ভারত হাসিনাকে ফেরত না পাঠালে আইসিসি’র সহযোগিতা নিতে পারবে বাংলাদেশ: ক্যাডম্যান

ভারত বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে জুলাই গণহত্যার প্রধান আসামি শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান। তবে ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত না পাঠালে বাংলাদেশ আইসিসি’র সহযোগিতা নিতে পারবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ও তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তারা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে জুলাই গণহত্যার প্রধান আসামি শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিচারের ব্যাপারে বাংলাদেশে যে আইন আছে, সে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ গঠন করবে। এরপর ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে  রিকোয়েস্ট করবেন। এরপরও যদি তাকে ফেরত না পাঠায়, তাহলে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে বিচার করতে পারবে ট্রাইব্যুনাল। তবে টবি ক্যাডম্যান শেখ হাসিনাকে ফেরানোর ব্যাপারে আশাবাদী।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এবং তার বিশেষ পরামর্শক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ টবি ক্যাডম্যান। পরে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ও তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে টবি ক্যাডম্যান আশা প্রকাশ করে বলেন, শেখ হাসিনাকে পাঠানোর ব্যাপারে ভারত কী করবে জানি না, তবে ভারত যদি ফেরত না দেয় তাহলে তার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলবে। ক্যাডম্যান আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালের যেসব আইন সংশোধিত হয়েছে, তা সঠিক হয়েছে। গণহত্যার বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনেই হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক ভাবে যেন কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে সে জন্যই টবি ক্যাডম্যানকে চিফ প্রসিকিউটরের এডভাইজার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ক্যাডম্যানকে চিফ প্রসিকিউশন ও তার এজেন্সিকে সাপোর্ট এবং এডভাইজড করার জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবেন। তিনি বলেন, ডিফেন্সের পক্ষ থেকেও কেউ চাইলে কনসালট্যান্ট নিয়োগ করতে পারবেন। তবে আইনজীবী হিসেবে কাউকে নিয়োগ করতে হলে বার কাউন্সিলের অনুমতি নিতে হবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম, বিএম সুলতান মাহমুদ ও তদন্ত সংস্থার প্রধানরা।

এর আগে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের বিশেষ পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় লন্ডনভিত্তিক গার্নিকা ৩৭ ল’ ফার্মের যুগ্ম প্রধান টবি ক্যাডম্যানকে। জানা যায়, টবি ক্যাডম্যান বসনিয়ার যুদ্ধাপরাধে গঠিত ট্রাইব্যুনালের নির্বাহী আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। তিনি ২০০৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় যুদ্ধাপরাধ চেম্বার প্রজেক্ট প্রতিষ্ঠার জন্য আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়াও বসনিয়ার অপরাধ প্রতিরক্ষা অফিসের প্রথম প্রধান এবং ২০০৫ সালের শেষে দেশটির যুদ্ধাপরাধ নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসেবেও কাজ করেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে এসেছিলেন টবি ক্যাডম্যান। গত ২রা সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.