প্রণব 'মুখুজ্যে' সমীপে by হিলাল ফয়েজী
লিখি লিখি করেও চিঠিটি লেখা হলো না ভারত রাষ্ট্রটির হে প্রথম বাঙালি প্রধান। আপনার সঙ্গে বিশেষত একটি মধুর সম্পর্ক রয়েছে হে জামাইবাবু ওরফে দুলাভাই। বাংলার পশ্চিমে আপনার জন্ম হলেও ঘর যে বেঁধেছেন বাংলার পুবের এক নড়াইলকন্যাকে নিয়ে।
আমাদের সেই ভগিনীর মহাকপাল, ভারতের একদা ব্রিটিশ বড়লাটের ভবনে এখন আপনার সঙ্গে তাঁরও ঠাঁই। দেরিতে হলেও হে জামাইবাবু, হে দুলাভাই, সালাম-আদাব-নমস্কার রইল মিলিয়ন-বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন সংখ্যায়। এ কালে 'শতকোটি প্রণাম ও কদমবুছি' কথা নবপ্রজন্ম বোঝে না। এ কালে মার্কিন মুলুকে 'ট্রিলিয়ন' ডলার ধস নামে মুহূর্তে।
প্রণব মুখুজ্যে, অতি সম্প্রতি জানলাম, আপনি সেই ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা 'মহামান্য' সম্বোধনটি তুলে দিয়েছেন আপনার দিওয়ান-ই-খাস থেকে। পরিবর্তে শ্রী/শ্রীমতী/জনাব/বেগম প্রভৃতি ব্যবহার করলেই চলবে বলে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ফরমান জারি করেছেন। একান্ত প্রয়োজন না হলে রাষ্ট্রপতির সব অনুষ্ঠান রাষ্ট্রপতি ভবনের ভেতরেই সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রদান করেছেন, যেন রাষ্ট্রপতির শকট বহর নয়াদিল্লির পথে পথে জট-সংকট তৈরি না করে। প্রসংগত, মনে পড়ল আমাদের বাংলাদেশের বিগত শতাব্দীর আশির দশকীয় এক জবরদস্ত যুগপৎ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান সামরিক জেনারেলের কথা। 'স্বৈরাচারী' বললে তিনি আবার বেজায় কষ্ট পান, সংসদে হাতজোড় করে তাঁকে আর 'স্বৈরাচার' না বলার অনুরোধ করেছেন। সেই জেনারেল জবরদস্তিতে ক্ষমতা গ্রহণ করে সূচনা-চমক দিয়েছিলেন সেনা দুর্গ থেকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার সাইকেলে অফিস করে। সেই চমক যে অবশেষে কোন ঠমকে কোথা হারিয়ে গেল মিলিয়ন মিলিয়ন মুদ্রার ঝকমক লেটেস্ট মডেল ভেল্কিতে। কিন্তু ভুলেও ভাববেন না আপনার 'মহামান্য' বিতাড়নী কাজটুকুকে এরশাদীয় সাইকেল-মশকরার সঙ্গে মেলাচ্ছি।
রাইসিনা পাহাড়ে প্রণব মুখুজ্যে আপনার বর্তমান অবস্থান। ১৯১১ সালে কলকাতা থেকে রাজধানী যখন দিল্লিতে নিয়ে গেল ব্রিটিশ শাসকরা, তখন মহাপ্রতাপশালী ভারতের ইংরেজ বড়লাটের জন্য বিশেষ ভবনটি তৈরি হলো। ১৯৪৭-এর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদটুকু প্রতাপশালী হলেও রাষ্ট্রপতি পদটুকু অতিশয় হালকা প্রতাপের মহাশয়/মহাশয়াদের সাংবিধানিক অলংকার হয়ে রইল। বড়লাটের ভবনটা কিন্তু বরাদ্দ হলো ওই গুরুজন-মুরব্বি রাষ্ট্রপতির জন্যই। সেখানে সাধারণ ঘরের অতিসাধারণ এবং অসাধারণ বাঙালি হিসেবে আপনি ওখানে। আপনি 'ইউর এক্সিলেন্সি' তথা 'মহামান্য' সম্বোধনের ব্রিটিশ কেতাটি ছুড়ে ফেলে দিতে বলেছেন। ভালো লাগল। তবে সামান্য একখান কথা। পশ্চিমবঙ্গের মীরাটিতে আপনার বংশপরম্পরার বাসভবনটির নাম চ্যানেল পর্দায় দেখলাম 'মুখার্জি ভবন' হিসেবে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। বলুন তো 'মুখোপাধ্যায়' শব্দটুকু সংক্ষেপে বাঙালিরা 'মুখুজ্যে' বলত, ওটা যে 'মুখার্জি' হয়ে গেল ওই ব্রিটিশ শাসকদের স্বেচ্ছাচারী সুবিধায়। যে চট্টোপাধ্যায় বাংলায় সংক্ষেপে চাটুজ্যে, ওরা বানাল চ্যাটার্জিতে। যে বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় বাঁড়ুজ্যে, ওরা বানাল ব্যানার্জিতে। সরকারকে ওরা বানাল সিরকারে। আমাদের জমিরউদ্দিন সাবেক স্পিকার মাননীয়ও হেসে হেসে সিরকার লিখতে বনেদি আনন্দ পান। গরিবের এই লেখাটি পত্রিকায় ছাপা হলে পাঠিয়ে দেব ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আকাশের ঠিকানায় ই-মেইলে, আপনি কি ব্রিটিশ 'মুখার্জি' পরিহার করে বাঙালি 'মুখোপাধ্যায়' ব্যবহারের ফরমান জারি করবেন হে শ্রী-মহোদয়! জামাইবাবু-দুলাভাইয়ের কাছে এ আবদার তো করতেই পারি, কী বলেন!
প্রণব বাবু, আপনাকে এই চিঠিটি দেওয়ার মূল প্রয়োজন মনে করেছি এই এলাকার একটি অতীব জরুরি কারণেই। দক্ষিণ এশিয়া এই পৃথিবীতে দারিদ্র্য, কুসংস্কার আর নিরক্ষরতার এক নম্বর ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত বহুকাল ধরে। আর এই দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান মুরব্বি, গুরুজন স্বাভাবিকভাবেই আপনার ভারত। আমরা বাংলাদেশের লোকেরা আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের মহান সংগ্রামে মার্কিনি আর চীনাদের প্রবল বিরোধিতার বিপরীতে ভারতের জনগণ ও সেনাবাহিনীর বিশাল সহযোগিতার কথা এক মুহূর্তের জন্যও ভুলব না। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর সেই পরিবারের বেঁচে যাওয়া দুটি মেয়েকে ভারত রাষ্ট্র এবং বিশেষত আপনার পরিবার যে আশ্রয়-পাখা বিস্তার করেছিল, সেটিও অতুলনীয়। আজ বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত এক দুর্দান্ত উদীয়মান শক্তি, সুপার পাওয়ারের তকমা আপনাদের লাগে লাগে প্রায়। অথচ ওই ভারতেই সুপার-আন্ডার পাওয়ার মানে বিশাল দরিদ্রের এক বীভৎস জমায়েত। সেটা তো আপনাদের ভেতরের নিজস্ব সমস্যা-সংকট। কিন্তু আমাদের উদ্বেগকথা অন্যত্র।
আপনারা এই অঞ্চলের স্বীকৃত মুরব্বি। তবু বলুন, আপনাদের চারপাশে একটি দেশের জনগণও আপনাদের আন্তরিক বন্ধু কেন হতে পারছে না! পাকিস্তানের কথা বাদ দিন, চরম উগ্রতার ফাঁদে পড়ে, সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর মাতব্বরির বিপাকে ওই দেশটি কবে যে সুস্থ-প্রশান্ত হবে কে জানে! কিশোরী মালালারা সুদৃশ্য সোয়াতে কবে যে উদার-মানবিক সোয়াত গড়ে তুলতে পারবে জানি না। কিন্তু দেখুন নেপালের কথা, যেখানে অধিকাংশ মানুষ সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। আপনার রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে গোপনে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে নেপালি জনগণের মনস্তত্ত্ব জরিপ করুন, দেখবেন এক ভয়াবহ ভারতবিরোধী পরিমণ্ডল। নেপালি জাতীয়তাবাদের গভীরে ভারতবিরোধী প্রবল ঘৃণা। শ্রীলঙ্কায় সিংহলি এবং তামিল- সবাই ভারতের ওপর ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। ছোট্ট মালদ্বীপও আপনাদের প্রভাবকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে। ভুটান তো কার্যত আপনাদের ওপর নির্ভরশীল, সার্বভৌমত্ব-বিপন্নতার এক দেশখণ্ড। আর বাংলাদেশ? এক তিস্তা-টিপাইমুখ-ছিটমহল-ট্রানজিট-করিডর- সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মনস্তত্ত্ব ভারতের বিরুদ্ধে সাধারণভাবেই। এমন যদি হয়, তাহলে আপনারা কেমন মুরব্বি হলেন তা একবার রাইসিনা হিলে বসে ভাববেন কি?
আপনি তো ভারতীয় রাজনীতির বহুকালের চানক্য-কুশলী সংঘর্ষ-প্রশমন সুবিখ্যাত খেলোয়াড়। এ জন্যই বিরোধী পক্ষেও আপনার বিশাল অবস্থান। এখন ভারতের ক্ষমতা-সিঁড়ির রাষ্ট্রমুকুট আপনার শিরে। এখন তো অনেক বড় ভূমিকা নিতে পারেন। কেন আপনাদের চারপাশে সবাই আপনাদের বিরুদ্ধে বিরূপ, এর একটি সমাজতাত্তি্বক বিশ্লেষণের প্রকল্প হাতে নিন ওই রাষ্ট্রপতি ভবনে বসে। সমস্যা-সংকটের উৎপত্তি-ব্যুৎপত্তি অনুধাবন করুন এবং ছোট প্রতিবেশীর দুঃখকথা শ্রবণ করে বড় মনের পরিচয় রাখুন। আপনি যদি সফল হন, তাহলে 'মহামান্য' সম্বোধন পছন্দ না হলেও দেখবেন ইতিহাস আপনাকে 'চিরমহামান্য' বলবেই। সুপ্রিয় মুখুজ্যে জামাইবাবু, সুপ্রিয় বাঙালি দুলাভাই, নেবেন এমন একটি মহান চানক্য-চ্যালেঞ্জ!
লেখক : রম্যলেখক
প্রণব মুখুজ্যে, অতি সম্প্রতি জানলাম, আপনি সেই ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা 'মহামান্য' সম্বোধনটি তুলে দিয়েছেন আপনার দিওয়ান-ই-খাস থেকে। পরিবর্তে শ্রী/শ্রীমতী/জনাব/বেগম প্রভৃতি ব্যবহার করলেই চলবে বলে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ফরমান জারি করেছেন। একান্ত প্রয়োজন না হলে রাষ্ট্রপতির সব অনুষ্ঠান রাষ্ট্রপতি ভবনের ভেতরেই সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রদান করেছেন, যেন রাষ্ট্রপতির শকট বহর নয়াদিল্লির পথে পথে জট-সংকট তৈরি না করে। প্রসংগত, মনে পড়ল আমাদের বাংলাদেশের বিগত শতাব্দীর আশির দশকীয় এক জবরদস্ত যুগপৎ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান সামরিক জেনারেলের কথা। 'স্বৈরাচারী' বললে তিনি আবার বেজায় কষ্ট পান, সংসদে হাতজোড় করে তাঁকে আর 'স্বৈরাচার' না বলার অনুরোধ করেছেন। সেই জেনারেল জবরদস্তিতে ক্ষমতা গ্রহণ করে সূচনা-চমক দিয়েছিলেন সেনা দুর্গ থেকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার সাইকেলে অফিস করে। সেই চমক যে অবশেষে কোন ঠমকে কোথা হারিয়ে গেল মিলিয়ন মিলিয়ন মুদ্রার ঝকমক লেটেস্ট মডেল ভেল্কিতে। কিন্তু ভুলেও ভাববেন না আপনার 'মহামান্য' বিতাড়নী কাজটুকুকে এরশাদীয় সাইকেল-মশকরার সঙ্গে মেলাচ্ছি।
রাইসিনা পাহাড়ে প্রণব মুখুজ্যে আপনার বর্তমান অবস্থান। ১৯১১ সালে কলকাতা থেকে রাজধানী যখন দিল্লিতে নিয়ে গেল ব্রিটিশ শাসকরা, তখন মহাপ্রতাপশালী ভারতের ইংরেজ বড়লাটের জন্য বিশেষ ভবনটি তৈরি হলো। ১৯৪৭-এর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদটুকু প্রতাপশালী হলেও রাষ্ট্রপতি পদটুকু অতিশয় হালকা প্রতাপের মহাশয়/মহাশয়াদের সাংবিধানিক অলংকার হয়ে রইল। বড়লাটের ভবনটা কিন্তু বরাদ্দ হলো ওই গুরুজন-মুরব্বি রাষ্ট্রপতির জন্যই। সেখানে সাধারণ ঘরের অতিসাধারণ এবং অসাধারণ বাঙালি হিসেবে আপনি ওখানে। আপনি 'ইউর এক্সিলেন্সি' তথা 'মহামান্য' সম্বোধনের ব্রিটিশ কেতাটি ছুড়ে ফেলে দিতে বলেছেন। ভালো লাগল। তবে সামান্য একখান কথা। পশ্চিমবঙ্গের মীরাটিতে আপনার বংশপরম্পরার বাসভবনটির নাম চ্যানেল পর্দায় দেখলাম 'মুখার্জি ভবন' হিসেবে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। বলুন তো 'মুখোপাধ্যায়' শব্দটুকু সংক্ষেপে বাঙালিরা 'মুখুজ্যে' বলত, ওটা যে 'মুখার্জি' হয়ে গেল ওই ব্রিটিশ শাসকদের স্বেচ্ছাচারী সুবিধায়। যে চট্টোপাধ্যায় বাংলায় সংক্ষেপে চাটুজ্যে, ওরা বানাল চ্যাটার্জিতে। যে বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় বাঁড়ুজ্যে, ওরা বানাল ব্যানার্জিতে। সরকারকে ওরা বানাল সিরকারে। আমাদের জমিরউদ্দিন সাবেক স্পিকার মাননীয়ও হেসে হেসে সিরকার লিখতে বনেদি আনন্দ পান। গরিবের এই লেখাটি পত্রিকায় ছাপা হলে পাঠিয়ে দেব ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আকাশের ঠিকানায় ই-মেইলে, আপনি কি ব্রিটিশ 'মুখার্জি' পরিহার করে বাঙালি 'মুখোপাধ্যায়' ব্যবহারের ফরমান জারি করবেন হে শ্রী-মহোদয়! জামাইবাবু-দুলাভাইয়ের কাছে এ আবদার তো করতেই পারি, কী বলেন!
প্রণব বাবু, আপনাকে এই চিঠিটি দেওয়ার মূল প্রয়োজন মনে করেছি এই এলাকার একটি অতীব জরুরি কারণেই। দক্ষিণ এশিয়া এই পৃথিবীতে দারিদ্র্য, কুসংস্কার আর নিরক্ষরতার এক নম্বর ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত বহুকাল ধরে। আর এই দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান মুরব্বি, গুরুজন স্বাভাবিকভাবেই আপনার ভারত। আমরা বাংলাদেশের লোকেরা আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের মহান সংগ্রামে মার্কিনি আর চীনাদের প্রবল বিরোধিতার বিপরীতে ভারতের জনগণ ও সেনাবাহিনীর বিশাল সহযোগিতার কথা এক মুহূর্তের জন্যও ভুলব না। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর সেই পরিবারের বেঁচে যাওয়া দুটি মেয়েকে ভারত রাষ্ট্র এবং বিশেষত আপনার পরিবার যে আশ্রয়-পাখা বিস্তার করেছিল, সেটিও অতুলনীয়। আজ বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত এক দুর্দান্ত উদীয়মান শক্তি, সুপার পাওয়ারের তকমা আপনাদের লাগে লাগে প্রায়। অথচ ওই ভারতেই সুপার-আন্ডার পাওয়ার মানে বিশাল দরিদ্রের এক বীভৎস জমায়েত। সেটা তো আপনাদের ভেতরের নিজস্ব সমস্যা-সংকট। কিন্তু আমাদের উদ্বেগকথা অন্যত্র।
আপনারা এই অঞ্চলের স্বীকৃত মুরব্বি। তবু বলুন, আপনাদের চারপাশে একটি দেশের জনগণও আপনাদের আন্তরিক বন্ধু কেন হতে পারছে না! পাকিস্তানের কথা বাদ দিন, চরম উগ্রতার ফাঁদে পড়ে, সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর মাতব্বরির বিপাকে ওই দেশটি কবে যে সুস্থ-প্রশান্ত হবে কে জানে! কিশোরী মালালারা সুদৃশ্য সোয়াতে কবে যে উদার-মানবিক সোয়াত গড়ে তুলতে পারবে জানি না। কিন্তু দেখুন নেপালের কথা, যেখানে অধিকাংশ মানুষ সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। আপনার রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে গোপনে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে নেপালি জনগণের মনস্তত্ত্ব জরিপ করুন, দেখবেন এক ভয়াবহ ভারতবিরোধী পরিমণ্ডল। নেপালি জাতীয়তাবাদের গভীরে ভারতবিরোধী প্রবল ঘৃণা। শ্রীলঙ্কায় সিংহলি এবং তামিল- সবাই ভারতের ওপর ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। ছোট্ট মালদ্বীপও আপনাদের প্রভাবকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে। ভুটান তো কার্যত আপনাদের ওপর নির্ভরশীল, সার্বভৌমত্ব-বিপন্নতার এক দেশখণ্ড। আর বাংলাদেশ? এক তিস্তা-টিপাইমুখ-ছিটমহল-ট্রানজিট-করিডর- সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মনস্তত্ত্ব ভারতের বিরুদ্ধে সাধারণভাবেই। এমন যদি হয়, তাহলে আপনারা কেমন মুরব্বি হলেন তা একবার রাইসিনা হিলে বসে ভাববেন কি?
আপনি তো ভারতীয় রাজনীতির বহুকালের চানক্য-কুশলী সংঘর্ষ-প্রশমন সুবিখ্যাত খেলোয়াড়। এ জন্যই বিরোধী পক্ষেও আপনার বিশাল অবস্থান। এখন ভারতের ক্ষমতা-সিঁড়ির রাষ্ট্রমুকুট আপনার শিরে। এখন তো অনেক বড় ভূমিকা নিতে পারেন। কেন আপনাদের চারপাশে সবাই আপনাদের বিরুদ্ধে বিরূপ, এর একটি সমাজতাত্তি্বক বিশ্লেষণের প্রকল্প হাতে নিন ওই রাষ্ট্রপতি ভবনে বসে। সমস্যা-সংকটের উৎপত্তি-ব্যুৎপত্তি অনুধাবন করুন এবং ছোট প্রতিবেশীর দুঃখকথা শ্রবণ করে বড় মনের পরিচয় রাখুন। আপনি যদি সফল হন, তাহলে 'মহামান্য' সম্বোধন পছন্দ না হলেও দেখবেন ইতিহাস আপনাকে 'চিরমহামান্য' বলবেই। সুপ্রিয় মুখুজ্যে জামাইবাবু, সুপ্রিয় বাঙালি দুলাভাই, নেবেন এমন একটি মহান চানক্য-চ্যালেঞ্জ!
লেখক : রম্যলেখক
No comments