শিলং-কলকাতায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা by ওয়েছ খছরু

ভারতের সীমান্তঘেঁষা রাজ্য মেঘালয়ের শিলং ও পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মী অবস্থান করছেন।  প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পরপরই তারা যে যেভাবে পেরেছেন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এর মধ্যে রয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারাও। মেঘালয়ের জোয়াই এলাকায় ট্রাকচালককে মারধর ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় চার আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ভারতে অবস্থান করা নেতাদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। রোববার মধ্যরাত থেকে অনেকেই গা ঢাকা দিয়ে নিরাপদে অবস্থান করছেন।

কলকাতা শহরের নিউ টাউন এলাকা থেকে মেঘালয় ও কলকাতা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ইলিয়াছ আহমদ জুয়েল, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সিলেট মহানগর যুবলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ রিপন। তাদের গ্রেপ্তারের খবর ওই রাতেই সিলেটে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারফতেই সিলেটে এ খবর রটে। এ নিয়ে সিলেটে তোলপাড় শুরু হয়। খবরটি নিয়ে ভারতে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্কও ছড়ায়। ভারতে অবস্থান করা সিলেট আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা জানান, চার নেতাকে গ্রেপ্তারের বিষয় সম্পর্কে বিষয়টি কিছুই অবগত হওয়া যায়নি। অনেকেই ধারণায় নিয়েছিলেন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশের কারণেই তাদের আটক করা হয়েছে। এ কারণে যারা শিলং ও কলকাতায় অবস্থান করছিলেন তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।  কেউ কেউ ভয়ে গা ঢাকা দেন।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, শিলংয়ে এক মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনায় তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু পুলিশ গ্রেপ্তারের পর মামলার আর্জিতে ধর্ষণের ঘটনার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ট্রাকচালককে মারধর ও টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় ডাউকি সীমান্তঘেঁষা জোয়াই এলাকায় একটি মামলা হয়েছে। এ মামলা দায়ের করেন ওয়েস্ট জৈন্তা হিল ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ইউ হেনরি মানার। তিনি ১৬ই অক্টোবর শিলং সড়কে ট্রাকচালককে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন। গ্রেপ্তার হওয়া চার নেতাকে টানা ২৪ ঘণ্টা কলকাতা থেকে মেঘালয় পর্যন্ত সড়ক পথে মঙ্গলবার আদালতে তোলার আগে মামলার বাদীর মুখোমুখি করা হয়। কিন্তু বাদী তাদের শনাক্ত করেননি বলে জানায় মেঘালয় রাজ্যের পুলিশ।

শিলংয়ে অবস্থান করা কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান, গ্রেপ্তার হওয়া চার নেতাকে মঙ্গলবার জামিন না দিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। গতকাল শুনানিকালে শর্তসাপেক্ষে তাদের জামিন হয়েছে। এখন তারা মেঘালয়েই অবস্থান করছেন। তাদের বিরুদ্ধে দু’টি ট্রাক ভাঙচুর, লুটপাট ও চালককে মারধরের অভিযোগ আনা হয়। এতে অজ্ঞাত বাংলাদেশি নাগরিকরা জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া মামলার এজাহারে ফরেনার অ্যাক্ট ধারাটিও সংযুক্ত রয়েছে। নেতাদের মতে, মামলায় কোনো আসামির নাম নেই। শিলং থেকে তথ্য নিয়েই তাদের কলকাতা থেকে আটক করে নিয়ে আসা হয়েছিল। এ মামলায় সন্দেহভাজন আরও দুই আসামি হলেন- স্বেচ্ছাসেবক লীগের  নেতা দেবাংশু দাশ মিঠু ও আফসার আজিজ। ঘটনার পর  গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় দেবাংশু দাশ মিঠু গা ঢাকা দেন। এখন তিনি ভারতের কোথায় অবস্থান করছেন সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে নেতারা জানান, মিঠু কাকরভিটা সীমান্ত পথ দিয়ে নেপাল পাড়ি দেয়ার চেষ্টায় ছিলেন। তিনি ভারতে রয়েছেন না নেপালে গেছেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চলতি মাসের প্রথম দিকে মিঠু মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে অবস্থান করছিলেন বলে জানান তারা। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় এখন বসবাস করছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। শিলং থেকে কলকাতা যাওয়ার পর বন্ধু সহকর্মী নাসির উদ্দিন খানের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হতো। মঙ্গলবার নাদেল এ নিয়ে সিলেটের সাংবাদিকদের জানান, ভারতে নেতাকর্মীরা বৈধভাবে অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, এর কোনো সত্যতা নেই। যে কারণে সে দেশের পুলিশও বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করছে।
শিলং পুলিশের বরাত দিয়ে শিলং টাইমস সহ একাধিক মিডিয়া খবর দিয়েছে ১৬ই অক্টোবর সড়কে একটি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর ট্রাক মালিক নেতা পুলিশে অভিযোগ করেন। আর এ অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তাদের আটক করে। খবরে বলা হয়েছে; বাংলাদেশি নাগরিকরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এদিকে, ৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর প্রায় দেড় মাস সিলেটেই আত্মগোপনে ছিলেন নাসির উদ্দিন খান। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত শফিকুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতের  মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে যান। চলতি মাসের শুরুর দিকে শিলং ছেড়ে কলকাতায় যান নাসির উদ্দিন খানসহ গ্রেপ্তার হওয়া নেতারা। শিলংয়ে বেশি ঠাণ্ডা হওয়ার কারণে তারা কলকাতা গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ভারতে থাকা নেতারা। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.