নাগরিক সুবিধা -যানজট নিরসনে কয়েকটি প্রস্তাব by মোহাম্মদ কায়কোবাদ
দীর্ঘদিন ধরে যানজট শুধু রাজধানীবাসীর জীবন দুর্বিষহই করেনি, যখন-তখন, যেখানে-সেখানে যানজটে স্তব্ধ আমাদের জীবনকে উত্পাদনবিমুখও করছে। যানজটে নগরবাসীর যে ভোগান্তি, কর্মসময়ের যে অপচয়, উদ্বেগ- উত্কণ্ঠার যে বৃদ্ধি, এগুলোকে অর্থের ভাষায় প্রকাশ করলে সমাজের, রাষ্ট্রের যে ক্ষতি হচ্ছে তা অকল্পনীয়। নিশ্চয়ই আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো, ব্যক্তিরা এই ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে না বলেই পরিস্থিতি আরও অধোমুখী।
একটি শহরের যত শতাংশজুড়ে রাস্তাঘাট থাকা উচিত, ঢাকা শহরে রয়েছে তার তিন ভাগের এক ভাগ। এত কম রাস্তা দিয়ে, নিম্নমানের রাস্তা দিয়ে জনসাধারণের জন্য গ্রহণযোগ্য মাত্রার সেবা দান করা অসম্ভব। অত্যন্ত সুখের বিষয় হলো, ইদানীং সরকার এই বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে এবং ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতেও প্রস্তুত। যেসব পদক্ষেপ নিয়ে যানজট সহনীয় পর্যায়ে নামানো যেতে পারে তার কয়েকটি প্রস্তাব নিচে দেওয়া হলো:
১. রাজধানীর জনসংখ্যা যাতে ক্রমাগত বৃদ্ধি না পায় এজন্য এর চারপাশে স্যাটেলাইট শহর স্থাপন করে সেখানে কিছু সরকারি অফিস স্থাপন করা যেতে পারে। উপরন্তু বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।
২. সরকারি-বেসরকারি অফিস, স্কুল-কলেজের সময় বিভিন্ন ধাপে করা দরকার। যেমন, কোনো প্রতিষ্ঠান শুরু হবে সকাল আটটায়। কোনোটা সকাল সাড়ে আটটায় কিংবা নয়টায়। এর ফলে দিনের বিভিন্ন সময়ে যানবাহনের ঘনত্ব বিভক্ত হয়ে যাবে।
৩. যেহেতু আমাদের রাস্তার ধারণক্ষমতা কম, অধিকসংখ্যক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন অর্থ হলো যানজট পরিস্থিতিকে আরও শোচনীয় করা। আমাদের থেকে অনেক বিত্তশালী দেশ সিঙ্গাপুরেও নাকি ইচ্ছা করলেই নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা যায় না। রাস্তাগুলোর ধারণক্ষমতা বিচারে এনে প্রতিবছর নির্দিষ্টসংখ্যক গাড়িকে রেজিস্ট্রেশন করতে দেওয়া হয়। এতে কিন্তু ওই গণতান্ত্রিক দেশের জনসাধারণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয় না। আমাদের মতো উন্নয়নকামী দেশে এ ধরনের নিয়ম আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা উচিত।
৪. ভালো ভালো স্কুল-কলেজে নানা এলাকার ছাত্রদের ভিড় এবং সঙ্গত কারণেই গাড়ির ভিড়। অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানির মতো বিত্তশালী দেশগুলোতে একজন ছাত্রের ভৌগোলিক অবস্থানই বলে দেয় তার এলাকায় কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সে ভর্তি হতে পারবে। এর ফলে জনগণের বাড়তি চাহিদার ফলে প্রতিটি এলাকার স্কুল-কলেজই মানসম্মত হতে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের ভিকারুন নিসা নূন কিংবা নটর ডেমকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় একজন মধ্য আয়ের মানুষও তার সন্তানকে ওই নামী-দামি স্কুল-কলেজে ভর্তি করে সন্তানের সুন্দরতর জীবন নিশ্চিত করতে চায়। এর ফলে রাজধানীর যানজট বৃদ্ধিতেও তিনি অবদান রাখেন। উন্নত গণতান্ত্রিক বিত্তশালী দেশগুলোর নাগরিকেরা এই নিয়ম মেনে চলে এবং তারা কখনো অনুভবও করে না তাদের কোনো গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমাদের মতো দুর্বল গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকদের এ বিষয়ে প্রশ্ন করাটাও সমীচীন নয়। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই আমরা এ রকম একটি আইন করতে পারি যে সন্তানকে বাসস্থানের যেমন এক কিলোমিটারের মধ্যে স্কুল, দুই কিলোমিটারের মধ্যে কলেজে পাঠাতে হবে। এ জন্য স্কুল-কলেজগুলোতে পর্যাপ্ত সিটের ব্যবস্থাও করতে হবে। এর ফলে স্কুল-কলেজের গড় দূরত্ব কমপক্ষে তিন-চার গুণ কমে আসবে। প্রতিটি এলাকার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জনসাধারণের চাহিদার চাপে উন্নততর হবে। কাছাকাছি মানের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হবে।
৫. যাত্রীদের ভ্রমণ সময় কমাতে হলে, রাস্তায় থ্রোপুট বাড়াতে হলে অধিক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বাস অধিক হারে চালু করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ফিসহ অন্যান্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কম ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন যানবাহনকে নিরুত্সাহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিত্তশালী আমেরিকার নিয়মকানুন লক্ষণীয়—অধিকসংখ্যক যাত্রীর গাড়ি এক্সপ্রেস লেইনে চলতে পারে। আমাদেরও অনুরূপ নিয়মকানুন চালু করতে হবে। ট্রাফিক সিস্টেমকে আধুনিকায়ন করতে হবে।
৬. রাজধানীর চারপাশে যে গোলাকার রাস্তা করার কথা শোনা যাচ্ছিল তা করতে হবে। এর ফলে ট্রাক, দূরপাল্লার বাস ও অন্যান্য যানবাহন থেকে উদ্ভূত যানজট থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে।
৭. কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনকে অন্তত কুড়িলের কাছাকাছি স্থানান্তর করা উচিত। এর ফলে রেলক্রসিং থেকে উদ্ভূত যানজট হ্রাস পাবে।
৮. অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডেলাইড শহরে পিক পিরিয়ডে থ্রোপুট বৃদ্ধির জন্য বাস সব স্টপেজে থামে না। আমরাও শহরের ভেতরে কোনো কোনো বাস জোড়সংখ্যক স্টপেজে এবং কোনো কোনোটি বিজোড়সংখ্যক স্টপেজে থামার নিয়ম করে রাস্তার থ্রোপুট বৃদ্ধি করতে পারি।
৯. অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও আরামদায়ক পাবলিক বাস সিস্টেমের সূচনা করে নাগরিকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে নিরুত্সাহিত করতে পারি। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে যাতে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে যানজট সৃষ্টি না হয় এর জন্য বহুতল পার্কিংব্যবস্থা করতে হবে। যত্রতত্র পার্কিংকে নিরুত্সাহিত করার জন্য পার্কিং ফি এবং জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. অতি অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের যাত্রাপথ নির্ঝঞ্ঝাট ও মৃসণ করতে লাখ লাখ সাধারণ নাগরিকের ভ্রমণকাল যে অসহনীয় পরিমাণ প্রলম্বিত করা হয় তা মোটেও কাম্য নয়—জনগণের সেবক জনগণের ভোগান্তির কারণ হতে পারেন না। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের এসব গুরুত্বপূর্ণ পদধারীদের চলাচলে যথাযথ নিরাপত্তাসহ হেলিকপ্টার ব্যবহার করা যেতে পারে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্য যে সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কখনো সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার সঙ্গী হন না। আমাদের দেশে এমন সাংসদ নেই যাঁর আয় বাংলাদেশের গড় আয়ের ধারে কাছাকাছি। সাধারণ মানুষ বিদ্যুতের অভাবে, সুপেয় পানির অভাবে, গ্রহণযোগ্য বাসস্থানের অভাবে, চিকিত্সার অভাবে কিংবা চলাচলের নির্ভরযোগ্য যানের অভাবে যে দুর্ভোগ পোহায়, তা আমাদের জনপ্রতিনিধিদের বোঝার কথা নয়। কারণ, তাঁদের সেই অভিজ্ঞতা নেই। তাই রাস্তায় যাত্রী হিসেবে, হাসপাতালের রোগী হিসেবে কিংবা বিদ্যুতের ব্যবহারে যদি তাঁরা সাধারণ মানুষের কাতারে নেমে আসতে পারতেন, তাহলে এই সমস্যাগুলোর গ্রহণযোগ্য সমাধান হতে পারত। শিক্ষামন্ত্রী যদি শিক্ষার গুণগত মানের দুর্ভোগে ভোগেন, যোগাযোগমন্ত্রী যদি যানজটে জর্জরিত হন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী যদি হাসপাতালের দুর্ভোগ পোহান, খাদ্যমন্ত্রীর ঘরে যদি খাদ্যের অভাব হয়, জ্বালানিমন্ত্রীর ঘরে যদি বিদ্যুত্ না থাকত, তাহলে নিশ্চয়ই তাঁরা সমস্যা সমাধানে আরও সক্রিয় হতেন। তাঁরা কোনো অভাবে ভোগবেন, তা আমরা চাই না, তবে সমস্যাগুলোর সমাধানে তাঁরা আন্তরিক হন, এটা আমরা সবাই চাই।
মোহাম্মদ কায়কোবাদ: অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়; ফেলো, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
একটি শহরের যত শতাংশজুড়ে রাস্তাঘাট থাকা উচিত, ঢাকা শহরে রয়েছে তার তিন ভাগের এক ভাগ। এত কম রাস্তা দিয়ে, নিম্নমানের রাস্তা দিয়ে জনসাধারণের জন্য গ্রহণযোগ্য মাত্রার সেবা দান করা অসম্ভব। অত্যন্ত সুখের বিষয় হলো, ইদানীং সরকার এই বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে এবং ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতেও প্রস্তুত। যেসব পদক্ষেপ নিয়ে যানজট সহনীয় পর্যায়ে নামানো যেতে পারে তার কয়েকটি প্রস্তাব নিচে দেওয়া হলো:
১. রাজধানীর জনসংখ্যা যাতে ক্রমাগত বৃদ্ধি না পায় এজন্য এর চারপাশে স্যাটেলাইট শহর স্থাপন করে সেখানে কিছু সরকারি অফিস স্থাপন করা যেতে পারে। উপরন্তু বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।
২. সরকারি-বেসরকারি অফিস, স্কুল-কলেজের সময় বিভিন্ন ধাপে করা দরকার। যেমন, কোনো প্রতিষ্ঠান শুরু হবে সকাল আটটায়। কোনোটা সকাল সাড়ে আটটায় কিংবা নয়টায়। এর ফলে দিনের বিভিন্ন সময়ে যানবাহনের ঘনত্ব বিভক্ত হয়ে যাবে।
৩. যেহেতু আমাদের রাস্তার ধারণক্ষমতা কম, অধিকসংখ্যক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন অর্থ হলো যানজট পরিস্থিতিকে আরও শোচনীয় করা। আমাদের থেকে অনেক বিত্তশালী দেশ সিঙ্গাপুরেও নাকি ইচ্ছা করলেই নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা যায় না। রাস্তাগুলোর ধারণক্ষমতা বিচারে এনে প্রতিবছর নির্দিষ্টসংখ্যক গাড়িকে রেজিস্ট্রেশন করতে দেওয়া হয়। এতে কিন্তু ওই গণতান্ত্রিক দেশের জনসাধারণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয় না। আমাদের মতো উন্নয়নকামী দেশে এ ধরনের নিয়ম আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা উচিত।
৪. ভালো ভালো স্কুল-কলেজে নানা এলাকার ছাত্রদের ভিড় এবং সঙ্গত কারণেই গাড়ির ভিড়। অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানির মতো বিত্তশালী দেশগুলোতে একজন ছাত্রের ভৌগোলিক অবস্থানই বলে দেয় তার এলাকায় কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সে ভর্তি হতে পারবে। এর ফলে জনগণের বাড়তি চাহিদার ফলে প্রতিটি এলাকার স্কুল-কলেজই মানসম্মত হতে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের ভিকারুন নিসা নূন কিংবা নটর ডেমকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় একজন মধ্য আয়ের মানুষও তার সন্তানকে ওই নামী-দামি স্কুল-কলেজে ভর্তি করে সন্তানের সুন্দরতর জীবন নিশ্চিত করতে চায়। এর ফলে রাজধানীর যানজট বৃদ্ধিতেও তিনি অবদান রাখেন। উন্নত গণতান্ত্রিক বিত্তশালী দেশগুলোর নাগরিকেরা এই নিয়ম মেনে চলে এবং তারা কখনো অনুভবও করে না তাদের কোনো গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমাদের মতো দুর্বল গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকদের এ বিষয়ে প্রশ্ন করাটাও সমীচীন নয়। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই আমরা এ রকম একটি আইন করতে পারি যে সন্তানকে বাসস্থানের যেমন এক কিলোমিটারের মধ্যে স্কুল, দুই কিলোমিটারের মধ্যে কলেজে পাঠাতে হবে। এ জন্য স্কুল-কলেজগুলোতে পর্যাপ্ত সিটের ব্যবস্থাও করতে হবে। এর ফলে স্কুল-কলেজের গড় দূরত্ব কমপক্ষে তিন-চার গুণ কমে আসবে। প্রতিটি এলাকার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জনসাধারণের চাহিদার চাপে উন্নততর হবে। কাছাকাছি মানের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হবে।
৫. যাত্রীদের ভ্রমণ সময় কমাতে হলে, রাস্তায় থ্রোপুট বাড়াতে হলে অধিক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বাস অধিক হারে চালু করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ফিসহ অন্যান্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কম ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন যানবাহনকে নিরুত্সাহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিত্তশালী আমেরিকার নিয়মকানুন লক্ষণীয়—অধিকসংখ্যক যাত্রীর গাড়ি এক্সপ্রেস লেইনে চলতে পারে। আমাদেরও অনুরূপ নিয়মকানুন চালু করতে হবে। ট্রাফিক সিস্টেমকে আধুনিকায়ন করতে হবে।
৬. রাজধানীর চারপাশে যে গোলাকার রাস্তা করার কথা শোনা যাচ্ছিল তা করতে হবে। এর ফলে ট্রাক, দূরপাল্লার বাস ও অন্যান্য যানবাহন থেকে উদ্ভূত যানজট থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে।
৭. কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনকে অন্তত কুড়িলের কাছাকাছি স্থানান্তর করা উচিত। এর ফলে রেলক্রসিং থেকে উদ্ভূত যানজট হ্রাস পাবে।
৮. অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডেলাইড শহরে পিক পিরিয়ডে থ্রোপুট বৃদ্ধির জন্য বাস সব স্টপেজে থামে না। আমরাও শহরের ভেতরে কোনো কোনো বাস জোড়সংখ্যক স্টপেজে এবং কোনো কোনোটি বিজোড়সংখ্যক স্টপেজে থামার নিয়ম করে রাস্তার থ্রোপুট বৃদ্ধি করতে পারি।
৯. অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও আরামদায়ক পাবলিক বাস সিস্টেমের সূচনা করে নাগরিকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে নিরুত্সাহিত করতে পারি। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে যাতে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে যানজট সৃষ্টি না হয় এর জন্য বহুতল পার্কিংব্যবস্থা করতে হবে। যত্রতত্র পার্কিংকে নিরুত্সাহিত করার জন্য পার্কিং ফি এবং জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. অতি অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের যাত্রাপথ নির্ঝঞ্ঝাট ও মৃসণ করতে লাখ লাখ সাধারণ নাগরিকের ভ্রমণকাল যে অসহনীয় পরিমাণ প্রলম্বিত করা হয় তা মোটেও কাম্য নয়—জনগণের সেবক জনগণের ভোগান্তির কারণ হতে পারেন না। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের এসব গুরুত্বপূর্ণ পদধারীদের চলাচলে যথাযথ নিরাপত্তাসহ হেলিকপ্টার ব্যবহার করা যেতে পারে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্য যে সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কখনো সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার সঙ্গী হন না। আমাদের দেশে এমন সাংসদ নেই যাঁর আয় বাংলাদেশের গড় আয়ের ধারে কাছাকাছি। সাধারণ মানুষ বিদ্যুতের অভাবে, সুপেয় পানির অভাবে, গ্রহণযোগ্য বাসস্থানের অভাবে, চিকিত্সার অভাবে কিংবা চলাচলের নির্ভরযোগ্য যানের অভাবে যে দুর্ভোগ পোহায়, তা আমাদের জনপ্রতিনিধিদের বোঝার কথা নয়। কারণ, তাঁদের সেই অভিজ্ঞতা নেই। তাই রাস্তায় যাত্রী হিসেবে, হাসপাতালের রোগী হিসেবে কিংবা বিদ্যুতের ব্যবহারে যদি তাঁরা সাধারণ মানুষের কাতারে নেমে আসতে পারতেন, তাহলে এই সমস্যাগুলোর গ্রহণযোগ্য সমাধান হতে পারত। শিক্ষামন্ত্রী যদি শিক্ষার গুণগত মানের দুর্ভোগে ভোগেন, যোগাযোগমন্ত্রী যদি যানজটে জর্জরিত হন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী যদি হাসপাতালের দুর্ভোগ পোহান, খাদ্যমন্ত্রীর ঘরে যদি খাদ্যের অভাব হয়, জ্বালানিমন্ত্রীর ঘরে যদি বিদ্যুত্ না থাকত, তাহলে নিশ্চয়ই তাঁরা সমস্যা সমাধানে আরও সক্রিয় হতেন। তাঁরা কোনো অভাবে ভোগবেন, তা আমরা চাই না, তবে সমস্যাগুলোর সমাধানে তাঁরা আন্তরিক হন, এটা আমরা সবাই চাই।
মোহাম্মদ কায়কোবাদ: অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়; ফেলো, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
No comments