বাংলানিউজকে ড. কামাল হোসেনঃ দুই দল ও নেত্রী থেকে দৃষ্টি সরাতে হবে
অর্থবহ পরিবর্তনের জন্য ‘দুই দল, দুই দল’ বলা বন্ধ করতে হবে। দুই দলকে দিয়ে
কিছু হবে না। জনগণকেই ক্ষমতার মালিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুই দল ও
নেত্রী থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এনে দিনবদল ঘটাতে হবে। এই পরিবর্তন আনতে হলে
তরুণদের মূল ভূমিকায় আসতে হবে।
রাজনীতির হালও ধরতে হবে তরুণদেরই।
বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি, রাজনৈতিক সংকট এবং এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশের সংবিধানের প্রণেতা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে তার বাসভবনে ড. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি, রাজনৈতিক সংকট, যুদ্ধাপরাধের বিচার, শাহবাগ তরুণদের গণজাগরণ এবং দেশভাগের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতির ঘাত-প্রতিঘাত এবং অর্জন তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের চিফ অব করেসপন্ডেন্টস আহমেদ রাজু, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট আদিত্য আরাফাত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও মাজেদুল নয়ন।
ড. কামাল হোসেন: বাংলাদেশের সংবিধানের প্রণেতা হিসেবেই তাঁর অধিক পরিচিতি। দেশের রাজনীতিতে তিনি সবসময়ই সোচ্চার। জন্ম ১৯৩৭ সালের ২০ এপ্রিল। ১৯৫৭ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড থেকে জুরিসপ্রুডেন্সে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৮ সালে ব্যাচেলর অব সিভিল ল ডিগ্রি লাভ করেন। লিংকনস ইনে বার-অ্যাট-ল অর্জনের পর আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে পিএইচডি করেন ১৯৬৪ সালে। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. কামাল হোসেন জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
ড. কামাল হোসেন বলেন, বড় দুই দলকে দিয়ে কিছু হবে না। তাদের উদ্দেশ্য ক্ষমতায় গিয়ে কীভাবে জনগণের সম্পদ লুটপাট করা যায়। একদল পদ্মাসেতু, শেয়ারমার্কেট, হলমার্ক কেলেংকারী এবং দলীয় ক্যাডারদের মাধ্যমে টেন্ডারবাজি করে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে। অন্য দল হাওয়া ভবন বানিয়ে সব কিছু বিসর্জন দিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা দুই দলের কাছে জিম্মি না। দেশে ১৬ বা ১৭ কোটি মানুষ। ৯ কোটি ভোটার। এই দলগুলোর সদস্য কত হবে? কয়েক লাখ হবে। তাহলে কেন আমরা ভাবি দেশকে এদের কাছে ইজারা দিয়েছি। ইজারা মানে—হয় ইনি রাজত্ব করবেন, না হয় উনি রাজত্ব করবেন। তারা তো গণতান্ত্রিক শাসন করছে না।”
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে আগামী নির্বাচনে নতুন এক প্ল্যাটফর্মের কথা বলেছেন ড. কামাল হোসেন। নতুন প্ল্যাটফর্মে দেশকে নতুন ভাবে গড়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। জনগণকেই ক্ষমতার মালিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে দুই বড় রাজনৈতিক দল ও নেত্রী থেকে দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন ড. কামাল হোসেন।
গণজাগরণ মঞ্চকে খালেদা জিয়া নাস্তিকদের সমাবেশ বলায় যে সমালোচনা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি বলেন, “বিএনপিকে আমরা এত গুরুত্ব দিচ্ছি কেন? ২০০৮ সালে জনগণ তাদের বিচার করেছে। ওদের নিয়ে কথা বলায় মনে হচ্ছে--আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। ফরগেট অ্যাবাউট বিএনপি, এটি ডাস্টবিনে যাওয়া একটি পার্টি। জনগণ তাদের ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। ওদের নিয়ে এত কথা এবং কলাম কেন লেখা হবে।”
তিনি বলেন, “বিএনপি কি করলো, না করলো তা নিয়ে আমাদের কথা বলারও দরকার নেই। আমি বলছি, আমাদের রাজনীতি, দিনবদলের রাজনীতির কথা। এ জন্যেই কি আমরা ভোট দিয়েছিলাম। লেট আস টক অ্যাবাউট দ্যাট।”
দেশব্যাপী জামায়াত-শিবির যে তাণ্ডব চালাচ্ছে এব্যাপারে সরকারকেও দোষারোপ করেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, “সরকারি দলই জামায়াত-শিবিরকে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে সুযোগ করে দিয়েছে। বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসে সরকার অনেক অন্যায় অভিযোগকে প্রশ্রয় দিয়েছে। এখন জনগণকেই এ বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে। জনগণ সোচ্চার হচ্ছে না, কারণ সাংসদরা সোচ্চার নয়। সাংসদদের নীরবতার জন্যেই জামায়াত-শিবির এ সুযোগটা পাচ্ছে। এই অবস্থায় সাংসদদের সক্রিয় হতে হবে। যে দল ২৬৭টি আসন পেয়ে সংসদে যায়, সে দলের সাংসদরা নীরব থাকে কেন? আমি তাদের নীরবতার কথা বলছি। তাদের নীরতার কারণেই দেশে আজ এই অবস্থা চলছে।”
“আমি বলতে চাই ২৬৭ আসনের কথা। আমি নিজেও ভোট দিয়েছি। ক্যাম্পেইন করেছি। বৃষ্টির মধ্যে পদযাত্রা করেছি। আইনের লড়াই করে ভোটার লিস্ট বাতিল করে আমি নতুন ভোটার বানিয়েছি। যেখানে এক কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটার ছিল, তা ভোট বাতিল হলো। আমরা অবদান রেখেছি এ পরিবর্তন আনার জন্যে। তাই আমরা চাই জনগণের হাতে ক্ষমতা দিতে।”
ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকান ড. কামাল হোসেন। “যে রাজনীতি আমরা করেছি ৫০-এর দশকে। ৫২-এর ভাষা আন্দোলনে, ৬০-এর দশকে মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলনে। আইয়ুবকে বিদায় দিয়েছি। তারপর ৬৯, ইয়াহিয়াকে ৭০-এর ভোটে বিদায় দিয়েছি। তারা ঝাপিয়ে পড়েছিল সামরিক শক্তি নিয়ে। আমরা লড়াই করেছি। আমাদের মধ্যে যাদের প্রশিক্ষণ ছিল না, তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছি। ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধ করে ১৬ ডিসেম্বর এনেছি। সেই দেশে এ রাজনীতি কেন হবে?”
তিনি বলেন, “কাদেরকে লড়াই করতে হয়েছে? জনগণকে। তারপরও অনেক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। নূর হোসেন উল্লেখযোগ্য। তাদেরকে স্মরণ করা উচিৎ।”
গণতন্ত্র রক্ষায় গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখার কথা বলেন ড. কামাল। তিনি বলেন, “পত্রিকাগুলো খালেদা খালেদা করছে। যদিও তিনি (খালেদা) বাজে কথা বলছেন, তারপরও তো তিনি (খালেদা) পাবলিসিটি পাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “উনাদের কথা যত আমরা কম বলি তত ভালো, উনারা কোথায় কি বলছেন, রাস্তাঘাট খুলছেন। খালেদা কি করছেন, আমি বলি খালেদার সবচেয়ে বড় পিআরও হলো হাসিনা। এসবের মধ্যে আমি নাই।”
“অনেকেই শুধু দুই নেত্রীর কথা বলেন। কিন্তু আমার মুখে আমি এদের নাম নিই না। আমি আমার আবেগের কথা বলছি। আমার মুখে এই দুই নেত্রীর নাম শুনবেন না। কার নাম শুনবেন? আমি একজন নাগরিক। আপনি একজন নাগরিক। আমরা ক্ষমতার মালিক। আমরা মালিক হয়ে কেন তাদের এই সিংহাসনে বসাচ্ছি। মনে হয়, আমরা যেন সব প্রজা। এই জমিদার থেকে মুক্ত হলে, আরেক জমিদারের প্রজা হতে হবে। নাগরিক হওয়ায় যেন আমাদের ক্ষমতাও নেই, শক্তিও নই। আমাদের এ শক্তি ক্ষয় হলো কেন? গণতন্ত্র থাকলে আমরা ৯ কোটি ভোটার অসহায় কেন?”
ড. কামাল বলেন, “১৪ দল করেছি গত নির্বাচনের সময়। তখন বগুড়াতে গেলে আওয়ামী লীগের থানা সভাপতিরা আমাকে বলেছেন, কামাল ভাই, আমরা ঠিক করেছি মান্না ভাইকে নমিনেশন দেওয়ার। তিনি দুই বার ডাকসুর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। শিক্ষিত, আপনারা মিডিয়াতেও দেখছেন। কিন্তু ওকে কেন আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিল না! এমন একজনকে দিল, যার মান্নার পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনো অবস্থানই নেই। কেন দেওয়া হলো! এই হলো আমাদের রাজনীতি”, ক্ষোভ প্রকাশ করেন ড. কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, “আমরা যারা ক্ষমতার মালিক, আমাদের ক্ষমতা নিয়ে ব্যবসা হবে। আর আমরা কিন্ত, এ ব্যাপারটিকে মূল ইস্যু করি না। আজকে মূল ইস্যু কি? খালেদা কী বলেছে, হাসিনা কী বলছে? এটিই এখন মূল ইস্যু। আসরে এটি তো মূল ইস্যু না। আসল ইস্যু হচ্ছে আট মাসের মধ্যে আমাদের একটা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে আমরা দিনবদল চাই। যারা দিনবদল করতে ব্যর্থ হয়েছে--তারা মনে করছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। বাহ! বাহ! আমরা সবাই বীরশ্রেষ্ঠ! আমাদের ভোট দিয়ে যান। আমার ভয় এ কারণেই।”
রাজনীতি করতে গিয়ে নিজের মূল্যায়ন সর্ম্পকে পরিষ্কার জবাব দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘নিজের মূল্যায়ন হবে, এজন্য আমি রাজনীতি করি না। কখনও ভাবিওনি। জনগণ আমাকে ভালোবাসেন। তরুণরা আমাকে ভালোবাসেন। তরুণরা আমাকে সময় দিচ্ছেন, এই তো আপনারা সময় দিচ্ছেন। এটাই আমার মূল্যায়ন। আমি ১৫ আগস্টের পর থেকে একদিনও এমপি থাকিনি। মন্ত্রীও থাকিনি। এ নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র দুঃখ করি না। ওই ধরনের মূল্যায়ন আমার হয়নি। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর যারা পাইকারিভাবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামিকে ক্ষমা করতে বাধ্য হয়েছেন, অযোগ্য লোককে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছেন। আমি সে চেয়ারে গেলে কী করতাম!”
“রাজনীতির পচন ধরেছে। এখন পচানোর প্রতিযোগিতা চলছে। আমাদের রাজনীতি হচ্ছে—৭২’র সংবিধান, যা গণতন্ত্রের কথা বলে।”
ক্ষমতার প্রতি রাজনৈতিক নেতাদের লোভ নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যা আমরা পেয়েছি, এত লোক শহীদ হয়েছেন, মূল নেতারা আমাদের জীবন দিয়েছেন। তাজউদ্দিন কেন জীবন দিয়েছেন! তাকে বলা হয়েছে, আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান। তিনি ধিক্কার দিয়েছেন। আর এখন, প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার জন্যে সব কিছু বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইয়েস উনিও সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন, হাওয়া ভবনকে প্রশ্রয় দিয়েছেন।”
রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের প্রত্যেক নির্বাচিত সরকার কথা দিয়ে কথা রাখে না। আমাদের রাজনীতি এরশাদ পচিয়েছে। এর আগে যারা ছিল তারা পচিয়েছে। এ পচন থেকে ক্ষমতাসীন সরকারও মুক্ত হতে পারছে না। এক পচন থেকে মুক্ত হতে যাদের নির্বাচিত করছি, তারা আরো পচাচ্ছেন। পচাতে পচাতে এখন চলছে পচানোর প্রতিযোগিতা।” তাই পচানোর রাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে তিনি তরণদের আহবান জানিয়েছেন।
ড. কামাল হোসেন পচনশীল রাজনীতি থেকে মুক্ত করতে--তরুণদের এগিয়ে আসার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “সকল আন্দোলনে তরুণ সমাজকে মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা, ১১ দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তরুণরাই মূল ভূমিকা রেখেছেন।”
ছাত্ররাই এসব আন্দোলনে দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। তিনি বলেন, শাহবাগ গণজাগরণে আমি আবারও আশার আলো দেখছি। আমরা চাই না, পচা রাজনীতি দিয়ে তরুণদের এই শক্তিকে নষ্ট করা হোক।”
রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতৃত্বের বয়স নিয়ে কথা বলেছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে যত তরুণ আছে, তাদের বয়স ৪০’র নিচে, ৩৫’র নিচে। তারাই তো সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে এখন। তাই তারাই পারে জাতিকে পচনের রাজনীতি থেকে উদ্ধার করতে।
তিনি বলেন, “আমরা কেন শুধু হাসিনা-খালেদার দিকে দৃষ্টি দিয়ে রাখব? পত্রপত্রিকা শুধু তাদের দিকেই দৃষ্টি দিয়ে রাখে। দুই দলের রাহু থেকে আমরা মুক্ত হবো না, যদি মানুষ নিজের দিকে তাকিয়ে না দেখে। আমি ক্ষমতার মালিক, আমি যোগ্য লোককে সাংসদ বানাতে চাই, এটা কি অন্যায় কথা হবে। নিজের কথা ভাবতে হবে। এখন মানুষকে ভাবতে হবে--আমি যাকে ভোট দিচ্ছি, সেকি আমার কথা ভাবছে।”
ড. কামাল হোসেন বলেন, “যখনই গণজোয়ার সৃষ্টি হয়, তখন সে সুযোগটা রাজনৈতিক দলগুলো গ্রহণ করে। এই দলগুলোতে কয়জন লোক আছে। তাদের সংখ্যা কতিপয়। তাদের সংখ্যা এক পার্সেন্টও না। কিন্তু তারাই সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। আমরা ৯৯ পার্সেন্ট, যারা জনগণ। তাদের সবচেয়ে বড় হচ্ছে তরুণ।”
তিনি বলেন, “এখন আমাদের ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী লোকদের মধ্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করা দরকার। এখন অনেকে মান্নার (তার বয়স ৬০) নাম বলছেন। আমরা যদি তার ক্যারিয়ার দেখি, তার বক্তব্য দেখি। তিনি দু্ইবার ঢাকসুর ভিপি ছিলেন। হি ইজ আ গুড লিডার। নতুন নেতৃত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, যখন ওবামা প্রেসিডেন্ট হন তখন তাঁর বয়স ছিল ৪৭ বছর। ডেভিড ক্যামেরনের ছিল ৫০ এর কম যখন তিনি ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন। বঙ্গবন্ধু যখন প্রথম শিল্পমন্ত্রী হন তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৪ বছর। ৫৪ বছর বয়সে তিনি রাষ্ট্রপতি হলেন। ৩৪ বছর বয়সে আমাকে করলেন আইনমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু যখন নিহত হলেন, তখন তার বয়স ৫৫। এরই মধ্যে তিনি জাতির পিতা হলেন, দেশকে স্বাধীন করলেন। তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীনতা যুদ্ধে পুরো নেতৃত্ব দিয়ে অর্থমন্ত্রী হলেন, তখন তার বয়স ছিল ৫৪ বছর। এখন আমাদের দৃষ্টি সেখানে দেওয়া দরকার।”
“আমরা যে সমাজের কথা বলেছি, যে গণতন্ত্র এনেছি, সেটা তো এই গণতন্ত্র না।” গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, “কি অসাধারণ ছিল তার স্পিরিট। বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে মিছিল করেছিল। আমি যদি হাসিনা-খালেদার নামটা না নিয়ে নূর হোসেনকে নিয়ে প্রতিদিন একটা লেখা লিখি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সেটি হবে আরও মঙ্গলজনক। আমরা নূর হোসেন চত্বর করেছি, কিন্তু তাকে ভুলে গেছি। নূর হোসেন যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমরা কি সেই গণতন্ত্র পেয়েছি?”
বড় দলগুলোর রাজনৈতিক চর্চা সম্পর্কে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘গ্রামে গেলে দেখা যাবে, যারা ক্ষমতায় আসে, কীভাবে আসে। বড় দল কীভাবে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতি করেছিলাম। তৃণমূল থেকে বঙ্গবন্ধুর কাছে যেসব মানুষ আসত, তিনি তাদের মূল্য দিতেন। এমনও দেখেছি--কোন সিনিয়র নেতা বা বড় ব্যবসায়ী এসেছেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। তারা বসে থাকতেন। বঙ্গবন্ধু দেখতেন ইউনিয়ন থেকে কে এসেছে। তিনি কোলাকুলি করতেন। পাশে বসাতেন, বসতেন, শুনতেন তাদের কথা। তাদের সঙ্গে মিটিং-এর পর আমাদের বলতেন, ‘এলাকাটি ঘুরে আস। মানুষের কি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। আমরা যে কথা বলেছি, মানুষ কীভাবে তা গ্রহণ করছে। কোন মানুষ? পায়ে হেঁটে যারা এসেছে।’”
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু তো জনগণ থেকে হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান তো তার বাবার দোহাই দিয়ে বঙ্গবন্ধু হননি। তাজউদ্দিনও কারো পরিচয়ে হননি। এখন দেখছি মনোনয়ন প্রার্থীদের পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছোট হতে শুরু করেছে। তাঁর মেয়ের ছবি বড় হয়ে উঠছে। কারণ তিনি মনোনয়ন দিচ্ছেন। আবার মনোনয়ন দিচ্ছেন টাকার বিনিময়ে। এসব কথা বলতে হবে। তা না হলে জনগণ আরো ক্ষমতাহীন হয়ে যাবে।”
ছাত্ররাজনীতির অতীত সম্পর্কে তিনি বলেন, তখনকার ছাত্র সমাজের কাজ ছিল মানুষ কি বলছে, সেটাই বলা। সিরাজুল আলম খানের মতো যারা ছিল, তারা মানুষের কথা বলতো। টেন্ডারের কথা বলতো না। এখন যারা বলছে টাকার কথা, গাড়ির কথা তাদেরকে আমাদের ঘৃণা করা উচিৎ।”
রাজনীতিতে পালাবদল ও পরিবর্তনের ব্যাপারে তিনি বলেন, “জনগণের উচিত এখন রাজনীতিতে নতুনধারা আনা ও পরিবর্তন ঘটানো। প্রত্যেক এলাকার জনগণের পক্ষ থেকে আগে দাবি আসা উচিত--আমরা সুষ্ঠু-অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমরা পূর্বে দেখেছি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেটি আমরা আমরা চাই না। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি যে নির্বাচন হতে যাচ্ছিল সেটি আমরা চাই না।”
তাহলে কেমন নির্বাচন চাই, প্রশ্ন রাখেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আসল কথা--জনগণের কথাগুলো হেডলাইনে আসুক। জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আনতে হবে। ৫২, ৭১ থেকে আত্মবিশ্বাস আনতে হবে।”
আগামী নির্বাচনে নতুন প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগ নিচ্ছেন ড. কামাল হোসেন। আগামী নির্বাচনেই প্ল্যাটফর্ম দাঁড়াবে বলে জানান তিনি। নতুন এ প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে তিনি বলেন, “নেত্রী দু’জনেই ভাবছেন ক্ষমতায় কি ভাবে যাওয়া যায়। জনগণ তাদেরকে কীভাবে ক্ষমতায় আনবেন, সেটি নিয়ে তারা কিছুই ভাবছেন না। আমরা ভাবছি। খুব শিগগিরই আমরা মহাসমাবেশের উদ্যোগ নিচ্ছি। সেখানে এ কথাগুলোই বলবো। জনগণকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে, তারা কাকে ভোট দেবেন। আগেই ভাবতে হবে—যাকে ভোট দেবো, সে নির্বাচিত হলে আমার কি লাভ হবে।”
তিনি বলেন, সমাবেশে আমার প্রথম কথা হবে--জনগণই সকল শক্তি সেটি প্রতিষ্ঠা করা। মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি হচ্ছে জনগণকে কথা বলতে দেওয়া। নতুন প্লাটফর্মের ব্যাপারে তিনি বলেন, “এখনো আট মাস আছে, সত্যি আমরা পরিবর্তন চাই। তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে আমার একাত্মতা আছে। বড় নেত্রীরা তো কোন কথা শুনে না।”
দুই দলের সমঝোতার সমালোচনা করে তিনি বলেন “রাজনৈতিক দলগুলোতে রয়েছে অগণতান্ত্রিক মানসিকতা। ক্ষমতায় গেলে তারা অন্ধ ও স্বৈরাচার হয়ে যায়। এ কারণেই জনগণ এরশাদকে সরিয়েছে। খালেদাকে সরিয়েছে। দেশের মানুষ ধর্ম ব্যবসার নামে রাজনীতি দেখতে চায় না। তাই জনগণ জামায়াতকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে।”
রাজনৈতিক অঙ্গনে তৃতীয় শক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, “তৃতীয় শক্তি বলে কিছু নেই, যা আছে সেটি হলো জনগণ। সংবিধানে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শক্তি কিছু লেখা নেই। লেখা আছে জনগনই ক্ষমতার মালিক।” দুই শক্তির মাঝে তৃতীয় শক্তিই হচ্ছে জনগণ। জনগণই ক্ষমতা বদলায়, ক্ষমতায় বসায়।
উল্লেখ্য, গেল বছর ২১ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রাজনীতিতে নতুনধারা সৃষ্টি করতেই তারা এই ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন।
(সাক্ষাৎকারের শেষাংশ পড়ুন রোববার)
বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি, রাজনৈতিক সংকট এবং এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশের সংবিধানের প্রণেতা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে তার বাসভবনে ড. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি, রাজনৈতিক সংকট, যুদ্ধাপরাধের বিচার, শাহবাগ তরুণদের গণজাগরণ এবং দেশভাগের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতির ঘাত-প্রতিঘাত এবং অর্জন তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের চিফ অব করেসপন্ডেন্টস আহমেদ রাজু, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট আদিত্য আরাফাত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও মাজেদুল নয়ন।
ড. কামাল হোসেন: বাংলাদেশের সংবিধানের প্রণেতা হিসেবেই তাঁর অধিক পরিচিতি। দেশের রাজনীতিতে তিনি সবসময়ই সোচ্চার। জন্ম ১৯৩৭ সালের ২০ এপ্রিল। ১৯৫৭ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড থেকে জুরিসপ্রুডেন্সে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৮ সালে ব্যাচেলর অব সিভিল ল ডিগ্রি লাভ করেন। লিংকনস ইনে বার-অ্যাট-ল অর্জনের পর আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে পিএইচডি করেন ১৯৬৪ সালে। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. কামাল হোসেন জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
ড. কামাল হোসেন বলেন, বড় দুই দলকে দিয়ে কিছু হবে না। তাদের উদ্দেশ্য ক্ষমতায় গিয়ে কীভাবে জনগণের সম্পদ লুটপাট করা যায়। একদল পদ্মাসেতু, শেয়ারমার্কেট, হলমার্ক কেলেংকারী এবং দলীয় ক্যাডারদের মাধ্যমে টেন্ডারবাজি করে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে। অন্য দল হাওয়া ভবন বানিয়ে সব কিছু বিসর্জন দিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা দুই দলের কাছে জিম্মি না। দেশে ১৬ বা ১৭ কোটি মানুষ। ৯ কোটি ভোটার। এই দলগুলোর সদস্য কত হবে? কয়েক লাখ হবে। তাহলে কেন আমরা ভাবি দেশকে এদের কাছে ইজারা দিয়েছি। ইজারা মানে—হয় ইনি রাজত্ব করবেন, না হয় উনি রাজত্ব করবেন। তারা তো গণতান্ত্রিক শাসন করছে না।”
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে আগামী নির্বাচনে নতুন এক প্ল্যাটফর্মের কথা বলেছেন ড. কামাল হোসেন। নতুন প্ল্যাটফর্মে দেশকে নতুন ভাবে গড়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। জনগণকেই ক্ষমতার মালিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে দুই বড় রাজনৈতিক দল ও নেত্রী থেকে দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন ড. কামাল হোসেন।
গণজাগরণ মঞ্চকে খালেদা জিয়া নাস্তিকদের সমাবেশ বলায় যে সমালোচনা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি বলেন, “বিএনপিকে আমরা এত গুরুত্ব দিচ্ছি কেন? ২০০৮ সালে জনগণ তাদের বিচার করেছে। ওদের নিয়ে কথা বলায় মনে হচ্ছে--আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। ফরগেট অ্যাবাউট বিএনপি, এটি ডাস্টবিনে যাওয়া একটি পার্টি। জনগণ তাদের ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। ওদের নিয়ে এত কথা এবং কলাম কেন লেখা হবে।”
তিনি বলেন, “বিএনপি কি করলো, না করলো তা নিয়ে আমাদের কথা বলারও দরকার নেই। আমি বলছি, আমাদের রাজনীতি, দিনবদলের রাজনীতির কথা। এ জন্যেই কি আমরা ভোট দিয়েছিলাম। লেট আস টক অ্যাবাউট দ্যাট।”
দেশব্যাপী জামায়াত-শিবির যে তাণ্ডব চালাচ্ছে এব্যাপারে সরকারকেও দোষারোপ করেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, “সরকারি দলই জামায়াত-শিবিরকে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে সুযোগ করে দিয়েছে। বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসে সরকার অনেক অন্যায় অভিযোগকে প্রশ্রয় দিয়েছে। এখন জনগণকেই এ বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে। জনগণ সোচ্চার হচ্ছে না, কারণ সাংসদরা সোচ্চার নয়। সাংসদদের নীরবতার জন্যেই জামায়াত-শিবির এ সুযোগটা পাচ্ছে। এই অবস্থায় সাংসদদের সক্রিয় হতে হবে। যে দল ২৬৭টি আসন পেয়ে সংসদে যায়, সে দলের সাংসদরা নীরব থাকে কেন? আমি তাদের নীরবতার কথা বলছি। তাদের নীরতার কারণেই দেশে আজ এই অবস্থা চলছে।”
“আমি বলতে চাই ২৬৭ আসনের কথা। আমি নিজেও ভোট দিয়েছি। ক্যাম্পেইন করেছি। বৃষ্টির মধ্যে পদযাত্রা করেছি। আইনের লড়াই করে ভোটার লিস্ট বাতিল করে আমি নতুন ভোটার বানিয়েছি। যেখানে এক কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটার ছিল, তা ভোট বাতিল হলো। আমরা অবদান রেখেছি এ পরিবর্তন আনার জন্যে। তাই আমরা চাই জনগণের হাতে ক্ষমতা দিতে।”
ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকান ড. কামাল হোসেন। “যে রাজনীতি আমরা করেছি ৫০-এর দশকে। ৫২-এর ভাষা আন্দোলনে, ৬০-এর দশকে মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলনে। আইয়ুবকে বিদায় দিয়েছি। তারপর ৬৯, ইয়াহিয়াকে ৭০-এর ভোটে বিদায় দিয়েছি। তারা ঝাপিয়ে পড়েছিল সামরিক শক্তি নিয়ে। আমরা লড়াই করেছি। আমাদের মধ্যে যাদের প্রশিক্ষণ ছিল না, তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছি। ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধ করে ১৬ ডিসেম্বর এনেছি। সেই দেশে এ রাজনীতি কেন হবে?”
তিনি বলেন, “কাদেরকে লড়াই করতে হয়েছে? জনগণকে। তারপরও অনেক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। নূর হোসেন উল্লেখযোগ্য। তাদেরকে স্মরণ করা উচিৎ।”
গণতন্ত্র রক্ষায় গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখার কথা বলেন ড. কামাল। তিনি বলেন, “পত্রিকাগুলো খালেদা খালেদা করছে। যদিও তিনি (খালেদা) বাজে কথা বলছেন, তারপরও তো তিনি (খালেদা) পাবলিসিটি পাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “উনাদের কথা যত আমরা কম বলি তত ভালো, উনারা কোথায় কি বলছেন, রাস্তাঘাট খুলছেন। খালেদা কি করছেন, আমি বলি খালেদার সবচেয়ে বড় পিআরও হলো হাসিনা। এসবের মধ্যে আমি নাই।”
“অনেকেই শুধু দুই নেত্রীর কথা বলেন। কিন্তু আমার মুখে আমি এদের নাম নিই না। আমি আমার আবেগের কথা বলছি। আমার মুখে এই দুই নেত্রীর নাম শুনবেন না। কার নাম শুনবেন? আমি একজন নাগরিক। আপনি একজন নাগরিক। আমরা ক্ষমতার মালিক। আমরা মালিক হয়ে কেন তাদের এই সিংহাসনে বসাচ্ছি। মনে হয়, আমরা যেন সব প্রজা। এই জমিদার থেকে মুক্ত হলে, আরেক জমিদারের প্রজা হতে হবে। নাগরিক হওয়ায় যেন আমাদের ক্ষমতাও নেই, শক্তিও নই। আমাদের এ শক্তি ক্ষয় হলো কেন? গণতন্ত্র থাকলে আমরা ৯ কোটি ভোটার অসহায় কেন?”
ড. কামাল বলেন, “১৪ দল করেছি গত নির্বাচনের সময়। তখন বগুড়াতে গেলে আওয়ামী লীগের থানা সভাপতিরা আমাকে বলেছেন, কামাল ভাই, আমরা ঠিক করেছি মান্না ভাইকে নমিনেশন দেওয়ার। তিনি দুই বার ডাকসুর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। শিক্ষিত, আপনারা মিডিয়াতেও দেখছেন। কিন্তু ওকে কেন আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিল না! এমন একজনকে দিল, যার মান্নার পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনো অবস্থানই নেই। কেন দেওয়া হলো! এই হলো আমাদের রাজনীতি”, ক্ষোভ প্রকাশ করেন ড. কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, “আমরা যারা ক্ষমতার মালিক, আমাদের ক্ষমতা নিয়ে ব্যবসা হবে। আর আমরা কিন্ত, এ ব্যাপারটিকে মূল ইস্যু করি না। আজকে মূল ইস্যু কি? খালেদা কী বলেছে, হাসিনা কী বলছে? এটিই এখন মূল ইস্যু। আসরে এটি তো মূল ইস্যু না। আসল ইস্যু হচ্ছে আট মাসের মধ্যে আমাদের একটা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে আমরা দিনবদল চাই। যারা দিনবদল করতে ব্যর্থ হয়েছে--তারা মনে করছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। বাহ! বাহ! আমরা সবাই বীরশ্রেষ্ঠ! আমাদের ভোট দিয়ে যান। আমার ভয় এ কারণেই।”
রাজনীতি করতে গিয়ে নিজের মূল্যায়ন সর্ম্পকে পরিষ্কার জবাব দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘নিজের মূল্যায়ন হবে, এজন্য আমি রাজনীতি করি না। কখনও ভাবিওনি। জনগণ আমাকে ভালোবাসেন। তরুণরা আমাকে ভালোবাসেন। তরুণরা আমাকে সময় দিচ্ছেন, এই তো আপনারা সময় দিচ্ছেন। এটাই আমার মূল্যায়ন। আমি ১৫ আগস্টের পর থেকে একদিনও এমপি থাকিনি। মন্ত্রীও থাকিনি। এ নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র দুঃখ করি না। ওই ধরনের মূল্যায়ন আমার হয়নি। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর যারা পাইকারিভাবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামিকে ক্ষমা করতে বাধ্য হয়েছেন, অযোগ্য লোককে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছেন। আমি সে চেয়ারে গেলে কী করতাম!”
“রাজনীতির পচন ধরেছে। এখন পচানোর প্রতিযোগিতা চলছে। আমাদের রাজনীতি হচ্ছে—৭২’র সংবিধান, যা গণতন্ত্রের কথা বলে।”
ক্ষমতার প্রতি রাজনৈতিক নেতাদের লোভ নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যা আমরা পেয়েছি, এত লোক শহীদ হয়েছেন, মূল নেতারা আমাদের জীবন দিয়েছেন। তাজউদ্দিন কেন জীবন দিয়েছেন! তাকে বলা হয়েছে, আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান। তিনি ধিক্কার দিয়েছেন। আর এখন, প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার জন্যে সব কিছু বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইয়েস উনিও সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন, হাওয়া ভবনকে প্রশ্রয় দিয়েছেন।”
রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের প্রত্যেক নির্বাচিত সরকার কথা দিয়ে কথা রাখে না। আমাদের রাজনীতি এরশাদ পচিয়েছে। এর আগে যারা ছিল তারা পচিয়েছে। এ পচন থেকে ক্ষমতাসীন সরকারও মুক্ত হতে পারছে না। এক পচন থেকে মুক্ত হতে যাদের নির্বাচিত করছি, তারা আরো পচাচ্ছেন। পচাতে পচাতে এখন চলছে পচানোর প্রতিযোগিতা।” তাই পচানোর রাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে তিনি তরণদের আহবান জানিয়েছেন।
ড. কামাল হোসেন পচনশীল রাজনীতি থেকে মুক্ত করতে--তরুণদের এগিয়ে আসার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “সকল আন্দোলনে তরুণ সমাজকে মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা, ১১ দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তরুণরাই মূল ভূমিকা রেখেছেন।”
ছাত্ররাই এসব আন্দোলনে দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। তিনি বলেন, শাহবাগ গণজাগরণে আমি আবারও আশার আলো দেখছি। আমরা চাই না, পচা রাজনীতি দিয়ে তরুণদের এই শক্তিকে নষ্ট করা হোক।”
রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতৃত্বের বয়স নিয়ে কথা বলেছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে যত তরুণ আছে, তাদের বয়স ৪০’র নিচে, ৩৫’র নিচে। তারাই তো সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে এখন। তাই তারাই পারে জাতিকে পচনের রাজনীতি থেকে উদ্ধার করতে।
তিনি বলেন, “আমরা কেন শুধু হাসিনা-খালেদার দিকে দৃষ্টি দিয়ে রাখব? পত্রপত্রিকা শুধু তাদের দিকেই দৃষ্টি দিয়ে রাখে। দুই দলের রাহু থেকে আমরা মুক্ত হবো না, যদি মানুষ নিজের দিকে তাকিয়ে না দেখে। আমি ক্ষমতার মালিক, আমি যোগ্য লোককে সাংসদ বানাতে চাই, এটা কি অন্যায় কথা হবে। নিজের কথা ভাবতে হবে। এখন মানুষকে ভাবতে হবে--আমি যাকে ভোট দিচ্ছি, সেকি আমার কথা ভাবছে।”
ড. কামাল হোসেন বলেন, “যখনই গণজোয়ার সৃষ্টি হয়, তখন সে সুযোগটা রাজনৈতিক দলগুলো গ্রহণ করে। এই দলগুলোতে কয়জন লোক আছে। তাদের সংখ্যা কতিপয়। তাদের সংখ্যা এক পার্সেন্টও না। কিন্তু তারাই সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। আমরা ৯৯ পার্সেন্ট, যারা জনগণ। তাদের সবচেয়ে বড় হচ্ছে তরুণ।”
তিনি বলেন, “এখন আমাদের ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী লোকদের মধ্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করা দরকার। এখন অনেকে মান্নার (তার বয়স ৬০) নাম বলছেন। আমরা যদি তার ক্যারিয়ার দেখি, তার বক্তব্য দেখি। তিনি দু্ইবার ঢাকসুর ভিপি ছিলেন। হি ইজ আ গুড লিডার। নতুন নেতৃত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, যখন ওবামা প্রেসিডেন্ট হন তখন তাঁর বয়স ছিল ৪৭ বছর। ডেভিড ক্যামেরনের ছিল ৫০ এর কম যখন তিনি ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন। বঙ্গবন্ধু যখন প্রথম শিল্পমন্ত্রী হন তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৪ বছর। ৫৪ বছর বয়সে তিনি রাষ্ট্রপতি হলেন। ৩৪ বছর বয়সে আমাকে করলেন আইনমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু যখন নিহত হলেন, তখন তার বয়স ৫৫। এরই মধ্যে তিনি জাতির পিতা হলেন, দেশকে স্বাধীন করলেন। তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীনতা যুদ্ধে পুরো নেতৃত্ব দিয়ে অর্থমন্ত্রী হলেন, তখন তার বয়স ছিল ৫৪ বছর। এখন আমাদের দৃষ্টি সেখানে দেওয়া দরকার।”
“আমরা যে সমাজের কথা বলেছি, যে গণতন্ত্র এনেছি, সেটা তো এই গণতন্ত্র না।” গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, “কি অসাধারণ ছিল তার স্পিরিট। বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে মিছিল করেছিল। আমি যদি হাসিনা-খালেদার নামটা না নিয়ে নূর হোসেনকে নিয়ে প্রতিদিন একটা লেখা লিখি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সেটি হবে আরও মঙ্গলজনক। আমরা নূর হোসেন চত্বর করেছি, কিন্তু তাকে ভুলে গেছি। নূর হোসেন যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমরা কি সেই গণতন্ত্র পেয়েছি?”
বড় দলগুলোর রাজনৈতিক চর্চা সম্পর্কে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘গ্রামে গেলে দেখা যাবে, যারা ক্ষমতায় আসে, কীভাবে আসে। বড় দল কীভাবে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতি করেছিলাম। তৃণমূল থেকে বঙ্গবন্ধুর কাছে যেসব মানুষ আসত, তিনি তাদের মূল্য দিতেন। এমনও দেখেছি--কোন সিনিয়র নেতা বা বড় ব্যবসায়ী এসেছেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। তারা বসে থাকতেন। বঙ্গবন্ধু দেখতেন ইউনিয়ন থেকে কে এসেছে। তিনি কোলাকুলি করতেন। পাশে বসাতেন, বসতেন, শুনতেন তাদের কথা। তাদের সঙ্গে মিটিং-এর পর আমাদের বলতেন, ‘এলাকাটি ঘুরে আস। মানুষের কি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। আমরা যে কথা বলেছি, মানুষ কীভাবে তা গ্রহণ করছে। কোন মানুষ? পায়ে হেঁটে যারা এসেছে।’”
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু তো জনগণ থেকে হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান তো তার বাবার দোহাই দিয়ে বঙ্গবন্ধু হননি। তাজউদ্দিনও কারো পরিচয়ে হননি। এখন দেখছি মনোনয়ন প্রার্থীদের পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছোট হতে শুরু করেছে। তাঁর মেয়ের ছবি বড় হয়ে উঠছে। কারণ তিনি মনোনয়ন দিচ্ছেন। আবার মনোনয়ন দিচ্ছেন টাকার বিনিময়ে। এসব কথা বলতে হবে। তা না হলে জনগণ আরো ক্ষমতাহীন হয়ে যাবে।”
ছাত্ররাজনীতির অতীত সম্পর্কে তিনি বলেন, তখনকার ছাত্র সমাজের কাজ ছিল মানুষ কি বলছে, সেটাই বলা। সিরাজুল আলম খানের মতো যারা ছিল, তারা মানুষের কথা বলতো। টেন্ডারের কথা বলতো না। এখন যারা বলছে টাকার কথা, গাড়ির কথা তাদেরকে আমাদের ঘৃণা করা উচিৎ।”
রাজনীতিতে পালাবদল ও পরিবর্তনের ব্যাপারে তিনি বলেন, “জনগণের উচিত এখন রাজনীতিতে নতুনধারা আনা ও পরিবর্তন ঘটানো। প্রত্যেক এলাকার জনগণের পক্ষ থেকে আগে দাবি আসা উচিত--আমরা সুষ্ঠু-অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমরা পূর্বে দেখেছি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেটি আমরা আমরা চাই না। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি যে নির্বাচন হতে যাচ্ছিল সেটি আমরা চাই না।”
তাহলে কেমন নির্বাচন চাই, প্রশ্ন রাখেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আসল কথা--জনগণের কথাগুলো হেডলাইনে আসুক। জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আনতে হবে। ৫২, ৭১ থেকে আত্মবিশ্বাস আনতে হবে।”
আগামী নির্বাচনে নতুন প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগ নিচ্ছেন ড. কামাল হোসেন। আগামী নির্বাচনেই প্ল্যাটফর্ম দাঁড়াবে বলে জানান তিনি। নতুন এ প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে তিনি বলেন, “নেত্রী দু’জনেই ভাবছেন ক্ষমতায় কি ভাবে যাওয়া যায়। জনগণ তাদেরকে কীভাবে ক্ষমতায় আনবেন, সেটি নিয়ে তারা কিছুই ভাবছেন না। আমরা ভাবছি। খুব শিগগিরই আমরা মহাসমাবেশের উদ্যোগ নিচ্ছি। সেখানে এ কথাগুলোই বলবো। জনগণকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে, তারা কাকে ভোট দেবেন। আগেই ভাবতে হবে—যাকে ভোট দেবো, সে নির্বাচিত হলে আমার কি লাভ হবে।”
তিনি বলেন, সমাবেশে আমার প্রথম কথা হবে--জনগণই সকল শক্তি সেটি প্রতিষ্ঠা করা। মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি হচ্ছে জনগণকে কথা বলতে দেওয়া। নতুন প্লাটফর্মের ব্যাপারে তিনি বলেন, “এখনো আট মাস আছে, সত্যি আমরা পরিবর্তন চাই। তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে আমার একাত্মতা আছে। বড় নেত্রীরা তো কোন কথা শুনে না।”
দুই দলের সমঝোতার সমালোচনা করে তিনি বলেন “রাজনৈতিক দলগুলোতে রয়েছে অগণতান্ত্রিক মানসিকতা। ক্ষমতায় গেলে তারা অন্ধ ও স্বৈরাচার হয়ে যায়। এ কারণেই জনগণ এরশাদকে সরিয়েছে। খালেদাকে সরিয়েছে। দেশের মানুষ ধর্ম ব্যবসার নামে রাজনীতি দেখতে চায় না। তাই জনগণ জামায়াতকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে।”
রাজনৈতিক অঙ্গনে তৃতীয় শক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, “তৃতীয় শক্তি বলে কিছু নেই, যা আছে সেটি হলো জনগণ। সংবিধানে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শক্তি কিছু লেখা নেই। লেখা আছে জনগনই ক্ষমতার মালিক।” দুই শক্তির মাঝে তৃতীয় শক্তিই হচ্ছে জনগণ। জনগণই ক্ষমতা বদলায়, ক্ষমতায় বসায়।
উল্লেখ্য, গেল বছর ২১ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রাজনীতিতে নতুনধারা সৃষ্টি করতেই তারা এই ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন।
(সাক্ষাৎকারের শেষাংশ পড়ুন রোববার)
No comments