‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’
ঠিক যেন কোনো ছোটগল্প। ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’। জাবুলানি নিয়ে বিতর্ক নিভু নিভু করে জ্বলতে জ্বলতে আবারও যেন জ্বলে উঠল দপ করে। বিশ্বকাপের শেষ প্রান্তে এসে আবারও উঠল সেই একই প্রশ্ন—জাবুলানি বলটা কি আসলে খারাপ?
অ্যাডিডাসের তৈরি এবার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল বল জাবুলানি নিয়ে বিতর্কের জাল বোনা হচ্ছে সেই টুর্নামেন্টের পর্দা ওঠার আগে থেকেই। পারদের মতো কখনো সেই বিতর্কের মাত্রা চড়েছে, কখনো নেমেছে। মাঝখানে অবশ্য খেলার উত্তেজনায় বিতর্ক যেন ধামাচাপাই পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আবারও নতুন করে সেটি জমে উঠল বলে!
কারণ এবার প্রশ্নটা তোলা হয়েছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি পক্ষ থেকে। গবেষণাগারে জাবুলানি নিয়ে বিশদ গবেষণার পর মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার রায়, ঘণ্টায় ৪৪ মাইলের বেশি গতিতে ছোটার সময় জাবুলানি বলটি কেমন আচরণ করবে, সেটি পুরোপুরি অনিশ্চিত!
বিতর্কের কোনো সমাধান হচ্ছে না দেখেই কি না, নাসা বিশ্বকাপের বলটিকে নিয়ে গিয়েছিল তাদের অ্যামেস ইনভেস্টিগেশন সেন্টারে। এই গবেষণাকেন্দ্রটি বায়ুগতিবিদ্যা (অ্যারোডায়নামিক্স) নিয়ে গবেষণার জন্য স্বনামধন্য। গবেষণা শেষে তাদের মতামত, দক্ষিণ আফ্রিকার বেশির ভাগ ভেন্যু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে এক হাজার মিটারেরও বেশি উঁচুতে হওয়ায়ও জাবুলানি বলটি মাঝেমধ্যে অপ্রত্যাশিত আচরণ করছে।
নাসার এ খবরটি সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ছেপেছে ইংলিশ মিডিয়া। ভাবখানা এমন—কী, আগেই বলেছিলাম না। বরাবরের মতো এবারও ইংল্যান্ডের ভরাডুবির পেছনে হাজারটা অজুহাত খাড়া করছে ইংলিশ মিডিয়া। কারও কারও চোখে এক নম্বর আসামি জাবুলানি বলটাই। এই বলের সবচেয়ে নির্মম শিকার আসলে তাদের গোলরক্ষক রবার্ট গ্রিনই। যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচে হাত থেকে ফসকে গিয়ে বলটা ঢুকে গিয়েছিল জালে। অদ্ভুতুড়ে ওই গোল নিয়ে তখন থেকেই শোরগোল।
অবশ্য আরও আগে থেকে জাবুলানিকে নিয়ে চলে আসছিল কথার লড়াই। বিশেষ করে গোলরক্ষকেরা ভুভুজেলার মতো কানের কাছে একটা কথাই বাজিয়ে আসছিলেন, এই বল গোলরক্ষকের জন্য রীতিমতো হন্তারক। ব্রাজিলের হুলিও সিজার তো বলেই বসলেন, বলটা স্রেফ বাজারি, ‘সুপার মার্কেট বল’। সেই বিতর্কে শামিল হলেন জিয়ানলুইজি বুফন, ইকার ক্যাসিয়াসরাও। গত বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক বুফন মন্তব্য করলেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, বিশ্বকাপের মতো একটা আসরে এমন ত্রুটিপূর্ণ একটা বল দিয়ে খেলা হচ্ছে।’
ক্ষণে ক্ষণে এভাবে বিতর্ক চাড়া দিয়ে উঠেছে, আর সঙ্গে সঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থন করে অ্যাডিডাসকে দিতে হয়েছে বিবৃতি। ‘কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা’ তো তারাই। বলটা যে অ্যাডিডাসই বানিয়েছে, বলের পেছনে আছে তাদের কোটি কোটি ডলারের লগ্নি। অ্যাডিডাসের পক্ষ থেকে তখন বলা হলো, প্রতিটি বিশ্বকাপের আগেই অফিসিয়াল বল নিয়ে গোলরক্ষকেরা অহেতুক একটা আতঙ্কে ভোগেন। এবারও তা-ই হচ্ছে। একজন তো এমন বললেন, ‘গোলরক্ষকদের বানাতে দিলে ওরা আসলে একটা লোহার বলই বানাবে, যে বল মাঝমাঠ থেকে সরানো মুশকিল!’
কিন্তু শুধু গোলরক্ষক নন, খেলা মাঠে গড়ানোর পর থেকে স্ট্রাইকারও যোগ দিলেন এই বিতর্কে। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার লুইস ফ্যাবিয়ানো বললেন বলটি নাকি ‘অতিপ্রাকৃত’। আর তাঁরই আক্রমণসঙ্গী রবিনহো আরও আক্রমণাত্মক ভাষায় বললেন, ‘আমি বাজি ধরে বলতে পারি, বলটা যারা বানিয়েছে, জীবনেও ফুটবল খেলে দেখেনি।’ আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, যাঁর পায়ের জাদুতে অনায়াসে বশ মানে বল, সেই মেসিও বললেন, ‘বলটি আসলে গোলরক্ষক এবং আমাদের (ফরোয়ার্ড) দুই ধরনের খেলোয়াড়ের জন্যই জটিল।’
সব খেলোয়াড়ই যে এর বিপক্ষে ছিল এমনও নয়। কাকা যেমন রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে জাবুলানির পক্ষে দাঁড়ালেন। কাকা আবার অ্যাডিডাসের পণ্যদূত। দুইয়ে দুইয়ে চারও মেলানো হলো, অ্যাডিডাসের ভাবমূর্তি রক্ষার দায় তো তাঁর আছেই। সবচেয়ে মোক্ষম প্রশ্নটা করলেন এক পক্ষ, ‘কী দরকার প্রতিটা বিশ্বকাপে নতুন বল দিয়ে খেলার?’
আবারও হাজির হতে হলো অ্যাডিডাসকে। তাদের গবেষণাগারে জাবুলানি যে সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে আধুনিক বল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, সেটি জানাতে বিলম্ব করল না। এও জানিয়ে দেওয়া হলো, নতুন বলটির সঙ্গে সবাই যেন মানিয়ে নিতে পারে এ জন্য সেই জানুয়ারি থেকেই সবগুলো দলকে এই বল দিয়ে দেওয়া হয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে।
মাঝখানে ভুভুজেলার তীব্র চিৎকারে ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল জাবুলানি। নাসার গবেষণার ফল আবারও তুলে আনল আলোচনার টেবিলে। এবং সেই বিতর্কে ভালো রসদের জোগান দিলেন ক্রেগ জনস্টন। লিভারপুলের এই সাবেক ফুটবলার অ্যাডিডাসের সঙ্গে প্রিডেটর ফুটবল বুট নিয়ে কাজ করেছিলেন। সেই জনস্টনকেও হয়তো পোড়াচ্ছিল জাবুলানির কাণ্ডকীর্তি। চুপটি মেরে বসে থাকতে না পেরে এবার ফিফা সভাপতি সেপ ব্ল্যাটারকে ১২ পাতার বিশাল এক খোলা চিঠি লিখেছেন। যেখানে চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে জাবুলানির দোষত্রুটি।
অবশেষে ফিফাও নড়েচড়ে বসেছে। ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি জানিয়েছে, বিশ্বকাপের পর পরই অংশ নেওয়া ৩২ দলের কোচ আর খেলোয়াড়দের সঙ্গে বসে জাবুলানি সম্পর্কে মতামত নেওয়া হবে। এর পরই ঠিক হবে, ভবিষ্যতের বল হিসেবে জাবুলানিই নির্বাচিত হবে, নাকি হবে নির্বাসিত।
সেই রায় আসতে এখনো বাকি। বিশ্বকাপেরও কিন্তু বাকি আছে আরও দুটো ম্যাচ। এই ম্যাচে আবার এমন কিছু যেন না ঘটে, ‘কাদম্বিনী’কে যেন মরিয়া প্রমাণ করিতে না হয় যে সে মরে নাই!
অ্যাডিডাসের তৈরি এবার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল বল জাবুলানি নিয়ে বিতর্কের জাল বোনা হচ্ছে সেই টুর্নামেন্টের পর্দা ওঠার আগে থেকেই। পারদের মতো কখনো সেই বিতর্কের মাত্রা চড়েছে, কখনো নেমেছে। মাঝখানে অবশ্য খেলার উত্তেজনায় বিতর্ক যেন ধামাচাপাই পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আবারও নতুন করে সেটি জমে উঠল বলে!
কারণ এবার প্রশ্নটা তোলা হয়েছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি পক্ষ থেকে। গবেষণাগারে জাবুলানি নিয়ে বিশদ গবেষণার পর মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার রায়, ঘণ্টায় ৪৪ মাইলের বেশি গতিতে ছোটার সময় জাবুলানি বলটি কেমন আচরণ করবে, সেটি পুরোপুরি অনিশ্চিত!
বিতর্কের কোনো সমাধান হচ্ছে না দেখেই কি না, নাসা বিশ্বকাপের বলটিকে নিয়ে গিয়েছিল তাদের অ্যামেস ইনভেস্টিগেশন সেন্টারে। এই গবেষণাকেন্দ্রটি বায়ুগতিবিদ্যা (অ্যারোডায়নামিক্স) নিয়ে গবেষণার জন্য স্বনামধন্য। গবেষণা শেষে তাদের মতামত, দক্ষিণ আফ্রিকার বেশির ভাগ ভেন্যু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে এক হাজার মিটারেরও বেশি উঁচুতে হওয়ায়ও জাবুলানি বলটি মাঝেমধ্যে অপ্রত্যাশিত আচরণ করছে।
নাসার এ খবরটি সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ছেপেছে ইংলিশ মিডিয়া। ভাবখানা এমন—কী, আগেই বলেছিলাম না। বরাবরের মতো এবারও ইংল্যান্ডের ভরাডুবির পেছনে হাজারটা অজুহাত খাড়া করছে ইংলিশ মিডিয়া। কারও কারও চোখে এক নম্বর আসামি জাবুলানি বলটাই। এই বলের সবচেয়ে নির্মম শিকার আসলে তাদের গোলরক্ষক রবার্ট গ্রিনই। যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচে হাত থেকে ফসকে গিয়ে বলটা ঢুকে গিয়েছিল জালে। অদ্ভুতুড়ে ওই গোল নিয়ে তখন থেকেই শোরগোল।
অবশ্য আরও আগে থেকে জাবুলানিকে নিয়ে চলে আসছিল কথার লড়াই। বিশেষ করে গোলরক্ষকেরা ভুভুজেলার মতো কানের কাছে একটা কথাই বাজিয়ে আসছিলেন, এই বল গোলরক্ষকের জন্য রীতিমতো হন্তারক। ব্রাজিলের হুলিও সিজার তো বলেই বসলেন, বলটা স্রেফ বাজারি, ‘সুপার মার্কেট বল’। সেই বিতর্কে শামিল হলেন জিয়ানলুইজি বুফন, ইকার ক্যাসিয়াসরাও। গত বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক বুফন মন্তব্য করলেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, বিশ্বকাপের মতো একটা আসরে এমন ত্রুটিপূর্ণ একটা বল দিয়ে খেলা হচ্ছে।’
ক্ষণে ক্ষণে এভাবে বিতর্ক চাড়া দিয়ে উঠেছে, আর সঙ্গে সঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থন করে অ্যাডিডাসকে দিতে হয়েছে বিবৃতি। ‘কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা’ তো তারাই। বলটা যে অ্যাডিডাসই বানিয়েছে, বলের পেছনে আছে তাদের কোটি কোটি ডলারের লগ্নি। অ্যাডিডাসের পক্ষ থেকে তখন বলা হলো, প্রতিটি বিশ্বকাপের আগেই অফিসিয়াল বল নিয়ে গোলরক্ষকেরা অহেতুক একটা আতঙ্কে ভোগেন। এবারও তা-ই হচ্ছে। একজন তো এমন বললেন, ‘গোলরক্ষকদের বানাতে দিলে ওরা আসলে একটা লোহার বলই বানাবে, যে বল মাঝমাঠ থেকে সরানো মুশকিল!’
কিন্তু শুধু গোলরক্ষক নন, খেলা মাঠে গড়ানোর পর থেকে স্ট্রাইকারও যোগ দিলেন এই বিতর্কে। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার লুইস ফ্যাবিয়ানো বললেন বলটি নাকি ‘অতিপ্রাকৃত’। আর তাঁরই আক্রমণসঙ্গী রবিনহো আরও আক্রমণাত্মক ভাষায় বললেন, ‘আমি বাজি ধরে বলতে পারি, বলটা যারা বানিয়েছে, জীবনেও ফুটবল খেলে দেখেনি।’ আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, যাঁর পায়ের জাদুতে অনায়াসে বশ মানে বল, সেই মেসিও বললেন, ‘বলটি আসলে গোলরক্ষক এবং আমাদের (ফরোয়ার্ড) দুই ধরনের খেলোয়াড়ের জন্যই জটিল।’
সব খেলোয়াড়ই যে এর বিপক্ষে ছিল এমনও নয়। কাকা যেমন রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে জাবুলানির পক্ষে দাঁড়ালেন। কাকা আবার অ্যাডিডাসের পণ্যদূত। দুইয়ে দুইয়ে চারও মেলানো হলো, অ্যাডিডাসের ভাবমূর্তি রক্ষার দায় তো তাঁর আছেই। সবচেয়ে মোক্ষম প্রশ্নটা করলেন এক পক্ষ, ‘কী দরকার প্রতিটা বিশ্বকাপে নতুন বল দিয়ে খেলার?’
আবারও হাজির হতে হলো অ্যাডিডাসকে। তাদের গবেষণাগারে জাবুলানি যে সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে আধুনিক বল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, সেটি জানাতে বিলম্ব করল না। এও জানিয়ে দেওয়া হলো, নতুন বলটির সঙ্গে সবাই যেন মানিয়ে নিতে পারে এ জন্য সেই জানুয়ারি থেকেই সবগুলো দলকে এই বল দিয়ে দেওয়া হয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে।
মাঝখানে ভুভুজেলার তীব্র চিৎকারে ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল জাবুলানি। নাসার গবেষণার ফল আবারও তুলে আনল আলোচনার টেবিলে। এবং সেই বিতর্কে ভালো রসদের জোগান দিলেন ক্রেগ জনস্টন। লিভারপুলের এই সাবেক ফুটবলার অ্যাডিডাসের সঙ্গে প্রিডেটর ফুটবল বুট নিয়ে কাজ করেছিলেন। সেই জনস্টনকেও হয়তো পোড়াচ্ছিল জাবুলানির কাণ্ডকীর্তি। চুপটি মেরে বসে থাকতে না পেরে এবার ফিফা সভাপতি সেপ ব্ল্যাটারকে ১২ পাতার বিশাল এক খোলা চিঠি লিখেছেন। যেখানে চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে জাবুলানির দোষত্রুটি।
অবশেষে ফিফাও নড়েচড়ে বসেছে। ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি জানিয়েছে, বিশ্বকাপের পর পরই অংশ নেওয়া ৩২ দলের কোচ আর খেলোয়াড়দের সঙ্গে বসে জাবুলানি সম্পর্কে মতামত নেওয়া হবে। এর পরই ঠিক হবে, ভবিষ্যতের বল হিসেবে জাবুলানিই নির্বাচিত হবে, নাকি হবে নির্বাসিত।
সেই রায় আসতে এখনো বাকি। বিশ্বকাপেরও কিন্তু বাকি আছে আরও দুটো ম্যাচ। এই ম্যাচে আবার এমন কিছু যেন না ঘটে, ‘কাদম্বিনী’কে যেন মরিয়া প্রমাণ করিতে না হয় যে সে মরে নাই!
No comments