বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে না পারা ছিল আওয়ামী লীগের বড় রাজনৈতিক ভুল: হাছান মাহমুদ
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে না পারা আওয়ামী লীগের বড় রাজনৈতিক ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, এটা আমার দলের অভিমত না। ব্যক্তি হাছান মাহমুদের অভিমত। বিএনপি অবশ্যই সব সময় নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু যেহেতু আমরা দায়িত্বে ছিলাম আমাদের এ জায়গায় ব্যর্থতা ছিল যে বিএনপিকে আমরা একোমডেট করে নির্বাচনে আনতে ব্যর্থ হয়েছি। সেটি ২০১৪ ও ২০২৪ সালে নির্বাচনে আনতে না পারাটা আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা। রোববার লন্ডনভিত্তিক ‘চ্যানেল এস’ টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। হাছান মাহমুদ বলেন, যদিও বিএনপি সব সময় নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার পথে হেঁটেছে। তারপরও আমি মনে করি আমরা যেহেতু সরকারে ছিলাম তাদেরকে আনতে না পারা আমাদের ব্যর্থতা। যদিও-বা তারা সব সময় আমাদের এভাবে ব্যর্থ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেটি আমাদেরও ব্যর্থতা। এটি আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। এটা আমার দলীয় বক্তব্য নয়। দলীয় ফোরামে কি এ বিষয়টি পরামর্শ হিসেবে সামনে এনেছিলেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দলীয় ফোরামে নানা সময় নানা কথা হয়েছে। সেখানে বিশদ আলোচনা হয়েছে এমন না। তবে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে অবশ্যই আলোচনা হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা, বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, বিএনপির প্রয়োজন- সে নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। এসময় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে তার দল আগ্রহী বলেও জানান হাছান মাহমুদ। বলেন, আমি বিএনপির সাথে অনেকক্ষেত্রে একমত। দেশের ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ প্রয়োজন হলে বিএনপির সঙ্গে একযোগে কাজ করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রস্তুত। বিএনপি যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলছে, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে, সেটির সাথে আমরা একমত এবং প্রয়োজনে বিএনপির সাথে একযোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা কাজ করব। তিনি বলেন, বিএনপির অনেক বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত। আমরা এক-এগারোর সরকারের সঙ্গে একযোগেই কিন্তু গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনার জন্য, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলন করেছিলাম এবং গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের আপত্তির বিষয়েও কথা বলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার আমরা কারা?’- এই যে প্রশ্ন তুলেছেন, আমি এটির সাথে একমত। এমনকি ছাত্রলীগকে কাগজে নিষিদ্ধ করার পর সেটির বিরুদ্ধেও তারা বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তাদের এই বক্তব্যের সাথে একমত। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবসহ তাদের শীর্ষ নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা- এই বক্তব্যের সাথে আমি পুরোপুরি একমত। এছাড়াও প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ প্রশ্ন থেকে শুরু করে দেশে যাতে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না হয়, এ ব্যাপারে বিএনপির অবস্থানকেও সাধুবাদ জানাই। আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনো সরকারই কিন্তু শেষ সরকার নয়, মনে রাখতে হবে; আমাদের ক্ষেত্রে আমরাও শেষ সরকার ছিলাম না। সেটা তো আপনারা মনে রাখেননি উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অনেকে মনে করেনি। আমি সবসময় মনে রেখেছি। আমি নিজে সবসময় মনে রেখেছি। কিন্তু অনেকে মনে রাখেনি, যেটা সঠিক। কাজে এই সরকারই শেষ সরকার নয়। এটি সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। এ সময় সংসদের উচ্চ কক্ষ নিয়ে তারেক রহমানের প্রস্তাবেও সমর্থন জানান এ আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, বাংলাদেশে একটি উচ্চ কক্ষ দরকার। যেভাবে ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে আছে। তার মাধ্যমে বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজকে রাষ্ট্রীয় কাজে যুক্ত করা যাবে। রাষ্ট্রের সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের আগে যেটি বেশি দরকার, সেটি হচ্ছে এবং রাষ্ট্র সংস্কারের মূল দায়িত্বটা হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব বলেছেন, আমি তার সাথে শতভাগ একমত। আমি মনে করি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই রাষ্ট্র সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। এবং রাষ্ট্র সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়া তিন মাস, ছয় মাস, তিন বছরে শেষ হয়ে যায়, তা নয়।
উল্লেখ্য, সরকার পতনের পর থেকে লাপাত্তা সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বিমান বন্দরে আটক হয়েছেন এমন খবরও চাউর হয়েছিল। পরে অবশ্য তার অবস্থান আর জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে তিনি বিদেশে কোথাও অবস্থান করছেন।
No comments