নিয়ত সহিহ একতরফা নির্বাচনে বিশ্বাস করি না

দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছেন এ এম এম নাসির উদ্দীন নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন। গতকাল দুপুর দেড়টায় সুপ্রিম কোর্ট জাজেজ লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাদের শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ নিয়েই ভালো নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন। বলেন, আশ্বস্ত থাকুন, আমাদের নিয়ত সহিহ। আমি কনফিডেন্টলি বলতে পারি, ভালো নির্বাচন হবে। এদিকে শপথগ্রহণের পর দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে নির্বাচন কমিশনে পৌঁছান সিইসিসহ চার কমিশনার। এ সময় তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। পরে বিকালে নির্বাচন কমিশনের সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করে নবগঠিত কমিশন। সিইসি বলেন, আমরা একতরফা নির্বাচনে বিশ্বাস করি না। একতরফা নির্বাচন করে দেশের বারোটা বেজে গেছে। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য আমরা একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেবো।

শপথ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বের হওয়ার পর সিইসি বলেন, শপথ নিয়েছি। শপথের সম্মানটা রাখতে চাই। আমি এই দায়িত্বটাকে নিজের জীবনের বড় অপরচুনিটি হিসেবে দেখছি। অপরচুনিটি টু সার্ভ দ্য নেশন। দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা অবাধ ও নিরপেক্ষ একটা নির্বাচনের জন্য অনেক সংগ্রাম করেছে। অনেক আন্দোলন করেছে বিগত বছরগুলোয় এবং অনেকে রক্ত দিয়েছে। আমি তাদের একটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য সর্বোচ্চটুকু করবো।

বিশেষ পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন বিশেষ পরিস্থিতি আমার চাকরি জীবনে অনেক এসেছে, আমি তথ্য মন্ত্রণালয়, জ্বালানি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলাম। জীবনে বহু চ্যালেঞ্জ দেখেছি। সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সাহস এবং অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ আসুক সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে ওভারকাম করবো।  
নাসির উদ্দীন বলেন, সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। একটা নির্বাচন করতে গেলে কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কার তো লাগবেই। কেউ প্রপোশনাল রিপ্রেজেন্টেশন, আবার কেউ বলে আগের সিস্টেমে ইলেকশন। সংবিধানে যদি এটা ফয়সালা না হয়, আমরা নির্বাচনটা করবো কীভাবে? নির্বাচন করতে গেলে নতুন প্রজন্ম, যারা ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে বছরের পর বছর, তাদের তো ভোটার তালিকায় আনতে হবে। ভোটার তালিকা করতে হবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন কাজ করছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, তারাও সংবিধানের বিষয়ে সাজেশন দেবেন। আমি ও আমার টিম সংবিধানের প্রোডাক্ট। সংবিধান যদি ঠিক না হয়, তাহলে আমাদের যাত্রা এলোপাতাড়ি হয়ে যাবে। সুতরাং এই কার্যক্রমও শেষ হোক। সব সুপারিশ আসুক। বেশিদিন তো নেই। উনারা তো বলছেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে। অতি অল্প সময়, আপনারা আশ্বস্ত থাকুন। এবারের মতো সুযোগ আগে ছিল না বলে উল্লেখ করেন নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, শুধু আমরা নই, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন করবে। তারা ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে বলে আসছে তারা ভোটের অধিকার চায়, অবাধে ভোট দিতে চায়। সুতরাং তাদের সঙ্গে পাবো। তাদের ডিমান্ডটা বাস্তবায়নে আমরা সহযোগিতা করবো। সুতরাং আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। তারাও জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ।

এদিকে নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, নির্বাচনকে প্রভাবিত করা, ভোট চুরিসহ নানাবিধ চ্যালেঞ্জ থাকবে। আরও বহু চ্যালেঞ্জ আছে যা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। আমরাও জানি না। এগুলো আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সব প্রচেষ্টা নিবেদিত থাকবে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা যেন দেশের সব ভোটার নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। আমরা একতরফা নির্বাচনে বিশ্বাস করি না। একতরফা করে দেশের বারোটা বেজে গেছে। গায়ের জোরে নির্বাচন করে যা হওয়ার তা হয়েছে। আমরা একতরফা বা গায়ের জোরে নির্বাচন দেখতে চাই না। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য আমরা একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেবো।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে শতভাগ ফেয়ার নির্বাচনের। আগে ডামি নির্বাচন হয়েছে, ১৫৩ জন বিনা ভোটে এমপি হয়েছেন। আমাদের আগমন এগুলো মোকাবিলা করতেই। এজন্যই আল্লাহ আমাদের পাঠিয়েছেন মনে হচ্ছে। এটাকে আমি সুযোগ হিসেবে নিচ্ছি।
আপনারা কি প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করতে পারবেন-এমন প্রশ্নে নবনিযুক্ত সিইসি বলেন, এই সরকার সেই সরকার নয়, যেই সরকার চাপ দেয়। আগের সরকার দলীয় এজেন্ডার জন্য চাপ দিয়েছিল। এই সরকারের দলীয় এজেন্ডা নেই। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন যে, উনার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নাই। উনি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা দিতে চান। আমাদের কোনো চাপ নেই এবং থাকবে না।

কবে নাগাদ নির্বাচন দেবেন-এমন প্রশ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, দিনক্ষণ এখন তো বলা যাবে না। আগে কাজকর্ম বুঝে নিই। ইতিমধ্যে ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে ইসি সংস্কার কমিশন এবং প্রফেসর ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। তাদের গ্রহণযোগ্য পরামর্শগুলো আমরা নেবো। পরে ভোট করার মতো সবকিছু যখন প্রস্তুত হবে, তখনই আমরা নির্বাচনের তারিখ নিয়ে চিন্তা করতে পারবো। এ ছাড়া কেউ বলে ৩০০ আসনের ভোট হোক, আবার কেউ ৪০০ আসনের কথা বলে। আসন সংখ্যা ফয়সালা না হলে আমি কীভাবে নির্বাচন করবো। সুতরাং প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো তো ফয়সালা হতে হবে। তাছাড়া সম্ভব না।

আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে আনার ইচ্ছা আছে কি-না এবং সংলাপে ডাকা হবে কি-না এমন প্রশ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনেক বিতর্ক চলছে, বিতর্কের ফয়সালা হোক। আমরা ফয়সালার অপেক্ষা করছি। ফয়সালা হলে আপনারা দেখতে পারবেন।  

তিনি বলেন, কারও ডিজায়ারের কারণে আমাদের নিযুক্ত করা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নাম চাওয়া হয়েছিল, তারা বিভিন্ন পদের এগেনেস্টে অনেক নাম দিয়েছে। ওই নামগুলো থেকে তারা বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আমাদেরকে বাছাই করেছে। সুতরাং একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা এসেছি।

আপনারা জানেন জাতি এখন একটা ক্রান্তিকালের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে আমাদের এই দায়িত্ব একটা গুরুদায়িত্ব। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবো। জাতির প্রত্যাশা পূরণে আমরা আমাদেরকে নিয়োজিত রাখবো। তিনি বলেন, জাতির প্রতি যে ওয়াদা ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন দেয়ার জন্য যা যা করার দরকার করবো। অনেক কঠিন কাজ জীবনে করতে হয়েছে। আমার জীবনে কোনো ব্যর্থতা নাই।

ওদিকে এ সময় নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনার, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান মাসুদ, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব বেগম তাহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.