চরাচর-শহরজুড়ে অবাক পুকুর by জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ
কবিগুরুর বিখ্যাত 'দুই বিঘা জমি' কবিতার দুটি পঙ্ক্তি হচ্ছে- 'এ জগতে হায় সেই বেশী চায় আছে যার ভূরি ভূরি/রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি।' কাঙ্গালের ধন চুরি করে করে যাঁরা জমিদার বা রাজা হতেন, তাঁরাও কিন্তু কিছু ভালো কাজ করতেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল পুকুর কাটা।
টিউবওয়েল, টিপকল, পানির মোটর- এসব তো এলো সেদিন মাত্র! পানি ছাড়া যে জীবন বাঁচে না, সেই পানির তাহলে উপায় কী ছিল? বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। কিন্তু সবাই তো আর নদীর কাছাকাছি থাকে না। একটা সময় মানুষ সত্যি সত্যি পানির জন্য অনেক কষ্ট করেছে। মাইলের পর মাইল হেঁটে গিয়ে সংগ্রহ করেছে পানি। বৃষ্টির পানি মাটিতে পড়ে। এই পানি চুইয়ে চুইয়ে মাটির ভেতরে যায়। তাই গভীর গর্ত করলে আশপাশের পানি চুইয়ে এসে জমা হয় গর্তে। এর নাম কুয়া। তখন সচ্ছল পরিবারগুলোতে একটি করে কুয়া থাকত এবং তা সেই পরিবারের প্রয়োজন মেটাত।
আর বৃষ্টিবাদল বেশি দিন না হলে তো কুয়া একেবারে ঠনঠনা ঠন ঠন। অতএব প্রয়োজন হলো বৃষ্টির পানি ধরে রাখার। কিন্তু এত বড় উদ্যোগ কে নেবে? পুকুর কাটা তো চারটিখানি কথা নয়! মজার বিষয় হলো, এই পুকুরগুলোতে পানির পরিমাণ বছরজুড়ে প্রায় একই থাকে। এবং প্রতিটি পুকুরের পাড় খুব যত্ন করে রক্ষা করা হয়েছে। কি বর্ষা, কি শীত- পুকুরগুলো টইটম্বুর। পানি যেন কাক-লোচনা। কুমিল্লা শহরে যারা থাকে, তাদের মধ্যে এই হতাশা নেই যে- আহা রে পুকুরে যদি সাঁতার দিয়ে গোসল করতে পারতাম। দুপুরবেলা ঘুরতে বের হলে দেখবেন, শহুরে মানুষজন পুকুরে গোসল করছে। কি তৃপ্তির গোসল! কথিত আছে, ধর্মসাগর (অনেক বড় পুকুর বলে এই নাম) যখন কাটা হয়, তখন এতে পানি হতো না। শুষ্ক পড়ে থাকত। পরে এক পীর এসে বললেন, পুকুরের মধ্যে আমি আপনাদের নিয়ে দোয়া পড়ব। কিন্তু পানি ওঠা শুরু হলে আপনারা সরে আসতে পারবেন না। কিন্তু পানি ওঠা শুরু হলে সবাই সরে পড়ল। এই পানি উঠে শহর ডুবে যেতে থাকল, কিন্তু পীর রাগ করে আর পানি ওঠা থামালেন না। পরে রাজার অনুরোধে পীর পানি ওঠা থামালেন। এর পর থেকে ধর্মসাগর আর শুকোয়নি। কুমিল্লা শহরের পুকুরগুলো যেহেতু সব সময় জলে পূর্ণ থাকে, তাই বর্ষা শেষে শুষ্ক মেঘ দেখে এই পুকুরগুলো নিশ্চয়ই মেঘকে অপমান করে না। মেঘের সঙ্গে তাই পুকুরগুলোর নিত্য বন্ধুতা। কবিগুরুর এই কবিতাটি উল্লেখ না করলেই নয়-
জলহারা মেঘখানি বরষার শেষে/পড়ে আছে গগনের এক কোণ ঘেঁষে।/বর্ষাপূর্ণ সরোবর তারি দশা দেখে/সারাদিন ঝিকিমিকি হাসে থেকে থেকে।/কহে, ওটা লক্ষ্মীছাড়া, চালচুলাহীন,/নিজেরে নিঃশেষ করি কোথায় বিলীন।/আমি দেখো চিরকাল থাকি জলভরা,/সারবান, সুগম্ভীর, নাই নড়াচড়া।/মেঘ কহে, ওহে বাপু, কোরো না গরব,/তোমার পূর্ণতা সে তো আমারি গৌরব।
জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ
আর বৃষ্টিবাদল বেশি দিন না হলে তো কুয়া একেবারে ঠনঠনা ঠন ঠন। অতএব প্রয়োজন হলো বৃষ্টির পানি ধরে রাখার। কিন্তু এত বড় উদ্যোগ কে নেবে? পুকুর কাটা তো চারটিখানি কথা নয়! মজার বিষয় হলো, এই পুকুরগুলোতে পানির পরিমাণ বছরজুড়ে প্রায় একই থাকে। এবং প্রতিটি পুকুরের পাড় খুব যত্ন করে রক্ষা করা হয়েছে। কি বর্ষা, কি শীত- পুকুরগুলো টইটম্বুর। পানি যেন কাক-লোচনা। কুমিল্লা শহরে যারা থাকে, তাদের মধ্যে এই হতাশা নেই যে- আহা রে পুকুরে যদি সাঁতার দিয়ে গোসল করতে পারতাম। দুপুরবেলা ঘুরতে বের হলে দেখবেন, শহুরে মানুষজন পুকুরে গোসল করছে। কি তৃপ্তির গোসল! কথিত আছে, ধর্মসাগর (অনেক বড় পুকুর বলে এই নাম) যখন কাটা হয়, তখন এতে পানি হতো না। শুষ্ক পড়ে থাকত। পরে এক পীর এসে বললেন, পুকুরের মধ্যে আমি আপনাদের নিয়ে দোয়া পড়ব। কিন্তু পানি ওঠা শুরু হলে আপনারা সরে আসতে পারবেন না। কিন্তু পানি ওঠা শুরু হলে সবাই সরে পড়ল। এই পানি উঠে শহর ডুবে যেতে থাকল, কিন্তু পীর রাগ করে আর পানি ওঠা থামালেন না। পরে রাজার অনুরোধে পীর পানি ওঠা থামালেন। এর পর থেকে ধর্মসাগর আর শুকোয়নি। কুমিল্লা শহরের পুকুরগুলো যেহেতু সব সময় জলে পূর্ণ থাকে, তাই বর্ষা শেষে শুষ্ক মেঘ দেখে এই পুকুরগুলো নিশ্চয়ই মেঘকে অপমান করে না। মেঘের সঙ্গে তাই পুকুরগুলোর নিত্য বন্ধুতা। কবিগুরুর এই কবিতাটি উল্লেখ না করলেই নয়-
জলহারা মেঘখানি বরষার শেষে/পড়ে আছে গগনের এক কোণ ঘেঁষে।/বর্ষাপূর্ণ সরোবর তারি দশা দেখে/সারাদিন ঝিকিমিকি হাসে থেকে থেকে।/কহে, ওটা লক্ষ্মীছাড়া, চালচুলাহীন,/নিজেরে নিঃশেষ করি কোথায় বিলীন।/আমি দেখো চিরকাল থাকি জলভরা,/সারবান, সুগম্ভীর, নাই নড়াচড়া।/মেঘ কহে, ওহে বাপু, কোরো না গরব,/তোমার পূর্ণতা সে তো আমারি গৌরব।
জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ
No comments