দুঃসংবাদ আর সুসংবাদ চলেছে পাশাপাশি by আব্দুল কাইয়ুম
শাহজালাল
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. মোসলেহ উদ্দিনের সঙ্গে
তাঁর কার্যালয়ে দেখা করতে গিয়েছি। আকাশ জুড়ে ঘন কালো মেঘ। আগের রাতে
ঝুমবৃষ্টি হয়ে গেছে। সকালেও এক পশলা। মজার ব্যাপার হলো, বেশ কিছুক্ষণ
মুষলধারে বৃষ্টি হয়, তার পরই আকাশ পরিষ্কার। মেঘ ও রোদের খেলা। ঢাকায় যখন
বিরক্তিকর গরম, সিলেটে তখন প্রাণজুড়ানো বৃষ্টি। চারদিক সবুজে সবুজ।
সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছি। কুশলবিনিময় করে চলে যাব সুনামগঞ্জের পথে। উপাচার্য বললেন, পত্রপত্রিকায় একটি খবর দেখে সকাল থেকে মনটা খারাপ হয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা প্রায় নেই। অথচ আগের দিনের একটি সামান্য ঘটনার সংবাদ পত্রিকায় এমনভাবে লেখা হয়েছে, যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটে গেছে। ছাত্রলীগ ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের মধ্যে কথাকাটাকাটি, ধাক্কাধাক্কি হয়েছে, হয়তো সামান্য মারামারিও হয়েছে। কিন্তু এর জের ধরে তো সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েনি। অর্থাৎ ঘটনা তত বড় কিছু ছিল না। আমরা তাঁর কথা মেনে নিলাম। পরে খোঁজ নিয়েছি। ঘটনা ছোটই ছিল, কিন্তু এর রাজনৈতিক তাৎপর্য বিবেচনায় হয়তো সংবাদটি গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে।
উপাচার্য আক্ষেপ করে বললেন, সব শুধু নেতিবাচক খবর, দেশে কি ভালো খবর কিছু থাকে না? আপনারা না লিখলে চলবে কেন?
এটা ঠিক যে অনেক সময় দুঃসংবাদগুলোই বড় হয়ে ওঠে। এ ব্যাপারে কিছু করার নেই। ঘটনা খারপ বা ভালো যা-ই হোক, তার খবর সবার কাছে বস্তুনিষ্ঠভাবে পৌঁছে দেওয়াই তো পত্রিকার কাজ। যাঁরা দেশ পরিচালনা করেন বা বিরোধী দলে থাকেন, তাঁরা কি দেশকে ভালো কিছু দিতে পারছেন? সিলেটে প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তারাই ঘুরেফিরে ক্ষমতায় আসে। বলা হয়, সিলেটে যে দল জিতে, তারাই দেশের সরকার গঠন করে। বিগত দিনে সিলেটে মূল প্রভাব ছিল বিএনপির, এখন আওয়ামী লীগের। অথচ এই দল দুটির অবস্থা খুব করুণ। কোনো দলেরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। বিএনপি দুই গ্রুপে বিভক্ত। কয়েক দিন আগে তাদের দুই প্রতিপক্ষ প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের মধ্যেও চলছে নেতৃত্বের কোন্দল। দুই দলেরই কর্মীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ।
বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও মেয়েদের স্কুল-কলেজের আশপাশে বখাটেদের উৎপাত সারা দেশের মতো সিলেটেও আছে। কয়েক দিন আগে বখাটেরা একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে হত্যা করে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোতোয়ালি থানার ওসিকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বিএনপি সরকারের সময় মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলতেন, তিনি বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কিছু করতে পারছেন না। কিন্তু এখন তো তাঁদেরই সরকার। দেড় বছর হয়ে গেল। তেমন কিছু তো করতে পারলেন না। জলাবদ্ধতা এখন সিলেটের স্থায়ী সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ পানি নেমে যাওয়ার খালগুলো (ছড়া) অবৈধ দখলদারদের খপ্পরে চলে গেছে। মহানগরের মধ্য দিয়ে নয়টি ছড়া সুরমা নদীতে মিশেছে। যে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ছড়া দখল করে রাখছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে করপোরেশন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মেয়র যদি অন্যায়, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে না দাঁড়ান, তাহলে মানুষের জীবনে স্বস্তি আসবে কীভাবে?
এ রকম অনেক সমস্যা সিলেটে রয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সেখানে মন ভালো করার মতো ঘটনা নেই। উৎসাহিত হওয়ার মতো অনেক খবরও আছে। এই শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই ধরা যাক। অনলাইন ও মোবাইল ফোনে ভর্তি ফরম বিতরণ থেকে শুরু করে ভর্তি চূড়ান্ত করার যাবতীয় ব্যবস্থা তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রথম করেছে। এখানে প্রায় সারা বছরই পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ থাকে। এই টেন্ডারবাজির যুগে এটা কম কথা নয়।
আমরা অনেকে খোঁজ রাখি না, সিলেটের আবদুল বাছিত সেলিম নামের একজন কৃষি-অন্তপ্রাণ ব্যক্তি রয়েছেন। তিনি সিলেট অঞ্চলের লুপ্তপ্রায় ৬০ জাতের ধানের চাষ করছেন। প্রায় ৪০০ একর জমিতে চাষ হয়। সুগন্ধি চালই রয়েছে ৪০ জাতের। বিরইন চালই প্রায় ১০ জাতের। আমরা বিন্নি (বিরইন) ধানের চালের কথা কবিতায় পড়েছি। কিন্তু সেই চালও যে এত রকমের তা কে জানত। আমরা জীববৈচিত্র্য রক্ষার কথা বলি। কিন্তু আমাদের দেশি জাতের কত ধান যে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, তার খবর কয়জন রাখি? সিলেটের এক কৃষি-পরিবারের সন্তান গ্রামবাংলায় ঘুরে ঘুরে দেশি জাতের ধান সংরক্ষণ করছেন, আবাদ করছেন, এটা কি কম কথা? সেলিম সাহেব বললেন, তিনি নিজের ব্যবস্থাপনায় কয়েক একর জমিতে চাষ করেন। এর বাইরে কৃষকদের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে উৎপাদন হয়। কৃষকদের বীজ, সার ও উৎপাদন প্রযুক্তি সরবরাহ করেন তিনি। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, তিনি কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। সব সবুজ সার ও গোবর। এতে দেশি জাতের চালের গন্ধ ও স্বাদ অটুট থাকে। তাঁদের চালের চাহিদাও প্রচুর। বিদেশে রপ্তানি হয়। ভালো দাম পান। তবে এখন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় শুধু পোলাওয়ের চালই সীমিত পরিমাণে রপ্তানি করা হয়।
সেলিম সাহেবের এই কৃষি কার্যক্রমের বিস্তৃত পরিচয় গত বছর ১৪ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘সেলিমের সুগন্ধি ধান’ শিরোনামে শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী তাঁর খামারে গিয়েছেন। চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজও তাঁর খামারে গিয়েছেন, গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন তাঁর সাফল্যের কথা।
সুনামগঞ্জেরও আছে অনেক সাফল্যগাথা। সবচেয়ে বড় খবর হলো, সেখানে ছিনতাই, রাহাজানির উৎপাত প্রায় নেই। এটা কম কথা নয়। সুনামগঞ্জ নাগরিক সমাজের সবাই বললেন, গণমাধ্যম যেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার থাকে। তাঁরা চান, প্রথম আলোর পাতায় যেন প্রতিদিন একজন করে কুখ্যাত দুর্নীতিবাজের পরিচয় তুলে ধরা হয়। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সুনামগঞ্জের আলোকিতজনেরা সে কথাটাই স্মরণ করিয়ে দিলেন।
আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাভান্ডারে যে প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি ডলার জমা হয়েছে, তার একটা বড় অংশই আসে লন্ডনপ্রবাসী সিলেটের অধিবাসীদের পাঠানো অর্থ থেকে। অথচ এই প্রবাসীরা দেশে এসে নানা ঝুট-ঝামেলায় পড়েন। সিলেটের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকে মনে করেন, ‘প্রবাসী আদালত’ স্থাপন করতে হবে। কারণ, দেশে জমির মামলা-মোকদ্দমার জন্য কেউ হয়তো লন্ডন থেকে আসেন, কিন্তু দিনের পর দিন মামলা চলতে থাকে, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় অথবা চাকরি থাকে না। তাই এ ধরনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রবাসী আদালতের বিশেষ ব্যবস্থা দরকার। বাস্তবে এটা কতটা সম্ভব তা কেবল আইন বিশেষজ্ঞরাই বলতে পারেন। তবে সমস্যাটা বাস্তব। এর একটা সমাধান দরকার।
আইনজীবী বদরুল আহমেদ চৌধুরী বিশেষভাবে অনুরোধ করলেন, প্রথম আলো যেন সিলেটকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার গুরুত্ব তুলে ধরে। এখান থেকে দেশের প্রচুর আয় বাড়ানো সম্ভব।
তবে সবচেয়ে বড় সুসংবাদ দিয়েছেন সিলেটের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। মেয়র হিসেবে তাঁর কাজের ভুলত্রুটি, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার খবর যে আমরা বিভিন্ন সময় ছাপিয়েছি, সে কথা তো আগেই বলেছি। সাংবাদিকতার কর্তব্য হিসেবেই সেটা আমরা করি। কিন্তু এসব অপ্রীতিকর বিষয়ের ধারেকাছেও তিনি যাননি। শুধু বলেছেন, প্রথম আলোর কাছে বস্তুনিষ্ঠ খবর চাই, কাউকে ছোট করার জন্য নয়, ভুল শুধরে দেওয়ার জন্য প্রতিবেদন চাই। তাঁর কৌশলী শব্দচয়ন লক্ষ করার মতো। তাঁর শেষ কথাটি ছিল, ‘পত্রিকাটা আমাদের!’
>>>আব্দুল কাইয়ুম: সাংবাদিক।
সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছি। কুশলবিনিময় করে চলে যাব সুনামগঞ্জের পথে। উপাচার্য বললেন, পত্রপত্রিকায় একটি খবর দেখে সকাল থেকে মনটা খারাপ হয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা প্রায় নেই। অথচ আগের দিনের একটি সামান্য ঘটনার সংবাদ পত্রিকায় এমনভাবে লেখা হয়েছে, যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটে গেছে। ছাত্রলীগ ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের মধ্যে কথাকাটাকাটি, ধাক্কাধাক্কি হয়েছে, হয়তো সামান্য মারামারিও হয়েছে। কিন্তু এর জের ধরে তো সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েনি। অর্থাৎ ঘটনা তত বড় কিছু ছিল না। আমরা তাঁর কথা মেনে নিলাম। পরে খোঁজ নিয়েছি। ঘটনা ছোটই ছিল, কিন্তু এর রাজনৈতিক তাৎপর্য বিবেচনায় হয়তো সংবাদটি গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে।
উপাচার্য আক্ষেপ করে বললেন, সব শুধু নেতিবাচক খবর, দেশে কি ভালো খবর কিছু থাকে না? আপনারা না লিখলে চলবে কেন?
এটা ঠিক যে অনেক সময় দুঃসংবাদগুলোই বড় হয়ে ওঠে। এ ব্যাপারে কিছু করার নেই। ঘটনা খারপ বা ভালো যা-ই হোক, তার খবর সবার কাছে বস্তুনিষ্ঠভাবে পৌঁছে দেওয়াই তো পত্রিকার কাজ। যাঁরা দেশ পরিচালনা করেন বা বিরোধী দলে থাকেন, তাঁরা কি দেশকে ভালো কিছু দিতে পারছেন? সিলেটে প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তারাই ঘুরেফিরে ক্ষমতায় আসে। বলা হয়, সিলেটে যে দল জিতে, তারাই দেশের সরকার গঠন করে। বিগত দিনে সিলেটে মূল প্রভাব ছিল বিএনপির, এখন আওয়ামী লীগের। অথচ এই দল দুটির অবস্থা খুব করুণ। কোনো দলেরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। বিএনপি দুই গ্রুপে বিভক্ত। কয়েক দিন আগে তাদের দুই প্রতিপক্ষ প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের মধ্যেও চলছে নেতৃত্বের কোন্দল। দুই দলেরই কর্মীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ।
বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও মেয়েদের স্কুল-কলেজের আশপাশে বখাটেদের উৎপাত সারা দেশের মতো সিলেটেও আছে। কয়েক দিন আগে বখাটেরা একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে হত্যা করে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোতোয়ালি থানার ওসিকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বিএনপি সরকারের সময় মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলতেন, তিনি বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কিছু করতে পারছেন না। কিন্তু এখন তো তাঁদেরই সরকার। দেড় বছর হয়ে গেল। তেমন কিছু তো করতে পারলেন না। জলাবদ্ধতা এখন সিলেটের স্থায়ী সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ পানি নেমে যাওয়ার খালগুলো (ছড়া) অবৈধ দখলদারদের খপ্পরে চলে গেছে। মহানগরের মধ্য দিয়ে নয়টি ছড়া সুরমা নদীতে মিশেছে। যে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ছড়া দখল করে রাখছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে করপোরেশন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মেয়র যদি অন্যায়, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে না দাঁড়ান, তাহলে মানুষের জীবনে স্বস্তি আসবে কীভাবে?
এ রকম অনেক সমস্যা সিলেটে রয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সেখানে মন ভালো করার মতো ঘটনা নেই। উৎসাহিত হওয়ার মতো অনেক খবরও আছে। এই শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই ধরা যাক। অনলাইন ও মোবাইল ফোনে ভর্তি ফরম বিতরণ থেকে শুরু করে ভর্তি চূড়ান্ত করার যাবতীয় ব্যবস্থা তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রথম করেছে। এখানে প্রায় সারা বছরই পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ থাকে। এই টেন্ডারবাজির যুগে এটা কম কথা নয়।
আমরা অনেকে খোঁজ রাখি না, সিলেটের আবদুল বাছিত সেলিম নামের একজন কৃষি-অন্তপ্রাণ ব্যক্তি রয়েছেন। তিনি সিলেট অঞ্চলের লুপ্তপ্রায় ৬০ জাতের ধানের চাষ করছেন। প্রায় ৪০০ একর জমিতে চাষ হয়। সুগন্ধি চালই রয়েছে ৪০ জাতের। বিরইন চালই প্রায় ১০ জাতের। আমরা বিন্নি (বিরইন) ধানের চালের কথা কবিতায় পড়েছি। কিন্তু সেই চালও যে এত রকমের তা কে জানত। আমরা জীববৈচিত্র্য রক্ষার কথা বলি। কিন্তু আমাদের দেশি জাতের কত ধান যে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, তার খবর কয়জন রাখি? সিলেটের এক কৃষি-পরিবারের সন্তান গ্রামবাংলায় ঘুরে ঘুরে দেশি জাতের ধান সংরক্ষণ করছেন, আবাদ করছেন, এটা কি কম কথা? সেলিম সাহেব বললেন, তিনি নিজের ব্যবস্থাপনায় কয়েক একর জমিতে চাষ করেন। এর বাইরে কৃষকদের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে উৎপাদন হয়। কৃষকদের বীজ, সার ও উৎপাদন প্রযুক্তি সরবরাহ করেন তিনি। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, তিনি কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। সব সবুজ সার ও গোবর। এতে দেশি জাতের চালের গন্ধ ও স্বাদ অটুট থাকে। তাঁদের চালের চাহিদাও প্রচুর। বিদেশে রপ্তানি হয়। ভালো দাম পান। তবে এখন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় শুধু পোলাওয়ের চালই সীমিত পরিমাণে রপ্তানি করা হয়।
সেলিম সাহেবের এই কৃষি কার্যক্রমের বিস্তৃত পরিচয় গত বছর ১৪ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘সেলিমের সুগন্ধি ধান’ শিরোনামে শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী তাঁর খামারে গিয়েছেন। চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজও তাঁর খামারে গিয়েছেন, গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন তাঁর সাফল্যের কথা।
সুনামগঞ্জেরও আছে অনেক সাফল্যগাথা। সবচেয়ে বড় খবর হলো, সেখানে ছিনতাই, রাহাজানির উৎপাত প্রায় নেই। এটা কম কথা নয়। সুনামগঞ্জ নাগরিক সমাজের সবাই বললেন, গণমাধ্যম যেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার থাকে। তাঁরা চান, প্রথম আলোর পাতায় যেন প্রতিদিন একজন করে কুখ্যাত দুর্নীতিবাজের পরিচয় তুলে ধরা হয়। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সুনামগঞ্জের আলোকিতজনেরা সে কথাটাই স্মরণ করিয়ে দিলেন।
আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাভান্ডারে যে প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি ডলার জমা হয়েছে, তার একটা বড় অংশই আসে লন্ডনপ্রবাসী সিলেটের অধিবাসীদের পাঠানো অর্থ থেকে। অথচ এই প্রবাসীরা দেশে এসে নানা ঝুট-ঝামেলায় পড়েন। সিলেটের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকে মনে করেন, ‘প্রবাসী আদালত’ স্থাপন করতে হবে। কারণ, দেশে জমির মামলা-মোকদ্দমার জন্য কেউ হয়তো লন্ডন থেকে আসেন, কিন্তু দিনের পর দিন মামলা চলতে থাকে, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় অথবা চাকরি থাকে না। তাই এ ধরনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রবাসী আদালতের বিশেষ ব্যবস্থা দরকার। বাস্তবে এটা কতটা সম্ভব তা কেবল আইন বিশেষজ্ঞরাই বলতে পারেন। তবে সমস্যাটা বাস্তব। এর একটা সমাধান দরকার।
আইনজীবী বদরুল আহমেদ চৌধুরী বিশেষভাবে অনুরোধ করলেন, প্রথম আলো যেন সিলেটকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার গুরুত্ব তুলে ধরে। এখান থেকে দেশের প্রচুর আয় বাড়ানো সম্ভব।
তবে সবচেয়ে বড় সুসংবাদ দিয়েছেন সিলেটের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। মেয়র হিসেবে তাঁর কাজের ভুলত্রুটি, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার খবর যে আমরা বিভিন্ন সময় ছাপিয়েছি, সে কথা তো আগেই বলেছি। সাংবাদিকতার কর্তব্য হিসেবেই সেটা আমরা করি। কিন্তু এসব অপ্রীতিকর বিষয়ের ধারেকাছেও তিনি যাননি। শুধু বলেছেন, প্রথম আলোর কাছে বস্তুনিষ্ঠ খবর চাই, কাউকে ছোট করার জন্য নয়, ভুল শুধরে দেওয়ার জন্য প্রতিবেদন চাই। তাঁর কৌশলী শব্দচয়ন লক্ষ করার মতো। তাঁর শেষ কথাটি ছিল, ‘পত্রিকাটা আমাদের!’
>>>আব্দুল কাইয়ুম: সাংবাদিক।
No comments