তামাক ভরছে শিশুরা, আইনের বালাই নেই আকিজ কারখানায় by সেরাজুল ইসলাম সিরাজ
শিশুশ্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও তার
প্রতি তোয়াক্কা নেই আকিজ বিড়ির। রংপুরে এই বিড়ি ফ্যাক্টরিতে সহস্রাধিক
শিশুকে দিয়ে দিনের পর দিন বিড়িতে তামাক ভরার কাজ করানো হচ্ছে। আর বিড়ির
কারখানায় কাজ করতে গিয়ে ধুমপানে আসক্ত হয়ে পড়ছে অনেক শিশুই।
আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি লিমিটেড-এ ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এই পেশায় বড়দের জন্যই রয়েছে নানা রকম বিধি
নিষেধ। সেখানে ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের ঝূঁকিপূর্ণ পেশায় খাটানো হচ্ছে।
আইএলও কনভেনশন, শিশু শ্রম আইন, বাংলাদেশ শ্রম আইন কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছে
না কোম্পানিটি।
তবে এই অনৈতিক কাজে ফাঁকি দেওয়ার জন্য চাতুরতা আশ্রয় নিয়েছে কোম্পানিটি। কর্মরত শিশুদের নামে কোন আইডি কার্ড বা নিয়োগপত্র দেয় নি। আকিজের কারখানায় দৈনিক ৪ হাজারের মতো শ্রমিক কাজ করলেও নিয়োগপত্র (আইডি নম্বর) রয়েছে মাত্র ৮৩২ জনের। যারা সকলেই পূর্ণবয়স্ক।
শিশুরা কাজ করে বাবা মা অথবা পরিচিতদের আইডি নম্বর দিয়ে। দিন শেষে তাদের কাজের হিসাব অন্যদের আইডি নম্বরে যুক্ত করা হয়। কিন্তু আলাদা রেজিস্ট্রারে হিসাব রাখা হয় মজুরি পরিশোধের জন্য। এক হাজার বিড়িতে তামাক ভরে একেক শিশু পায় মাত্র ২২ টাকা।
শ্রমিকরা জানিয়েছে, আকিজ গ্রুপ ‘শ্রম আইন ২০০৬’ মানছে না। শ্রম আইন ২০০৬ এর ৫ ধারার বলা হয়েছে “কোন মালিক নিয়োগপত্র প্রদান না করিয়া কোন শ্রমিককে নিয়োগ করিতে পারিবেন না, এবং নিয়োজিত প্রত্যেক শ্রমিককে ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদান করিতে হইবে।”
রংপুর জেলা সদর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে মিঠাপুকুর উপজেলার আবীরের পাড়া নামক স্থানে স্থাপিত আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরিতে এসব অনিয়ম চললেও প্রশাসন রয়েছে দর্শকের ভূমিকায়।
কোম্পানিটি মুনাফা লুটতে কোন আইনকেই তোয়াক্কা করছে না। মহসিন নামের একজন শ্রমিক জানান, কারখানাটিতে প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। এর মধ্যে ১ হাজার পুরুষ, আর হাজার খানেক নারী শ্রমিক। বাকী সবাই শিশু ও কিশোর।
মহসিন দাবি করেন, তার ছেলে হৃদয় (শুকুরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র) তাদের সঙ্গে কাজ করে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই বিড়িতে তামাক ভরার কাজ শুরু করে।
অনেকটা গর্বের সঙ্গেই বলতে থাকেন, “আমার ছেলে হৃদয় দিনে ১০ হাজার বিড়িতে তামাক ভরতে পারে। যা আমি নিজেও পারি না।”
নিজের এতটুকু ছেলের কাজে বেজায় খুশি মহসিন। তিনি জানান, “শিশুদের হাত বেশি চলে। যে কারণে অনেকেই ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে আনেন কাজ করার জন্য।”
তামাক ভরার কারণে তার কোন সমস্যা হয় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, “নানা রকম সমস্যা হচ্ছে। সবসময় মন মরা হয়ে থাকে ছেলেটি। কিন্তু কি করব সংসার চলেনা তাই ছেলেকে দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে।”
তিনি জানান, “ছেলেটি দিনে দিনে শুকিয়ে যাচ্ছে। মনে হয় কোন অসুখ হয়েছে। অনেকেই ডাক্তার দেখাতে বলেছে, কিন্তু টাকা অভাবে দেখাতে পারিনি।”
আবীরের পাড়ার বাসিন্দা বাবুল বাংলানিউজকে জানান, “বিড়ি ফ্যাক্টরি চালু হওয়ার পর এলাকার লোকের আয়ের পথ বেড়েছে এ কথা সত্য। তবে শিক্ষার হার কমে যাচ্ছে। অনেক শিশুই স্কুল যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।”
গরিব লোকজন দু’পয়সার রোজগারের আশায় তাদের ছেলে মেয়েদের কারখানায় পাঠাচ্ছে। তাদের সংসারে কিছুটা আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে হয়ত। কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।
শ্রম আইন ২০০৬ এর ২৮৪ ধারায় বলা হয়েছে “কোন ব্যক্তি কোন শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিযুক্ত করিলে, অথবা এই আইনের কোন বিধান লঙ্ঘন করিয়া কোন শিশু বা কিশোরকে চাকরি করার অনুমতি দিলে, তিনি পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন৷”
কিন্তু আইনে মানার কোনো বালাই নেই আকিজের কারখানায়। প্রশাসনও নিরব। অভিভাবকেরা দু’পয়সা রোজগারের আশায় আকিজ বিড়ি কারখানায় কাজ করিয়ে সন্তানদের সোনালী ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করছেন নিজের অজান্তেই।
অনেক পরিবার রয়েছে যারা বাড়িতে নিয়ে বিড়ির কাগজ মোড়ানোর কাজ করে। তারা স্বপরিবারে এই কাজ করছে। এমনকি ৫ বছরের শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না এই কাজ থেকে।
এদিকে আকিজ বিড়ির বিরুদ্ধে পুরাতন ব্যান্ডরোল বাজার থেকে সংগ্রহ করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে নকল ব্যান্ডরোল তৈরিরও।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ২৬ মার্চ আবীরের পাড়া ফ্যাক্টরিতে গেলে আকিজ গ্রুপের আস্থাভাজন ও আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি লিমিটেড’র ব্যবস্থাপক খান মজলিসকে পাওয়া যায় নি। নিরাপত্তা প্রহরী জানান, তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। ফোন নম্বর চাইলে ফোন নম্বর দেওয়া নিষেধ রয়েছে বলে জানান ওই নিরাপত্তা প্রহরী। পরে আকিজ গ্রুপের মেইল আইডি info@akijgroup.com এ কথা বলার জন্য মেইল করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায় নি।
তবে এই অনৈতিক কাজে ফাঁকি দেওয়ার জন্য চাতুরতা আশ্রয় নিয়েছে কোম্পানিটি। কর্মরত শিশুদের নামে কোন আইডি কার্ড বা নিয়োগপত্র দেয় নি। আকিজের কারখানায় দৈনিক ৪ হাজারের মতো শ্রমিক কাজ করলেও নিয়োগপত্র (আইডি নম্বর) রয়েছে মাত্র ৮৩২ জনের। যারা সকলেই পূর্ণবয়স্ক।
শিশুরা কাজ করে বাবা মা অথবা পরিচিতদের আইডি নম্বর দিয়ে। দিন শেষে তাদের কাজের হিসাব অন্যদের আইডি নম্বরে যুক্ত করা হয়। কিন্তু আলাদা রেজিস্ট্রারে হিসাব রাখা হয় মজুরি পরিশোধের জন্য। এক হাজার বিড়িতে তামাক ভরে একেক শিশু পায় মাত্র ২২ টাকা।
শ্রমিকরা জানিয়েছে, আকিজ গ্রুপ ‘শ্রম আইন ২০০৬’ মানছে না। শ্রম আইন ২০০৬ এর ৫ ধারার বলা হয়েছে “কোন মালিক নিয়োগপত্র প্রদান না করিয়া কোন শ্রমিককে নিয়োগ করিতে পারিবেন না, এবং নিয়োজিত প্রত্যেক শ্রমিককে ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদান করিতে হইবে।”
রংপুর জেলা সদর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে মিঠাপুকুর উপজেলার আবীরের পাড়া নামক স্থানে স্থাপিত আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরিতে এসব অনিয়ম চললেও প্রশাসন রয়েছে দর্শকের ভূমিকায়।
কোম্পানিটি মুনাফা লুটতে কোন আইনকেই তোয়াক্কা করছে না। মহসিন নামের একজন শ্রমিক জানান, কারখানাটিতে প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। এর মধ্যে ১ হাজার পুরুষ, আর হাজার খানেক নারী শ্রমিক। বাকী সবাই শিশু ও কিশোর।
মহসিন দাবি করেন, তার ছেলে হৃদয় (শুকুরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র) তাদের সঙ্গে কাজ করে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই বিড়িতে তামাক ভরার কাজ শুরু করে।
অনেকটা গর্বের সঙ্গেই বলতে থাকেন, “আমার ছেলে হৃদয় দিনে ১০ হাজার বিড়িতে তামাক ভরতে পারে। যা আমি নিজেও পারি না।”
নিজের এতটুকু ছেলের কাজে বেজায় খুশি মহসিন। তিনি জানান, “শিশুদের হাত বেশি চলে। যে কারণে অনেকেই ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে আনেন কাজ করার জন্য।”
তামাক ভরার কারণে তার কোন সমস্যা হয় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, “নানা রকম সমস্যা হচ্ছে। সবসময় মন মরা হয়ে থাকে ছেলেটি। কিন্তু কি করব সংসার চলেনা তাই ছেলেকে দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে।”
তিনি জানান, “ছেলেটি দিনে দিনে শুকিয়ে যাচ্ছে। মনে হয় কোন অসুখ হয়েছে। অনেকেই ডাক্তার দেখাতে বলেছে, কিন্তু টাকা অভাবে দেখাতে পারিনি।”
আবীরের পাড়ার বাসিন্দা বাবুল বাংলানিউজকে জানান, “বিড়ি ফ্যাক্টরি চালু হওয়ার পর এলাকার লোকের আয়ের পথ বেড়েছে এ কথা সত্য। তবে শিক্ষার হার কমে যাচ্ছে। অনেক শিশুই স্কুল যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।”
গরিব লোকজন দু’পয়সার রোজগারের আশায় তাদের ছেলে মেয়েদের কারখানায় পাঠাচ্ছে। তাদের সংসারে কিছুটা আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে হয়ত। কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।
শ্রম আইন ২০০৬ এর ২৮৪ ধারায় বলা হয়েছে “কোন ব্যক্তি কোন শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিযুক্ত করিলে, অথবা এই আইনের কোন বিধান লঙ্ঘন করিয়া কোন শিশু বা কিশোরকে চাকরি করার অনুমতি দিলে, তিনি পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন৷”
কিন্তু আইনে মানার কোনো বালাই নেই আকিজের কারখানায়। প্রশাসনও নিরব। অভিভাবকেরা দু’পয়সা রোজগারের আশায় আকিজ বিড়ি কারখানায় কাজ করিয়ে সন্তানদের সোনালী ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করছেন নিজের অজান্তেই।
অনেক পরিবার রয়েছে যারা বাড়িতে নিয়ে বিড়ির কাগজ মোড়ানোর কাজ করে। তারা স্বপরিবারে এই কাজ করছে। এমনকি ৫ বছরের শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না এই কাজ থেকে।
এদিকে আকিজ বিড়ির বিরুদ্ধে পুরাতন ব্যান্ডরোল বাজার থেকে সংগ্রহ করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে নকল ব্যান্ডরোল তৈরিরও।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ২৬ মার্চ আবীরের পাড়া ফ্যাক্টরিতে গেলে আকিজ গ্রুপের আস্থাভাজন ও আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি লিমিটেড’র ব্যবস্থাপক খান মজলিসকে পাওয়া যায় নি। নিরাপত্তা প্রহরী জানান, তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। ফোন নম্বর চাইলে ফোন নম্বর দেওয়া নিষেধ রয়েছে বলে জানান ওই নিরাপত্তা প্রহরী। পরে আকিজ গ্রুপের মেইল আইডি info@akijgroup.com এ কথা বলার জন্য মেইল করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায় নি।
No comments