কোম্পানিতে প্রশাসক-নিয়ন্ত্রণমূলক আইন গ্রহণযোগ্য নয়

বিদ্যমান কোম্পানি আইন সংশোধনে সরকারের উদ্যোগের পর দেশের ব্যবসায়ী সমাজ সম্মিলিতভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনগুলো কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগে সরকারের প্রস্তাবিত আইনকে 'অগণতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক' আখ্যায়িত করে তা কার্যকর না করার দাবি জানিয়েছে।


দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখার ক্ষেত্রে এ বিধান ক্ষতিকর প্রভাব রাখবে বলে মনে করেন আইনজীবীরাও। বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিষয়ে ওয়াকিবহাল নাগরিকরাও কোম্পানি আইন সংশোধনে সরকারের উদ্যোগের পর সমালোচনায় মুখর। ব্যবসা ও বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সঙ্গত ভিত্তি রয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতেও অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো নিবর্তনমূলক আইনকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হেনস্তা করেছে। ব্যবসা ও বিনিয়োগ খাতে নানা বাধা সৃষ্টি করেছে। সেসব উদাহরণ মাথায় রেখে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কোম্পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য একতরফাভাবে অগণতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। শুধু অগণতান্ত্রিক শক্তিই নয়, গণতন্ত্রের দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সুবিধা নিয়ে অনেক সময় নির্বাচিত সরকারও বিরোধী দলের সমর্থক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। ফলে এ ধরনের আইন প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। প্রস্তাবিত বিধানটি নিয়ে ব্যবসায়ীসহ অন্য মহলগুলোর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সঙ্গত ভিত্তি রয়েছে বলে আমরা মনে করি। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুসারে, কোনো কোম্পানি পরিচালনায় গুরুতর ব্যত্যয় ঘটলে কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি আদালতের শরণাপন্ন হয়ে কোম্পানির স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে প্রশাসক নিয়োগের আবেদন জানাতে পারেন। সরকারের পক্ষ থেকেও এই আবেদন করা যেতে পারে। আদালত প্রশাসক নিয়োগের যৌক্তিক ভিত্তি খুঁজে পেলে প্রশাসক নিয়োগের নির্দেশ দিতে পারেন। আদালতই নিযুক্ত প্রশাসকের কর্মপরিধি নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু প্রস্তাবিত নতুন আইনে প্রশাসক নিয়োগের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন থাকবে না। সরকার যদি মনে করে কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে কিংবা কোম্পানি গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারণা করছে, তবে সে প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে। আর প্রশাসকের কার্যপরিধিও হবে সম্প্রসারিত। আমরা মনে করি, কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেই আদালতকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আদালতের মাধ্যমে প্রশাসক নিয়োগের বিধান থাকা সত্ত্বেও সরকার কর্তৃক সরাসরি নিয়োগের জন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ কেন, এ প্রশ্নও সঙ্গত কারণেই উঠবে। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এমন আইন ক্ষতিকর উদাহরণ সৃষ্টি করে। এমননিতেই নানা আইনি জটিলতার কারণে আমাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ খাতে বেসরকারি ও বিদেশি উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয়। প্রশাসক নিয়োগের বিধান এ ক্ষেত্রে নতুন একটি সমস্যা তৈরি করতে পারে। ফলে প্রশাসক নিয়োগের জন্য আগের আইন অনুসারে আদালতের মাধ্যমেই অগ্রসর হওয়া উচিত। ডেসটিনি বা হলমার্কের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনেক মানুষের রুটিরুজির প্রশ্ন জড়িত। প্রশাসক নিয়োগ করে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দৈনন্দিন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য সরকারের উদ্যোগ অবশ্যই যৌক্তিক। কিন্তু একটি-দুটি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, প্রতারণা দূর করতে সকল প্রতিষ্ঠানকে ভোগাতে পারে, এমন আইন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, এমন আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে ব্যবসায়ী সমাজকে দ্রুত আশ্বস্ত করা দরকার।
 

No comments

Powered by Blogger.