সবকিছু হঠাৎই সাদা-কালো
শেরেবাংলা স্টেডিয়ামমুখো নাতিপ্রশস্ত সড়কটির নাম হয়ে গেছে বিশ্বকাপ সরণি। রাস্তার চারপাশে লাল-সবুজের সজ্জা। ব্যানার-ফেস্টুনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রং। কাল মধ্যদুপুরের উষ্ণতায় এই লাল রংকে মনে হচ্ছিল বড় বেশি গাঢ়। সবুজকে মনে হচ্ছিল সর্বগ্রাসী সবুজ। এর মধ্যে বাঙালির সমস্ত চেতনার রং গিয়েছিল মিশে। লকলক করছিল জয়ের ক্ষুধা।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম বিশ্বকাপের প্রথম বলটি মাঠে গড়ানোর আগে থেকেই উৎসবপুর। কিন্তু কালকের দুপুরটা বিকেলের কোলে ঢলে পড়ার আগেই সেখানকার নাম হয়ে গেল হতাশাপুর, বেদনাপুর, লজ্জাপুর কিংবা অপমানপুর। বাংলাদেশ জিততে চেয়েছিল। ক্যালিপসো সুর থামিয়ে দিয়ে প্রবল হয়ে উঠতে চেয়েছিল এই দেশের বিজয়ের গান। কিন্তু স্টেডিয়ামটি স্তব্ধ হয়ে গেল। করুণতম কোনো রাগিণী বাজল। ম্যাচটি আরেকটি বিজয়ের বার্তা দিতে গিয়ে চরম লজ্জায় ডুবল। বাংলাদেশ তার ২৪১তম ওয়ানডেতে সর্বনিম্ন রান করে পেল সবচেয়ে বাজে পরাজয়। ১৮.৫ ওভারে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট বাংলাদেশ হারল ৯ উইকেটে। কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা আয়ু পাওয়ার কথা যে ম্যাচের, সেটি শেষ হলো ২ ঘণ্টা ১৪ মিনিটে। কোথায় রং, কোথায় সুর! চারদিকে শুধু সাদা-কালো।
ম্যাচ আসলে শেষ হয়ে গিয়েছিল কেমার রোচের বলে আশরাফুল যখন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে এলেন। স্কোর কার্ডটা তখন ৮ উইকেটে ৫৬ হয়ে বেদনার পদাবলি। আর শেষ ব্যাটসম্যান রুবেল হোসেন সুলিমান বেনের বাঁহাতি স্পিনে বোল্ড হওয়ার পর কার্যত কফিনবন্দী বাংলাদেশের ম্যাচ। গ্যালারি থেকে চার, ছয়ের প্ল্যাকার্ডগুলো উড়ে উড়ে এল ক্ষোভের পাথর হয়ে। সীমানা দড়ির কাছ ঘেঁষে থাকা হলুদ পোশাকের ‘হিমু মার্কা’ ঢুলিরা আত্মরক্ষার জন্য দৌড়ে সরে এলেন। কাগজের প্ল্যাকার্ডকেই এত ভয়! বাঁচোয়া যে, পানি কিংবা কোমল পানীয়র বোতল ঢুকতে পারেনি। ক্ষোভের প্রকাশটা স্টেডিয়ামে ততটা তীব্র ছিল না। দর্শকমনে প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রতিবর্তী ক্রিয়াই তো কাজ করতে পারেনি। এমন হার যে তাদের চোখেও একটা বিভ্রম।
প্রতিক্রিয়া হলো বাইরে। মুখে লাল-সবুজ আঁকা তরুণ-তরুণীরা হতাশায় মুহ্যমান। দক্ষিণের প্রবেশ দুয়ারে উত্তেজিত মিছিল, তাতে জ্বালাময়ী স্লোগান উঠতে থাকল বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে, ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে। জুতা-স্যান্ডেল ছড়ানো-ছিটানো। এসব কি স্লোগানের অনুষঙ্গ হয়ে হাতে উঠেছিল? ১০ নম্বর গোল চত্বর পেরিয়ে এসে রাস্তায় দেখা গেল অনেক কাচের টুকরো। বাসের ভাঙা গ্লাস। সমর্থকের হতাশার ঢিলের শিকার কাচগুলো? তবে সাকিবরা যেমন বলেন, সেই কথারও প্রমাণ পাওয়া গেল। কিশোর ভাইপোকে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন সেগুনবাগিচার তুহিন। ছয় হাজার টাকা দামের দুটি ভিআইপি টিকিট ২৫ হাজার টাকায় কিনে। হতাশা ছাপিয়ে তাঁর কণ্ঠে বাজল সাকিবদের জন্য প্রবল সমর্থনের সুর, ‘খুব হতাশ। একটা বাজে দিন গেল আমাদের। খুবই বাজে। তবু আমি বাংলাদেশ দলের পেছনে আছি। এই দলটাই আমাদের জেতায়, এরাই আবার আমাদের জেতাবে। দেখবেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা জিতব।’
চার বছরের ফুটফুটে মেয়ে সুমনা তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল, ‘বাবা, বাংলাদেশ কি হেরে গেছে?’ বিমর্ষ বাবা জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ, মা, বাংলাদেশ পচা খেলে হেরে গেছে।’ কিন্তু অবুঝ মেয়েটিকে তিনি উত্তর দিতে পারতেন, ‘২ ঘণ্টা ১৪ মিনিটে কী ভয়ানক লড়াই হলো মা যে, শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা...।’
অভিশপ্ত একটি বিকেলে সাকিবদের ‘লড়াই’টা বড় দুঃখের। বেদনায় ছেয়ে গেছে সমর্থকদের অন্তর। ক্ষোভের আগুন জ্বলেছে। কষ্টের নীল স্রোত বয়ে গেছে। তার মাঝেও বাংলাদেশ দলের পেছনে সমর্থনের মিছিল। কী বলবেন একে? আনন্দ-বেদনার কাব্য, ক্রিকেটপ্রেমের মায়াবী বিভ্রম!
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম বিশ্বকাপের প্রথম বলটি মাঠে গড়ানোর আগে থেকেই উৎসবপুর। কিন্তু কালকের দুপুরটা বিকেলের কোলে ঢলে পড়ার আগেই সেখানকার নাম হয়ে গেল হতাশাপুর, বেদনাপুর, লজ্জাপুর কিংবা অপমানপুর। বাংলাদেশ জিততে চেয়েছিল। ক্যালিপসো সুর থামিয়ে দিয়ে প্রবল হয়ে উঠতে চেয়েছিল এই দেশের বিজয়ের গান। কিন্তু স্টেডিয়ামটি স্তব্ধ হয়ে গেল। করুণতম কোনো রাগিণী বাজল। ম্যাচটি আরেকটি বিজয়ের বার্তা দিতে গিয়ে চরম লজ্জায় ডুবল। বাংলাদেশ তার ২৪১তম ওয়ানডেতে সর্বনিম্ন রান করে পেল সবচেয়ে বাজে পরাজয়। ১৮.৫ ওভারে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট বাংলাদেশ হারল ৯ উইকেটে। কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা আয়ু পাওয়ার কথা যে ম্যাচের, সেটি শেষ হলো ২ ঘণ্টা ১৪ মিনিটে। কোথায় রং, কোথায় সুর! চারদিকে শুধু সাদা-কালো।
ম্যাচ আসলে শেষ হয়ে গিয়েছিল কেমার রোচের বলে আশরাফুল যখন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে এলেন। স্কোর কার্ডটা তখন ৮ উইকেটে ৫৬ হয়ে বেদনার পদাবলি। আর শেষ ব্যাটসম্যান রুবেল হোসেন সুলিমান বেনের বাঁহাতি স্পিনে বোল্ড হওয়ার পর কার্যত কফিনবন্দী বাংলাদেশের ম্যাচ। গ্যালারি থেকে চার, ছয়ের প্ল্যাকার্ডগুলো উড়ে উড়ে এল ক্ষোভের পাথর হয়ে। সীমানা দড়ির কাছ ঘেঁষে থাকা হলুদ পোশাকের ‘হিমু মার্কা’ ঢুলিরা আত্মরক্ষার জন্য দৌড়ে সরে এলেন। কাগজের প্ল্যাকার্ডকেই এত ভয়! বাঁচোয়া যে, পানি কিংবা কোমল পানীয়র বোতল ঢুকতে পারেনি। ক্ষোভের প্রকাশটা স্টেডিয়ামে ততটা তীব্র ছিল না। দর্শকমনে প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রতিবর্তী ক্রিয়াই তো কাজ করতে পারেনি। এমন হার যে তাদের চোখেও একটা বিভ্রম।
প্রতিক্রিয়া হলো বাইরে। মুখে লাল-সবুজ আঁকা তরুণ-তরুণীরা হতাশায় মুহ্যমান। দক্ষিণের প্রবেশ দুয়ারে উত্তেজিত মিছিল, তাতে জ্বালাময়ী স্লোগান উঠতে থাকল বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে, ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে। জুতা-স্যান্ডেল ছড়ানো-ছিটানো। এসব কি স্লোগানের অনুষঙ্গ হয়ে হাতে উঠেছিল? ১০ নম্বর গোল চত্বর পেরিয়ে এসে রাস্তায় দেখা গেল অনেক কাচের টুকরো। বাসের ভাঙা গ্লাস। সমর্থকের হতাশার ঢিলের শিকার কাচগুলো? তবে সাকিবরা যেমন বলেন, সেই কথারও প্রমাণ পাওয়া গেল। কিশোর ভাইপোকে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন সেগুনবাগিচার তুহিন। ছয় হাজার টাকা দামের দুটি ভিআইপি টিকিট ২৫ হাজার টাকায় কিনে। হতাশা ছাপিয়ে তাঁর কণ্ঠে বাজল সাকিবদের জন্য প্রবল সমর্থনের সুর, ‘খুব হতাশ। একটা বাজে দিন গেল আমাদের। খুবই বাজে। তবু আমি বাংলাদেশ দলের পেছনে আছি। এই দলটাই আমাদের জেতায়, এরাই আবার আমাদের জেতাবে। দেখবেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা জিতব।’
চার বছরের ফুটফুটে মেয়ে সুমনা তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল, ‘বাবা, বাংলাদেশ কি হেরে গেছে?’ বিমর্ষ বাবা জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ, মা, বাংলাদেশ পচা খেলে হেরে গেছে।’ কিন্তু অবুঝ মেয়েটিকে তিনি উত্তর দিতে পারতেন, ‘২ ঘণ্টা ১৪ মিনিটে কী ভয়ানক লড়াই হলো মা যে, শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা...।’
অভিশপ্ত একটি বিকেলে সাকিবদের ‘লড়াই’টা বড় দুঃখের। বেদনায় ছেয়ে গেছে সমর্থকদের অন্তর। ক্ষোভের আগুন জ্বলেছে। কষ্টের নীল স্রোত বয়ে গেছে। তার মাঝেও বাংলাদেশ দলের পেছনে সমর্থনের মিছিল। কী বলবেন একে? আনন্দ-বেদনার কাব্য, ক্রিকেটপ্রেমের মায়াবী বিভ্রম!
No comments