশান্ত সময় অতিত্র“ম করছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য দেশের ১৬ কোটি মানুষ আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছেন। সংকট উত্তরণের প্রধান উপায় হল সংকটের অস্তিত্ব স্বীকার করা, সামনের নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে দেশের রাজনীতি একটা ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। এই সংকট সংঘাতে রূপ নিচ্ছে। ঘটছে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। প্রতিটি ঘটনাতেই অযাচিতভাবে শক্তি প্রয়োগ করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইন-শৃংখলা বাহিনী ও জনগণকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করানো হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পরিস্থিতি এমন একটা অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, মিছিল দেখলেই পুলিশ গুলি চালাচ্ছে। গত কয়েক মাসে পুলিশের গুলিতে প্রায় দুশ নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে হাজার হাজার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনও ঘটেনি। অপরিণামদর্শী রাজনীতির কারণে জাতি আজ সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত। এই বিভক্তি ধীরে ধীরে চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে, সূত্রপাত হচ্ছে সংঘাত-সংঘর্ষের। ঘরে ঘরে ভাইয়ে ভাইয়ে তৈরি হচ্ছে বিরোধ। একে অপরের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। ধ্বংস করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। দিন যত যাচ্ছে, এটা বেড়েই চলেছে। সব সামাজিক শক্তি এখন মুখোমুখি। একে অপরকে ধ্বংস করতে ভেতরে ভেতরে সবাই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হয়। নির্বাচন ও ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া দুঃখজনক।
অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচার বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার। এটি রাজনৈতিক ট্রাম্পকার্ড বা নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের দরকষাকষির মাধ্যম হতে পারে না। এমনটি হলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের মূল চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটি নিয়ে রাজনৈতিক খেলা মানুষ মেনে নেবে না। এ নিয়ে রাজনীতি করলে দেশ ভয়াবহ সংকটে নিপতিত হবে। আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আর নির্বাচন অনিশ্চিত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ। সবার স্বার্থে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অপরিহার্য। আর এটি অব্যাহত রাখার বিষয়টি এখন সর্বতোভাবে সরকারের ওপরই নির্ভর করছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি দেশও এক অনিবার্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে। এ ব্যাপারে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে দেশ অন্ধকার সুড়ঙ্গের দিকে ধাবিত হবে। রাজনীতিকদের এ বোধোদয় যত তাড়াতাড়ি হয়, ততই তাদের ও দেশের মঙ্গল।
প্রধানমন্ত্রী বলছেন, অসাংবিধানিক সরকার এলে দেশে আগামী ১০ বছরেও কোনো নির্বাচন হবে না। এমনটিই যদি হয়, তাহলে সে পথ বন্ধ করতে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেনÑ এ প্রশ্ন দেশবাসীর। কেননা অসাংবিধানিক সরকার জনগণের অমঙ্গল ডেকে আনে। জনগণ ভোট দিয়ে কাউকে ক্ষমতায় বসায় তাদের ভালো-মন্দ দেখভাল করার জন্য। জনগণের অমঙ্গল হয় এমন কিছু দেশে ঘটার আশংকা দেখা দিলে তা রোধ করা জনগণের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নৈতিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব রাজনীতিকরা পালন না করলে জনগণ তাদের স্বার্থে সে দায়িত্ব নিজেই হাতে তুলে নেয়। তারা আপন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে দেশ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে কোনো দুরভিসন্ধি ব্যর্থ করে দেয়।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
কিছুদিন আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করে সরকার দেশ-বিদেশে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। ওই নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণ যাকে ভোট দিয়েছেন, তিনিই নির্বাচিত হয়েছেন। এটিই গণতান্ত্রিক নিয়ম। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে এ নিয়মের ধারাবাহিতা বজায় রাখা অপরিহার্য। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, রাষ্ট্রের ভিত্তিও জনগণ। জনগণ যাকে খুশি ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। তাদের রায় নিয়ে আগেভাগেই মন্তব্য করা সমীচীন নয়। যারা রাজনীতি করেন বা করার ইচ্ছা রাখেনÑ এ সত্যটি তাদের স্মরণে থাকা অনস্বীকার্য। সরকারদলীয় নেতারা কথায় কথায় যে অসাংবিধানিক সরকারের হুমকি দেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতায় তার সম্ভাবনা কতটুকু? এক-এগারোর নায়কদের বর্তমান অবস্থা সবার জানা। তাদের দুরবস্থা দেখে মনে তো হয় না কোনো অসাংবিধানিক শক্তি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে।
তবে দেশ বর্তমানে ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় সময় অতিত্র“ম করছে। শুধু ক্ষমতার লড়াই নয়, এই সংকটের তাৎপর্য আরও গভীরে প্রথিত। বাংলাদেশ একটি উদার গণতান্ত্রিক মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিকÑ এটি যারা চায় না, তারা বাংলাদেশকে নিয়ে বিপজ্জনক খেলা খেলছে। এ খেলার শেষ কোথায়, তা কেউ জানে না। বাংলাদেশকে কুক্ষিগত করা এবং বিদেশী শক্তির কর্তৃত্ব কায়েম করাই এ খেলার উদ্দেশ্য হতে পারে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন।
বর্তমানে দেশে যে সংকট চলছে, তা গত তিন বছর আগেও ছিল না। সমস্যাগুলো সুকৌশলে সৃষ্টি করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের মধ্য দিয়ে মূলত সংকটের আবির্ভাব। সরকার একতরফা আদালতের ওপর দায় চাপিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে। দেশে বর্তমানে যে অবস্থা তাতে আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মত দিয়েছেন উচ্চ আদালত। কিন্তু সরকার আদালতের এ মতকে কোনো গুরুত্ব দেয়নি; আর তাতেই সংকটের সূত্রপাত। এ সংকট এখন প্রান্তসীমায় এসে পৌঁছেছে। ফলে দেশ এক অস্থির-অশান্ত সময় অতিত্র“ম করছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য দেশের ১৬ কোটি মানুষ আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছেন। সংকট উত্তরণের প্রধান উপায় হল সংকটের অস্তিত্ব স্বীকার করা, সামনের নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে দেশের রাজনীতি একটা ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। এই সংকট সংঘাতে রূপ নিচ্ছে। ঘটছে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। প্রতিটি ঘটনাতেই অযাচিতভাবে শক্তি প্রয়োগ করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইন-শৃংখলা বাহিনী ও জনগণকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করানো হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পরিস্থিতি এমন একটা অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, মিছিল দেখলেই পুলিশ গুলি চালাচ্ছে। গত কয়েক মাসে পুলিশের গুলিতে প্রায় দুশ নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে হাজার হাজার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনও ঘটেনি। অপরিণামদর্শী রাজনীতির কারণে জাতি আজ সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত। এই বিভক্তি ধীরে ধীরে চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে, সূত্রপাত হচ্ছে সংঘাত-সংঘর্ষের। ঘরে ঘরে ভাইয়ে ভাইয়ে তৈরি হচ্ছে বিরোধ। একে অপরের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। ধ্বংস করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। দিন যত যাচ্ছে, এটা বেড়েই চলেছে। সব সামাজিক শক্তি এখন মুখোমুখি। একে অপরকে ধ্বংস করতে ভেতরে ভেতরে সবাই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হয়। নির্বাচন ও ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া দুঃখজনক।
অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচার বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার। এটি রাজনৈতিক ট্রাম্পকার্ড বা নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের দরকষাকষির মাধ্যম হতে পারে না। এমনটি হলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের মূল চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটি নিয়ে রাজনৈতিক খেলা মানুষ মেনে নেবে না। এ নিয়ে রাজনীতি করলে দেশ ভয়াবহ সংকটে নিপতিত হবে। আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আর নির্বাচন অনিশ্চিত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ। সবার স্বার্থে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অপরিহার্য। আর এটি অব্যাহত রাখার বিষয়টি এখন সর্বতোভাবে সরকারের ওপরই নির্ভর করছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি দেশও এক অনিবার্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে। এ ব্যাপারে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে দেশ অন্ধকার সুড়ঙ্গের দিকে ধাবিত হবে। রাজনীতিকদের এ বোধোদয় যত তাড়াতাড়ি হয়, ততই তাদের ও দেশের মঙ্গল।
প্রধানমন্ত্রী বলছেন, অসাংবিধানিক সরকার এলে দেশে আগামী ১০ বছরেও কোনো নির্বাচন হবে না। এমনটিই যদি হয়, তাহলে সে পথ বন্ধ করতে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেনÑ এ প্রশ্ন দেশবাসীর। কেননা অসাংবিধানিক সরকার জনগণের অমঙ্গল ডেকে আনে। জনগণ ভোট দিয়ে কাউকে ক্ষমতায় বসায় তাদের ভালো-মন্দ দেখভাল করার জন্য। জনগণের অমঙ্গল হয় এমন কিছু দেশে ঘটার আশংকা দেখা দিলে তা রোধ করা জনগণের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নৈতিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব রাজনীতিকরা পালন না করলে জনগণ তাদের স্বার্থে সে দায়িত্ব নিজেই হাতে তুলে নেয়। তারা আপন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে দেশ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে কোনো দুরভিসন্ধি ব্যর্থ করে দেয়।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
No comments