অনন্য সুনীল-বাঙালির হৃদয়ে চিরঞ্জীব
বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কবি ও কথাশিল্পী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যু যেন এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্রেরই পতন। বাংলা সাহিত্যে সত্যিকার অর্থেই নক্ষত্র ছিলেন তিনি। গত সোমবার ৭৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় এই বহুমাত্রিক বরেণ্য সাহিত্যিক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নাগরিক হিসেবে ভারতীয় হলেও তিনি বাংলাদেশেরই সন্তান। ১৯৩৪ সালের সেপ্টেম্বরে অবিভক্ত বাংলার মাদারীপুরে তার জন্ম। দেশ বিভাগের ফলে পশ্চিমবঙ্গে তার জীবন ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটলেও আমৃত্যু তিনি নিবিড় সম্পর্কের বন্ধনে বাংলাদেশের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। গর্ব ছিল তার বাংলা ভাষার রাষ্ট্র স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে। ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে তার যে অবদান, তা অনন্য বললে অত্যুক্তি হবে না। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যের এক বর্ণিল অধ্যায়ের যবনিকাপাত ঘটল, যা অপূরণীয় ক্ষতি। সেই শূন্যতার কথা বলেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ দুই দেশের নেতারা, বলেছেন দুই বাংলার স্বনামখ্যাত কবি-সাহিত্যিকরাও। শোকে মুহ্যমান বাংলার সাংস্কৃতিক অঙ্গন। কারণ মাত্র তিন মাস আগেই আমরা আর এক নক্ষত্র হুমায়ূন আহমেদকে অকালে হারিয়েছি। ২৩ অক্টোবর চলে গেলেন সুনীল। একাধারে কবি, কথাশিল্পী, নাট্যকার, ভ্রমণকাহিনীর লেখক, শিশুসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক হিসেবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্টিশীলতার অননুকরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তার কবিতা বাংলা ভাষার পাঠকদের মুখে মুখে ফিরছে গত অর্ধশতাব্দীরও অধিককাল। স্বদেশ, সমাজ, নিসর্গ প্রেম আর প্রকৃতির অনুষঙ্গে জীবনের গভীর বাস্তবতাকে চিরন্তন শিল্পে উত্তীর্ণ করেছেন সুনীল তার বিচিত্র রচনায়। দুই শতাধিক গ্রন্থের লেখক এই বহুলপ্রজ কবি ও কথাসাহিত্যিক ছিলেন একই সঙ্গে ইতিহাসেরও নিবিষ্ট পাঠক ও পর্যবেক্ষক। তার 'সেই সময়', 'প্রথম আলো', 'পূর্ব-পশ্চিম' সেই ইতিহাস নিবিষ্টতারই সার্থক সাহিত্যরূপ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে একজন 'কলমবন্ধু' হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে জনমত গঠনে তিনি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন, যা শ্রদ্ধার সঙ্গে বাংলাদেশ চিরদিন স্মরণ করবে। অসাম্প্রদায়িক এই মানবতাবাদী উদার লেখক বাঙালির হৃদয়ে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন তার অনন্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে।
No comments