খবর, কালের কণ্ঠের- খিলক্ষেতে আগুনঃ কয়েলের গুদামে রাতে কাজ হতো ঝুঁকিপূর্ণভাবে

খিলক্ষেতের নামাপাড়ার গুডনাইট মশার কয়েলের গুদামে মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যারোসল ক্যান নষ্ট করার কাজ চলছিল ঝুঁকিপূর্ণভাবে। কিছুদিন পরপর রাতে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক দিয়ে এ কর্মযজ্ঞ চালানো হতো। কোনো একজন শ্রমিকের ধূমপানের সময় অসতর্কতা থেকে শুক্রবার রাতে অগি্নকাণ্ডের মতো বিপর্যয় ঘটেছে বলে জানা গেছে_আহত শ্রমিক ও সেখানে পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্যের সূত্রে। গতকাল শনিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগি্নদগ্ধ আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে কয়েল কারখানার দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ছয়। চিকিৎসাধীন পাঁচজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। গতকাল খিলক্ষেত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। গুদাম কর্তৃপক্ষ বা ভবনের মালিক পক্ষের কারো হদিস না পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তবে গুডনাইট কয়েলের প্রস্তুতকারক গোদরেজ হাউস হোল্ডস প্রোডাক্টস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের কান্ট্রি ডিরেক্টর বদরুল ইসলাম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানের কেউ পলাতক নেই। দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে নিহত প্রত্যেক শ্রমিককে দুই লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এর আগে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটলেও গুদামে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বন্ধ হয়নি। তারা ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন।
অগি্নকাণ্ডের শিকার হয়ে শুক্রবারই পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। গতকাল ভোরে মারা যান আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার (২৩) নামের আরেক শ্রমিক। আগের রাতে মারা যান- তোফাজ্জল হোসেন (২৬), রাসেল (১৬), ইউসুফ আলী (২৮), আমিনুর রহমান (২২) ও আলমাস (২৬)। গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসন ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে তাঁদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সিআইডির ঘটনাস্থল পরিদর্শন : গতকাল সকাল পৌনে ১১টায় সিআইডির সাত সদস্যের ক্রাইম সিন টিম ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে তারা দুই ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে দুর্ঘটনার নানা নমুনা সংগ্রহ করে। ওই টিমের প্রধান সহকারী পুলিশ সুপার সাবদার আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কিভাবে বিস্ফোরণ বা দুর্ঘটনা ঘটল তা যাচাইয়ের জন্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব আলামত পরীক্ষা করে ঘটনার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।'
গুদামে ক্যান নষ্ট করার কাজ চলছিল : অগি্নকাণ্ডে আহত হামিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, আগেও তিনি চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে ওই গুদামে কাজ করেছেন। এখানে মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যারোসল ক্যান জমে গেলে তা নষ্ট করে ফেলা হতো। শ্রমিকদের কাজ ছিল, ক্যান ছিদ্র করে স্প্রে বের করে ড্রামে রাখা। এক কার্টন (৬০টি) ক্যান নষ্ট করার বিনিময়ে আট টাকা পেতেন তাঁরা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হামিদ আরো জানান, শুক্রবার রাতে গুদামে তাঁরা ১৭-১৮ জন ওই কাজই করছিলেন। বিস্ফোরণের সময় যাঁরা কাছে ছিলেন তাঁরা দগ্ধ হয়েছেন বেশি। দূরে যাঁরা ছিলেন তাঁদের আঘাত কিছুটা কম।
ধূমপান থেকেই আগুন : খিলক্ষেত থানার ওসি শামীম হোসেন জানান, ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অ্যারোসল স্প্রে জমিয়ে রাখা ড্রামে কোনো এক শ্রমিক অসতর্কভাবে সিগারেট বা বিড়ির টুকরো ফেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অতি দাহ্য পদার্থের ড্রামটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। গুদামে থাকা কার্টনগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে। আগুন অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় গুদামে থাকা কেউ রক্ষা পায়নি।
ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী : স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুই বছর আগে থেকেই খিলক্ষেতের ১০০/২/ডি পূর্ব নামাপাড়া ঠিকানার ওই ভবনে এ কাজ চলছিল। নামাপাড়া বোর্ডবাজার জামে মসজিদের ইমাম আলহাজ আবদুস সালাম কালের কণ্ঠকে জানান, গুদামের পাইপ দিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত ধোঁয়া বের হতো। আগে পেছনের দিককার বাইরের অংশে অ্যারোসল ক্যান নষ্ট করার কাজ হতো। পাশের বাড়ির জয়নাল তাঁর গাছ নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করার পর থেকে ভেতরে ওই কাজ শুরু হয়।
জাকির হোসেন নামে আরেক বাসিন্দা জানান, গত বছর একবার একই গুদামে আগুন লেগে পাশের বাড়ির কলাগাছ পুড়ে গিয়েছিল। স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তদন্তের আহ্বান জানান।
ওসি শামীম হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, বাড়ির মালিক পক্ষ বা গুদাম পক্ষের কারো কোনো হদিস মিলছে না। ওই বাড়ির মালিক ইলিয়াছ আহমেদ কানাডা প্রবাসী। বাড়িটি দেখাশোনা করেন ইলিয়াসের ভাগ্নে সাইফুল। ঘটনার পর থেকে তাঁকে দেখা যায়নি।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, ভবনটির দোতলায় একটি গেঞ্জির কারখানা রয়েছে। দুর্ঘটনার পর সেটিও তালাবদ্ধ। গেটের কয়েকজন দারোয়ান ও একজন তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কর্তৃপক্ষের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গুদামে যেতেন না। একজন দারোয়ানের নাম হালিম বলে জানা গেছে।
অগি্নকাণ্ডের সময় গুদামের গেটের ভেতরে একটি পিকআপ ভ্যান (ঢাকা মেট্রো ম ৫১-৪৭১৪) ছিল। দুর্ঘটনার পর এলাকাবাসী ও উদ্ধারকর্মীরা কলাপসিবল গেট ভেঙে গাড়িটি উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে যান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিদর্শন : গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি নামাপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত গুদাম ও নিহতদের বাসায় যান। সেখানে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, 'তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
অপমৃত্যু মামলা : দুর্ঘটায় ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল খিলক্ষেত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওসি শামীম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দুর্ঘটনা ও ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনায় ওই মামলা হয়েছে। তদন্ত বা অভিযোগ সাপেক্ষে এ ঘটনায় আরো মামলা হতে পারে।'
ছয় লাশ হস্তান্তর : গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জসিমউদ্দিন ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই সময় লাশ বহনের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে চিকিৎসা খরচ বাবদ ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
মর্গের সামনে শোকের মাতম : গতকাল সকাল থেকেই হাসপাতাল মর্গে চলে শোকের মাতম। নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। অগি্নকাণ্ডে মৃত্যুর খবর জানার পর নিহত শ্রমিকদের লাশ নিতে ছুটে আসেন তাঁদের স্বজনরা। দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর শুরু হয়। এরপর অ্যাম্বুলেন্স ও সাধারণ গাড়িতে করে লাশগুলো নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে যান স্বজনরা।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার জঙ্গলবাড়ি থেকে আসা হালিমা বেগম কালের কণ্ঠকে জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার কিছু আগেও ভাই ইউসুফের সঙ্গে তাঁর মোবাইল ফোনে কথা হয়। তখন সে কারখানার গোডাউনে কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এর কিছুক্ষণ পরেই ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ পান হালিমা। ভোরে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসেন। সকালে হাসপাতাল মর্গে এসে তিনি ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন। তিনি আরো জানান, ইউসুফ খিলক্ষেত এলাকায় থাকত। সে দুই সন্তানের জনক। স্ত্রী আসমা বেগম। তিন ভাই-তিন বোনের মধ্যে ইউসুফ সবার ছোট। গত এক বছর এই কারখানায় অনিয়মিত শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন তিনি। নিহত রাসেল তাঁর ভাগ্নে। ইউসুফের বাবা মইজউদ্দিন গ্রামে কৃষি কাজ করেন। ছেলে ও নাতির লাশ বুঝে নিতে মর্গের সামনে অপেক্ষমাণ বৃদ্ধ মইজউদ্দিন যেন শোক প্রকাশের ভাষাও হারিয়ে ফেলেছিলেন। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন কেবল।
স্বামী আমিনুরের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ছুটে আসেন ত্রিশালের ইকনা থেকে ফরিদা বেগম। হাসপাতাল মর্গে গিয়ে স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন তিনি। আড়াই মাস বয়সের একমাত্র সন্তান আইরিনকেও নিয়ে আসেন মর্গে। কনকনে শীতের মধ্যে শিশুটিকে বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন ফরিদা। স্বামীর লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না সেখানে। ফরিদার বুকভাঙা আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস।
আহতরা সংকটাপন্ন : আহত পাঁচজন এখনো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক ডা. সামন্ত লাল সেন কালের কণ্ঠকে জানান, আহতরা সংকটাপন্ন। তাঁদের শরীরের প্রায় সবস্থান পুড়ে গেছে। জুয়েল ও সাইদুর নামে দুজনকে আইসিইউ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। অন্যদের অবস্থাও ভালো না।
=====================
ভারতে বিহার রাজ্যের নির্বাচন  স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পথে  আমাদের আকাশ থেকে নক্ষত্র কেড়ে নিয়েছিল যারা...  মুক্তির মন্দির সোপান তলে  আবেগ ছেড়ে বুদ্ধির পথই ধরতে হবে  বছর শেষে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ  দুই কোরিয়ার একত্রিকরণ কি সম্ভব  গ্যাসের ওপর বিপজ্জনক বসবাস  উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ  সময়ের দাবি জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি  জনসংখ্যা বনাম জনশক্তি  ব্যাংকের টাকা নয়ছয় হওয়া উচিত নয়  একটি পুরনো সম্পর্কের স্মৃতিচিত্র  পাটশিল্প ঘুরিয়ে দিতে পারে অর্থনীতির চাকা  ড. ইউনূসকে বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে  সুশিক্ষার পথে এখনও বাধা অনেক  ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ ও মর্যাদাহানির পরিণাম কখনই শুভ হয় না ঘুষ ও লুটপাট উভয়ের বিরুদ্ধে একই সাথে লড়তে হবে  সুনীতি ও সুশাসন  আমি কেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পক্ষে  শ্রমিক অসন্তোষ বর্তমান প্রেক্ষিত  জীবন ব্যাকরণঃ দর্জির মুক্তিযুদ্ধ  তথ্যের অধিকার ও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ  শালীন ও সংযত কথাবার্তা কি শুধু একতরফা হতে হবে?  একটি অসমাপ্ত গল্প  মুসলিম বিশ্বে সেক্যুলারিজমের বর্তমান ও ভবিষ্যত  চীন দেশের কথা  হিকমতে হুজ্জতেদের কথা  মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে বিশ্বসভায়  ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো  বধ্যভূমিতে গেয়ে গেল যাঁরা জীবনের জয়গান  ভিক্ষাবৃত্তির মুখোশ  লন্ডন ভ্রমণ এবং সুখ-দুঃখের দু'টি কথা  শিক্ষার মানোন্নয়নে চাই যথার্থ মনিটরিং  পান্থজনঃ কী পাই নি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজী  বাঙালির বৌদ্ধিক ঐতিহ্য  ৭২-এর সংবিধানের আলোকে কি রূপকল্প বদল করা উচিত নয়?  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ :নতুন যুগের বার্তাবাহক  প্রশাসনে জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি  পরিবেশ সুরক্ষায় তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা  রাত যায় দিন আসে


দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে

এই খবর'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.