একটি কনসার্ট খুন এবং যৌন হয়রানি দায় কার? by প্রতীক ওমর
বাসদের বগুড়া জেলা শাখার সদস্য সচিব দিলরুবা নূরী তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘২৬ নভেম্বর বিকাল থেকে কলেজ ক্যাম্পাসের দিকে ছিল তরুণ-তরুণীদের ঢল। রাত সোয়া ১০টায় যখন সাতমাথা হয়ে বাসা ফিরছিলাম তখন দেখলাম তরুণদের পদচারণায় শহরের প্রত্যেক পথ গিজ গিজ করছে। গাড়ি, সিএনজি, রিকশা শহরে তখন নাই বললেই চলে। সব পায়ে হাঁটছে গন্তব্যের দিকে। তাদের মধ্যে একটা গ্রুপকে দেখলাম একটি ছেলে খালি গায়ে তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, বুঝলাম সে এত বেশি মদ খেয়েছে যে মাতাল হয়ে গেছে।
তার আগে একবার নেটে ঢুকে দেখি কনসার্ট দেখাকে কেন্দ্র করে মেহেদি নামে এক যুবক ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছে। পরে বাসায় ফিরে এসে এক মেয়েকে লাঞ্ছিত করার ভিডিও দেখলাম’। ‘সবমিলে একটি কলেজের একটি ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এরকম একটি আয়োজন কেন দরকার পড়লো দেশের এরকম একটি সময়ে। যখন কিনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসন এখনো শিক্ষার পরিবেশই ফেরাতে পারেনি। যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো সচল হয়নি। যখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল নয়।’
সাংবাদিক অরূপ রতন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া এটা মোটেও কোনো বাহাদুরি কাজ নয়। এরমধ্যে আপনারা ঘটা করে আবার ঘোষণাও দিয়েছিলেন রাত ৮টায় জনপ্রিয় অ্যাশেজ ব্যান্ড দল মঞ্চে উঠবে। এজন্য সেখানে জনস্রোত তো হবেই। তবে এই জনস্রোতে কি কি ঘটতে পারে, তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকবে কিনা তা দশবার ভাবা দরকার ছিল। যার ফলাফলে আমরা দেখলাম একটা যুবকের খুন, অনেক নারীর শ্লীলতাহানি, ছোট ছোট মারামারি, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত একজন আর মাদকের অবাধ সেবন।
একজন শিক্ষক লিখেছেন, ফৌজিয়া বীথি, ‘শনিবার রাতে উত্তরবঙ্গের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ আজিজুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে কনসার্টে মেয়েদের হেনস্তা, শ্লীলতাহানি নিয়ে একটা ভিডিও ফেসবুকে ঘোরাফেরা করছে।
একটা স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠে এমনটা আমাদের কারোই কাম্য নয়’।
আব্দুস ছালাম নামের একজন লিখেছেন, ‘বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে নামাজের সময় বন্ধ করা হয়নি কনসার্ট।
ওদিকে, বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে কনসার্ট চলাকালে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে মেহেদী হাসান (২৬) নামের এক যুবকের মৃতু্য হয়েছে। নিহত মেহেদী শহরের মালগ্রাম চাপড়পাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি পেশায় একজন থাই মিস্ত্রি ছিলেন। এ ছাড়াও ছাত্রীদের যৌন হামলার ঘটনাগুলো ফেসবুক জুড়ে ট্রল হচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং কলেজ প্রশাসনকে দোষ দিচ্ছেন। এমন জঘন্য ঘটনার জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি তোলা হয়েছে।
বিষয়গুলো নিয়ে বগুড়া পুলিশ সুপার জেদান আল মুসার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি বরাবরের মতোই ফোন রিসিভ করেননি। পরে বগুড়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার মানবজমিনকে বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে এবং হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। নিহতের মা সুখী বেগম বাদী হয়ে তিন জনকে আসামি করে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেছেন।
তিনি বলেন, আয়োজক কমিটি বলেছিল অনুষ্ঠান ছোট হবে। এত বেশি মানুষের উপস্থিতি হবে না। কিন্তু বাস্তবে ছিল তার উল্টো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ যথাযথভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছে।
No comments