শৃঙ্খলিত দুদক রেখে কী লাভ?
দিনবদলের সনদের অঙ্গীকারের ভিত্তিতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে। দিনবদলের সনদে ২৩টি অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে পাঁচটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা’ গ্রহণ, দ্বিতীয়—‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধ এবং বিশ্বমন্দার মোকাবিলায় সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা’র পরই অঙ্গীকার করা হয়: ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষমতাধরদের বার্ষিক সম্পদের বিবরণ দিতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরের ঘুষ, দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয়, ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালো টাকা ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ ও নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে...সরকারি কর্মকাণ্ডের ব্যাপকভাবে কম্পিউটারায়ন করে দুর্নীতির পথ বন্ধ করা হবে।’ এসব অঙ্গীকারের ওপর আস্থা রেখেই এ দেশের ভোটাররা মহাজোটকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাবিজয় উপহার দিয়েছিলেন।
নির্বাচন-পরবর্তীকালেও প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় অবস্থান এবং দুদককে স্বাধীন, শক্তিশালী ও কার্যকর করার প্রত্যয় বারবার ব্যক্ত করেছেন। এমনকি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সংসদে প্রশ্নোত্তরকালে তিনি দুদকের স্বাধীনতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। কিন্তু ২৮ ফেব্রুয়ারি সংসদে উত্থাপিত ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১১’, যা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে, নাগরিক হিসেবে আমাদের চরমভাবে হতাশ করেছে। বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, বিলে অন্তর্ভুক্ত সংশোধনীর সঙ্গে দিনবদলের সনদের অঙ্গীকারগুলোর এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয়ের কোনো মিল আমরা খুঁজে পাই না।
সংসদে উত্থাপিত বিলে ২০০৪ সালের আইন সংশোধনের ‘উদ্দেশ্য ও কারণ’ শিরোনামে বলা হয়: ‘দুর্নীতি প্রতিরোধকল্পে দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী, জবাবদিহিসম্পন্ন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়িয়া তুলিবার নিমিত্ত দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর অধিকতর সংশোধনের লক্ষ্যে এই বিল উত্থাপন করা হইল। প্রস্তাবিত সংশোধনের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাইবে বলিয়া আশা করা যায়।’
এটি সুস্পষ্ট যে একটি ‘স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা’ সংশোধনীর উদ্দেশ্য নয়; বরং ‘কমিশনের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও গ্রহণযোগ্যতা’ বাড়ানোই সংশোধনের উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই খসড়া বিলটি সংসদে পাস হলে, দুদক আর স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিরাজ করবে না।
একটি গণতান্ত্রিক দেশে সাধারণ জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস, যা আমাদের সংবিধানেও (অনুচ্ছেদ ৭) স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক দেশে জনগণ তাঁদের ভোটের মাধ্যমে একদল প্রতিনিধি নির্বাচন করেন তাঁদের স্বার্থে ও কল্যাণে কাজ করার লক্ষ্যে। নির্বাচনের মাধ্যমে সাংসদেরা সীমিত—‘আইনপ্রণয়নের’ জন্য (অনুচ্ছেদ ৬৫)—ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হন। সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের একাংশ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হয়ে, নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন। অন্যরা সাংসদ হিসেবে, মোটা দাগে বলতে গেলে, আইন প্রণয়ন ও সরকারের স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করেন। এ কাজগুলো সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য সংসদকে অবশ্যই স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, পাহারাদারকে (দুদককে) যদি যাকে পাহারা দেওয়ার কথা, তার (নির্বাহী বিভাগের) অনুমতি নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়, তাহলে পাহারাদারের পক্ষে কোনোভাবেই সে কার্যক্রম স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও ফলপ্রসূভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কারণ, একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে কারও অনুমতি নিয়ে কাজ করতে হয় না। প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতা আরও ক্ষুণ্ন হবে, যদি প্রস্তাবিত বিলের সুপারিশ অনুযায়ী সরকার দুদকের সচিবের নিয়োগ প্রদান করে। আর দুদকের স্বাধীনতা খর্ব করা হলে এটি কোনোভাবেই কার্যকারিতা অর্জন করতে পারবে না।
দুর্ভাগ্যবশত, ২০০৪ সালের আইনের ৩২ ধারার সঙ্গে ৩২ক ধারা সংযোজিত করে সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবিত বিলে দুদকের স্বাধীনতা খর্ব করার একটি অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। প্রস্তাবিত ৩২ক ধারায় বলা হয়েছে, ‘ধারা ৩২-এর বিধান সাপেক্ষে, এই আইনের অধীন জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৯৭-এর বিধান আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করিতে হইবে।’ অর্থাৎ বিচারক ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে সরকারের (অর্থাৎ নির্বাহী বিভাগের) পূর্বানুমতির প্রয়োজন হবে। বিদ্যমান আইনের ৩২ ধারা সংশোধনের মাধ্যমে এ ধরনের অনুমোদনপত্র মামলা দায়েরের সময় আদালতে হাজির করতে হবে।
২০০৪ সালের আইনের মাধ্যমে একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার আগে ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’র ওপর দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। অ্যান্টি-করাপশন আইন ১৯৫৭-এ, যার অধীনে ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করার আগে সরকারের পূর্বানুমতি গ্রহণের এমনই একটি বিধান ছিল, যা ওই প্রতিষ্ঠানটিকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করে ফেলেছিল। আমাদের আশঙ্কা, এই বিধানটির পুনঃপ্রবর্তনের ফলে দুদকের ভাগ্যেও তা-ই ঘটবে।
বিচারক ও সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরনের ‘ইনডেমনিটি’ বা সুরক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুতর সাংবিধানিক প্রশ্নও জড়িত। আমাদের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান।’ তাই অন্যান্য নাগরিককে বাদ দিয়ে শুধু সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য এমন বিধান হবে সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন, ফলে অসাংবিধানিক।
সরকারি কর্মচারীদের এ ধরনের সুরক্ষা দেওয়া হলে প্রশাসনে দলবাজি আরও প্রকট হবে। সরকারি কর্মকর্তারা—বিশেষ করে, যাঁরা অযোগ্য, অদক্ষ ও অসৎ—সংগত কারণেই সরকারি দলের অনুগত হয়ে পড়বেন। এর ফলে প্রশাসনে মেধাশূন্যতা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
প্রসঙ্গত, গণপরিষদের শেষ অধিবেশনে (৪ নভেম্বর ১৯৭২) প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন: ‘সরকারী কর্মচারীরা একটি আলাদা জাতি নয়। ...আইনের চক্ষে সাড়ে সাত কোটি মানুষের যে অধিকার, সরকারী কর্মচারীদেরও সেই অধিকার।’ প্রস্তাবিত বিলের মুখবন্ধে দুদককে স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার যে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কাম্য। কারণ, কোনো প্রতিষ্ঠানই দায়বদ্ধতার ঊর্ধ্বে নয় এবং গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে সে প্রতিষ্ঠান কার্যকর হবে না। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—কী ধরনের স্বচ্ছতা? কী প্রক্রিয়ায় দায়বদ্ধতা? কার কাছে দায়বদ্ধতা? কার কাছে গ্রহণযোগ্যতা? দুদকের কার্যক্রমে অবশ্যই গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হবে, তবে সে গ্রহণযোগ্যতা হতে হবে নাগরিকদের কাছে, কোনোভাবেই প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে নয়। কারণ, প্রশাসনের দুর্নীতি দমন করাই প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম দায়িত্ব।
দুদকের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিধান ২০০৪ সালের আইনে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী, দুদক বার্ষিকভাবে তার কার্যক্রমের একটি প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে এবং রাষ্ট্রপতি তা জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করবেন। এর মাধ্যমে দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণের জানার সুযোগ ঘটবে। এ ছাড়া দুদকের অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য অন্য বিধানের কথাও ভাবা যেতে পারে। যেমন, দুদকের সব কার্যক্রমের বিবরণী (তদন্ত ও মামলা-সংক্রান্ত আইনানুগভাবে গোপনীয় তথ্য ছাড়া) নিয়মিতভাবে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যেতে পারে। প্রসঙ্গত, বর্তমান বিলটি মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত হওয়ার পর এতে কী আছে, সে সম্পর্কে কাউকেই জানানো হয়নি, এমনকি দুদকের চেয়ারম্যানকেও না। এটি কোন ধরনের স্বচ্ছতা?
দুদকের দায়বদ্ধতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। দুদকের কমিশনাররা কোনো ধরনের অসদাচরণে লিপ্ত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান অবশ্যই থাকতে হবে। সে ধরনের বিধান ২০০৪ সালের আইনে রয়েছে। আইনের ১০ ধারায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মতো সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে দুদকের কমিশনারদের অপসারণের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতির দায়ে দুদকের কমিশনার ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ২০০৪ সালের আইনে কোনোরূপ বিধিনিষেধ নেই। বস্তুত দুদক ইতিমধ্যেই তাদের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে।
প্রস্তাবিত বিলে আরও কয়েকটি সংশোধনী আনা হয়েছে, যা দুদককে অকার্যকর করবে। এতে দুদকের সাক্ষীদের সমন জারির, সাক্ষীদের পরোয়ানা জারির এবং শপথের মাধ্যমে তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষমতা রহিত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিলটি পাস হলে দুদকের শুধু সাক্ষীদের প্রতি নোটিশ জারি করার ক্ষমতা থাকবে। এ ছাড়া দুদকের ক্ষমতা তদন্তের পরিবর্তে অনুসন্ধানের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। উপরন্তু, বিদ্যমান আইনের ২৩ ধারা সংশোধনীর মাধ্যমে কোনো অভিযোগের তদন্তকালে সরকার বা সরকারের অধীন কোনো কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা দুদককে সহযোগিতা করতে বাধ্য থাকবে না, এ ধরনের সংশোধনী পাস হলে দুর্নীতির মামলায় দুদকের পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হবে।
প্রস্তাবিত বিলে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে দুদকের কমিশন ও তার কর্মকর্তাদের দুই থেকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়ের বিধান রাখা হয়েছে। মিথ্যা মামলার মানদণ্ড কী? যেকোনো মামলায় হারলেই কি ধরে নেওয়া যায়, মামলাটি মিথ্যা ছিল? সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, অনেক চিহ্নিত দুর্নীতিবাজও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন। দুর্বল তদন্ত, সরকার ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার অসহযোগিতা, সাক্ষীর বৈরী মনোভাব, রাষ্ট্রের আইনজীবীদের বিতর্কিত ভূমিকা, আদালতের ভুল ব্যাখ্যার কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত অনেক ব্যক্তি সম্প্রতি দুর্নীতির দায় থেকে মুক্ত হয়েছেন। তাই বলে এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা কি মিথ্যা বলা যাবে? এ ধরনের বিধান আইনে পরিণত হলে, দুদকের কমিশনার ও কর্মকর্তারা ভবিষ্যতে দুর্নীতির মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে প্রবলভাবে নিরুৎসাহিত হবেন। এ ছাড়া দুদকের মামলার ক্ষেত্রে এ ধরনের বিধান করা হলে, অন্য সরকারি সংস্থার ক্ষেত্রে তা নয় কেন? উপরন্তু, সরকার ও অন্যান্য সরকারি সংস্থা সহায়তা করতে যদি বাধ্য না হয় এবং সাক্ষীদের যদি সাক্ষ্য দিতে পরোয়ানা জারি না করা যায় এবং তাঁদের শপথ গ্রহণপূর্বক সাক্ষ্য দিতে না হয়, তাহলে দুর্নীতির মামলায় দুদক হারবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়।
কিছুদিন আগে দুদকের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, দুদককে একটি নখ ও দন্তহীন বাঘে পরিণত করার পাঁয়তারা চলছে। আমরা মনে করি যে প্রস্তাবিত বিলটি পাস হলে দুদক, রূপক অর্থে, শুধু নখ ও দন্তহীনই হবে না, প্রতিষ্ঠানটির হাতে-পায়েও শৃঙ্খল পরিয়ে দেওয়া হবে। ফলে এটি একটি পরাধীন, আজ্ঞাবহ ও অর্থহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। তাই এটি বিলুপ্ত করলেও কিছু আসবে-যাবে না। আশা করি, নাগরিকেরা এ ব্যাপারে সোচ্চার হবে এবং সাংসদেরা বিলটি পাস করার আগে আমাদের উৎকণ্ঠার বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবেন।
প্রসঙ্গত, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুদকের কমিশনারদের শূন্যপদে সরকারি দলের প্রতি অনুগত দুজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। আশা করি, সরকার তা থেকে বিরত থাকবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার: সম্পাদক, সুজন—সুশাসনের জন্য নাগরিক।
নির্বাচন-পরবর্তীকালেও প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় অবস্থান এবং দুদককে স্বাধীন, শক্তিশালী ও কার্যকর করার প্রত্যয় বারবার ব্যক্ত করেছেন। এমনকি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সংসদে প্রশ্নোত্তরকালে তিনি দুদকের স্বাধীনতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। কিন্তু ২৮ ফেব্রুয়ারি সংসদে উত্থাপিত ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১১’, যা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে, নাগরিক হিসেবে আমাদের চরমভাবে হতাশ করেছে। বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, বিলে অন্তর্ভুক্ত সংশোধনীর সঙ্গে দিনবদলের সনদের অঙ্গীকারগুলোর এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয়ের কোনো মিল আমরা খুঁজে পাই না।
সংসদে উত্থাপিত বিলে ২০০৪ সালের আইন সংশোধনের ‘উদ্দেশ্য ও কারণ’ শিরোনামে বলা হয়: ‘দুর্নীতি প্রতিরোধকল্পে দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী, জবাবদিহিসম্পন্ন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়িয়া তুলিবার নিমিত্ত দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর অধিকতর সংশোধনের লক্ষ্যে এই বিল উত্থাপন করা হইল। প্রস্তাবিত সংশোধনের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাইবে বলিয়া আশা করা যায়।’
এটি সুস্পষ্ট যে একটি ‘স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা’ সংশোধনীর উদ্দেশ্য নয়; বরং ‘কমিশনের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও গ্রহণযোগ্যতা’ বাড়ানোই সংশোধনের উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই খসড়া বিলটি সংসদে পাস হলে, দুদক আর স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিরাজ করবে না।
একটি গণতান্ত্রিক দেশে সাধারণ জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস, যা আমাদের সংবিধানেও (অনুচ্ছেদ ৭) স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক দেশে জনগণ তাঁদের ভোটের মাধ্যমে একদল প্রতিনিধি নির্বাচন করেন তাঁদের স্বার্থে ও কল্যাণে কাজ করার লক্ষ্যে। নির্বাচনের মাধ্যমে সাংসদেরা সীমিত—‘আইনপ্রণয়নের’ জন্য (অনুচ্ছেদ ৬৫)—ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হন। সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের একাংশ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হয়ে, নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন। অন্যরা সাংসদ হিসেবে, মোটা দাগে বলতে গেলে, আইন প্রণয়ন ও সরকারের স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করেন। এ কাজগুলো সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য সংসদকে অবশ্যই স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, পাহারাদারকে (দুদককে) যদি যাকে পাহারা দেওয়ার কথা, তার (নির্বাহী বিভাগের) অনুমতি নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়, তাহলে পাহারাদারের পক্ষে কোনোভাবেই সে কার্যক্রম স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও ফলপ্রসূভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কারণ, একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে কারও অনুমতি নিয়ে কাজ করতে হয় না। প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতা আরও ক্ষুণ্ন হবে, যদি প্রস্তাবিত বিলের সুপারিশ অনুযায়ী সরকার দুদকের সচিবের নিয়োগ প্রদান করে। আর দুদকের স্বাধীনতা খর্ব করা হলে এটি কোনোভাবেই কার্যকারিতা অর্জন করতে পারবে না।
দুর্ভাগ্যবশত, ২০০৪ সালের আইনের ৩২ ধারার সঙ্গে ৩২ক ধারা সংযোজিত করে সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবিত বিলে দুদকের স্বাধীনতা খর্ব করার একটি অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। প্রস্তাবিত ৩২ক ধারায় বলা হয়েছে, ‘ধারা ৩২-এর বিধান সাপেক্ষে, এই আইনের অধীন জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৯৭-এর বিধান আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করিতে হইবে।’ অর্থাৎ বিচারক ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে সরকারের (অর্থাৎ নির্বাহী বিভাগের) পূর্বানুমতির প্রয়োজন হবে। বিদ্যমান আইনের ৩২ ধারা সংশোধনের মাধ্যমে এ ধরনের অনুমোদনপত্র মামলা দায়েরের সময় আদালতে হাজির করতে হবে।
২০০৪ সালের আইনের মাধ্যমে একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার আগে ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’র ওপর দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। অ্যান্টি-করাপশন আইন ১৯৫৭-এ, যার অধীনে ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করার আগে সরকারের পূর্বানুমতি গ্রহণের এমনই একটি বিধান ছিল, যা ওই প্রতিষ্ঠানটিকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করে ফেলেছিল। আমাদের আশঙ্কা, এই বিধানটির পুনঃপ্রবর্তনের ফলে দুদকের ভাগ্যেও তা-ই ঘটবে।
বিচারক ও সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরনের ‘ইনডেমনিটি’ বা সুরক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুতর সাংবিধানিক প্রশ্নও জড়িত। আমাদের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান।’ তাই অন্যান্য নাগরিককে বাদ দিয়ে শুধু সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য এমন বিধান হবে সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন, ফলে অসাংবিধানিক।
সরকারি কর্মচারীদের এ ধরনের সুরক্ষা দেওয়া হলে প্রশাসনে দলবাজি আরও প্রকট হবে। সরকারি কর্মকর্তারা—বিশেষ করে, যাঁরা অযোগ্য, অদক্ষ ও অসৎ—সংগত কারণেই সরকারি দলের অনুগত হয়ে পড়বেন। এর ফলে প্রশাসনে মেধাশূন্যতা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
প্রসঙ্গত, গণপরিষদের শেষ অধিবেশনে (৪ নভেম্বর ১৯৭২) প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন: ‘সরকারী কর্মচারীরা একটি আলাদা জাতি নয়। ...আইনের চক্ষে সাড়ে সাত কোটি মানুষের যে অধিকার, সরকারী কর্মচারীদেরও সেই অধিকার।’ প্রস্তাবিত বিলের মুখবন্ধে দুদককে স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার যে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কাম্য। কারণ, কোনো প্রতিষ্ঠানই দায়বদ্ধতার ঊর্ধ্বে নয় এবং গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে সে প্রতিষ্ঠান কার্যকর হবে না। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—কী ধরনের স্বচ্ছতা? কী প্রক্রিয়ায় দায়বদ্ধতা? কার কাছে দায়বদ্ধতা? কার কাছে গ্রহণযোগ্যতা? দুদকের কার্যক্রমে অবশ্যই গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হবে, তবে সে গ্রহণযোগ্যতা হতে হবে নাগরিকদের কাছে, কোনোভাবেই প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে নয়। কারণ, প্রশাসনের দুর্নীতি দমন করাই প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম দায়িত্ব।
দুদকের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিধান ২০০৪ সালের আইনে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী, দুদক বার্ষিকভাবে তার কার্যক্রমের একটি প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে এবং রাষ্ট্রপতি তা জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করবেন। এর মাধ্যমে দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণের জানার সুযোগ ঘটবে। এ ছাড়া দুদকের অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য অন্য বিধানের কথাও ভাবা যেতে পারে। যেমন, দুদকের সব কার্যক্রমের বিবরণী (তদন্ত ও মামলা-সংক্রান্ত আইনানুগভাবে গোপনীয় তথ্য ছাড়া) নিয়মিতভাবে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যেতে পারে। প্রসঙ্গত, বর্তমান বিলটি মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত হওয়ার পর এতে কী আছে, সে সম্পর্কে কাউকেই জানানো হয়নি, এমনকি দুদকের চেয়ারম্যানকেও না। এটি কোন ধরনের স্বচ্ছতা?
দুদকের দায়বদ্ধতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। দুদকের কমিশনাররা কোনো ধরনের অসদাচরণে লিপ্ত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান অবশ্যই থাকতে হবে। সে ধরনের বিধান ২০০৪ সালের আইনে রয়েছে। আইনের ১০ ধারায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মতো সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে দুদকের কমিশনারদের অপসারণের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতির দায়ে দুদকের কমিশনার ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ২০০৪ সালের আইনে কোনোরূপ বিধিনিষেধ নেই। বস্তুত দুদক ইতিমধ্যেই তাদের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে।
প্রস্তাবিত বিলে আরও কয়েকটি সংশোধনী আনা হয়েছে, যা দুদককে অকার্যকর করবে। এতে দুদকের সাক্ষীদের সমন জারির, সাক্ষীদের পরোয়ানা জারির এবং শপথের মাধ্যমে তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষমতা রহিত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিলটি পাস হলে দুদকের শুধু সাক্ষীদের প্রতি নোটিশ জারি করার ক্ষমতা থাকবে। এ ছাড়া দুদকের ক্ষমতা তদন্তের পরিবর্তে অনুসন্ধানের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। উপরন্তু, বিদ্যমান আইনের ২৩ ধারা সংশোধনীর মাধ্যমে কোনো অভিযোগের তদন্তকালে সরকার বা সরকারের অধীন কোনো কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা দুদককে সহযোগিতা করতে বাধ্য থাকবে না, এ ধরনের সংশোধনী পাস হলে দুর্নীতির মামলায় দুদকের পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হবে।
প্রস্তাবিত বিলে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে দুদকের কমিশন ও তার কর্মকর্তাদের দুই থেকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়ের বিধান রাখা হয়েছে। মিথ্যা মামলার মানদণ্ড কী? যেকোনো মামলায় হারলেই কি ধরে নেওয়া যায়, মামলাটি মিথ্যা ছিল? সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, অনেক চিহ্নিত দুর্নীতিবাজও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন। দুর্বল তদন্ত, সরকার ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার অসহযোগিতা, সাক্ষীর বৈরী মনোভাব, রাষ্ট্রের আইনজীবীদের বিতর্কিত ভূমিকা, আদালতের ভুল ব্যাখ্যার কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত অনেক ব্যক্তি সম্প্রতি দুর্নীতির দায় থেকে মুক্ত হয়েছেন। তাই বলে এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা কি মিথ্যা বলা যাবে? এ ধরনের বিধান আইনে পরিণত হলে, দুদকের কমিশনার ও কর্মকর্তারা ভবিষ্যতে দুর্নীতির মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে প্রবলভাবে নিরুৎসাহিত হবেন। এ ছাড়া দুদকের মামলার ক্ষেত্রে এ ধরনের বিধান করা হলে, অন্য সরকারি সংস্থার ক্ষেত্রে তা নয় কেন? উপরন্তু, সরকার ও অন্যান্য সরকারি সংস্থা সহায়তা করতে যদি বাধ্য না হয় এবং সাক্ষীদের যদি সাক্ষ্য দিতে পরোয়ানা জারি না করা যায় এবং তাঁদের শপথ গ্রহণপূর্বক সাক্ষ্য দিতে না হয়, তাহলে দুর্নীতির মামলায় দুদক হারবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়।
কিছুদিন আগে দুদকের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, দুদককে একটি নখ ও দন্তহীন বাঘে পরিণত করার পাঁয়তারা চলছে। আমরা মনে করি যে প্রস্তাবিত বিলটি পাস হলে দুদক, রূপক অর্থে, শুধু নখ ও দন্তহীনই হবে না, প্রতিষ্ঠানটির হাতে-পায়েও শৃঙ্খল পরিয়ে দেওয়া হবে। ফলে এটি একটি পরাধীন, আজ্ঞাবহ ও অর্থহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। তাই এটি বিলুপ্ত করলেও কিছু আসবে-যাবে না। আশা করি, নাগরিকেরা এ ব্যাপারে সোচ্চার হবে এবং সাংসদেরা বিলটি পাস করার আগে আমাদের উৎকণ্ঠার বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবেন।
প্রসঙ্গত, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুদকের কমিশনারদের শূন্যপদে সরকারি দলের প্রতি অনুগত দুজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। আশা করি, সরকার তা থেকে বিরত থাকবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার: সম্পাদক, সুজন—সুশাসনের জন্য নাগরিক।
No comments