বিদ্যুৎ সমাচার b y আতাউর রহমা
গল্প আছে: গ্রামের রাস্তায় দুই গ্রামবাসীর অকস্মাত্ সাক্ষাত্ ঘটেছে। একজন অপরজনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনাদের রোগীর অবস্থা কেমন?’ সংক্ষিপ্ত উত্তর এল, ‘ভালো।’ ‘কতটুকু ভালো?’ প্রথমোক্ত জন আবার প্রশ্ন করলেন। এবার জবাব এল, ‘রোগী পূর্বে পায়খানা করতেন ঘরের বাইরে, কলাগাছের তলায়। বর্তমানে ওটা করছেন ঘরের ভেতরে, বিছানায়।’
গল্পটা আমার মনে পড়ে গিয়েছিল সম্প্রতি যখন বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ ঢাকায় একনাগাড়ে এক ঘণ্টার পরিবর্তে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং শুরু করে দিল, তখন আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ, অতঃপর শুভ বুদ্ধির উদয় হলো এবং সাবেক রায় পুনর্বহাল করা হলো। তবে আমি সবচেয়ে খুশি হতাম যদি হেয়ার রোড, মিন্টো রোড, বেইলি রোড ইত্যাকার ভিভিআইপি এলাকায়ও এই লোডশেডিংটা বরাবর বলবত্ থাকত। কেননা, বহুকাল আগেই তো কবি লিখে গেছেন, ‘কী যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে দংশেনী যারে?’
আর এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিংয়ের পরিবর্তে দুই ঘণ্টা পর পর লোডশেডিংয়ের পক্ষে যে যুক্তি দেখানো হয়েছিল—জনসাধারণ অতঃপর বলবে, দৈনিক আটবারের পরিবর্তে চারবার লোডশেডিং হচ্ছে—সেটা পত্রপত্রিকায় পড়ে আমার আরেকটি মজার গল্প মনে পড়ে গিয়েছিল: বড়লোক বাপ ছেলেকে উচ্চশিক্ষার জন্য কলেজের হোস্টেলে পাঠিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাকে আমি মাসে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে পাঠাব।’ ছেলে সেটা শুনে বলল, ‘মাত্র পাঁচ হাজার? তাহলে তো আমাকে অপমান করা হয়।’ বাপ তখন রাগতস্বরে বললেন, ‘ঠিক আছে, তাহলে তোমাকে দুই মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে পাঠাব, যাতে করে তুমি প্রতি মাসে অপমানিত না হয়ে দুই মাস অন্তর একবার অপমানিত হও (...so that you are insulted less often)।’
সে যা হোক। স্কটল্যান্ডের অধিবাসী লর্ড কেলভিন (১৮২৪—১৯০৭) ছিলেন প্রখ্যাত পদার্থবিদ ও একজন আবিষ্কারক; বৈদ্যুতিক প্রকৌশলের বহু যন্ত্র তিনি আবিষ্কার করেছেন। তো তাঁর সম্পর্কে একটি বহুল প্রচারিত গল্প আছে: তিনি একবার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে একটি বৈদ্যুতিক কারখানা দেখতে যান। কারখানাটির সিনিয়র ফোরম্যান খুব উৎসাহসহকারে তাঁদের কারখানার বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন। ফোরম্যান লর্ড কেলভিনের প্রকৃত পরিচিতি জানতেন না বিধায় তাঁকে বিদ্যুতের ব্যাপারে সম্পূর্ণ অজ্ঞ মনে করে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, আর লর্ড কেলভিনও অজ্ঞের ভান করে যাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গের বন্ধু কয়েকবার তাঁর পরিচিতি জানাতে উদ্যত হলেও তিনি চোখের ইশারায় তাঁকে নিরস্ত করলেন। পরিশেষে ফোরম্যান সবকিছু দেখানো ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সমাপ্ত করলে পর লর্ড ক্যালভিন তাঁর দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা, বিদ্যুৎটা তাহলে কী?’ ফোরম্যান থতমত খেয়ে লজ্জানম্র-কণ্ঠে স্বীকারোক্তি করলেন যে তিনি তা বলতে পারবেন না। ‘ওয়েল, ওয়েল’, লর্ড কেলভিন ধীরকণ্ঠে বলনে, ‘বিদ্যুতের ব্যাপারে ওটাই একমাত্র জিনিস, যা আপনি বা আমি কেউই জানি না।’
আমরাও বিদ্যুৎ কী, তা জানি না। জানে বোধকরি সেই স্কুলের ছেলেটি, যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল—বজ্রপাত ও বিদ্যুতের মধ্যে পার্থক্য কী? প্রত্যুত্তরে সে নাকি বলেছিল, ‘বজ্রপাতের জন্য কোনো বিল আসে না; কিন্তু বিদ্যুতের জন্য প্রতি মাসে একবার করে বিল আসে।’ আর জানে বোধকরি সেই ইলেকট্রিশিয়ানটিও, যাকে রাস্তায় পেয়ে বাড়ির মালিক বুড়ি যখন অভিযোগ করলেন, ‘তোমাকে গতকাল টেলিফোন করে বললাম আমার ঘরে বিদ্যুতের লাইন পুরো বিকল হয়ে আছে, এসে ঠিক করে দিতে, অথচ তুমি এলে না।’ তখন সে প্রত্যুত্তর করেছিল, ‘এসেছিলাম তো। কিন্তু অনেকক্ষণ কলবেল টিপলাম, কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়াতে ফিরে আসতে হলো।’
আর আমাদের বাংলা ভাষায় একটা প্রবচন আছে, কান ধরে টানলে মাথা আসে। এর উল্টোটাও সঠিক; অর্থাৎ মাথা ধরে টানলে কানও আসে। তাই বিদ্যুতের ব্যাপারে বলতে গেলে বৈদ্যুতিক বাল্বের ব্যাপারটাও প্রসঙ্গক্রমে এসে যায়। হিউমারের বইতে বিকল বৈদ্যুতিক বাল্ব পরিবর্তন করে নতুন বাল্ব লাগানোর ব্যাপারে অনেক মজার কথা পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ: (১) প্রশ্ন: একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব বদলাতে কয়জন পোলিশের প্রয়োজন? উত্তর: পাঁচজন, যেহেতু পোল্যান্ডের অধিবাসীরা বোকা। একজন টেবিলে উঠে বাল্বটাকে সকেটের মুখে ধরে রাখবে, আর অপর চারজন টেবিলের চার কোণে ধরে টেবিলটাকে ঘোরাতে থাকবে। (২) প্রশ্ন: একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব বদলাতে কয়জন আইরিশের প্রয়োজন? উত্তর: দুজন, একজন বাল্বটাকে ধরে রাখবে আর অপরজন হুইস্কি পান করা চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ না কক্ষটি ভনভন করে ঘুরতে থাকে।
অনুরূপভাবে যদি প্রশ্ন করা হয়, একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব বদলাতে কয়জন বাংলাদেশি সাংসদের প্রয়োজন? তাহলে উত্তর হবে: সাতজন; একজন ওটা বদলাবেন ও অপর ছয়জন একটা তথ্যানুসন্ধান কমিটি করবেন এবং বিদেশে কাজটা কীভাবে করা হয়, সেটা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করার জন্য একটা বৈদেশিক সফরের প্রস্তাব করবেন। পরিশেষে দুটো প্রাসঙ্গিক বিদেশি গল্প পরিবেশন করে বিদায় নিই। এক. তিনজন শল্যচিকিৎসক নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছিলেন। একজন বললেন, ‘আমি লাইব্রেরিয়ানদের বক্ষে অস্ত্রোপচার করতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। কেননা, ওদের বক্ষ বিদীর্ণ করলে সবকিছু বর্ণমালার ক্রমানুসারে সাজানো পাওয়া যায়।’ দ্বিতীয়জন বললেন, ‘আমার মনে হয় হিসাবরক্ষকদের বক্ষে অস্ত্রোপচার করা সবচেয়ে সহজ; কারণ ভেতরের সবকিছুতেই নম্বর দেওয়া।’ শুনে তৃতীয়জন বললেন, ‘বক্ষে অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে আমার সবচেয়ে পছন্দ ইলেকট্রিশিয়ান। কেননা, সবকিছু কালার কোডেড (Colour Coded)।’ বলা বাহুল্য, ইলেকট্রিক প্লাগের অভ্যন্তরে পজিটিভ, নেগেটিভ ও নিউট্রাল বোঝাতে হলুদ, নীল ও সাদা বর্ণের তার সংযোজিত থাকে।
দুই. পাশ্চাত্যের একটি হোটেলের দোতলায় পাশাপাশি দুটো কামরায় একই সময়ে অবস্থান করতে গিয়ে হানিমুন করতে আসা দুই নবদম্পতির মধ্যে বেশ খাতির জমে উঠল। একদিন রাতের ডিনার শেষে স্ত্রীদ্বয়কে নিজ নিজ কামরায় পাঠিয়ে দিয়ে স্বামীদ্বয় লবিতে খানিকক্ষণ গল্পগুজবের পর সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় ওঠার মুখে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। ওই সব দেশে বিদ্যুৎ খুবই কদাচিত্ যায় বিধায় হোটেলে জেনারেটরের ব্যবস্থা ছিল না। তাই অন্ধকারে কোনো রকমে হাতড়িয়ে যাঁর যাঁর কামরায় প্রবেশের পর একজন তাঁর নিত্যকার অভ্যেস অনুসারে বিছানায় যাওয়ার আগে মিনিট দশেক ফ্লোরে প্রার্থনারত অবস্থায় কাটালেন। অতঃপর কাপড় বদলিয়ে বিছানায় স্ত্রীর পাশে শুতে যাওয়ার মুহূর্তে হঠাৎ বিদ্যুৎ ফিরে এল।
আর তখনই ভুলটা ধরা পড়ল, অন্ধকারে বুঝতে না পেরে একে অন্যের কামরায় ঢুকে পড়েছেন। তিনি তত্ক্ষণাত্ সরি বলে দরজার উদ্দেশে পা বাড়াতেই বিছানায় শায়িত নারীটি বলে উঠলেন, ‘এখন আর তাড়াহুড়ো করে লাভ নেই, ওই কামরায় যা ঘটার ঘটে গেছে। কেননা, আমার স্বামীর বিছানায় যাওয়ার আগে প্রার্থনা করার অভ্যেস নেই।’
লোডশেডিং তাই কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাভজনকও বটে!
আতাউর রহমান: রম্য লেখক। ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক।
গল্পটা আমার মনে পড়ে গিয়েছিল সম্প্রতি যখন বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ ঢাকায় একনাগাড়ে এক ঘণ্টার পরিবর্তে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং শুরু করে দিল, তখন আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ, অতঃপর শুভ বুদ্ধির উদয় হলো এবং সাবেক রায় পুনর্বহাল করা হলো। তবে আমি সবচেয়ে খুশি হতাম যদি হেয়ার রোড, মিন্টো রোড, বেইলি রোড ইত্যাকার ভিভিআইপি এলাকায়ও এই লোডশেডিংটা বরাবর বলবত্ থাকত। কেননা, বহুকাল আগেই তো কবি লিখে গেছেন, ‘কী যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে দংশেনী যারে?’
আর এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিংয়ের পরিবর্তে দুই ঘণ্টা পর পর লোডশেডিংয়ের পক্ষে যে যুক্তি দেখানো হয়েছিল—জনসাধারণ অতঃপর বলবে, দৈনিক আটবারের পরিবর্তে চারবার লোডশেডিং হচ্ছে—সেটা পত্রপত্রিকায় পড়ে আমার আরেকটি মজার গল্প মনে পড়ে গিয়েছিল: বড়লোক বাপ ছেলেকে উচ্চশিক্ষার জন্য কলেজের হোস্টেলে পাঠিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাকে আমি মাসে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে পাঠাব।’ ছেলে সেটা শুনে বলল, ‘মাত্র পাঁচ হাজার? তাহলে তো আমাকে অপমান করা হয়।’ বাপ তখন রাগতস্বরে বললেন, ‘ঠিক আছে, তাহলে তোমাকে দুই মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে পাঠাব, যাতে করে তুমি প্রতি মাসে অপমানিত না হয়ে দুই মাস অন্তর একবার অপমানিত হও (...so that you are insulted less often)।’
সে যা হোক। স্কটল্যান্ডের অধিবাসী লর্ড কেলভিন (১৮২৪—১৯০৭) ছিলেন প্রখ্যাত পদার্থবিদ ও একজন আবিষ্কারক; বৈদ্যুতিক প্রকৌশলের বহু যন্ত্র তিনি আবিষ্কার করেছেন। তো তাঁর সম্পর্কে একটি বহুল প্রচারিত গল্প আছে: তিনি একবার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে একটি বৈদ্যুতিক কারখানা দেখতে যান। কারখানাটির সিনিয়র ফোরম্যান খুব উৎসাহসহকারে তাঁদের কারখানার বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন। ফোরম্যান লর্ড কেলভিনের প্রকৃত পরিচিতি জানতেন না বিধায় তাঁকে বিদ্যুতের ব্যাপারে সম্পূর্ণ অজ্ঞ মনে করে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, আর লর্ড কেলভিনও অজ্ঞের ভান করে যাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গের বন্ধু কয়েকবার তাঁর পরিচিতি জানাতে উদ্যত হলেও তিনি চোখের ইশারায় তাঁকে নিরস্ত করলেন। পরিশেষে ফোরম্যান সবকিছু দেখানো ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সমাপ্ত করলে পর লর্ড ক্যালভিন তাঁর দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা, বিদ্যুৎটা তাহলে কী?’ ফোরম্যান থতমত খেয়ে লজ্জানম্র-কণ্ঠে স্বীকারোক্তি করলেন যে তিনি তা বলতে পারবেন না। ‘ওয়েল, ওয়েল’, লর্ড কেলভিন ধীরকণ্ঠে বলনে, ‘বিদ্যুতের ব্যাপারে ওটাই একমাত্র জিনিস, যা আপনি বা আমি কেউই জানি না।’
আমরাও বিদ্যুৎ কী, তা জানি না। জানে বোধকরি সেই স্কুলের ছেলেটি, যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল—বজ্রপাত ও বিদ্যুতের মধ্যে পার্থক্য কী? প্রত্যুত্তরে সে নাকি বলেছিল, ‘বজ্রপাতের জন্য কোনো বিল আসে না; কিন্তু বিদ্যুতের জন্য প্রতি মাসে একবার করে বিল আসে।’ আর জানে বোধকরি সেই ইলেকট্রিশিয়ানটিও, যাকে রাস্তায় পেয়ে বাড়ির মালিক বুড়ি যখন অভিযোগ করলেন, ‘তোমাকে গতকাল টেলিফোন করে বললাম আমার ঘরে বিদ্যুতের লাইন পুরো বিকল হয়ে আছে, এসে ঠিক করে দিতে, অথচ তুমি এলে না।’ তখন সে প্রত্যুত্তর করেছিল, ‘এসেছিলাম তো। কিন্তু অনেকক্ষণ কলবেল টিপলাম, কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়াতে ফিরে আসতে হলো।’
আর আমাদের বাংলা ভাষায় একটা প্রবচন আছে, কান ধরে টানলে মাথা আসে। এর উল্টোটাও সঠিক; অর্থাৎ মাথা ধরে টানলে কানও আসে। তাই বিদ্যুতের ব্যাপারে বলতে গেলে বৈদ্যুতিক বাল্বের ব্যাপারটাও প্রসঙ্গক্রমে এসে যায়। হিউমারের বইতে বিকল বৈদ্যুতিক বাল্ব পরিবর্তন করে নতুন বাল্ব লাগানোর ব্যাপারে অনেক মজার কথা পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ: (১) প্রশ্ন: একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব বদলাতে কয়জন পোলিশের প্রয়োজন? উত্তর: পাঁচজন, যেহেতু পোল্যান্ডের অধিবাসীরা বোকা। একজন টেবিলে উঠে বাল্বটাকে সকেটের মুখে ধরে রাখবে, আর অপর চারজন টেবিলের চার কোণে ধরে টেবিলটাকে ঘোরাতে থাকবে। (২) প্রশ্ন: একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব বদলাতে কয়জন আইরিশের প্রয়োজন? উত্তর: দুজন, একজন বাল্বটাকে ধরে রাখবে আর অপরজন হুইস্কি পান করা চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ না কক্ষটি ভনভন করে ঘুরতে থাকে।
অনুরূপভাবে যদি প্রশ্ন করা হয়, একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব বদলাতে কয়জন বাংলাদেশি সাংসদের প্রয়োজন? তাহলে উত্তর হবে: সাতজন; একজন ওটা বদলাবেন ও অপর ছয়জন একটা তথ্যানুসন্ধান কমিটি করবেন এবং বিদেশে কাজটা কীভাবে করা হয়, সেটা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করার জন্য একটা বৈদেশিক সফরের প্রস্তাব করবেন। পরিশেষে দুটো প্রাসঙ্গিক বিদেশি গল্প পরিবেশন করে বিদায় নিই। এক. তিনজন শল্যচিকিৎসক নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছিলেন। একজন বললেন, ‘আমি লাইব্রেরিয়ানদের বক্ষে অস্ত্রোপচার করতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। কেননা, ওদের বক্ষ বিদীর্ণ করলে সবকিছু বর্ণমালার ক্রমানুসারে সাজানো পাওয়া যায়।’ দ্বিতীয়জন বললেন, ‘আমার মনে হয় হিসাবরক্ষকদের বক্ষে অস্ত্রোপচার করা সবচেয়ে সহজ; কারণ ভেতরের সবকিছুতেই নম্বর দেওয়া।’ শুনে তৃতীয়জন বললেন, ‘বক্ষে অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে আমার সবচেয়ে পছন্দ ইলেকট্রিশিয়ান। কেননা, সবকিছু কালার কোডেড (Colour Coded)।’ বলা বাহুল্য, ইলেকট্রিক প্লাগের অভ্যন্তরে পজিটিভ, নেগেটিভ ও নিউট্রাল বোঝাতে হলুদ, নীল ও সাদা বর্ণের তার সংযোজিত থাকে।
দুই. পাশ্চাত্যের একটি হোটেলের দোতলায় পাশাপাশি দুটো কামরায় একই সময়ে অবস্থান করতে গিয়ে হানিমুন করতে আসা দুই নবদম্পতির মধ্যে বেশ খাতির জমে উঠল। একদিন রাতের ডিনার শেষে স্ত্রীদ্বয়কে নিজ নিজ কামরায় পাঠিয়ে দিয়ে স্বামীদ্বয় লবিতে খানিকক্ষণ গল্পগুজবের পর সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় ওঠার মুখে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। ওই সব দেশে বিদ্যুৎ খুবই কদাচিত্ যায় বিধায় হোটেলে জেনারেটরের ব্যবস্থা ছিল না। তাই অন্ধকারে কোনো রকমে হাতড়িয়ে যাঁর যাঁর কামরায় প্রবেশের পর একজন তাঁর নিত্যকার অভ্যেস অনুসারে বিছানায় যাওয়ার আগে মিনিট দশেক ফ্লোরে প্রার্থনারত অবস্থায় কাটালেন। অতঃপর কাপড় বদলিয়ে বিছানায় স্ত্রীর পাশে শুতে যাওয়ার মুহূর্তে হঠাৎ বিদ্যুৎ ফিরে এল।
আর তখনই ভুলটা ধরা পড়ল, অন্ধকারে বুঝতে না পেরে একে অন্যের কামরায় ঢুকে পড়েছেন। তিনি তত্ক্ষণাত্ সরি বলে দরজার উদ্দেশে পা বাড়াতেই বিছানায় শায়িত নারীটি বলে উঠলেন, ‘এখন আর তাড়াহুড়ো করে লাভ নেই, ওই কামরায় যা ঘটার ঘটে গেছে। কেননা, আমার স্বামীর বিছানায় যাওয়ার আগে প্রার্থনা করার অভ্যেস নেই।’
লোডশেডিং তাই কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাভজনকও বটে!
আতাউর রহমান: রম্য লেখক। ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক।
No comments